স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে ‘ব্যর্থ’ চিহ্নিত করে তাঁর পদত্যাগ, পুলিশের রমনা জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) আবদুল্লাহ আল মামুনকে অপসারণের দাবি জানিয়েছেন ‘ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ’ প্ল্যাটফর্মের শিক্ষার্থীরা।

হামলায় জড়িত পুলিশ সদস্যদের তদন্ত সাপেক্ষে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, ধর্ষক-নিপীড়কদের বিচারসহ বিভিন্ন দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানান ‘ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ’ প্ল্যাটফর্মের শিক্ষার্থীরা।

‘ধর্ষণ ও নিপীড়নবিরোধী ৯ দফা দাবিতে গণপদযাত্রা ও প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি দেওয়ার কর্মসূচিতে পুলিশি হামলা, আন্দোলনের সংগঠকদের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও অন্যায্য মামলা এবং হামলার পর সংঘবদ্ধ অপপ্রচারকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আমাদের বক্তব্য’ শিরোনামে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে ইডেন মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী স্কাইয়া ইসলাম লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান। এতে অভিযোগ করা হয়, গত মঙ্গলবার ‘ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ’ প্ল্যাটফর্মের উদ্যোগে ৯ দফা দাবিতে পদযাত্রা ও প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি দেওয়ার শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে পুলিশ প্রথমে হামলা করেছে।

লিখিত বক্তব্যে আরও অভিযোগ করা হয়, ‘মঙ্গলবার ধর্ষণ ও নারী নিপীড়নবিরোধী মিছিল আটকানোর জন্য ডিএমপি প্রথমে কোনো নারী পুলিশ রাখেনি, পুরুষ পুলিশরা নারী শিক্ষার্থীদের ওপর খুবই নৃশংস কায়দায় হামলা করেছে। এ হামলায় অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন। ধর্ষণ ও নিপীড়নবিরোধী আন্দোলনে নারীদের ওপর এসি মামুনের ন্যক্কারজনক হামলা আবারও পুলিশের গণবিরোধী চরিত্রের উন্মোচন ঘটাল। আন্দোলনকারীরা আত্মরক্ষার্থে পুলিশকে মোকাবিলা করেছে এবং কয়েকজন পুলিশ সদস্যও এতে আহত হয়েছেন বলে আমরা জানতে পেরেছি, যা অপ্রত্যাশিত।’

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, এই হামলার দায় পুলিশ-প্রশাসনসহ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে নিতে হবে। এই হামলা চলমান আন্দোলনের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে অপসারণের দাবির যথার্থতা প্রমাণ করে। এই নৃশংস পুলিশি হামলার পর ন্যায্য আন্দোলনকে বিতর্কিত করতে একদল মানুষ সংঘবদ্ধভাবে উসকানিমূলক অপপ্রচারে লিপ্ত হয়েছেন। বিভিন্ন ছবি ও খণ্ডিত ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করে এই হামলাকে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। এই মিথ্যা ও খণ্ডিত অপপ্রচারে অনেকে বিভ্রান্তও হয়েছেন।

মঙ্গলবারের ঘটনায় গতকাল বুধবার রমনা থানায় একজন সাংবাদিকসহ আন্দোলনকারী ১২ শিক্ষার্থী ও অজ্ঞাতনামা ৭০-৮০ জনের নামে ‘মিথ্যা মামলা’ করা হয়েছে উল্লেখ করে ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ বলেছে, ‘অবাক হতে হয়, যখন দেখি সেই কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন না, এমন কয়েকজনের নামেও মামলা দেওয়া হয়েছে। পুলিশ ক্ষমতার অপব্যবহার করে গণহারে এই মামলা করেছে।’

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সীমা আক্তার, জোহরা নাজিফা, অর্থি আনজুম, ইডেন কলেজের শিক্ষার্থী তিলোত্তমা ইতি, সুমাইয়া আক্তার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের অনেকে বিভিন্ন বামপন্থী ছাত্রসংগঠনের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত।

লিখিত বক্তব্য পাঠের পর সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন নারী শিক্ষার্থীরা। এক প্রশ্নের উত্তরে তিলোত্তমা বলেন, ‘আমাদের শাহবাগী বা ফ্যাসিবাদের দোসর বলে ট্যাগ দেওয়া হচ্ছে। অথচ আমরা জুলাই অভ্যুত্থানে সামনের সারিতে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছি। ফ্যাসিস্টের দোসর হলে তো আমরা জুলাই আন্দোলনে অংশ নিতাম না, ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতাম না। ট্যাগিংয়ের রাজনীতি বন্ধ না হলে জুলাই অভ্যুত্থানের স্পিরিট দ্রুত নষ্ট হয়ে যাবে।’

মামলা-হামলাকে ‘ডাইভার্ট’ করতে মিথ্যা মামলা ও অপপ্রচার করা হচ্ছে বলে এক প্রশ্নের জবাবে মন্তব্য করেন সুমাইয়া আক্তার।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: হয় ছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

সন্তানকে পেয়ে আনন্দাশ্রু বাধ মানছে না তুষার-শান্তা দম্পতির

বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন পহেলা বৈশাখ উদযাপনে তখন ব্যস্ত সারাদেশ। চলছে শোভাযাত্রা, মেলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ নানা আয়োজন। কিন্তু এ দিনে একটি নবজাত শিশুকে ঘিরে আরও আনন্দের বন্যা বয়ে গেছে কুমিল্লায় আহসান হাবিব তুষার ও শামীমা আক্তার শান্তা দম্পতির ঘরে, তার কাছে যেন বাইরের সব আয়োজন ফিকে। পহেলা বৈশাখের সকালেই তাদের কোলজুড়ে এসেছে দ্বিতীয় কন্যাসন্তান। শিশুটিকে ঘিরে আনন্দাশ্রু যেন বাঁধ মানছে না বাবা-মার। দাদার দেওয়া নামে শিশুটির নাম রাখা হয়েছে সুফিয়া আহসান রোয়া। তুষার ও শান্তার চাওয়া, তাদের দুই মেয়ে প্রথমে হোক ভালো মানুষ, পরে একজন চিকিৎসক।

গত সোমবার ভোর সাড়ে ৬টায় দেবিদ্বার উপজেলা সদরের সেন্ট্রাল হসপিটালে সিজারিয়ানের মাধ্যমে কন্যাসন্তানের জন্ম দেন শান্তা। এ হাসপাতালটি তুষারের পারিবারিক যৌথ মালিকানায় পরিচালিত হচ্ছে। এ দম্পতির ৯ বছর বয়সী আরেকটি কন্যাসন্তান আছে। ব্যবস্থাপনা বিষয়ে অনার্স শেষ করা তুষার পেশায় একটি প্রতিষ্ঠানের বিক্রয় পরিবেশক। উচ্চ মাধ্যমিক পাস করা তাঁর স্ত্রী শান্তা প্যাথলজি ডিপ্লোমা সম্পন্ন করেছেন। তুষার দেবিদ্বার উপজেলা সদরের নিউমার্কেট এলাকার ব্যবসায়ী মো. সেলিমের ছেলে। শান্তা একই উপজেলার বাঙ্গুরী এলাকার বাসিন্দা। তাদের তিন বছরের প্রেমের সম্পর্ক বিয়েতে পরিণতি পায় ২০১৪ সালে। বিয়ের পর ২০১৬ সালে দেবিদ্বার সেন্ট্রাল হসপিটালেই তাদের প্রথম কন্যাসন্তানের জন্ম। এবার বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনে ঘর আলো করে এসেছে দ্বিতীয় সন্তান রোয়া।
 
তুষার বলেন, নববর্ষের কাছাকাছি সময়ে আমার স্ত্রীর প্রসবের সময় ছিল। কিন্তু পহেলা বৈশাখের বিশেষ দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে এ দিনেই সিজার করতে আমরা চিকিৎসকের মতামত নিয়েছিলাম। চিকিৎসকও সিজারিয়ানের জন্য নববর্ষকেই বেছে নেন। এ দিনে সন্তানের জন্ম হওয়ায় আমরা খুব খুশি। ওর জন্মদিন উদযাপনে কাউকে আর তারিখ মনে করিয়ে দিতে হবে না। 

তুষার আরও বলেন, আমাদের প্রথম বাচ্চা হয়েছে সিজারিয়ানের মাধ্যমে। তাই দ্বিতীয় বাচ্চার ক্ষেত্রেও চিকিৎসক স্বাভাবিক প্রসবের ঝুঁকি নেননি। শান্তার গাইনি সার্জন ছিলেন আমার চাচি ডা. হনুফা আক্তার। হাসপাতাল কম্পাউন্ডে আমাদের বাসা হওয়ায় নিয়মিত ডা. হনুফার তত্ত্বাবধানে আমার স্ত্রী চিকিৎসা ও পরামর্শ নিতেন। তবু মনে শঙ্কা তো ছিলই। অপারেশন থিয়েটারের সামনে মা-বাবা ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনসহ ঠায় দাঁড়িয়ে ছিলাম। মনে মনে আল্লাহকে ডেকেছি, যেন কোনো দুর্ঘটনা না ঘটে। আমার মা যখন বাচ্চা কোলে নিয়ে অপারেশন থিয়েটার থেকে বের হন, তখন সব দুশ্চিন্তা দূর হয়। বাচ্চার জন্য নতুন কাপড়, তোয়ালে উপহার দিয়েছে আমার বোনসহ শ্বশুরবাড়ির লোকজন। 

শান্তা বলেন, স্থানীয় রীতি অনুসারে আমি সন্তান সম্ভবা হওয়ার ৯ মাসের মাথায় আত্মীয়স্বজনকে নিয়ে বিশেষ খাবার ও দোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছি। এখন বাচ্চার জন্য দোয়া কামনায় সাত দিন বয়সের সময় আবার অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। 

হাসপাতালের আবাসিক গাইনি সার্জন হনুফা আক্তার বলেন, প্রসূতি শান্তা আমার তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। যেন কোনো ঝুঁকিতে না পড়তে হয় এবং গর্ভের সন্তান যেন ভালো থাকে এ বিষয়ে শান্তা ও তুষার আগে থেকেই চেম্বারে এসে নিয়মিত ফলোআপ করতেন। এ ক্ষেত্রে স্বামীদের যতটুকু সচেতন থাকা দরকার, তুষার তার শতভাগ ছিলেন। নবজাতকের ওজন সাধারণত আড়াই কেজি হলেও সমস্যা নেই। শান্তা ও তুষারের মেয়ের ওজন হয়েছে ২ কেজি ৯০০ গ্রাম; যা একজন সুস্থ নবজাতকের জন্য যথেষ্ট। বর্তমানে মা ও সন্তান সুস্থ আছে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ