বিরোধীদের প্রতিবাদ সত্ত্বেও ভারতে নতুন ‘অভিবাসন ও বিদেশি বিল’ আনার উদ্দেশ্য কী
Published: 13th, March 2025 GMT
অবাঞ্ছিত বিদেশিদের রুখতে ও অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের শাস্তির বহর বাড়াতে কেন্দ্রীয় সরকার নতুন আইন প্রণয়নে উদ্যোগী হয়েছে। সেই লক্ষে৵ গত মঙ্গলবার লোকসভায় পেশ করা হয়েছে ‘অভিবাসন ও বিদেশি বিল ২০২৫’। এই বিল আনার মধ্য দিয়ে ব্রিটিশ আমলের তিনটি আইন বাতিল করা হবে। একই সঙ্গে বদল করা হবে ২০০০ সালে তৈরি অভিবাসন (পরিবহনকারীর দায়বদ্ধতা) আইনটিও। প্রচলিত চারটি আইনের বদলে সরকার একটি সংহত আইন আনতে চাইছে।
সরকারের দাবি, পুরোনো আইনগুলোর অনেক কিছুই একটি অন্যটির সঙ্গে জড়িয়ে আছে, যাকে ইংরেজিতে ‘ওভারল্যাপিং’ বলা যায়। এতে নানা ধরনের জটিলতা সৃষ্টি হয়। নতুন বিলে সেই জটিলতা দূর করা হয়েছে। ব্রিটিশ আমলের আইনগুলো হলো পাসপোর্ট আইন ১৯২০; বিদেশি নাগরিক আইন ১৯৪৬ ও রেজিস্ট্রেশন অব ফরেনার্স অ্যাক্ট, ১৯৩৯।
বিলটি লোকসভায় পেশ করেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিত্যানন্দ রাই। তিনি বলেন, চারটি আইন মিলিয়ে একটা নতুন আইন করতে চাইছে সরকার। এতে আইনগুলো সরল হবে।
বিরোধীরা অবশ্য সরকারের এই যুক্তি মানতে রাজি নন। বিল পেশের সময় কংগ্রেসের মণীশ তিওয়ারি, তৃণমূল কংগ্রেসের সৌগত রায়সহ অনেকেই আপত্তি তুলে বলেন, এই বিল আইন হলে তা হবে সংবিধান প্রদত্ত মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী। বিরোধীরা বলেন, এতগুলো আইন এত বছর ধরে দেশে চালু রয়েছে। তা সত্ত্বেও কেন নতুন এক আইন দরকার, সেটিই বোধগম্য নয়।
মণীশের দাবি, অপছন্দের বিদেশিদের যাতে দেশে প্রবেশমাত্র ফেরত পাঠানো যায়, সরকার নতুন বিলে তা নিশ্চিত করতে চাইছে। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, কৃষক আন্দোলনের সময় বহু বিদেশি কৃষকদের পাশে দাঁড়িয়ে সরকারের বিরোধিতা করেছিলেন। এ ধরনের সমালোচনাকারীদের ঠেকাতেই সরকারের নতুন বিল।
সৌগত রায়ের দাবি, এই আইন কার্যকর হলে প্রতিভাবান বিদেশিরা এ দেশে আসবেন না। তাতে মেধা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
নতুন বিলে বলা হয়েছে, কোনো বিদেশি যদি সরকারের চোখে বিপজ্জনক হয়, তা হলে অভিবাসন দপ্তর তাঁর এ দেশে প্রবেশ নিষিদ্ধ করতে পারবে। সেই বিদেশি জল, স্থল বা অন্তরীক্ষ থেকে যেভাবে দেশে প্রবেশ করতে চেয়েছিলেন, সেভাবেই তাঁকে ফেরত যেতে হবে এবং সেই দায় সরকার নেবে না। তাঁকে ফেরত পাঠানোর দায় থাকবে সংশ্লিষ্ট সংস্থার।
বিলে বলা হয়েছে, বিদেশিরা বায়োমেট্রিক তথ্য দিতে বাধ্য থাকবেন। ডাক্তারি পরীক্ষা দিতেও আপত্তি করতে পারবেন না। কোনো বিদেশি কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য এ দেশে এলে কিংবা কোনো ব্যক্তি বা সংগঠনের সঙ্গে জড়িত থাকলে অথবা কোনো হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য এলে, সেই ব্যক্তি সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য ওই ব্যক্তি বা সংগঠন সরকারকে জানাতে বাধ্য থাকবে।
বিলে আরও বলা হয়েছে, অবৈধভাবে দেশে ঢুকে পড়ে ধরা পড়লে গ্রেপ্তার ব্যক্তির ৫ বছর জেল ও ৫ লাখ টাকা জরিমানা হবে। জাল পাসপোর্ট ও জাল ভিসায় দেশে ঢুকে ধরা পড়লে ২ থেকে ৭ বছরের জেল হবে ও ১ থেকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা দিতে হবে। এ ছাড়া সন্দেহভাজন যেকোনো ব্যক্তিকে পরোয়ানা ছাড়াই গ্রেপ্তারের অধিকার থাকবে অভিবাসন দপ্তরের।
মোট কথা, কোনো বিদেশির এ দেশে উপস্থিতি সরকারের চোখে যদি অখণ্ডতা, সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা অথবা জনস্বাস্থ্যের পক্ষে বিপজ্জনক মনে হয়, তাহলে সরকার তাঁর বা তাঁদের প্রবেশ বা অবস্থান নিষিদ্ধ করতে পারবে। প্রস্থানও নিশ্চিত করতে পারবে।
বিরোধীরা মনে করছেন, পেশ হওয়া বিলের মূল লক্ষ্য বাংলাদেশ থেকে অবৈধভাবে আসা ব্যক্তিদের ধরপাকড় সহজ করা। আগামী বছর পশ্চিমবঙ্গ, আসাম ও বিহারের বিধানসভা নির্বাচন। বিজেপি চাইছে, এই বিল পাস করিয়ে সীমান্ত লাগোয়া এই রাজ্যগুলোয় ধর্মীয় মেরুকরণ আরও জোরালো করা। বিলটি আরও আলোচনা ও বিবেচনার জন্য যৌথ সংসদীয় কমিটিতে পাঠানোর দাবি জানানো হলেও সরকার তা মানেনি।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
বিরোধীদের প্রতিবাদ সত্ত্বেও ভারতে নতুন ‘অভিবাসন ও বিদেশি বিল’ আনার উদ্দেশ্য কী
অবাঞ্ছিত বিদেশিদের রুখতে ও অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের শাস্তির বহর বাড়াতে কেন্দ্রীয় সরকার নতুন আইন প্রণয়নে উদ্যোগী হয়েছে। সেই লক্ষে৵ গত মঙ্গলবার লোকসভায় পেশ করা হয়েছে ‘অভিবাসন ও বিদেশি বিল ২০২৫’। এই বিল আনার মধ্য দিয়ে ব্রিটিশ আমলের তিনটি আইন বাতিল করা হবে। একই সঙ্গে বদল করা হবে ২০০০ সালে তৈরি অভিবাসন (পরিবহনকারীর দায়বদ্ধতা) আইনটিও। প্রচলিত চারটি আইনের বদলে সরকার একটি সংহত আইন আনতে চাইছে।
সরকারের দাবি, পুরোনো আইনগুলোর অনেক কিছুই একটি অন্যটির সঙ্গে জড়িয়ে আছে, যাকে ইংরেজিতে ‘ওভারল্যাপিং’ বলা যায়। এতে নানা ধরনের জটিলতা সৃষ্টি হয়। নতুন বিলে সেই জটিলতা দূর করা হয়েছে। ব্রিটিশ আমলের আইনগুলো হলো পাসপোর্ট আইন ১৯২০; বিদেশি নাগরিক আইন ১৯৪৬ ও রেজিস্ট্রেশন অব ফরেনার্স অ্যাক্ট, ১৯৩৯।
বিলটি লোকসভায় পেশ করেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিত্যানন্দ রাই। তিনি বলেন, চারটি আইন মিলিয়ে একটা নতুন আইন করতে চাইছে সরকার। এতে আইনগুলো সরল হবে।
বিরোধীরা অবশ্য সরকারের এই যুক্তি মানতে রাজি নন। বিল পেশের সময় কংগ্রেসের মণীশ তিওয়ারি, তৃণমূল কংগ্রেসের সৌগত রায়সহ অনেকেই আপত্তি তুলে বলেন, এই বিল আইন হলে তা হবে সংবিধান প্রদত্ত মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী। বিরোধীরা বলেন, এতগুলো আইন এত বছর ধরে দেশে চালু রয়েছে। তা সত্ত্বেও কেন নতুন এক আইন দরকার, সেটিই বোধগম্য নয়।
মণীশের দাবি, অপছন্দের বিদেশিদের যাতে দেশে প্রবেশমাত্র ফেরত পাঠানো যায়, সরকার নতুন বিলে তা নিশ্চিত করতে চাইছে। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, কৃষক আন্দোলনের সময় বহু বিদেশি কৃষকদের পাশে দাঁড়িয়ে সরকারের বিরোধিতা করেছিলেন। এ ধরনের সমালোচনাকারীদের ঠেকাতেই সরকারের নতুন বিল।
সৌগত রায়ের দাবি, এই আইন কার্যকর হলে প্রতিভাবান বিদেশিরা এ দেশে আসবেন না। তাতে মেধা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
নতুন বিলে বলা হয়েছে, কোনো বিদেশি যদি সরকারের চোখে বিপজ্জনক হয়, তা হলে অভিবাসন দপ্তর তাঁর এ দেশে প্রবেশ নিষিদ্ধ করতে পারবে। সেই বিদেশি জল, স্থল বা অন্তরীক্ষ থেকে যেভাবে দেশে প্রবেশ করতে চেয়েছিলেন, সেভাবেই তাঁকে ফেরত যেতে হবে এবং সেই দায় সরকার নেবে না। তাঁকে ফেরত পাঠানোর দায় থাকবে সংশ্লিষ্ট সংস্থার।
বিলে বলা হয়েছে, বিদেশিরা বায়োমেট্রিক তথ্য দিতে বাধ্য থাকবেন। ডাক্তারি পরীক্ষা দিতেও আপত্তি করতে পারবেন না। কোনো বিদেশি কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য এ দেশে এলে কিংবা কোনো ব্যক্তি বা সংগঠনের সঙ্গে জড়িত থাকলে অথবা কোনো হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য এলে, সেই ব্যক্তি সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য ওই ব্যক্তি বা সংগঠন সরকারকে জানাতে বাধ্য থাকবে।
বিলে আরও বলা হয়েছে, অবৈধভাবে দেশে ঢুকে পড়ে ধরা পড়লে গ্রেপ্তার ব্যক্তির ৫ বছর জেল ও ৫ লাখ টাকা জরিমানা হবে। জাল পাসপোর্ট ও জাল ভিসায় দেশে ঢুকে ধরা পড়লে ২ থেকে ৭ বছরের জেল হবে ও ১ থেকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা দিতে হবে। এ ছাড়া সন্দেহভাজন যেকোনো ব্যক্তিকে পরোয়ানা ছাড়াই গ্রেপ্তারের অধিকার থাকবে অভিবাসন দপ্তরের।
মোট কথা, কোনো বিদেশির এ দেশে উপস্থিতি সরকারের চোখে যদি অখণ্ডতা, সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা অথবা জনস্বাস্থ্যের পক্ষে বিপজ্জনক মনে হয়, তাহলে সরকার তাঁর বা তাঁদের প্রবেশ বা অবস্থান নিষিদ্ধ করতে পারবে। প্রস্থানও নিশ্চিত করতে পারবে।
বিরোধীরা মনে করছেন, পেশ হওয়া বিলের মূল লক্ষ্য বাংলাদেশ থেকে অবৈধভাবে আসা ব্যক্তিদের ধরপাকড় সহজ করা। আগামী বছর পশ্চিমবঙ্গ, আসাম ও বিহারের বিধানসভা নির্বাচন। বিজেপি চাইছে, এই বিল পাস করিয়ে সীমান্ত লাগোয়া এই রাজ্যগুলোয় ধর্মীয় মেরুকরণ আরও জোরালো করা। বিলটি আরও আলোচনা ও বিবেচনার জন্য যৌথ সংসদীয় কমিটিতে পাঠানোর দাবি জানানো হলেও সরকার তা মানেনি।