জাতীয় ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইন ১৫ মার্চ
Published: 13th, March 2025 GMT
আগামী শনিবার (১৫ মার্চ) সারা দেশে ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইন অনুষ্ঠিত হবে।
বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিবৃতিতে এ কথা জানানো হয় হয়।
এতে বলা হয়, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় স্বাস্থ্য সেবাকে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এর ফলে বাংলাদেশে অপুষ্টির হার কমেছে এবং শিশু ও মাতৃমৃত্যু উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। শুধু দেশেই নয়, বিশ্ব নেতৃত্বের পুষ্টি ফোরামের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে বাংলাদেশ অংশগ্রহণ করে আসছে।
আরো পড়ুন:
মাগুরায় সেই শিশুর মৃত্যু
আসামিদের বিচারের আওতায় আনার নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার
ঠাকুরগাঁওয়ের হাসপাতাল থেকে চুরি হওয়া শিশু উদ্ধার
দেশ স্বাধীন হওয়ার পরবর্তী সময়ে অপুষ্টিজনিত কারণে শিশুদের মধ্যে রাতকানা রোগের হার ৪ দশমিক ১০ শতাংশ ছিল। ১৯৭৪ সালে রাতকানা রোগ প্রতিরোধ কার্যক্রম গ্রহণ করে শিশুদের ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানো শুরু হয়। পরবর্তীতে ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানো অব্যাহত রাখার ফলে বর্তমানে ভিটামিন ‘এ’র অভাবজনিত রাতকানা রোগে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা প্রায় নেই বললেই চলে।
ভিটামিন ‘এ’ শুধু অন্ধত্ব প্রতিরোধ করে না। এর পাশাপাশি ৫ বছরের নিচে শিশুদের মৃত্যুর হারও প্রায় এক চতুর্থাংশ কমিয়ে আনে যা সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা-৪ (শিশু মৃত্যুর হার কমানো) অর্জনে খুবই সহায়ক ছিল। আমাদের সব শিশু সঠিকভাবে মায়ের দুধ বা সঠিক মাত্রায় ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধ খাবার খেতে পারে না। ফলে অনূর্ধ্ব পাঁচ বছর বয়সের শিশুদের বিরাট অংশ ভিটামিন ‘এ’ ঘাটতিতে ভুগছে এবং ভিটামিন ‘এ’র অভাবজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। স্বল্প খরচে ও স্বল্প সময়ে এই ঘাটতি পূরণে শিশুদের ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানো প্রয়োজন।
ইতোমধ্যে জাতীয় ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে বছরে দুইবার শতকরা ৯৮ শতাংশ শিশুদের ভিটামিন ‘এ’ খাওয়ানোর ফলে ভিটামিন ‘এ’ অভাবজনিত অন্ধত্বের হার শতকরা এক শতাংশের নিচে কমে এসেছে এবং শিশু মৃত্যুর হারও কমেছে। এই সাফল্য ধরে রাখতে জাতীয় ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইনে ৬-৫৯ মাস বয়সী সব শিশুকে ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানো চলমান রাখতে হবে।
শিশুরাই আমাদের ভবিষ্যৎ। কিন্তু তাদের একটি অংশ অপুষ্টিতে ভুগছে। অন্ধত্ব একটি পরিবারের জন্য অভিশাপ তথা একটি দেশের জন্য বোঝা। বছরে দুই বার ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল গ্রহণের মাধ্যমে শিশুদের এ অন্ধত্বের অভিশাপ থেকে বহুলাংশে মুক্ত করা যায় এবং শিশুর রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে শিশু মৃত্যুর ঝুঁকিও কমানো সম্ভব।
অন্তর্বর্তী সরকারের সুদৃঢ় নেতৃত্বে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় দেশের সব শিশুর অপুষ্টি দূরীকরণ ও সুস্বাস্থ্য নিশ্চিতকরণে বদ্ধপরিকর। সেই লক্ষ্যে শনিবার সারাদেশে ৬-৫৯ মাস বয়সী প্রায় ২ কোটি ২৬ লাখ শিশুকে ১ লাখ ২০ হাজার স্থায়ী ইপিআই কেন্দ্রের মাধ্যমে ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানো হবে।
স্বল্প সময়ে এ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় সার্বিক প্রস্তুতি নিয়েছে। ক্যাম্পেইনকে সফল করতে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ প্রয়োজন। আর তা নিশ্চিত করতে সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি বেসরকারি প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিকস মিডিয়ার সর্বোচ্চ সহযোগিতা প্রয়োজন। ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইন পর্যালোচনার জন্য ক্যাম্পেইনের দিন প্রতিটি উপজেলা, জেলা ও কেন্দ্রে সার্বক্ষণিক কন্ট্রোলরুম চালু থাকবে।
একটি শিশুও যেন বাদ না পড়ে, সব শিশুকেই যেন ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানো হয়। যাদের ঘরে ৬ মাস থেকে ৫ বছর বয়সী শিশু আছে সেই সব মা-বাবা এবং অভিভাবকরা যেন অবশ্যই তাদের শিশুদের নিকটস্থ কেন্দ্রে (ইপিআই টিকাদান কেন্দ্র, কমিউনিটি ক্লিনিক ও অন্যান্য স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র) নিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ান।
ঢাকা/এএএম/এসবি
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প ল স ক য ম প ইন র জন য সব শ শ গ রহণ
এছাড়াও পড়ুন:
শিক্ষকদের জ্যেষ্ঠতার দ্বন্দ্বে বন ও পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান হলেন সহ–উপাচার্য
বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্বকে সামনে রেখে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বন ও পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের দুই শিক্ষকের মধ্যে জ্যেষ্ঠতার দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে। এমন অবস্থায় বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির সহ–উপাচার্য মো. সাজেদুল করিম।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বন ও পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ রেদোয়ান ও অধ্যাপক স্বপন কুমার সরকারের মধ্যে জ্যেষ্ঠতার এই দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে।
বিভাগ সূত্রে জানা যায়, গত ২৮ ফেব্রুয়ারি বিভাগীয় প্রধান হিসেবে দায়িত্ব শেষ করেন অধ্যাপক রোমেল আহমেদ। নতুন বিভাগীয় প্রধান হিসেবে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে পরবর্তী সময়ে একজন দায়িত্ব পাওয়ার কথা থাকলেও আরেক শিক্ষকের জ্যেষ্ঠতার জটিলতার কারণে তা সম্ভব হয়নি। এতে বিভাগীয় কার্যক্রমেও ব্যাঘাত ঘটার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে উপাচার্যের নির্দেশে ১ মার্চ থেকে বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব পেয়েছেন সহ–উপাচার্য মো. সাজেদুল করিম। জ্যেষ্ঠতা সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত তিনি বন ও পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। আর জ্যেষ্ঠতার সমাধান হলে নিয়মানুযায়ী একজন শিক্ষক বিভাগীয় প্রধান হবেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পদোন্নতির বর্তমান নিয়মানুযায়ী, যেসব শিক্ষক অধ্যাপকের দ্বিতীয় গ্রেডের যোগ্যতা পূরণের পর যথাসময়ে আবেদন করবেন, তাঁরা প্রাপ্যতার দিন থেকে দ্বিতীয় গ্রেডের জ্যেষ্ঠতা ও আর্থিক সুবিধা প্রাপ্য হবেন। দেরি করে আবেদনকারী শিক্ষকদের দ্বিতীয় গ্রেডের জ্যেষ্ঠতা ও আর্থিক সুবিধা সিন্ডিকেটের পরদিন থেকে কার্যকর হবে। গত বছরের ৬ জুন ২৩২তম সিন্ডিকেটে নিয়মটি পাস হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিভাগে যোগদানের দিক থেকে জ্যেষ্ঠ শিক্ষক হলেন মোহাম্মদ রেদোয়ান। তবে যোগ্যতা অর্জন করে সঠিক সময়ে দ্বিতীয় গ্রেডে আবেদন না করায় তাঁর জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণের ক্ষেত্রে বৈষম্যের অভিযোগ তুলেছেন তিনি। গত বছরের ১২ ডিসেম্বর ২৩৩তম সিন্ডিকেটে মোহাম্মদ রেদোয়ান ও অধ্যাপক স্বপন কুমার সরকারের দ্বিতীয় গ্রেডে পদোন্নতির সিদ্ধান্ত হয়। এর মধ্যে স্বপন কুমার সরকার দ্বিতীয় গ্রেডে যোগ্যতা অর্জনের যথাসময়ে আবেদন করায় যোগ্যতা অর্জনের দিন থেকে তাঁর জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ করা হয়।
অন্যদিকে নিয়মানুযায়ী সিন্ডিকেটের পরদিন থেকে মোহাম্মদ রেদোয়ানের দ্বিতীয় গ্রেডে পদোন্নতি হওয়ার কথা। কিন্তু এর আগে গত বছরের ২০ নভেম্বর তিনি কর্তৃপক্ষ বরাবর বৈষম্যের কথা উল্লেখ করে চিঠি দেওয়ায় তাঁর পদোন্নতির চিঠি আপাতত স্থগিত আছে। মোহাম্মদ রেদোয়ানের আবেদনের কারণে ২৩৩তম সিন্ডিকেটেই তাঁর ‘দ্বিতীয় গ্রেড প্রাপ্তির তারিখ সংশোধনসংক্রান্ত সুপারিশ’ প্রদানের জন্য একটি কমিটি গঠন করে কর্তৃপক্ষ। কমিটিতে সহ–উপাচার্য মো. সাজেদুল করিমকে সভাপতি করা হয়। পরবর্তী সময়ে এ কমিটির কাজের কোনো অগ্রগতি না দেখে ১৯ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বরাবর আরেকটি চিঠি দেন মোহাম্মদ রেদোয়ান।
মোহাম্মদ রেদোয়ান অভিযোগ করেন, ‘দ্বিতীয় গ্রেডের যোগ্যতা অর্জনের পর আমি গত বছরের ২১ মার্চ পদোন্নতির জন্য আবেদন করি। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য কয়েকজনের সলাপরামর্শে আমার জ্যেষ্ঠতা আটকানোর জন্য গত বছরের ৬ জুন ২৩২তম সিন্ডিকেটে দ্বিতীয় গ্রেড দেননি। আমাকে দ্বিতীয় গ্রেডে পদোন্নতি না দিতে ওই সিন্ডিকেটে একটি কালো আইন করে রেখে যান। কিন্তু আগে এ আইন ছিল না। এ জন্য জুলাই গণ–অভ্যুত্থান–পরবর্তী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে আমার সঙ্গে করা পদোন্নতি নিয়ে বৈষম্যের কথা অবহিত করি।’
বিভাগীয় প্রধানের পদকে সামনে রেখে জ্যেষ্ঠতার দ্বন্দ্বের বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক স্বপন কুমার সরকার বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে যেহেতু সহ–উপাচার্য মহোদয় দায়িত্ব নিয়েছেন এবং নিয়মের ভেতর দিয়ে যে সমাধান দরকার, বিশ্ববিদ্যালয় সেটা করবে। আমি এটাকে সানন্দেচিত্তে বরণ করি, যা হবে বিভাগের ভালোর জন্যই হবে। এসব ছোটখাটো বিষয় নিয়ে আন্দোলন করার কিছু নেই।’
এ বিষয়ে সহ–উপাচার্য মো. সাজেদুল করিম বলেন, অধ্যাপক মোহাম্মদ রেদোয়ানের পদোন্নতির বিষয়টি তদন্ত করে তাঁর জ্যেষ্ঠতার বিষয়ে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।