২৬ বলে ফিফটি এনামুলের, অমিতের ব্যাটে ৮৮ রান
Published: 13th, March 2025 GMT
ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে এনামুল হকের ব্যাটে আরও একটি হাফ সেঞ্চুরি, জয় পেয়েছে তাঁর দল গাজী গ্রুপও। প্রথম ম্যাচে চমকে দেওয়া গুলশান ক্রিকেট ক্লাব মাঝে হারের পর আবার জয়ে ফিরেছে। টানা দ্বিতীয় ম্যাচ হেরেছে ধানমন্ডি ক্লাব।শাইনপুকুরকে হারিয়ে তিনে গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স
প্রথম দুই ম্যাচে শূন্য রানে ফেরা এনামুল হক এবার টানা দুই ম্যাচে করলেন ফিফটি। আজ তাঁর দল গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স ৮ উইকেটে শাইনপুকুর ক্রিকেট ক্লাবকে হারিয়ে পয়েন্ট তালিকার তিনে উঠে এসেছে।
টস হেরে ব্যাট করতে নেমে শাইনপুকুর ৪৫.
১৬২ রানের লক্ষ্য ১৭.৫ ওভারেই তাড়া করে ফেলে গাজী গ্রুপ। দলটির হয়ে ওপেনিংয়ে নামা অধিনায়ক এনামুল ফিফটি করেন ২৬ বলে। ৮ চার ও ২ ছক্কায় ৫২ রানের ঝোড়ো ইনিংস খেলে আউট হন দশম ওভারে। আরেক ওপেনার সাদিকুর রহমান করেন ৩০ বলে ৫০ রান। দুজনের বিদায়ের পর সালমান হোসেন (২৬ বলে ২৩) ও শামসুর রহমান (২৪ বলে ৩৩) অপরাজিত থেকে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন।
আবার বড় হার ধানমন্ডি ক্লাবেরদুই জয়ে টুর্নামেন্ট শুরু করা ধানমন্ডি স্পোর্টস ক্লাব শেষ দুই ম্যাচে বড় ব্যবধানে হেরেছে। আগের ম্যাচে গাজী গ্রুপের কাছে ১৭৫ রানের হারের পর আজ সাভারের বিকেএসপিতে ৫ উইকেটে হেরেছে অগ্রণী ব্যাংকের কাছে।
টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ৩৩.৫ ওভারে ১১৫ রানে অলআউট হয় ধানমন্ডি ক্লাব। ৪০ বলে খেলে দলটির পক্ষে সর্বোচ্চ ৩৫ রান করেন মঈন খান। এর বাইরে ব্যক্তিগত সংগ্রহ দুই অঙ্কে নিতে পারেন তিনজন— নুরুল হাসান (৩৪ বলে ২২), সানজামুল ইসলাম (২৪ বলে ১৮) ও জাকিরুল আহমেদ (৫০ বলে ১৯)। অগ্রণী ব্যাংকের পেসার রবিউল হক ৫.৫ ওভার বল করে ১৪ রান দিয়ে ৪ উইকেট তুলে নেন, দুই উইকেট করে নেন আরিফ আহমেদ ও তাইবুর রহমান।
রান তাড়ায় নেমে ২৬ রানে তিন উইকেট হারিয়ে ফেলেছিল অগ্রণী ব্যাংকও। তবে শেষ পর্যন্ত মার্শাল আইয়ুবের ৯২ বলে ৫১ রানের অপরাজিত ইনিংসে ভর করে জয় নিয়েই মাঠ ছেড়েছে ক্লাবটি। ৪ ম্যাচে ৩ জয় নিয়ে অগ্রণী ব্যাংক পয়েন্ট তালিকার পাঁচে আছে, দুই জয় পাওয়া ধানমন্ডি এখন সাতে।
গুলশান ক্লাব আবার জিতলপ্রথম ম্যাচে মোহামেডানকে হারিয়ে চমকে দিয়েছিল প্রিমিয়ার লিগে নবাগত গুলশান ক্রিকেট ক্লাব। কিন্তু পরের দুই ম্যাচে হেরে যায় তারা। চতুর্থ ম্যাচে এসে নিজেদের দ্বিতীয় জয় পেয়েছে দলটি। রূপগঞ্জ টাইগার্সকে হারিয়েছে ৬ উইকেটে।
টস হেরে ব্যাট করতে নেমে পুরো ৫০ ওভার খেলে ৯ উইকেট হারিয়ে ২১৪ রান করে রূপগঞ্জ। দলটির হয়ে ১০৮ বলে সর্বোচ্চ ৮৮ রান করেন ওপেনার অমিত মজুমদার। ৩৫ বলে ৪০ রান আসে আরিফুল হকের ব্যাট থেকে। ১০ ওভারে ৫৩ রান দিয়ে চার উইকেট নেন আসাদুজ্জামান।
রান তাড়ায় নেমে ৯৫ রানের উদ্বোধনী জুটি পায় গুলশান। ৩৭ বলে ৪০ রান করে ফাহাদ হোসেনের বলে আজিজুল হাকিম ক্যাচ দিলে জুটি ভাঙে। ৭৫ বলে ৯ চারে ৬৭ রান করেন আরেক ওপেনার জাওয়াদ আবরার।
এরপর কাজটা সহজই হয়ে গিয়েছিল গুলশানের জন্য। খালিদ হাসান ৮১ বলে ৪৩ রান করে আউট হন। আর ইফতেখার হোসেন ২৮ বলে ২৫ রান করে দলের জয় নিশ্চিত করে মাঠ ছাড়েন।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র ন কর ন ধ নমন ড উইক ট দলট র
এছাড়াও পড়ুন:
নির্বাচনের লক্ষ্যে দ্রুত সংস্কারের তাগিদ
আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে রাষ্ট্রের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কারের কাজ দ্রুত সম্পন্ন করার তাগিদ দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গতকাল শনিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ ও সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদারের সঙ্গে বৈঠকে এ তাগিদ দেন তিনি।
বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা চলতি বছর ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কথা বলেন। বৈঠকের পর রাতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এমনটি জানানো হয়। তবে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিটি একাধিকবার সংশোধন করায় নির্বাচনের সময়কাল নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়।
গতকাল সন্ধ্যা ৭টা ৫৭ মিনিটে প্রেস উইংয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ঐকমত্য কমিশনের বরাত দিয়ে জানানো হয়, ‘আগামী ডিসেম্বর মাসে জাতীয় নির্বাচনের লক্ষ্য নিয়ে সংস্কার কার্যক্রম দ্রুত এগিয়ে নেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।’ রাত ৯টা ১৩ মিনিটে তাতে সংশোধনী আনা হয়। এর পর রাত ৯টা ২১ মিনিটে সংশোধনীতে প্রেস উইং জানায়, ভুলবশত কেবল ডিসেম্বর মাস উল্লেখ করা হয়েছিল। প্রকৃতপক্ষে আগামী ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের লক্ষ্য নিয়ে সংস্কার কার্যক্রম এগিয়ে নিতে তাগিদ দিয়েছেন ড. ইউনূস।
নির্বাচনের এই সময়সীমা নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ সমকালকে বলেন, সর্বশেষ আমরা যখন প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করি, তখন তিনি ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের আশ্বাস দিয়েছেন। আমরা তাঁকে বিষয়টি জনগণের সামনে উপস্থাপন করার জন্য বলেছিলাম। কিন্তু তিনি সেটি না করে বিভিন্ন দল ও সংগঠনের সুরে নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে নানা কথা বলছেন। এ অবস্থায় আমরা আবারও প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করব। আগামী বুধবার তাঁর সঙ্গে বৈঠক শেষে এ বিষয়ে মন্তব্য করা যাবে।
এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সমকালকে বলেন, ড. ইউনূস চার মাস ধরেই বলে আসছেন, ২০২৫ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে। এ নিয়ে বিভ্রান্তির কিছু নেই। নির্বাচন ওই সময়সীমাতেই হবে। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে শুধু ডিসেম্বর ভুলবশত উল্লেখ করা হয়েছিল।
প্রধান উপদেষ্টার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজেও রাত পৌনে ৯টার দিকে জানানো হয়েছিল, ডিসেম্বরে নির্বাচন আয়োজনে সংস্কার সম্পন্ন করার তাগিদ দিয়েছেন ড. ইউনূস। ১৮ মিনিট পর তা সংশোধন করে জানানো হয়, ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন।
জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, ‘প্রেস উইংয়ের বক্তব্যে আমি খুব বেশি অবাক হইনি। কারণ, আগেও প্রধান উপদেষ্টা এক রকম কথা বলার পর তাঁর প্রেস উইং ভিন্ন কথা বলেছে নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে। এবারও সে রকম ঘটনা ঘটল।’
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সাড়ে ১৫ বছরের কর্তৃত্ববাদী শাসনের পতনের পর সরকারের দায়িত্ব নেওয়া ড. ইউনূস ঐকমত্য কমিশনেরও সভাপতি। গত ১২ ফেব্রুয়ারি তাঁর নেতৃত্বে ছয় মাস মেয়াদি এ কমিশন গঠিত হয়। আগে গঠিত পাঁচ সংস্কার কমিশনের ১৬৬ সুপারিশে ইতোমধ্যে ৩৩টি রাজনৈতিক দলের মতামত নিয়েছে ঐকমত্য কমিশন। এখন এসব দলের সঙ্গে চলছে আলোচনা। আগামী বৃহস্পতিবার বিএনপির সঙ্গে আলোচনার কথা রয়েছে। নির্বাচনের রোডম্যাপের দাবিতে এর আগের দিন ১৬ এপ্রিল ড. ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন দলটির নেতারা।
গতকাল বিকেল সাড়ে ৫টা থেকে সরকারপ্রধানের সঙ্গে ঘণ্টাখানেক বৈঠক করেন আলী রীয়াজ ও বদিউল আলম মজুমদার। বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন ঐকমত্য কমিশনের সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করা প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার। তিনি সমকালকে বলেন, প্রধান উপদেষ্টা সময় নষ্ট না করে দ্রুত সংস্কারকাজ শেষ করতে বলেছেন। ঐকমত্য কমিশনের বরাত দিয়ে প্রথম সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে শুধু ডিসেম্বর মাস উল্লেখের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এখানে বিভ্রান্তির কিছুই নেই।’
গত ১৫ ফেব্রুয়ারি ঐকমত্য কমিশনের প্রথম সভায় সরকারপ্রধান জানিয়েছিলেন, রাজনৈতিক দলগুলো যেসব সুপারিশে একমত হবে, তা নিয়ে তৈরি হবে জুলাই সনদ। এর ভিত্তিতেই বাস্তবায়ন করা হবে সংস্কারের সুপারিশ।
এর আগে গত ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রথমবারের মতো ড. ইউনূস জানিয়েছিলেন, ছোট সংস্কার হলে আগামী ডিসেম্বরে নির্বাচন হবে। বড় সংস্কার হলে নির্বাচন হবে ২০২৬ সালের জুনে। পরের চার মাসে তিনি দেশে-বিদেশে একই কথা বলেছেন।
বিএনপি ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চাচ্ছে। এ সময়ের মধ্যে নির্বাচন নিশ্চিত করতে দলটির কয়েক নেতা আন্দোলনের কথাও বলেছেন। দলটির ভাষ্য, নির্বাচন বিলম্বের ষড়যন্ত্র হচ্ছে। প্রতিদিনই বিএনপি নেতারা বলছেন, স্থিতিশীলতার জন্য নির্বাচন প্রয়োজন।
জামায়াতে ইসলামী আগে সংস্কারে জোর দিলেও সম্প্রতি বলেছে, তারাও নির্বাচনের রোডম্যাপ চায়। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের নেতাদের উদ্যোগে গঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) অবশ্য এখনও সংস্কারে জোর দিচ্ছে।
ঐকমত্য কমিশন জানিয়েছে, আগামী মাসের প্রথম দিকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রথম দফার সংলাপ শেষ হবে। দলগুলো যেসব সুপারিশে একমত হয়নি, সেগুলো নিয়ে আলোচনা চলছে। এর পর দ্বিতীয় দফার সংলাপ হবে। আগামী জুলাই-আগস্টের মধ্যে পুরো কাজ শেষ হবে। তার পর সংস্কার বাস্তবায়ন শুরু করবে সরকার।
গতকালের বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টাকে ঐকমত্য কমিশন জানায়, সংস্কারের জন্য জনমত যাচাই এবং জনসচেতনতা সৃষ্টিতে কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।
জানতে চাইলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার গতকাল রাতে সমকালকে বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনের ব্যাপারে খুবই সিরিয়াস। বৈঠকে তিনি আমাদের কাছে সংস্কার কার্যক্রমের খোঁজখবর নেন। জানানোর পরে তিনি এটি দ্রুত শেষ করার তাগিদ দেন।’
প্রেস উইংয়ের বিজ্ঞপ্তির বিষয়ে জানতে চাইলে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টার তাগিদে আমার কাছে মনে হয়েছে, তিনি ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচনের ব্যাপারে উদগ্রীব। আর সেভাবেই সংস্কার কার্যক্রম দ্রুত শেষ করতে বলেছেন।’
জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল হালিম সমকালকে বলেন, নির্বাচন বিলম্বিত হোক তা জামায়াত চায় না। ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচনের যে প্রতিশ্রুতি সরকারপ্রধান দিয়েছেন, এ সময়ের মধ্যে ভোট হতে হবে।
জানতে চাইলে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব সমকালকে বলেন, ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচনের যে সময়সীমা সরকারপ্রধান দিয়েছেন, এতে দ্বিমত নেই। তবে নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের বিচার দৃশ্যমান হতে হবে। সংবিধান, বিচার বিভাগ ও নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার হতে হবে। নির্বাচন কমিশনের আচরণ নিরপেক্ষ নয়। তাদের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে হবে।