ঝিনাইদহের মহেশপুরে বিএনপি ও জামায়াতের কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত ৬ জন আহত হয়েছেন। গতকাল বুধবার রাতে উপজেলার শ্যামকুড় মাদ্রাসা মোড় এলাকায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, গতকাল উপজেলার ভৈরবা বাজারে বিএনপির প্রতিবাদ সমাবেশ শেষে বাড়ি ফিরছিলেন নেতা-কর্মীরা। পথে শ্যামকুড় বাজার মাদ্রাসা মোড় এলাকায় পৌঁছালে তাঁদের সঙ্গে জামায়াত কর্মীদের কথা-কাটাকাটি হয়।

একপর্যায়ে উভয় পক্ষই সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এতে শ্যামকুড় গ্রামের জামায়াত কর্মী আব্দুল মুন্না, আবুল কাসেম ও শ্যামপুর নিন্দাপাড়ার বিএনপির সমর্থক শরিফুল ইসলামসহ ৬ জন আহত হন। এঁদের মধ্যে তিনজনকে মহেশপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এ ভর্তি করা হয়েছে।

মহেশপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফয়েজ উদ্দিন জানান, গতকাল একটি মারামারির ঘটনা ঘটেছিল। তবে এখন পর্যন্ত কেউ কোনো অভিযোগ দেয়নি। উভয় পক্ষ বিষয়টির সমাধানের চেষ্টা করছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ঘর ষ ব এনপ

এছাড়াও পড়ুন:

ফ্যাসিবাদী মুখাকৃতি সামনে রেখে শেষ হলো 'বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা'

নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) চারুকলা অনুষদের আয়োজনে রাজধানীতে পালিত হয়েছে বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা। এবার ফ্যাসিবাদী মুখাকৃতি মোটিফটি সবার সামনে রাখা হয়েছে। শোভাযাত্রার শুরুতে স্বজাতীয় নাচে গানে অংশ নিয়েছে ২৮টি জাতিগোষ্ঠী। এ ছাড়া রঙ বেরঙের পোশাকে আপামর জনতা, বিদেশি নাগরিকদেরও শোভাযাত্রায় অংশ নিতে দেখা গেছে।

আজ সোমবার সকাল ৯টা ৩ মিনিটে শোভাযাত্রাটি চারুকলার সামনে থেকে শুরু হয়। এরপর এটি শাহবাগ মোড়, টিএসসি, শহীদ মিনার, দোয়েল চত্বর, বাংলা একাডেমির সামনের রাস্তা দিয়ে সাড়ে ১০টায় পুনরায় চারুকলা অনুষদে গিয়ে শেষ হয়। শেষে মোটিফগুলো সবার দেখার জন্য চারুকলায় রাখা হয়েছে।

এবারের শোভাযাত্রাকে শুধু বাঙালির নয়, বাংলাদেশের প্রাণের উৎসব হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন সাংস্কৃতিক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।

শোভাযাত্রায় অংশ নিয়ে ফারুকী বলেন, এটাকে আমরা অনেকদিন বাঙালির প্রাণের উৎসব বানিয়ে রেখেছি। এটা শুধু বাঙালির প্রাণের উৎসব আর নয়। এটা বাংলাদেশের প্রাণের উৎসব। বাঙালি, চাকমা মারমা গারোসহ সকল জাতিগোষ্ঠী বর্ষবরণ পালন করে। ফলে আমরা এটাকে আমরা বাংলাদেশের উৎসব হিসেবে পালন করা শুরু করলাম।

তিনি আরও বলেন, আমি মনে করি, এটা বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ঐক্য এবং সম্মিলনের একটি বড় ধাপ। আমরা হয়ত ২০-৩০ বছর পর থাকবো না, কিন্তু আজকের বছরটি স্মরণীয় হয়ে থাকবে। কারণ, এরপর থেকে বাংলাদেশ এভাবেই চলবে।

শোভাযাত্রার শুরুতে মারমা, ম্রো, চাকমা, বম, খুমি, ত্রিপুরা, পাঙখুয়া, রাখাইন, তঞ্চঙ্গ্যা, মনিপুরী, খাসিয়া, চা জনগোষ্ঠীসহ ২৮টি জাতিগোষ্ঠী নিজস্ব জাতিগোষ্ঠীর নাচ গানে শোভাযাত্রায় অংশ নেয়। জাতিগোষ্ঠীর সঙ্গে ভাবুক দল নিয়ে অংশ নেয় ফরহাদ মজহার।

জাতিগোষ্ঠীর পরের অংশে ছিল শোভাযাত্রার মূল দল। এতে সাংস্কৃতিক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খান, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) সায়মা হক বিদিশা, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) মামুন আহমেদ, কোষাধ্যক্ষ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী প্রমুখ শোভাযাত্রার নেতৃত্ব দেন। তাদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার, বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন অংশ নিয়েছে।

উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ বলেন, এবারের প্রেক্ষাপটে ভিন্ন। একটু মুক্ত পরিবেশে আমরা একত্র হয়েছি। কিছু বাধা-ষড়যন্ত্র ছিল। তবে আমরা আল্লাহর সাহায্য নিয়ে প্রতিকূলতা অতিক্রম করেছি। আজকের দিনে কারো প্রতি বিরোধ নেই। পিছনে তাকাচ্ছি না, সামনে তাকাচ্ছি। আমাদের সামনে নতুন সুযোগ এসেছে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড, জাতি, ধর্ম, পেশা সব ক্ষেত্রে যত অবারিত অন্তর্ভুক্তিমূলক করা যায়। 

এরপরে হাতে বহনকারী ঘোড়ক দল অংশ নেয়। এরপরে প্রধান মোটিফগুলো রাখা হয়েছে।

মোটিফগুলোতে যথাক্রমে ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি, এরপরে যথাক্রমে বাকি ছয়টি প্রধান মোটিফ- বাঘ, মাছ, পাঁচটি পাতার শান্তির পায়রা, পালকি, গণঅভ্যুত্থানে মুগ্ধর ‘পানি লাগবে’, ৩৬ জুলাই, ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি জানিয়ে ‘তরমুজের পালি’ রাখা হয়েছে।

মোটিফের পরে রাখা হয়েছে ১০০ ফুটের পটচিত্রগুলো। পটচিত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে- পটচিত্র আকবর, পটচিত্র বেহুলা, গাজীর পট, পটচিত্র বনবিবি, পটচিত্র বাংলাদেশ ইত্যাদি।

এ ছাড়াও আপামর ছাত্রজনতা, ব্যান্ড দল, কৃষকদের একটি অংশ, রিকশা দল, ঘোড়ার গাড়ির দল অংশ নিয়েছে। শোভাযাত্রার একদম শুরুতে ছিল ডিএমপির অশ্বারোহী দল। এছাড়াও র‍্যাব, পুলিশের সোয়াট টিম, প্রক্টরিয়াল টিম নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিল।

শোভাযাত্রায় ‘হাসিনার বিচার কর’, ‘জুলাই গণহত্যার বিচার কবে?’, ‘ভারতের সঙ্গে সকল অসম চুক্তি বাতিল কর’, নদী বাঁচাও—ইত্যাদি প্ল্যাকার্ড দেখানো হয়। এ ছাড়া মাঝারি-ছোট সাইজের ১৪টি মোটিফ, নানা মুখোশ, চিত্র ইত্যাদি দেখানো হয়।

শোভাযাত্রা ছাড়াও ঢাবিতে ছিল নানা আয়োজন। সকাল ৮টায় কলা ভবনের সম্মুখে বটতলায় বর্ষবরণের আয়োজন করা হয়। ‘বরিষ ধরা মাঝে শান্তির বারি’ প্রতিপাদ্য নিয়ে বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ বর্ষকে স্বাগত জানিয়ে আয়োজনটি করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগ।

তবলায় নিরূপম প্রামাণিকের তবলায় কাননের বাঁশীবাদন অনুষ্ঠানের শুরুতে ‘আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে, এসো হে বৈশাখ এসো এসো’সহ নানা সংগীত পরিবেশন করা হয়। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সংগীত বিভাগের চেয়ারপারসন সহযোগী অধ্যাপক প্রিয়াঙ্কা গোপ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ