দেশীয় শিল্পের উন্নয়নে কাজ করছে বার্জার
Published: 13th, March 2025 GMT
বাংলাদেশে এখন রঙের বাজার কত বড়?
বাংলাদেশের রঙের বাজার প্রতিবছর ৬ হাজার কোটি টাকার বেশি। মূলত, দেশে ৮৫ শতাংশ রং ব্যবহৃত হয় ডেকোরেটিভ ও আর্কিটেকচারাল কাজে, বাকিটা ইন্ডাস্ট্রিয়াল ও মেরিন পেইন্ট খাতে ব্যবহৃত হয়। সরকার সম্প্রতি সাপ্লিমেন্টারি ডিউটি ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করায় স্থানীয় শিল্পের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এই শিল্প, যা অবকাঠামো উন্নয়ন থেকে শুরু করে শিল্পকারখানা, জাহাজ নির্মাণ ও উডকোটিং খাতেও ব্যবহৃত হয়। গবেষণা বলছে, রং–সংক্রান্ত গাফিলতির কারণে দেশের মোট দেশজ উৎপাদন বছরে প্রায় ১ শতাংশ ক্ষতির সম্মুখীন হয়। এ ছাড়া এই খাতের প্রায় সব কাঁচামালই আমদানিনির্ভর, যা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে প্রবৃদ্ধির গতিকে শ্লথ করছে।
বাংলাদেশের বাজারে আপনাদের অবস্থান জানতে চাই।
২৬৫ বছরের পুরোনো বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ এই দেশে স্বাধীনতার সময় থেকেই শিল্প খাত বিকাশে কাজ করছে। বর্তমানে বাজারের প্রায় ৫০ শতাংশ রঙের চাহিদা বার্জার পূরণ করছে। গত বছর বার্জার সরকারের কোষাগারে প্রায় ৭৬৮ কোটি টাকা কর প্রদান করেছে।
রং যেহেতু রাসায়নিক পদার্থ, সে ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যগত দিকটি কীভাবে দেখেন?
বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে। আমরা ১৯৯৮ সালে দেশে প্রথমবারের মতো টিনটিং সিস্টেম চালু করি, যার মাধ্যমে গ্রাহকেরা ৫ মিনিটে ৫ হাজার রঙের শেড দেখতে পারেন। এর সব পেইন্ট সিসামুক্ত এবং এতে পারদ বা লেডের মতো ক্ষতিকর উপাদান নেই। পরিবেশ রক্ষায় বার্জারের ‘ইকোকোট’, ‘ব্রেদ ইজি ভাইরাকেয়ার’ নামের বিশেষ পণ্য রয়েছে। ব্রেদ ইজি ভাইরাকেয়ার ৯৯ শতাংশ পর্যন্ত ক্ষতিকর ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধ করতে পারে। ইকোকোট পরিবেশবান্ধব ও এপিএইচ প্রযুক্তির কারণে ৯০ শতাংশ বাতাসের দূষিত গ্যাস শোষণ করে। ডাম্পগার্ড দেয়ালের ডাম্প প্রতিরোধ করে ঘরের দেয়ালকে রক্ষা করে, এটি পানিরোধী। ওয়ান কোট ইমালশনে কাজের গুণগত মান অটুট রাখে এবং সময় বাঁচায়। নিখুঁত ও মসৃণ ফিনিশের জন্য গতানুগতিক পেইন্টসের মতো একাধিক কোটের প্রয়োজন নেই।
দেশের রংশিল্প উন্নয়নে বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ কী কাজ করছে?
আমরা বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ শুধু রং বিক্রি করছি না; বরং শিল্পের মানোন্নয়নে কাজ করছি। আমাদের ব্রিটিশ কোম্পানি ফসরকের সঙ্গে কনস্ট্রাকশন কেমিক্যাল, বেকারস গ্রুপের সঙ্গে কয়েল কোটিং, জাপানের সিএমপির সঙ্গে গ্লোবাল পার্টনারশিপ, যুক্তরাষ্ট্রের পিপিজিসহ বিভিন্ন আলোচিত প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে নানা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। পেশাদার রংশিল্পীদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে বার্জার প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করেছে, যেখানে এ পর্যন্ত ৬ হাজারের বেশি পেশাজীবী প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। এ ছাড়া নারীদের কর্মসংস্থানে সহায়তা করতে বার্জার ‘উইমেন পেইন্টার’ কর্মসূচি চালু করেছে, যার মাধ্যমে নারীরা বাড়ির রঙের কাজ করতে পারছেন।
ভবিষ্যতে আরও উন্নত মানের রংশিল্প গড়ে তুলতে বার্জার নতুন ৮০০ কোটি টাকার কারখানা স্থাপনের পরিকল্পনা করছে। আমরা উডকোটিং সলিউশন, টেক্সটাইল ও মেরিনশিল্পের জন্য বিশেষায়িত রং তৈরির পরিধি বাড়াচ্ছি। নতুন প্রজন্মের চাহিদা মাথায় রেখে ‘ডিআইওয়াই কিট’ তৈরি করছি, যা তরুণদের নিজেদের হাতে রং করার সুযোগ দেবে।
সাক্ষাৎকার: জাহিদ হোসাইন খান
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
কুবি শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) এক শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ফেসবুকে হিন্দুধর্ম অবমাননার অভিযোগ উঠেছে।
এ নিয়ে ক্ষোভ জানিয়ে মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) দুপুরে অভিযুক্তের শাস্তি দাবি করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবার লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন সনাতন ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীরা। তারা উপাচার্যকে অভিযোগপত্রের একটি কপি দিয়েছেন।
অভিযুক্ত আব্দুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ২০২৩-২৪ বর্ষের শিক্ষার্থী। সোমবার (১৪ এপ্রিল) সন্ধ্যায় তার পোস্টটির স্ক্রিনশট ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে তা নিয়ে সমালোচনা হয়।
আরো পড়ুন:
কুবি শিক্ষার্থীদের ভাবনায় ফ্যাসিবাদমুক্ত নববর্ষ
৫ বছর পর কুবিতে নববর্ষ উদযাপন
অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, সম্প্রতি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী (আব্দুর রহমান, আইন বিভাগ ১৮তম আবর্তন) লাগাতার সনাতন ধর্মের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কটুক্তি করে যাচ্ছে। এর মধ্যে সোমবার (১৪ এপ্রিল) একটি পোস্টে সনাতন ধর্মকে ঘৃণিত ভাষায় উপস্থাপন করা হয়েছে। সেখোনে ‘হিন্দুধর্ম। ইট'স রিকোয়াইর্স টু বি অ্যাগ্রেসিভলি রেপড, (গালি) ইন আ রুড ওয়ে। (গালি)।’ বলা হয়েছে।
অভিযোগপত্রে আরো বলা হয়, এই বক্তব্য শুধু কুরুচিপূর্ণ নয়, বরং আমাদের ধর্মীয় বিশ্বাসকে অপমান এবং ঘৃণিত করে। এ ধরনের বক্তব্য কোনো সভ্য সমাজ বা শিক্ষাঙ্গনে মেনে নেওয়া যায় না। এছাড়া সাইবার নিরাপত্তা আইন ২০২৩ অনুযায়ী ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত একটি দণ্ডনীয় অপরাধ। যার সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে বর্তমানে ২ বছর কারাদণ্ড বা ৫ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় একটি জ্ঞান ও সম্প্রীতির স্থান। এখানে এমন কোনো মত প্রকাশের সুযোগ থাকা উচিত নয়, যা অন্যের ধর্মীয় অনুভূতিকে আঘাত করে এবং সাম্প্রদায়িক বিভাজন তৈরি করে।
অভিযোগপত্রে তাদের দাবি, ওই শিক্ষার্থীকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করে দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনতে হবে। যাতে ভবিষ্যতে কেউ এ ধরনের ঘৃণিত কাজ না করে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সোমবার (১৪ এপ্রিল) এম এ হোসাইন নামের একটি পেইজে জ্বলন্ত আগুনের মধ্যে জীবন্ত ছাগলকে পুড়িয়ে ফেলার একটি ভিডিও শেয়ার করা হয়। সেটার ক্যাপশন অপশনে লেখা ছিল ‘জনশ্রুতি আছে, পৃথিবীর নিকৃষ্ট ধর্ম হচ্ছে হিন্দু ধর্ম। একটা নিরীহ জীবন্ত প্রাণীকে এভাবে আগুনে পুড়ে মারার অধিকার কি কোনো ধর্মে আছে?’
পরবর্তীতে স্ক্রিনশটটি আরো ছড়িয়ে পড়লে শেয়ারকৃত পোস্টটি ডিলিট করে ক্ষমা চেয়ে নতুন আরেকটি পোস্ট শেয়ার করেন। বর্তমানে অভিযুক্ত আবদুর রহমানের ফেসবুক অ্যাকাউন্টটি ডিঅ্যাক্টিভেট করে রাখা হয়েছে।
আইন বিভাগের ১৫তম আবর্তনের শিক্ষার্থী সজীব বিশ্বাস বলেন, “আব্দুর রহমান যেভাবে ফেসবুকে আমাদের ধর্মকে নিয়ে কটুক্তি করেছে, আমি তার তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানাচ্ছি। একজন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থী কিভাবে একটা ধর্মকে নিয়ে এমনভাবে গালি দিতে পারে? আমি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে বলবো, বিগত বছরগুলাতে যেভাবে ধর্মকে অবমাননার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করেছে, এবারো যেন তার ব্যতিক্রম না ঘটে।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত আবদুর রহমান বলেন, “আমি আমার বক্তব্য প্রক্টর অফিসে দিয়েছি।”
আইন বিভাগের বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সহকারী অধ্যাপক মো. আলী মোর্শেদ কাজেম বলেন, “আমি এই বিষয়ে অবগত নই। ঘটনা সম্পূর্ণ না জেনে আমি তো কোন বক্তব্য দিতে পারছি না।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আবদুল হাকিম বলেন, “আমরা অভিযোগপত্রটি পেয়েছি অভিযুক্ত শিক্ষার্থী যেহেতু আইন বিভাগের, সেহেতু আমরা ওই বিভাগের বিভাগীয় প্রধানের মাধ্যমে অভিযুক্তের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি শৃংখলা কমিটির কাছে হস্তান্তর করবো।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী বলেন, “আমি অভিযোগপত্রটি পেয়েছি। এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী অভিযুক্ত শিক্ষার্থীকে ডেকে শোকজ করা হবে। তার লিখিত ব্যাখ্যা গ্রহণের পর নিয়ম অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”
ঢাকা/এমদাদুল/মেহেদী