গন্তব্যে যাওয়ার আগে কোন রাস্তা দিয়ে দ্রুত যাওয়া যাবে, তা জানা থাকলে বেশ সুবিধা হয়। আর তাই পরিচিত বা অপরিচিত স্থানে যাওয়ার সময় গুগল ম্যাপসের মাধ্যমে পথের দূরত্ব বা গন্তব্যে যাওয়ার দিকনির্দেশনা দেখেন অনেকেই। সার্চ করা তথ্যসহ ব্যবহারকারীদের গন্তব্যের সব তথ্য সংরক্ষণও করে থাকে গুগল ম্যাপস। এর ফলে পরবর্তী সময়ে সহজেই সেই গন্তব্যে যাওয়ার তথ্য জানা যায়। কিন্তু সম্প্রতি গুগল ম্যাপসে থাকা অনেক ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত ভ্রমণ ইতিহাস হঠাৎ করেই মুছে গেছে। এর ফলে বেশ সমস্যায় পড়েছেন তাঁরা।

জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘রেডিট’-এ একজন ব্যবহারকারী অভিযোগ করেন, ‘গত তিন বছরের প্রতিটি দিনের রেকর্ড হঠাৎ করে হারিয়ে গেছে।’ আরেকজন লিখেছেন, ‘আমি আতঙ্কিত। আমার সঙ্গেও একই ঘটনা ঘটেছে।’ অনেক ব্যবহারকারী ১০ বছরের বেশি সময় ধরে সংরক্ষিত ভ্রমণের তথ্য হারিয়ে হতাশ হয়ে পড়েছেন।

আরও পড়ুনগুগল ম্যাপসের মাধ্যমে নিজের অবস্থানের তথ্য অন্যদের জানাবেন যেভাবে০৭ জানুয়ারি ২০২৫

গুগল ম্যাপসের টাইমলাইন সুবিধাটি আগে লোকেশন হিস্ট্রি নামে পরিচিত ছিল। সুবিধাটি ব্যবহারকারীদের প্রতিদিনের ভ্রমণ, গন্তব্যের দিকনির্দেশনা এবং অবস্থানের তথ্য নিয়মিত সংরক্ষণ করে থাকে। তবে সম্প্রতি অনেক ব্যবহারকারী তাঁদের টাইমলাইন ক্যালেন্ডার ফাঁকা দেখতে পাচ্ছেন। ভ্রমণের বিভিন্ন দিন ‘ক্রসড আউট’ দেখাচ্ছে এবং নির্দিষ্ট দিনে ট্যাপ করলে ‘নো ভিজিট’ বার্তা প্রদর্শন করছে।

আরও পড়ুনগুগল ম্যাপসে বাসার ঠিকানা পরিবর্তন করবেন যেভাবে১৪ জুন ২০২৩

সম্প্রতি গুগল ম্যাপসের পুরোনো তথ্য মুছে যাওয়ার বিষয়ে গুগল জানিয়েছে, ব্যবহারকারীদের টাইমলাইনে থাকা ৯০ দিনের বেশি পুরোনো তথ্য মুছে ফেলার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, গত বছরের শেষ নাগাদ গুগল জানিয়েছিল, ২০২৫ সালের ৯ জুন থেকে গুগল ম্যাপসের টাইমলাইনের তথ্য অনলাইনে সংরক্ষণ করা হবে না। তথ্যগুলো ব্যবহারকারীদের যন্ত্রে সংরক্ষণ করা হবে। অর্থাৎ, ব্যবহারকারীদের ৯০ দিনের পুরোনো সব তথ্য অনলাইন থেকে মুছে যাবে। তবে সম্প্রতি গুগল ম্যাপসে থাকা পুরোনো তথ্য মুছে ফেলার আগে কোনো সতর্কবার্তা প্রদর্শন করেনি গুগল। এমনকি নির্ধারিত সময়ের আগেই তথ্য মুছে ফেলছে প্রতিষ্ঠানটি।

সূত্র: ডেইলি মেইল

আরও পড়ুনগুগল ম্যাপসে যেভাবে দুটি জায়গার মধ্যে দূরত্ব জেনে নেবেন২৮ সেপ্টেম্বর ২০২১.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ভ রমণ

এছাড়াও পড়ুন:

'দুই বেটি নিয়া হামার কোনো কষ্ট নাই'

‘বাহে, শনিবার রাইত ১০টার সময় ছাওয়াটার ব্যথা ওঠে। সে কি ব্যথা, আতালি পাতালি। গ্রামের দাই আসি অনেক চেষ্টা করিল। কই, কিছুই তো হইল না। এলা কি করং, অতো রাইতত হাসপাতাল যাইম কেমন করি! গাড়ি, ঘোড়া, রিকশা-কিছুই নাই। তারপর একখান অটোরিকশা জোগাড় করি ভোর ৫টার সময় ফুলবাড়ি থাকি লালমনিরহাট রওনা হইনো। শহরের সাপটানা বাজারের ক্লিনিকে হাজির হই হামরাগুলা। ক্লিনিকের লোকজন অপারেশন করি মোর ছোট নাতনিক দুনিয়ার মুখ দেখায়ছে।'

নববর্ষের প্রথম প্রহরে জন্ম নেওয়া নাতনির সম্পর্কে বলতে গিয়ে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন জমিলা বেগম। বলতে থাকেন, ''বাহে, হামরা গরিব মানুষ, অতো কিছু বুঝি না, তোমরাগুলা এই গরিবের ছাওয়াক যে সম্মান কইরলেন, তাতে মনটা ভরি গ্যালো। হাউস করি নাতনির নাম রাখমো ‘বৈশাখি’।’’

লালমনিরহাট শহরের খোদেজা ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে সোমবার সকাল ৬টায় শাহ আলম ও হামিদা দম্পতির কোলজুড়ে আসে কন্যাশিশু। বাংলা বছরের প্রথম দিনে সন্তান উপহার পেয়ে তাদের পরিবারে বইছে খুশির বন্যা। এটি তাদের দ্বিতীয় কন্যাসন্তান। বড় মেয়ে শিমু নার্সারি শ্রেণিতে পড়াশোনা করছে।

পার্শ্ববর্তী কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ি উপজেলার নাওডাঙ্গা কুমারপাড়া গ্রামের শাহ আলম মিয়া বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে পুরোনো খাতাপত্র, পত্রিকা, ভাঙ্গা টিন কিনে শহরে তা বিক্রি করেন। দিনে তিন থেকে চারশ টাকা আয় হয়। তা দিয়েই চলে সংসার। পাঁচ শতকের বসতভিটায় তিন ভাইয়ের পরিবারের সঙ্গে তিনি বসবাস করেন। বসতভিটার ওইটুকু জায়গা ছাড়া আর কিছুই নেই তার। তাই সন্তানকে ক্লিনিকে রেখে টাকার সন্ধানে ছুটছেন। কারো কাছ থেকে টাকা নিয়ে ক্লিনিকের বিল পরিশোধ করতে হবে। শাহ আলম বলেন, ‘মুই বাহে হকার, দিন আনি দিন খাই। হামার নববর্ষ বলি কিছু নাই। দোয়া কইরবেন ছাওয়াক মুই নেখাপড়া শিখাইম। দুই বেটি নিয়া হামার কোনো কষ্ট নাই। আল্লাহ সুস্থ রাখছে, তাতে হামরা খুশি।'

শাহ আলমের এসব কথা শুনে ক্লিনিকের বিছানায় শুয়ে থাকা নবজাতকের মা হামিদা বেগম বলেন, ‘আমি অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত করেছি। বাবা অটোরিকশা চালান। অভাবের সংসারে ইচ্ছা থাকার পরও লেখাপড়া করতে পারিনি। ২০১৪ বিয়ে হয়। পরের বছর প্রথম সন্তানের জন্ম হয়।' দুই মেয়েকে লেখাপড়া শেখানোর ইচ্ছা রয়েছে বলে জানান তিনি। 

ক্লিনিকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিশ্বজিৎ জানান, বাড়িতে অনেক চেষ্টা করেও হামিদার নরমাল ডেলিভারি করাতে পারেনি পরিবার। সময় ক্ষেপণ করায় বেশ সমস্যা হয়েছিল। পরে অস্ত্রোপচার করেন বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রাক্তন প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. ভোলানাথ ভট্টাচার্য্য। তাকে সহায়তা করেন ডা. হাবিব। ডা. ভোলানাথ ভট্টাচার্য্য জানান, মা ও শিশু এখন সুস্থ রয়েছে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ