মাগুরায় শিশু ধর্ষণের ঘটনায় দায়ীদের ৯০ দিনের মধ্যে শাস্তি কার্যকরের দাবি জামায়াত আমিরের
Published: 13th, March 2025 GMT
মাগুরায় আট বছরের শিশুকে ধর্ষণের ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের ৯০ কর্মদিবস নয়—সর্বোচ্চ ৯০ দিনের মধ্যে শাস্তি কার্যকর করার দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান। আজ বৃহস্পতিবার বেলা সোয়া দুইটার দিকে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে এ দাবি জানান তিনি।
ধর্ষকদের ঘৃণা ও বর্জন করার আহ্বান জানিয়ে ফেসবুক পোস্টে শফিকুর রহমান লেখেন, ‘আসুন, মানুষ নামের এই পশুদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যক্তিগত এবং সামাজিকভাবে, সাংগঠনিক ও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এ অপকর্মের বিরুদ্ধে সোচ্চার হই। ধর্ষকদের ঘৃণা করি ও বয়কট করি।’
বেলা একটায় ধর্ষণের শিকার শিশুটির মৃত্যুর খবর জানিয়ে জামায়াতের আমির লেখেন, ‘বিধ্বস্ত পরিবারকে কোন ভাষায় সান্ত্বনা দেব, সে ভাষাটিই হারিয়ে ফেলেছি। মহান রবের দরবারে দোয়া করি, তিনি যেন তার পিতা-মাতাসহ আপনজনদের নির্বিশেষে, বিবেকবান দেশবাসীকে এই শোক সহ্য করার তাওফিক দান করেন।’
ধর্ষকদের শাস্তির দাবি জানিয়ে জামায়াতের আমির লেখেন, ‘মানুষ নামের যে পশুরা তাদের পাশবিক লালসা চরিতার্থ করতে গিয়ে মাসুম শিশুটির জীবনের আলো নিভিয়ে দিল, এ পশুদের কঠিনতম ও সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করছি। সর্বোচ্চ ৯০ দিনের ভেতরে (৯০ কর্মদিবস নয়) এদের শাস্তি কার্যকর করতে হবে।’
আরও পড়ুনমাগুরার সেই শিশুটির মা বললেন, ‘ইশ্! ক্যান যে পাঠাইছিলাম’০৯ মার্চ ২০২৫ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) চিকিৎসকেরা আজ বেলা ১টার দিকে শিশুটিকে মৃত ঘোষণা করেন। এর আগে ১ মার্চ মাগুরা শহরে বোনের বাড়িতে বেড়াতে যায় শিশুটি। ৫ মার্চ দিবাগত রাতে ওই বাসায় ধর্ষণের শিকার হয় সে।
ওই ঘটনায় ৮ মার্চ শিশুটির মা ধর্ষণের অভিযোগে মাগুরা সদর থানায় মামলা করেন। মামলায় শিশুটির বোনের স্বামী, শ্বশুর, শাশুড়ি ও ভাশুরকে আসামি করা হয়েছে। তাঁরা আগে থেকেই পুলিশের হেফাজতে ছিলেন। তাঁদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে রিমান্ড নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
আরও পড়ুনমাগুরার সেই শিশুটি কি অভিশাপ দিয়েছিল১ ঘণ্টা আগে.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
শিশুটির প্রথম জানাজায় হাজারো মানুষ
মাগুরায় ধর্ষণের ঘটনার নিহত শিশুটির মরদেহ রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল-সিএমএইচ থেকে গ্রামের বাড়িতে নেওয়া হয়েছে। মরদেহ মাগুরা পৌঁছানোর পর সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় শহরের নোমানী ময়দানে প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশ নেয় হাজারো মানুষ। পরে মরদেহ গ্রামে নেওয়া হয়। সেখানে দ্বিতীয় জানাজা শেষে রাতেই তাকে স্থানীয় গোরস্থানে দাফন করার কথা রয়েছে।
এর আগে আজ বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে রাজধানীর তেজগাঁও পুরাতন বিমানবন্দর থেকে সেনাবাহিনীর একটি হেলিকপ্টার শিশুটির মরদেহ নিয়ে রওনা হয়। সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে মাগুরা স্টেডিয়ামে পৌঁছায়।
এ সময় সঙ্গে ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠন হাসনাত আব্দুল্লাহ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক, মাগুরা জেলা প্রশাসক অহিদুল ইসলাম, পুলিশ সুপার মিনা মাহমুদা প্রমুখ।
দীর্ঘ কয়েকদিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ১টার দিকে ঢাকায় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় আট বছর বয়সী শিশুটি।
হাসপাতালের শিশু বিভাগের শিশুরোগের চিকিৎসাসংক্রান্ত নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (পিআইসিইউ) চিকিৎসা চলছিল তার। গতকাল বুধবার চিকিৎসাধীন অবস্থায় চারবার ও বৃহস্পতিবার আরও দু‘বার ‘কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট’ (আকস্মিকভাবে হৃৎস্পন্দন বন্ধ) হয় শিশুটির।
আট বছরের শিশুটি ৫ মার্চ মাগুরায় বোনের বাড়ি বেড়াতে গিয়ে গভীর রাতে ধর্ষণের শিকার হয়। শিশুটিকে প্রথমে মাগুরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে সেখান থেকে স্থানান্তর করা হয় ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে তার অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। পরে বৃহস্পতিবার রাতে অচেতন অবস্থায় শিশুটিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
অবস্থার অবনতি হলে শুক্রবার রাতে শিশুটিকে লাইফ সাপোর্ট দেওয়া হয়। অবস্থার আরও অবনতি হলে শনিবার (৮ মার্চ) বিকেলে শিশুটিকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) স্থানান্তর করা হয়। সেখানে তার চিকিৎসা চলছিল।
ধর্ষণের ঘটনায় শিশুটির মা বাদী হয়ে চারজনের নামে মামলা করেন। ধর্ষণের অভিযোগে শিশুটির ভগ্নিপতি সজিব (১৮), সজীবের ভাই রাতুল (১৭), তাদের বাবা হিটু মিয়া (৪২) ও মা জাবেদা বেগমকে (৪০) গ্রেপ্তার করে পুলিশ।