মাগুরায় ধর্ষণের শিকার শিশুর বোনের ভিডিও অপসারণ চেয়ে আইনি নোটিশ
Published: 13th, March 2025 GMT
প্রচলিত আইন ও হাইকোর্টের নির্দেশনা অমান্য করে ‘আমরাও মানুষ’ ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেল থেকে মাগুরায় ধর্ষণের শিকার শিশুর বোন ও পরিবারের সদস্যদের জবাবদিহিতামূলক সাক্ষাৎকারের সব ভিডিও অপসারণ চেয়ে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে। পাশাপাশি নোটিশে দেশের কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের জন্য নীতিমালা প্রণয়নেরও নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। জনস্বার্থে বৃহস্পতিবার ই-মেইলে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো.
তথ্য সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব, আইন সচিব, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) চেয়ারম্যান এবং পুলিশের মহাপরিদর্শককে এই নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১৪ ধারায় বলা আছে, (১) এই আইনে বর্ণিত অপরাধের শিকার হয়েছেন এমন নারী বা শিশুর ব্যাপারে সংঘটিত অপরাধ বা তৎসম্পর্কিত আইনগত কার্যধারার সংবাদ বা তথ্য বা নাম-ঠিকানা বা অন্য তথ্য কোনো সংবাদপত্রে বা অন্য কোনো সংবাদ মাধ্যমে এমনভাবে প্রকাশ বা পরিবেশন করা যাবে যাতে ওই নারী বা শিশুর পরিচয় প্রকাশ না পায়। (২) উপ-ধারার (১) বিধান লঙ্ঘন করা হলে ওই লঙ্ঘনের জন্য দায়ী ব্যক্তি বা ব্যক্তিদের প্রত্যেকে অনধিক দুই বছর কারাদণ্ডে বা অনূর্ধ্ব এক লাখ টাকা অর্থদণ্ডে বা উভয়দণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন।’
নোটিশে বলা হয়েছে, ‘এর মধ্যে হাইকোর্টও মাগুরার শিশু ও তার পরিবারের সুরক্ষায় কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন। এসব সত্ত্বেও যশোরের এক নারী বাইকার কর্তৃক পরিচালিত ‘আমরাও মানুষ’ নামের ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেল থেকে ভিডিও ধারণের মাধ্যমে শিশুটির বড় বোনের কাছে ঘটনার বর্ণনা জানতে চাওয়া ও ঘটনার সত্য-মিথ্যা বিষয়ে জবাবদিহিতামূলক ভিডিও ধারণ করা হয়। ওই নারী কনটেন্ট ক্রিয়েটর একই ঘটনায় একাধিক ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপলোড করেন, যা মুহূর্তে ভাইরাল হয় এবং তা দেখে উৎসুক জনতাও ভিডিও ধারণে উৎসাহী হয়ে পড়ে। এর মাধ্যমে ভিকটিম পরিবারটিকে নতুন করে ভিকটিমাইজ করার অপচেষ্টা করা হয়েছে।’
এই নোটিশ পাওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সেসব ভিডিওসহ শিশুটির পরিচয় শনাক্ত করা যায়- এমন সব ভিডিও-পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে অপসারণের অনুরোধ করা হয়। একইসঙ্গে ‘আমরাও মানুষ’ পেজ ও চ্যানেল থেকে প্রচারিত কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত বিচার ও শিশুটির পরিবারের জন্য ক্ষতিপূরণ নিশ্চিতের অনুরোধ করা হয়। পাশাপাশি ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা এড়ানোর জন্য দেশে কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের জন্য একটি সুস্পষ্ট নীতিমালা প্রণয়নে অনুরোধ করা হয়। তা না হলে এ বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে দেশের প্রচলিত আইন অনুসারে নোটিশদাতা উপযুক্ত আদালতের দ্বারস্থ হবেন বলেও নোটিশে উল্লেখ করা হয়।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: কনট ন ট ক র য় পর ব র অন র ধ র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
সঠিক ডিপিপি প্রণয়নই বিপুল অর্থ বাঁচাতে পারে
বাংলাদেশে সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয় উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে। কিন্তু দেখা যায়, উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে ঘন ঘন মেয়াদ বৃদ্ধি ও সংশোধনের প্রয়োজন হয়। এর অন্যতম কারণ হলো উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) প্রণয়নে তাড়াহুড়া করা, উত্তোলিত অর্থের ব্যয় সক্ষমতা ও কাজের অগ্রগতির ফলোআপ না থাকা। এতে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন বার্ষিক উন্নয়ন প্রকল্পের (এডিপি) মোট ব্যয়ের প্রায় ২ শতাংশ লস হয়।
এ তথ্য পাওয়া গেছে ড. রনজিৎ কুমার সরকারের ‘প্রকল্পের মেয়াদ নির্ণয়, ভৌত অগ্রগতি পরিমাপ এবং সময়ের দক্ষতা পরিমাপ’ লেখা থেকে। ড. সরকার আরও জানান, ডিপিপি প্রণয়নে সবচেয়ে দুর্বল দিক হলো কর্মপরিকল্পনা না করে ডিপিপি প্রণয়ন করা। ডিপিপি প্রণয়নের যে জিনিসগুলো মনে রাখা দরকার, তা নিয়ে আলোচনা নিচে পেশ করা হলো।
মোট কর্মপরিকল্পনা ও মেয়াদকালকর্মপরিকল্পনা হলো একটি প্রকল্পের হৃৎপিণ্ড। প্রকল্পের কোন অংশে কী কী কাজ করা প্রয়োজন এবং সেসব শেষ করতে কত সময় লাগতে পারে, তা দেখানো থাকে লগ ফ্রেম বা কর্মপরিকল্পনা ছকে। অধিকাংশ প্রকল্প প্রণয়নের সময় মোট কর্মপরিকল্পনা করে ডিপিপি প্রণয়ন করা হয় না। ফলে প্রকল্প প্রণয়নের সময় সঠিক মেয়াদকাল নির্ণয় করা প্রায় অসম্ভব হয়। সঠিক মেয়াদকাল নির্ণয় না করার ফলে প্রকল্প শেষ হতে দীর্ঘসূত্রতা হয়।
ভৌত অগ্রগতির পরিমাণএকটি প্রকল্পে গড়ে সাধারণত ৭০ শতাংশ বিনিয়োগ ও ৩০ শতাংশ পরিচালনা ব্যয় হয়ে থাকে। দেখা যায়, মোট বিনিয়োগের অর্ধেকের বেশি ব্যয় হয় ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন ও তদারকিতে। এ কাজ যত দ্রুত হয়, প্রকল্প পরিচালনা ব্যয় তত সাশ্রয় হয়। আমাদের দেশে পেশ করা ডিপিপিগুলোতে ভৌত অগ্রগতি পরিমাপের কোনো জুতসই পরিমাপক বা মানদণ্ড না থাকায় আনুমানিক পদ্ধতি বা যে সূত্রটি ব্যবহার করা হচ্ছে, তা সঠিক নয়। দৃশ্যত এখানে আর্থিক অগ্রগতির সঙ্গে সমন্বয় করে বাস্তব অগ্রগতি দেখা হয় বলে আশানুরূপ ফল পাওয়া যায় না। তাই ভৌত অগ্রগতি পরিমাপের সুনির্দিষ্ট পরিমাপক বের করা এখন সময়ের দাবি।
অভিজ্ঞতাআমাদের দেশে টপ-ডাউন অ্যাপ্রোচে বা ওপর থেকে চুইয়ে পড়া পদ্ধতিতে প্রকল্প প্রণয়ন করা হয়। সহজ কথায়, টাকা কীভাবে খরচ হবে, তা দেখানো হয়। কিন্তু সত্যিকার প্রজেক্ট পরিকল্পনায় যা থাকা উচিত, তা হলো সমস্যা কী, সমস্যার কতটুকু ইতিমধ্যে স্পর্শ করা হয়েছে, কী পদ্ধতিতে তা সমাধান করা হয়েছিল, এখন কী করা দরকার, কীভাবে ও কাজের পর্যায় কী হবে? পেশ করা প্রকল্পের ব্যয় কীভাবে কোন তরিকায় ধরতে হবে? আউটপুট কী আসবে? ভবিষ্যৎ ভাবনায় তা কি ইতিবাচক ফল আনবে? সোজা কথায় দক্ষ, অভিজ্ঞ এবং বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করার সক্ষমতা যাচাই করে ৫০ কোটি বা একনেকে পাস হওয়ার মতো ডিপিপিগুলো ছাড় দেওয়া দরকার।
অযাচিত ঝামেলাপ্রকল্পের সময় যত বাড়ে, পদে পদে ভোগান্তি তত বাড়ে। যেনতেনভাবে প্রকল্পটি দাঁড় করানোর ফলে বিষয়ভিত্তিক মন্ত্রণালয়/বিভাগ বা সংস্থায় ফাইলটি পাস করতে অনেক সময় নেওয়া হয় (আদর্শ অনুমোদন সময় ১৬৭ দিন)। অনেক সময় বিশেষজ্ঞ মতামত নিতে হয় প্রকল্পের সংশোধনের প্রয়োজন হলে। বিভিন্ন পর্যায়ে প্রেজেন্টেশনের সময় যদি প্রকল্পটি স্বব্যাখ্যায়িত হয়, লজিস্টিক সাপোর্ট কম লাগে, যথাযথ নিয়ম নীতি প্রয়োগ করা হয়ে থাকে, তবে ঝামেলা কম পোহাতে হয়।
বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমডি) মনিটরিং ফরমেট সংশোধন
আইএমইডির মোট পাঁচটি ফরমেট রয়েছে। এর মধ্যে চারটি ফরমেটের মাধ্যমে প্রকল্পের বাস্তবায়নকালের অগ্রগতির তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এসব ফরমেট পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, যেকোনো ফরম্যাট প্রকল্পের মোট বাস্তব অবস্থা বা ভৌত অগ্রগতি পরিমাপের তথ্য সংগ্রহের ব্যবস্থা নেই। এ ছাড়া ফরমেটের মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে মোট অগ্রগতি পরিমাপ করা যায় না। তাই আইএমইডির ছকসমূহ সংশোধন ও অধিকতর উন্নয়নের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হোক।
শেষ কথা হলো, প্রতিটি ডিপিপির টাকা আসে নাগরিকদের আয়করের অংশ বা বৈদেশিক লোন দিয়ে। এ টাকা দিনশেষে টানতে হবে আমাদের সবাইকে। তাই সঠিক ভৌত অগ্রগতি নিরূপণ, সময়ের সদ্ব্যবহার, আর্থিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি এবং প্রকল্পসংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অযাচিত চাপ রোধই পারে ডিপিপি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন।
ড. মো. আবুল কালাম আজাদ গবেষক ও অধ্যাপক, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ