বিকেলে ঢাকায় আসছেন জাতিসংঘের মহাসচিব
Published: 13th, March 2025 GMT
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আমন্ত্রণে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস চার দিনের সরকারি সফরে আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে ঢাকায় আসছেন। সরকারি সূত্র জানায়, গুতেরেসকে বহনকারী এমিরেটসের একটি ফ্লাইট (ইকে-৫৮৬) বিকেল ৫টায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করবে। গুতেরেস ঢাকায় পৌঁছানোর পর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে যাওয়ার আগে পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা মো.
পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন এবং রোহিঙ্গা ইস্যু ও অগ্রাধিকার বিষয়ক প্রধান উপদেষ্টার উচ্চ প্রতিনিধি ড. খলিলুর রহমান শুক্রবার সকাল ৯টায় হোটেলে গুতেরেসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। পরে, জাতিসংঘ প্রধান সকাল ১০টায় প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের সঙ্গে দেখা করবেন।
বৈঠকের পর গুতেরেস রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শনের জন্য বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি বাণিজ্যিক ফ্লাইটে কক্সবাজার যাবেন। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ উপদেষ্টা ফারুক ই আজম কক্সবাজার বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর তাঁকে স্বাগত জানাবেন। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস দিনের শেষে গুতেরেসের সঙ্গে কক্সবাজারে প্রায় এক লাখ রোহিঙ্গার সঙ্গে ইফতারে যোগ দেবেন।
এই অনুষ্ঠানে উভয় নেতা রোহিঙ্গা ইমাম এবং সম্প্রদায়ের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। ইফতারের আগে জাতিসংঘ মহাসচিব ক্যাম্পের বেশ কয়েকটি সুযোগ-সুবিধা পরিদর্শন করবেন, যার মধ্যে রয়েছে ওয়াচ টাওয়ার, লার্নিং সেন্টার, মাল্টি-পারপাস সার্ভিস সেন্টার এবং একটি পাট উৎপাদন কেন্দ্র। তিনি রোহিঙ্গা যুবক ও শিশুদের সঙ্গেও কথা বলবেন বলে আশা করা হচ্ছে। গুতেরেস সন্ধ্যায় ঢাকায় ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে ফিরে আসবেন।
শনিবার,জাতিসংঘ মহাসচিব ঢাকায় জাতিসংঘের কার্যালয় পরিদর্শন করবেন, যেখানে তিনি জাতিসংঘের আনুষ্ঠানিক পতাকা উত্তোলন করবেন, বাংলাদেশ-জাতিসংঘ সম্পর্কের ৫০তম বার্ষিকী উপলক্ষে একটি আলোকচিত্র প্রদর্শনী ঘুরে দেখবেন এবং জাতিসংঘের কর্মীদের সঙ্গে একটি সভায় যোগ দেবেন। বিকেলে তিনি ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে বাংলাদেশের সংস্কার প্রক্রিয়া নিয়ে একটি গোলটেবিল আলোচনায় যোগ দেবেন। তিনি তরুণদের সঙ্গে একটি সংলাপে অংশ নেবেন এবং নাগরিক সমাজের সদস্যদের সাথেও সাক্ষাৎ করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
পরে হোটেলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে এক যৌথ মিডিয়া ব্রিফিংয়ে গুতেরেস বক্তব্য রাখবেন বলে আশা করা হচ্ছে। একই দিনে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস জাতিসংঘ প্রধানের সম্মানে ইফতার ও নৈশভোজের আয়োজন করবেন। রোববার সকাল ৯টা ৫৫ মিনিটে এমিরেটসের একটি ফ্লাইটে ঢাকা ত্যাগ করবেন গুতেরেস। ড. খলিলুর রহমান বিমানবন্দরে তাঁকে বিদায় জানাতে উপস্থিত থাকবেন।
এই সফর বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান কূটনৈতিক মর্যাদা এবং বিশ্ব মঞ্চে রোহিঙ্গা সমস্যার মতো বিভিন্ন বিষয়ে দেশটি যে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে তা তুলে ধরা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। ইউনূসকে লেখা সাম্প্রতিক এক চিঠিতে গুতেরেস আশা প্রকাশ করেছেন যে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিম ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের বিষয়ে আসন্ন উচ্চ পর্যায়ের সম্মেলন নতুন করে বৈশ্বিক মনোযোগ আকর্ষণ করবে এবং তাদের দুর্দশার ব্যাপক ভিত্তিক সমাধান বের করতে সহায়তা করবে। গুতেরেস বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের আশ্রয়দাতা হিসেবে বাংলাদেশকে সমর্থন করার জন্য জাতিসংঘ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সংগঠিত করার প্রয়াস অব্যাহত রাখবে।’
জাতিসংঘ প্রধান বলেন, তিনি তার ঊর্ধ্বতন ব্যবস্থাপকদের বাংলাদেশ ও মিয়ানমারে জাতিসংঘের স্থানীয় টিমগুলোকে রাখাইনের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের জন্য মানবিক সহায়তা ও জীবিকা নির্বাহের জন্য কীভাবে সর্বাধিক সহায়তা প্রদান করা যায় সে বিষয়ে দিকনির্দেশনা প্রদানের জন্য অনুরোধ করেছেন।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
মেয়েকে হাফেজ বানাতে চান বাবা
টাঙ্গাইলের ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে নববর্ষের প্রথম প্রহর সকাল ৬টা ৩০মিনিটে মাওলানা আবু ইউসুব আলী ও জুমা খাতুন দম্পতি একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দেন। ইউসুবের বাড়ি টাঙ্গাইল সদর উপজেলার অলোয়া তারিনী।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, সকাল ৬টা সময় প্রসব ব্যথা নিয়ে জুমা খাতুন হাসপাতালে ভর্তি হন। হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স নাছিমা বেগম স্বাভাবিকভাবেই কোনো অপারেশন ছাড়াই প্রসবের চেষ্টা করেন। পরে ৬টা ৩০ মিনিটে স্বাভাবিকভাবেই মায়ের কোল আলো করে একটি কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। জুমা খাতুনের তিন বছরের আরও একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। তার নাম নিহলা।
নবজাতক শিশুর বাবা ইউসুব আলী টাঙ্গাইল সদর উপজেলার শহর বাইপাস নগড়জলফই জামিয়া আশরাফিয়া দারুল উলুম মাদ্রাসার শিক্ষক ও আশেকপুর বাইতুল মামুর জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব। তিনি হাফেজ মওলানা ও মুফতি। স্ত্রী জুমা খাতুন এসএসসি পাস। তিনি গৃহিনী। নববর্ষের দিনে কন্যা সন্তানের জন্ম হওয়াতে তিনি খুবই খুশি। তিনি মেয়েকে কোরআনের হাফেজ শিক্ষা দিয়ে খাটি মুমিন বানাতে চান।
জুমা খাতুন ছবি তুলতে অপারগতা জানিয়ে বলেন, আমি খুব খুশি। বাংলা বছরের প্রথমদিন সন্তানের জন্ম হয়েছে। সন্তানকে আমি ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করতে চাই। মেয়ে যেন মানুষ হয়।
তিনি আরও জানান, গর্ভবতীকালীন পুরো সময়টাই তিনি সুস্থ ছিলেন। সিরাজগঞ্জ জেলার এনায়েতপুর থানা সংলগ্ন ব্রাহ্মণ গ্রামে তার বাবার বাড়ি। সন্তান গর্ভে আসার পাঁচ মাস পর বাবার বাড়ি চলে যান। সেখানে বাড়ির সবাই তার যত্ন নিয়েছে। যেহেতু আগে তার একটি মেয়ে সন্তান রয়েছে তাই বাচ্চা পেটে থাকলে কিভাবে চলতে হবে তার নিয়ম কানুন আগেই জানা ছিল। তাছাড়া পাশেই একটি ক্লিনিকে একজন গাইনি ডাক্তারের কাছে গিয়ে দুইবার পরীক্ষা নিরীক্ষা করিয়েছেন। ডাক্তার সামান্য কিছু ওষুধ লিখে দিয়েছিল তাই খেয়েছেন। এপ্রিল মাসের ১৭ তারিখে ডেলিভারির তারিখ ছিল। একমাস আগেই বাবার বাড়ি থেকে স্বামীর বাড়ি টাঙ্গাইলের অলোয়া তারিনীতে চলে আসে।
পরিবারটি অত্যন্ত রক্ষণশীল। সবাই পাঁচওয়াক্ত নামাজ পড়েন। পর্দা করেন। একারণে শিশুটির মায়ের ছবি তুলতে বার বার নিষেধ করেছেন বাবা ইউসুব আলী। স্ত্রীর কোনো ভিডিও করতে দেননি। ইউসুব আলী মাদ্রাসায় থাকেন। সন্ধ্যার সময় জানতে পারেন স্ত্রীর প্রসব ব্যথা উঠেছে। তখনি চলে আসেন বাড়িতে। রাত দুইটা তিনটার দিকে ব্যথা একটি বেশি উঠলে চাচী ও এক ফুপু নরমাল ডেলিভারির চেষ্টা করেন। তবে ঝুঁকি নিতে চাননি পরিবারের কেউ। তাই পহেলা বৈশাখ ভোর ৫টার দিকে একটি অটোরিকশায় চড়ে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসেন। ৬টা সময় ভর্তি হন গাইনি বিভাগে। পরে ৬টা ৩০ মিনিটে নরমালি মায়ের কোল আলো করে ফুটফুটে একটি কন্যা সন্তানের জন্ম হয়।
ইউসুব আলী বলেন, স্ট্রেচারে করে স্ত্রীকে ডেলিভারি রুমে নেওয়ার সময় খুবই উত্তেজনায় ছিলাম। আর আল্লাহর কাছে শুধু দোয়া করেছি সন্তান ও মা যেন সুস্থ থাকে। নার্স এসে যখন বললেন আপনার কন্যা সন্তান হয়েছে তখন কি যে আনন্দ বলে বোঝাতে পারব না। আমার মা রোমেছা খাতুন প্রথম তার নাতনীকে কোলে তুলে নেয়। এর পর আমি ইসলামীর বিধান মতে কন্যার ডান কানে আযান ও বাম কানে একামত দেই। বাচ্চা ও তার মা সুস্থ রয়েছে। তাকে মায়ের দুধ খাওয়ানা হচ্ছে। ওজন হয়েছে পৌনে তিন কেজি। প্রথম মেয়ের নাম আমি রেখেছিলাম। বাড়িতে নিয়ে আমি কন্যার নাম রাখব। তবে যেহেতু সাতদিনের মধ্যে নাম রাখতে হয়। তাই চিন্তা ভাবনা করে দ্বীনি ইসলামের দেওয়া একটি সুন্দর নাম রাখবো। এছাড়া সাত দিনের মধ্যে মাথার চুল ফেলে দিয়ে একটি ছাগল জবাই দিয়ে আকিকা করব। বছরের প্রথম দিন বাচ্চা হবে এটা ভাবেনি। আমি খুব খুশি হয়েছি যে পহেলা বৈশাখ জন্ম নিয়েছে। মেয়ের আর জন্ম তারিখ বলতে হবে না শুধু বলবে বছরের প্রথম দিন আমার জন্ম।
তিনি বলেন, মেয়ের মায়ের স্বাস্থ্য ভালো ছিল। ভালোভাবেই খাওয়া দাওয়া করতে পারত। তেমন কোনো আশঙ্কা ছিল না। হাসপাতালের সবাই আন্তরিক ছিল। নার্স ওয়ার্ডবয় সবাই সহযোগিতা করেছে। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ থেকে কেউ নববর্ষের শুভেচ্ছা জানায়নি। এছাড়াও হাসপাতাল থেকে পহেলা বৈশাখের কোনো অনুষ্ঠান শোনা যায়নি। সমকালের পক্ষ থেকে প্রজন্ম বরণ উৎসব উপলক্ষে আমাদেরকে পহেলা বৈশাখের শুভেচ্ছা জানানো হয়েছে। একারণে সমকালের এমন উদ্যোগকে তিনি সাধুবাদ জানান।
২০১৯ সালে পারিবারিকভাবে তাদের বিয়ে ঠিক হয়। হঠাৎ করে চলে আসে করোনা মহামারি। চিন্তায় পরে যান বাড়ির সবাই বিয়ে হবে কি হবে না। ইমামতি ও মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করে সংসার চালান। হঠাৎ করে সব বন্ধ হয়ে যায়। কি করবেন দিশেহারা হয়ে পড়েন। এদিকে বিয়েও ঠিক হয়েছে। পরে ঝুঁকি নিয়েই করোনা মহামারির মধ্যেই ২০১৯ সালের শেষের দিকে বিয়ে করেন। দুই বছর পর তাদের কোলে আসে প্রথম কন্যা সন্তান। এটি তাদের দ্বিতীয় সন্তান।
লেবার রুম থেকে প্রথমবার বাচ্চাকে কোলে তুলে নেন দাদি রোমেচা খাতুন। প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, আমি খুব খুশি হয়েছি। পহেলা বৈশাখ নাতনির জন্ম হবে এটা ভাবতেও পারেনি।
হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স নাছিমা বেগম বলেন, প্রসব ব্যথা নিয়ে তিনি আমাদের কাছে আসেন। এখানে ভর্তি হওয়ার আধা ঘণ্টার মধ্যে চেষ্টা করার পর কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। শিশুর পৌনে তিন কেজি ওজন হয়েছে। মা ও শিশু সুস্থ আছে। শিশুকে মায়ের বুকের দুধ খাওয়া হচ্ছে। বিকেলেই তাদের ছুটি দেওয়া হয়েছে।