কক্সবাজারে মার্কিন নারীকে শ্লীলতাহানির মামলায় ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে অভিযোগপত্র দাখিল
Published: 13th, March 2025 GMT
কক্সবাজার শহরের হিলটপ সার্কিট হাউস সড়কে মার্কিন নারীকে শ্লীলতাহানির ঘটনায় করা মামলার তদন্ত শেষ করে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেছে পুলিশ। গতকাল বুধবার বিকেলে কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন কক্সবাজার সদর মডেল থানার পরিদর্শক ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আজিজুর রহমান।
মামলার একমাত্র আসামি তারিকুল ইসলাম প্রকাশ ওরফে ছুইল্যা তারেককে (২২) ১০ মার্চ বিকেল পাঁচটার দিকে পুলিশ শহরের ঝাউতলা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে। বর্তমানে তিনি কক্সবাজার জেলা কারাগারে আছেন। তারিকুল ইসলাম শহরের ১০ নম্বর ওয়ার্ডের মোহাজের পাড়ার বাসিন্দা।
পুলিশ জানায়, ১০ মার্চ সকাল সোয়া আটটার দিকে শহরের হিলটপ সার্কিট হাউস সড়কে হাঁটার সময় মার্কিন নারীকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরেন তারিকুল ইসলাম। এ সময় হইচই-চিৎকার শুরু হলে তারিকুল পালিয়ে যান। ওই দিন মার্কিন নারী বাদী হয়ে থানায় নারী ও শিশু নিযার্তনে আইনে মামলা করেন। মার্কিন নারীর স্বামী ২০১৮ সালের ২ জানুয়ারি থেকে জাতিসংঘের অধীনে একটি আন্তর্জাতিক সংস্থায় কর্মরত। সেই সুবাদে শহরের একটি ভাড়াবাসায় স্বামীর সঙ্গে থাকেন ওই নারী।
মার্কিন নারীকে শ্লীলতাহানির ঘটনায় করা মামলার তদন্ত শেষে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিলের বিষয়ে পুলিশ সুপার মো.
অভিযোগপত্রে বলা হয়, ১০ মার্চ সকাল সোয়া আটটার দিকে মার্কিন ওই নারী আরেকজন ভ্রমণসঙ্গীকে নিয়ে হিলটপ সার্কিট হাউস থেকে নামছিলেন। তারিকুল ইসলাম তাঁদের পেছন থেকে অনুসরণ করতে থাকেন। তারিকুলের পরনে ছিল হলুদ টি-শার্ট। কিছুক্ষণ পর তারিকুল হ্যালো বলে হ্যান্ডশেক করার জন্য মার্কিন নারীর দিকে হাত বাড়িয়ে দেন। মার্কিন নারী হ্যান্ডশেক না করে ‘থ্যাঙ্কইউ’ বলেন। পরে হঠাৎ তারিকুল পেছন থেকে ওই নারীকে জড়িয়ে ধরেন। এ সময় সঙ্গে থাকা ভ্রমণসঙ্গী তারিকুলকে মারধর করতে উদ্যত হলে এবং হইচই শুরু করলে তারিকুল পাহাড়ি ঢালু রাস্তা দিয়ে দৌড়ে পালিয়ে যান। নারী কণ্ঠের চিৎকার–চেঁচামেচি শুনে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে বিদেশি নারীকে উদ্ধার করে বাসায় পৌঁছে দেন। এরপর পুলিশ সড়কে লাগানো সিসিটিভি ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করে হলুদ টি-শার্ট পরা তারিকুলকে শনাক্ত করে। টানা ছয় ঘণ্টা অভিযান চালানোর পর ওই দিন বিকেল পাঁচটার দিকে শহরের ঝাউতলার রেডিয়েন্ট ফিশ ওয়ার্ল্ড এলাকা থেকে তারিকুলকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইলিয়াস খান প্রথম আলোকে বলেন, তারিকুল ইসলাম অসৎ উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য মার্কিন ওই নারীর শ্লীলতাহানি ঘটিয়েছেন। আদালতে জবানবন্দি দিয়ে দায় স্বীকার করেছেন তারিকুল। তা ছাড়া মামলার সার্বিক তদন্ত, সাক্ষ্যপ্রমাণ, আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে মার্কিন নারীকে যৌন হয়রানির ঘটনায় তারিকুলের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। যেহেতু ঘটনাটা গুরুত্বপূর্ণ, সে বিবেচনায় পুলিশ ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে মামলার তদন্ত সম্পন্ন করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করার রেকর্ড করেছে।
ওসি মো. ইলিয়াস খান বলেন, ২০২২ সালের ১৩ নভেম্বর শহরের পাঁচ বছর বয়সী এক শিশুকে ধর্ষণ করেছিলেন তারিকুল ইসলাম। এ ঘটনায় তাঁর বিরুদ্ধে কক্সবাজার সদর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা হয়েছিল। টানা কয়েক মাস কারাগারে ছিলেন। এরপর জামিনে মুক্ত হয়ে আবার অপকর্মে জড়িয়ে পড়েন।
রাজমিস্ত্রির সহকারী থেকে কারাগারে১১ মার্চ কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন তারিকুল ইসলাম। ছয় মাস ধরে তিনি রাজমিস্ত্রির সহকারী (হেলপার) হিসেবে কাজ করছিলেন। কাজ করে প্রতিদিন আয় করেন ৬০০ টাকা। তিন ভাইয়ের মধ্যে তিনি মেজ। ঘটনার দিন সকাল সাতটার দিকে তিনি কাজের সন্ধানে বের হন। মোহাজের পাড়ার টমটম স্টেশনে কন্ট্রাক্টর রিফাতের সঙ্গে দেখা করতে যান। রিফাতকে না পেয়ে পূর্ব মোহাজের পাড়ার মিস্ত্রি ওসমানের বাসায় যান। ওসমান কাজের জন্য ঝাউতলার ফিশ ওয়ার্ল্ডে মিস্ত্রি ইলিয়াছের সঙ্গে যেতে বলেন। কাজের জন্য সকাল আটটার দিকে মোহাজের পাড়ার বাড়ি থেকে মসজিদের পাশের গলি দিয়ে হিলটপ সার্কিট হাউসে ওঠেন। তখন তিনি বিদেশি দুজন নারীকে জগিং করতে দেখেন। দুই নারী তাঁর সামনে ছিলেন। এ সময় দুই নারীকে অতিক্রম করে সামনে চলে যান। ‘হ্যালো’ বলে হ্যান্ডশেকের জন্য এক নারীর দিকে হাত বাড়িয়ে দেন তিনি। ‘হ্যান্ডশেক’ না করে ধন্যবাদ বলেন ওই নারী। এরপর হঠাৎ ওই মার্কিন নারীকে জড়িয়ে ধরেন তিনি। তখন ওই নারী চিৎকার দিলে দ্রুত ওই এলাকা ছেড়ে কাজের স্থান ফিশ ওয়ার্ল্ড এলাকায় চলে যান। পরে বিকেলে সেখান থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায় পুলিশ।
আরও পড়ুনকক্সবাজারে মার্কিন নারীকে শ্লীলতাহানির অভিযোগে তরুণ গ্রেপ্তার১০ মার্চ ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ত র ক ল ইসল ম গ র প ত র কর ন ওই ন র ১০ ম র চ ন র ঘটন র জন য শহর র ঘটন য়
এছাড়াও পড়ুন:
ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দামের বাড়ির একটি ঘরে আগুন
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেনের বাড়ির একটি খড়ের ঘরে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল সোমবার দিবাগত গভীর রাতে (দেড়টায়) পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলার বলরামপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ সাতখামার এলাকায় সাদ্দামের গ্রামের বাড়ির প্রাচীর সংলগ্ন একটি খড় ও খড়ি রাখার ঘরে এ ঘটনা ঘটে। প্রায় এক ঘণ্টার চেষ্টায় বোদা ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে তার মূল বাড়ির কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। আগুনের সূত্রপাত কিভাবে হয়েছে তা নিশ্চিত হতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস।
এ দিকে সাদ্দামের বাড়ির অগ্নিকাণ্ডের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক বিভিন্ন পেজে শেয়ার করা হয়েছে। একইসঙ্গে তার পরিবারের সদস্যরা কোনোভাবে জীবন রক্ষা পেয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিস জানায়, বাড়ির প্রাচীর সংলগ্ন একটি খড় ও খড়ি রাখার ঘরে অগ্নিকাণ্ডের খবর শুনে ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে যায়। প্রায় এক ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। মধ্য রাতে ওই ঘরে আগুন দেখতে পেয়ে ছুটে আসেন প্রতিবেশী ও স্থানীয়রা। তারা আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন এবং ফায়ার সার্ভিসে খবর দেন।
সাদ্দাম হোসেনের মা আনোয়ারা বেগম বলেন, মধ্যরাতে কে বা কারা আমাদের খড়ের ঘরে আগুন দেয়। প্রতিবেশীরা আগুন দেখতে পেয়ে চিৎকার করেন। আশপাশের লোকজন ছুটে এসে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন। পরে সেনাবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। সময়মত তারা না আসলে আগুন আমাদের থাকার ঘরেও লাগতো। আমার স্বামী ৩ বছর ধরে বিছানায় পড়ে রয়েছেন। আমরা এখন খুবই নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। আমরা চাই, প্রশাসন এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা তদন্ত করে কারা আগুন দিয়েছে তা খুঁজে বের করুক এবং শাস্তির ব্যবস্থা করুক।
বোদা ফায়ার সার্ভিসের ওয়্যার হাউজ ইন্সপেক্টর রায়হান ইসলাম বলেন, আমাদের দুটি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এতে ১ লাখ টাকার মতো ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করেছি। তবে আগুনের সূত্রপাত এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
আটোয়ারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম সরকার বলেন, ‘এ বিষয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি হয়েছে। কে বা কারা আগুন দিয়েছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’