অবাঞ্ছিত বিদেশিদের রুখতে ও অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের শাস্তির বহর বাড়াতে কেন্দ্রীয় সরকার নতুন আইন প্রণয়নে উদ্যোগী হয়েছে। সেই লক্ষে৵ গত মঙ্গলবার লোকসভায় পেশ করা হয়েছে ‘অভিবাসন ও বিদেশি বিল ২০২৫’। এই বিল আনার মধ্য দিয়ে ব্রিটিশ আমলের তিনটি আইন বাতিল করা হবে। একই সঙ্গে বদল করা হবে ২০০০ সালে তৈরি অভিবাসন (পরিবহনকারীর দায়বদ্ধতা) আইনটিও। প্রচলিত চারটি আইনের বদলে সরকার একটি সংহত আইন আনতে চাইছে।

সরকারের দাবি, পুরোনো আইনগুলোর অনেক কিছুই একটি অন্যটির সঙ্গে জড়িয়ে আছে, যাকে ইংরেজিতে ‘ওভারল্যাপিং’ বলা যায়। এতে নানা ধরনের জটিলতা সৃষ্টি হয়। নতুন বিলে সেই জটিলতা দূর করা হয়েছে। ব্রিটিশ আমলের আইনগুলো হলো পাসপোর্ট আইন ১৯২০; বিদেশি নাগরিক আইন ১৯৪৬ ও রেজিস্ট্রেশন অব ফরেনার্স অ্যাক্ট, ১৯৩৯।

বিলটি লোকসভায় পেশ করেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিত্যানন্দ রাই। তিনি বলেন, চারটি আইন মিলিয়ে একটা নতুন আইন করতে চাইছে সরকার। এতে আইনগুলো সরল হবে।

বিরোধীরা অবশ্য সরকারের এই যুক্তি মানতে রাজি নন। বিল পেশের সময় কংগ্রেসের মণীশ তিওয়ারি, তৃণমূল কংগ্রেসের সৌগত রায়সহ অনেকেই আপত্তি তুলে বলেন, এই বিল আইন হলে তা হবে সংবিধান প্রদত্ত মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী। বিরোধীরা বলেন, এতগুলো আইন এত বছর ধরে দেশে চালু রয়েছে। তা সত্ত্বেও কেন নতুন এক আইন দরকার, সেটিই বোধগম্য নয়।

মণীশের দাবি, অপছন্দের বিদেশিদের যাতে দেশে প্রবেশমাত্র ফেরত পাঠানো যায়, সরকার নতুন বিলে তা নিশ্চিত করতে চাইছে। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, কৃষক আন্দোলনের সময় বহু বিদেশি কৃষকদের পাশে দাঁড়িয়ে সরকারের বিরোধিতা করেছিলেন। এ ধরনের সমালোচনাকারীদের ঠেকাতেই সরকারের নতুন বিল।

সৌগত রায়ের দাবি, এই আইন কার্যকর হলে প্রতিভাবান বিদেশিরা এ দেশে আসবেন না। তাতে মেধা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

নতুন বিলে বলা হয়েছে, কোনো বিদেশি যদি সরকারের চোখে বিপজ্জনক হয়, তা হলে অভিবাসন দপ্তর তাঁর এ দেশে প্রবেশ নিষিদ্ধ করতে পারবে। সেই বিদেশি জল, স্থল বা অন্তরীক্ষ থেকে যেভাবে দেশে প্রবেশ করতে চেয়েছিলেন, সেভাবেই তাঁকে ফেরত যেতে হবে এবং সেই দায় সরকার নেবে না। তাঁকে ফেরত পাঠানোর দায় থাকবে সংশ্লিষ্ট সংস্থার।

বিলে বলা হয়েছে, বিদেশিরা বায়োমেট্রিক তথ্য দিতে বাধ্য থাকবেন। ডাক্তারি পরীক্ষা দিতেও আপত্তি করতে পারবেন না। কোনো বিদেশি কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য এ দেশে এলে কিংবা কোনো ব্যক্তি বা সংগঠনের সঙ্গে জড়িত থাকলে অথবা কোনো হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য এলে, সেই ব্যক্তি সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য ওই ব্যক্তি বা সংগঠন সরকারকে জানাতে বাধ্য থাকবে।

বিলে আরও বলা হয়েছে, অবৈধভাবে দেশে ঢুকে পড়ে ধরা পড়লে গ্রেপ্তার ব্যক্তির ৫ বছর জেল ও ৫ লাখ টাকা জরিমানা হবে। জাল পাসপোর্ট ও জাল ভিসায় দেশে ঢুকে ধরা পড়লে ২ থেকে ৭ বছরের জেল হবে ও ১ থেকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা দিতে হবে। এ ছাড়া সন্দেহভাজন যেকোনো ব্যক্তিকে পরোয়ানা ছাড়াই গ্রেপ্তারের অধিকার থাকবে অভিবাসন দপ্তরের।

মোট কথা, কোনো বিদেশির এ দেশে উপস্থিতি সরকারের চোখে যদি অখণ্ডতা, সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা অথবা জনস্বাস্থ্যের পক্ষে বিপজ্জনক মনে হয়, তাহলে সরকার তাঁর বা তাঁদের প্রবেশ বা অবস্থান নিষিদ্ধ করতে পারবে। প্রস্থানও নিশ্চিত করতে পারবে।

বিরোধীরা মনে করছেন, পেশ হওয়া বিলের মূল লক্ষ্য বাংলাদেশ থেকে অবৈধভাবে আসা ব্যক্তিদের ধরপাকড় সহজ করা। আগামী বছর পশ্চিমবঙ্গ, আসাম ও বিহারের বিধানসভা নির্বাচন। বিজেপি চাইছে, এই বিল পাস করিয়ে সীমান্ত লাগোয়া এই রাজ্যগুলোয় ধর্মীয় মেরুকরণ আরও জোরালো করা। বিলটি আরও আলোচনা ও বিবেচনার জন্য যৌথ সংসদীয় কমিটিতে পাঠানোর দাবি জানানো হলেও সরকার তা মানেনি।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সরক র র প রব শ

এছাড়াও পড়ুন:

ইউক্রেনে সুমি শহরে রাশিয়ার হামলায় নিহত ৩৪, ‘ভয়াবহ ঘটনা’ বললেন ট্রাম্প

ইউক্রেনের সুমি শহরে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ৩৪ জন নিহত এবং ১১৭ জন আহত হওয়ার ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে কিয়েভের পশ্চিমা মিত্ররা। রাশিয়ার প্রাণঘাতী এই হামলার সমালোচনা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও।

সোমবার (১৪ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রবিবার মধ্যরাতে সুমি শহরের কেন্দ্রস্থলে দুটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানে, যা স্টেট ইউনিভার্সিটি এবং কংগ্রেস সেন্টারের কাছে বিস্ফোরিত হয়। রক্তাক্ত মৃতদেহ রাস্তায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে।

আরো পড়ুন:

রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ভারতীয় ওষুধ কোম্পানির গুদাম ধ্বংস

পুতিনের সঙ্গে ট্রাম্পের দূতের ৪ ঘণ্টা বৈঠক

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই হামলাকে ‘ভয়াবহ ঘটনা’ বলে বর্ণনা করেছেন, অন্যদিকে জার্মানির সম্ভাব্য চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্জ রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ করেছেন।

রাশিয়ার পক্ষ থেকে এই হামলার বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য পাওয়া যায়নি। রুশ বাহিনী কাছাকাছি সীমান্তের ওপারে একটি বড় হামলার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানা গেছে।

এই হামলাটি এমন এক সময় ঘটল, যখন ইউক্রেনের সবচেয়ে শক্তিশালী সামরিক মিত্র যুক্তরাষ্ট্র ট্রাম্পের নেতৃত্বে আলোচনার মাধ্যমে যুদ্ধের অবসান ঘটাতে চাচ্ছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের চতুর্থ বছর চলছে।

ট্রাম্প ওয়াশিংটনে ফিরে যাওয়ার সময় এয়ার ফোর্স ওয়ানে সাংবাদিকরা রাশিয়ার হামলা সম্পর্কে মন্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমি মনে করি, এটি ভয়াবহ ঘটনা এবং আমাকে বলা হয়েছে যে তারা ভুল করেছে।” কিন্তু ট্রাম্প এ ব্যাপারে বিস্তারিত কিছু বলেননি।

রোববার জেলেনস্কি রাশিয়ার আক্রমণের ফলে সৃষ্ট ধ্বংসযজ্ঞ আরো ভালোভাবে বোঝার জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্টকে তার দেশ সফর করার আহ্বান জানিয়েছেন।

ইউক্রেনীয় নেতা মার্কিন টেলিভিশন সিবিএসে সম্প্রচারিত এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “দয়া করে, যেকোনো ধরনের আলোচনার আগে, যেকোনো ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সামরিক ও বেসামরিক মানুষের ওপর রাশিয়ার হত্যাযজ্ঞ এবং হাসপাতাল ও গির্জায় ধ্বংসযজ্ঞ দেখতে আসুন।”

ফ্রিডরিখ মের্জ, যিনি আগামী মাসে জার্মানির নতুন চ্যান্সেলর হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে, তিনি জার্মানির সরকারি টেলিভিশন এআরডিকে বলেছেন, ইউক্রেনের সুমি শহরে রাশিয়া যে ধরণের হামলা চালিয়েছে তা একটি ‘গুরুতর যুদ্ধাপরাধ’।

জার্মানির বিদায়ী চ্যান্সেলর ওলাফ স্কোলজ বলেছেন, এই হামলাটি ‘শান্তির জন্য রাশিয়ার কথিত প্রস্তুতির আসল রূপ উন্মোচন করেছে’।

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ রাশিয়াকে ‘মানবজীবন, আন্তর্জাতিক আইন এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার প্রতি স্পষ্ট অবজ্ঞা’ করার জন্য অভিযুক্ত করেছেন।

ফরাসি প্রেসিডেন্ট বলেন, “রাশিয়াকে যুদ্ধবিরতিতে বাধ্য করার জন্য কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। ফ্রান্স তার অংশীদারদের সঙ্গে এই লক্ষ্যে অক্লান্ত পরিশ্রম করছে।”

আক্রমণটিকে ‘বর্বর’ বলে বর্ণনা করে ইউরোপীয় কমিশনের সভাপতি উরসুলা ভন ডের লেইন বলেছেন, “আন্তর্জাতিক আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন করে রাশিয়া আগ্রাসী ছিল এবং এখনও আছে।”

তিনি বলেন, “যুদ্ধবিরতি কার্যকর করার জন্য জরুরি ভিত্তিতে রাশিয়ার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। হামলা বন্ধ না হওয়া এবং ইউক্রেনের শর্তাবলী অনুসারে ন্যায়সঙ্গত ও স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত ইউরোপ অংশীদারদের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রাখবে এবং রাশিয়ার ওপর শক্তিশালী চাপ বজায় রাখবে।”

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের একজন মুখপাত্র বলেছেন, ক্ষেপণাস্ত্র হামলার খবর পেয়ে জাতিসংঘ প্রধান ‘গভীরভাবে উদ্বিগ্ন এবং হতবাক’।

তিনি বলেন, “আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের অধীনে বেসামরিক নাগরিক এবং বেসামরিক বস্তুর ওপর আক্রমণ নিষিদ্ধ।” তিনি আরো বলেন, “এই ধরনের যেকোনো আক্রমণ, যেখানেই ঘটুক না কেন, অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।”

রবিবারের জোড়া ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ছিল চলতি বছরে ইউক্রেনের বেসামরিক নাগরিকদের ওপর সবচেয়ে মারাত্মক আক্রমণ।

চলতি মাসের শুরুতে ৪ এপ্রিল ইউক্রেনের ক্রিভি রিহ শহরে আরেকটি রাশিয়ান ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ২০ জন নিহত এবং ৬১ জন আহত হন। সেসময় রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছিল যে, তারা একটি রেস্তোরাঁয় ‘ইউনিট কমান্ডার এবং পশ্চিমা প্রশিক্ষকদের’ একটি সভা লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে।

তবে এর স্বপক্ষে রাশিয়া কোনো প্রমাণ সরবরাহ করেনি ।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ