সরকারের গণপরিবহন ট্রেন ধীরে ধীরে সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। অনলাইনভিত্তিক টিকিট বিক্রির বর্তমান যে ব্যবস্থা, তাতে দেশের মাত্র ৫২ লাখ মানুষ ট্রেনের টিকিট কাটতে পারছে। কালোবাজারি বন্ধের কথা বলে টিকিট বিক্রি অনলাইনভিত্তিক করা হয়েছে। তবে এতে সবচেয়ে বেশি লাভ হয়েছে টিকিটি বিক্রির দায়িত্বে থাকা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের। একটি টিকিট বিক্রির বিনিময়ে মাত্র ২৫ পয়সা নেওয়ার কথা বলে দায়িত্ব পাওয়া ঠিকাদার এখন পাচ্ছে সাড়ে ছয় টাকা।

রেলওয়ে সূত্র বলছে, বিগত এক দশকে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত রাজনীতিক ও রেলের কর্মকর্তারা শুধু আন্তনগর ট্রেন চালুতে জোর দিয়েছেন বেশি। বিপরীতে তাঁরা বন্ধ করে দিয়েছেন ৯৩টি লোকাল, মেইল ও কমিউটার ট্রেন। ফলে নিম্ন আয়ের এবং স্বল্প দূরত্বে যাতায়াতকারী মানুষের ট্রেনে চড়ার সুযোগ এমনিতেই কমে গেছে। ২০২৩ সাল থেকে টিকিট বিক্রির কার্যক্রম পুরোপুরি অনলাইনকেন্দ্রিক করে ফেলা হয়। এতে আরেক দফা অনলাইন সুবিধা না থাকা ব্যক্তিরা ট্রেনে চড়া থেকে অনেকটা দূরে সরে গেছেন।

আরও পড়ুনঈদে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু ১৪ মার্চ, স্টেশন-টার্মিনালে থাকবে সিসিটিভি০৯ মার্চ ২০২৫

রেলের হিসাবে, এখন প্রায় ৭১ শতাংশ টিকিট বিক্রি হয় অনলাইনে। বাকি যে ২৯ শতাংশ টিকিট কাউন্টারে বিক্রি হয়, এর প্রায় সবই কম গুরুত্বপূর্ণ। অর্থাৎ মাঝপথের কম গুরুত্বপূর্ণ এক স্টেশন থেকে আরেক স্টেশনে যাওয়ার টিকিটই বেশি বিক্রি হয় কাউন্টারে। এ ছাড়া কাউন্টারে টিকিট কাটার সময় মোবাইল ফোনে ওটিপি নম্বর আসে। গ্রাহক তা দেখালে টিকিট পান। এতে টিকিট কাটতে বেশ সময় লাগছে।

এসব ব্যবস্থা রাষ্ট্রীয় এই গণপরিবহন দেশের শিক্ষিত ও তথ্যপ্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন মানুষের বাহনে পরিণত হয়েছে কি না, সেই প্রশ্নও উঠেছে। সব মিলিয়ে অপেক্ষাকৃত কম আয়ের কিংবা গ্রামাঞ্চলে বসবাসকারী মানুষের জন্য রেলের টিকিট কাটা কঠিন হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, অনলাইনে টিকিট বিক্রির উদ্যোগটি ভালো। এতে ইন্টারনেট ব্যবহারে দক্ষ ব্যক্তিরা সহজে টিকিট কাটতে পারছেন। তবে ভালো আসনের টিকিট দ্রুত কেন শেষ হয়ে যায়, দালালেরা ভালো টিকিট আগে থেকে কেটে রাখে কি না, ইন্টারনেট সুবিধাবিহীন মানুষ টিকিট পায় কি না, সে বিষয়গুলো দেখা উচিত; পর্যালোচনা করা উচিত।

২০২২ সাল থেকে রেলের টিকিট বিক্রির দায়িত্বে আছে যৌথভাবে সহজ ডটকম-সিনেসিস-ভিনসেন। প্রতি টিকিট বিক্রির বিনিময়ে তারা ২৫ পয়সা নেবে—এই শর্তে দায়িত্ব পায়। আর অনলাইনে টিকিট বিক্রির জন্য তাদের চার্জ হিসেবে সাড়ে ছয় টাকা পাওয়ার কথা ছিল আগের নিয়ম অনুযায়ী। সহজ দায়িত্ব নেওয়ার আগে ২০ শতাংশ টিকিট অনলাইনে বিক্রি হতো। এখন অনলাইনে টিকিট বিক্রি বেড়ে যাওয়ায় সাধারণভাবে টিকিটপ্রতি ২৫ পয়সার পাশাপাশি অনলাইন মাশুলের পরিমাণ বেড়ে গেছে।

রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান প্রথম আলোকে বলেন, অনলাইনে বিক্রির শুরুতেই সব টিকিটি শেষ—এমন অভিযোগ আছে। তিনি বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন। মানুষ কীভাবে সহজে টিকিট পাবে, সেটা নিয়ে একটা বিশেষজ্ঞ দল কাজ করছে। অনলাইনে টিকিট কাটার ক্ষেত্রে বাড়তি টাকা ঠিকাদারের পকেটে যাওয়ার বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, বিষয়টি তিনি দেখবেন।

আরও পড়ুনসচিব–কর্মকর্তার ফোনে ট্রেনের টিকিট রাখা যাবে না: ফাওজুল কবির খান২৯ অক্টোবর ২০২৪৩ শতাংশ মানুষ টিকিট পাবেন

রেলের টিকিট বিক্রির ব্যবস্থাটির নাম বাংলাদেশ রেলওয়ে ইন্টিগ্রেটেড টিকেটিং সিস্টেম (বিআরআইটিএস)। এই ব্যবস্থা চালুর পর ট্রেনের টিকিট পেতে হলে জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে প্রথমে নিবন্ধন করতে হয়। এরপরই অনলাইনে (মোবাইল অ্যাপ ও ওয়েবসাইট) টিকিট কাটা যায়।

রেলের সূত্র জানায়, টিকিট পেতে গত অক্টোবর পর্যন্ত ৫২ লাখ ৫৫ হাজার ৯১০ জন নিবন্ধন করেছেন। সর্বশেষ জনশুমারি অনুসারে, দেশের জনসংখ্যা প্রায় ১৭ কোটি। এ হিসাবে, দেশের মোট জনগোষ্ঠীর মাত্র ৩ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ মানুষ ট্রেনের টিকিট কাটতে পারবেন। একজন ব্যক্তি একসঙ্গে সর্বোচ্চ চারটি টিকিট কাটতে পারেন। এ সুযোগ নিলে আরও কিছু মানুষ ট্রেনের টিকিটের আওতায় আসে। এরপরও বিপুল সংখ্যায় মানুষ ট্রেনসেবার আওতার বাইরে রয়ে গেছেন।

টিকিটের নিবন্ধন করতে হলে জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর ও জন্মতারিখ দিয়ে রেলসেবা অ্যাপ বা রেলের ওয়েবসাইটে নানা তথ্য জমা করতে হয়। এ ক্ষেত্রে ইন্টারনেট সেবা থাকা এবং এই বিষয়ে জ্ঞান থাকা জরুরি। এ ছাড়া মুঠোফোনে জাতীয় পরিচয়পত্র ও জন্মতারিখ দিয়ে এসএমএস করেও নিবন্ধন করা যায়। এ ক্ষেত্রেও মুঠোফোন থাকা এবং তা দিয়ে নিবন্ধনের নিয়ম জানতে হবে। রেলের পক্ষ থেকে এই বিষয়ে তেমন প্রচারণাও চালানো হয়নি।

আরও পড়ুনট্রেনের টিকিট শেষ দুই মিনিটেই, এ কেমন ডিজিটাল সমাধান?২৫ জানুয়ারি ২০২৫

নিবন্ধনের পর আগ্রহী ব্যক্তির স্মার্টফোন বা কম্পিউটার জাতীয় ডিভাইস থাকতে হবে। তারপর এতে থাকতে হবে ইন্টারনেট সংযোগ। এ ছাড়া অনলাইনে টিকিট কাটার টাকা পরিশোধ করার জন্য ব্যাংকের কার্ড ও মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট থাকতে হবে। কারণ, টাকা পরিশোধ করতে হয় অনলাইনে।

জনশুমারি অনুসারে, দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩১ শতাংশ। পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যমতে, দেশে ৭ দশমিক ৪ শতাংশ নাগরিক কম্পিউটার ব্যবহার করেন, ল্যাপটপ ব্যবহারকারীর সংখ্যা ২ দশমিক ৯ শতাংশ, আর মোবাইল ফোন ব্যবহারকারী ৮৯ দশমিক ৯ শতাংশ। কিন্তু এর মধ্যে ৬৫ শতাংশ ফিচার ফোন ব্যবহারকারী।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যপ্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক বি এম মইনুল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, দেশের অর্ধেক মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করেন না। স্মার্টফোনের ব্যবহার এখনো কম। ডিজিটাল বৈষম্য এখানে অনেক থাকার পরও একটি সেবাকে পুরোপুরি অনলাইনে করে সাধারণ মানুষদের বঞ্চিত করা হচ্ছে। রেলের টিকিট একবারের জন্য নয়। এটা প্রতিনিয়তই লাগে। অনলাইন সেবা অবশ্যই থাকতে হবে। কিন্তু যাঁরা পিছিয়ে আছেন, তাঁদের জন্যও বিকল্প ব্যবস্থা রেখে এ ধরনের সেবা চালু করতে হতো। যাঁরা ডিজিটাল সেবা গ্রহণে পিছিয়ে আছেন, তাঁদের জন্য রেলের বিকল্প ব্যবস্থা কী, সে বিষয়ে ব্যাখ্যা প্রয়োজন।

বর্তমানে প্রতিদিন আন্তনগর ট্রেনের প্রায় ৩০ হাজার টিকিট বিক্রি হয়। একই সময়ে অনলাইন ও কাউন্টারে টিকিট ছাড়া হয়। স্বভাবতই প্রথম ঘণ্টাতেই অনলাইনে প্রায় সব টিকিট বিক্রি হয়ে যায়।

রেলের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, অনলাইনে টিকিট বিক্রি বৃদ্ধির পর কালোবাজারি বন্ধ হয়নি। দক্ষ কালোবাজারিরা সাধারণ যাত্রীদের চেয়ে দ্রুত টিকিট কাটার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারে। তাই অনলাইনে ‘এক মিনিটে টিকিট শেষ’—এমন অভিযোগ সর্বত্র।

আরও পড়ুনট্রেনের টিকিট নতুন পদ্ধতিতে যেভাবে কাটা যাবে০১ মার্চ ২০২৩লাভ হলো সহজের

২০০৭ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত টানা ১৫ বছর ট্রেনের টিকিট বিক্রি করে কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সিস্টেম (সিএনএস)। এর আগেও তারা এই দায়িত্ব পালন করে। সিএনএস প্রতি টিকিটে ২ টাকা ৯৯ পয়সা নিত। আর অনলাইনে টিকিট বিক্রি করলে পেত সাড়ে ছয় টাকা। অবশ্য তখন ২০ শতাংশের মতো টিকিট অনলাইনে বিক্রি হতো।

টিকিট বিক্রির জন্য ঠিকাদার নিয়োগে ২০২০ সালে দরপত্র আহ্বান করে রেলওয়ে। সহজ ডটকম পাঁচ বছরে ৩০ কোটি ২৫ লাখ টাকায় ২০ কোটি টিকিট বিক্রি করে দেওয়ার প্রস্তাব করে। তবে তাদের প্রস্তাবটি ছিল কিছুটা ভিন্ন। তারা রেলের কাছ থেকে মাত্র ৫ কোটি টাকা নেবে বলে উল্লেখ করে। বাকিটা বিজ্ঞাপন থেকে আয় করার কথা। এ হিসাবে প্রতিটি টিকিট বিক্রির জন্য সরাসরি মাত্র ২৫ পয়সা পায় তারা। অন্যদিকে সিএনএস ২৪ কোটি টাকায় ২০ কোটি টিকিট বিক্রির প্রস্তাব দেয়। অর্থাৎ প্রতি টিকিটের জন্য তাদের প্রস্তাবিত মাশুল ছিল ১ টাকা ২০ পয়সা।

কম দর প্রস্তাব করে সহজ ডটকম টিকিট বিক্রির দায়িত্ব পায়।

রেলওয়ে সূত্র বলছে, দরপত্রে পাঁচ বছরে ৮ কোটি টিকিট অনলাইনে এবং ১২ কোটি কাউন্টারে বিক্রি হবে—এমন প্রক্ষেপণ করা হয়েছিল। কিন্তু সহজকে দায়িত্ব দেওয়ার পর প্রথমে ঈদে শতভাগ টিকিট অনলাইনে বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয় রেলপথ মন্ত্রণালয়। পরে অনলাইনে বিক্রির বিষয়টিই অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। এতে প্রায় ২০ কোটি টিকিটের ৭০ শতাংশই অনলাইনে বিক্রি করার সুযোগ পাচ্ছে সহজ।

সহজ অনলাইন কিংবা কাউন্টার—সব টিকিট থেকেই প্রথমে পাচ্ছে ২৫ পয়সা। আবার শুধু অনলাইনে বিক্রি করা প্রতিটি টিকিটের জন্য পাচ্ছে বাড়তি সাড়ে ছয় টাকা। একজন ব্যক্তি একসঙ্গে সর্বোচ্চ চারটি টিকিট কাটতে পারে। অনলাইনে তা চারটি হিসাবেই গণ্য করে সহজকে বিল দেওয়া হয়। একটি টিকিট কাটার জন্য সফটওয়্যারের যে ব্যবহার, চারটির জন্য একই ব্যবহার হলেও বিল পাচ্ছে বাড়তি।

রেলওয়ে সূত্র বলছে, চুক্তি অনুসারে পাঁচ বছরে সহজ টিকিট বিক্রি ও বিজ্ঞাপন সব মিলিয়ে ৩০ কোটি টাকা পেত। অনলাইনে বেশি টিকিট বিক্রি হওয়ার কারণে বিজ্ঞাপনের আয় ছাড়াই তারা ৯২ কোটি টাকা বাড়তি আয়ের সুযোগ পাচ্ছে।

অনলাইনে কেনা টিকিটের জন্য গ্রাহকের কাছ থেকে বাড়তি ২০ টাকা নেওয়া হয়। এর মধ্যে সহজ পাচ্ছে সাড়ে ছয় টাকা। আরও সাড়ে ছয় টাকা যায় যে ব্যাংকিং গেটওয়ের মাধ্যমে দাম পরিশোধ করা হয়, সেই প্রতিষ্ঠানে। সরকার ভ্যাট হিসেবে পায় তিন টাকা। বাকি চার টাকা রেলওয়ে কল্যাণ ট্রাস্টের।

অনলাইনে টিকিট বিক্রির ফলে বাড়তি সুবিধা পাওয়ার বিষয়ে সহজ ডটকমের প্রশাসন বিভাগের প্রধান ও প্রধান যোগাযোগ কর্মকর্তা আমিনুল হক প্রথম আলোকে বলেন, অনলাইনে টিকিট বিক্রিতে অনেক খরচ। ফলে বেশি সুবিধা পাওয়ার বিষয়টি ঠিক নয়।

প্রতিষ্ঠানটির অপারেশন বিভাগের প্রধান সন্দ্বীপ দেবনাথও দাবি করেন, অনলাইনে টিকিট বিক্রিতে তাঁদের আয় বেশি হলেও খরচও অনেক। কারণ, পুরো ব্যবস্থাটি তাঁদের পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ করতে হয়।

আরও পড়ুনট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু, প্রথম আধা ঘণ্টায় ৬০ লাখ ‘হিট’০২ জুন ২০২৪চুক্তি অনুযায়ী অনেক কিছুই হয়নি

রেলওয়ে সূত্র জানায়, সিএনএসের সঙ্গে পরোক্ষভাবে ছিলেন সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তৎকালীন রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন আওয়ামী লীগের আইনজীবী নেতা ছিলেন। আইন অঙ্গনে দুজনের মধ্যে বিরোধ ছিল। সুজন রেলমন্ত্রী হয়ে যেকোনো মূল্যে সিএনএসকে বাদ দেওয়ার উদ্যোগ নেন। অবশ্য সিএনএসের বিরুদ্ধেও অভিযোগ ছিল যে তারা প্রভাব খাটিয়ে একাধিকবার রেলের টিকিট বিক্রির দায়িত্ব পেয়ে নানা অজুহাতে বাড়তি টাকা তুলে নিয়েছে। সহজ ডটকম বেসরকারি বাসের টিকিট অনলাইনে বিক্রি করার মধ্য দিয়ে এই ব্যবসায় এসেছে।

সহজের সঙ্গে করা চুক্তি অনুসারে, রেলের গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনগুলোতে বড় ৬০টি মনিটর স্থাপন করার কথা। এসব মনিটরে ট্রেন গমনাগমন, কোচের সিরিয়াল নম্বর, ট্রেনের অবস্থান ইত্যাদি সম্পর্কে তথ্য সরবরাহের কথা। ট্রেনের বর্তমান অবস্থান নিশ্চিত করার জন্য ঠিকাদারের পক্ষ থেকে রেলের প্রতিটি ইঞ্জিনে জিপিএস ট্র্যাকার স্থাপন এবং তা রক্ষণাবেক্ষণ করার কথা। তবে এর অনেক কিছুই হয়নি। এ ছাড়া বহনযোগ্য যন্ত্রের মাধ্যমে (পিওএস) টিকিট বিক্রির কথা বলা হয়েছে। বিশেষ করে কাউন্টারে দীর্ঘ লাইন ভোগান্তি এড়াতে যন্ত্রের ব্যবহারের কথা হয়। তা–ও কার্যকর নেই বলে রেলের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

এই বিষয়ে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ও গণপরিবহন–বিশেষজ্ঞ সামছুল হক প্রথম আলোকে বলেন, রেলে যে পরিমাণ বিনিয়োগ হয়েছে, সে হারে যাত্রী পরিবহনের সক্ষমতা বাড়েনি। কেন বাড়েনি এই জবাবদিহি করতে হবে। সক্ষমতা বাড়ালে কালোবাজারি বন্ধে এত কিছুর দরকার হবে না। তিনি আরও বলেন, অনলাইনে টিকিট কাটতে খরচ কম হওয়ার কথা। বাড়তি টাকা নেওয়া হলে তা অবশ্যই অনিয়ম।

আরও পড়ুনট্রেনের টিকিট পুরোটা অনলাইনে দেওয়া কতটা যৌক্তিক০৬ এপ্রিল ২০২৩.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ট ক ট র জন য প রথম আল ক কর মকর ত র র জন য ব যবস থ ব যবহ র পর বহন ছয় ট ক অন স র র বহন অবশ য র লওয় ব ষয়ট দশম ক

এছাড়াও পড়ুন:

মেঘনা আলমকে আটক কেন জাতীয় ইস্যু হলো

মডেল মেঘনা আলমকে আটক এবং তাঁকে কারাগারে পাঠানোর বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একজন মন্তব্য করেছিলেন, এ ঘটনা অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য ‘পচা শামুকে পা কাটা’র মতো হতে পারে। ব্যক্তিপর্যায়ের একটি ‘সাধারণ’ বিষয়কে ‘জাতীয় ইস্যু’তে পরিণত করা এবং এর ফলে সরকারের জন্য বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি হওয়া—এমন কিছু বোঝাতেই তিনি হয়তো মন্তব্যটি করেন। বাস্তবে তেমনটাই ঘটেছে আর এর মধ্য দিয়ে আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং খোদ সরকারসংশ্লিষ্ট কারও কারও ‘অপরিণামদর্শিতা’ আবারও জনসমক্ষে প্রকাশিত হয়েছে।

২.

একাধিক সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মডেল মেঘনা আলমের সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যের একটি শক্তিশালী দেশের বাংলাদেশে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূতের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। পরে সেই সম্পর্কে টানাপোড়েন তৈরি হয়। এর জেরেই মেঘনা আলমকে আটক করা হয়।

গত বুধবার রাতে মেঘনা আলমকে রাজধানীর বসুন্ধরার বাসা থেকে আটক করতে যায় ডিবি পুলিশ। এ সময় তিনি ফেসবুক লাইভে ছিলেন। সেই লাইভে তিনি বলছিলেন, তাঁর দরজার বাইরে পুলিশ পরিচয়ধারীরা তাকে নিতে এসেছে। মেঘনা আলমের ফেসবুক লাইভ চলার সময়ই তাঁর বাসায় পুলিশ প্রবেশ করে এবং তখন লাইভ বন্ধ হয়ে যায়।

আটক হওয়ার আগমুহূর্তে সেই লাইভে মেঘনা আলম বলছিলেন, ‘বাসায় কিছু মানুষ আক্রমণ করেছে। তারা নিজেদেরকে পুলিশ পরিচয় দিচ্ছে। আমি বলেছি থানায় এসে কথা বলব, তারা কথা শুনছে না।’ লাইভ ভিডিওতে মেঘনা আলমকে দরজার বাইরে থাকা লোকদের উদ্দেশে বলতে শোনা যায়, ‘আপনারা আমার দরজা ভাঙার চেষ্টা করছেন।...’ (বিবিসি বাংলা, ১১ এপ্রিল ২০২৫)

ঘটনাক্রম থেকে স্পষ্ট, পুলিশ সদস্যরা জোরপূর্বক বাসায় প্রবেশ করে মেঘনা আলমকে তুলে নিয়ে যান। তাঁকে তুলে নেওয়ার বিষয়টি থানা ও ডিবি পুলিশের পক্ষ থেকে স্বীকার করা হয়নি। এর ফলে তাঁকে অপহরণ করা হয়েছে কি না, এমন একটি আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল।

বুধবার রাতে মেঘনা আলমকে তুলে নেওয়ার পর বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টায় তাঁকে চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে উপস্থাপন করা হয়। এরপর বিশেষ ক্ষমতা আইনে ৩০ দিনের আটকাদেশ দিয়ে মেঘনা আলমকে কারাগারে পাঠানো হয়। আটক করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারের পাঠানোর পরও পুলিশের পক্ষ থেকে তাঁর অবস্থান সম্পর্কে কোনো কিছু জানানো হয়নি।

মেঘনা আলমকে যেভাবে আটক করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে, সেই ঘটনাটি জানাজানি হলে দেশে-বিদেশে আলোচনা-সমালোচনা ও প্রতিক্রিয়া শুরু হয়। দেশের মানবাধিকারকর্মীদের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো বিষয়টি নিয়ে তাদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা-নিন্দা জানায়। এতে সরকারের ওপর একরকম দৃশ্যমান চাপ তৈরি হয়।

মেঘনা আলমের গ্রেপ্তার নিয়ে ঢাকা মেট্রোপলিট্রন পুলিশ (ডিএমপি) শুক্রবার তাদের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে একটি পোস্ট দেয়। এতে মেঘনা আলমকে অপহরণ করার অভিযোগ সঠিক নয় দাবি করে বলা হয়, ‘রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত করা, গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি সম্পর্ক মিথ্যাচার ছড়ানোর মাধ্যমে আন্তরাষ্ট্রীয় সম্পর্ক অবনতির অপচেষ্টা করা এবং দেশকে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকার অভিযোগে মেঘনা আলমকে সকল আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে নিরাপত্তা হেফাজতে রাখা হয়েছে।...’

পুলিশের এ ‘বিবৃতি’টি ছিল অস্পষ্ট ও অসংগতিপূর্ণ । এতে একধরনের ঢালাও অভিযোগ করা হয়েছে, যেখানে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই। ৩০ দিনের আটকাদেশ দিয়ে মেঘনা আলমকে কারাগারে পাঠানোর বিষয়টিকে তারা ‘নিরাপত্তা হেফাজত’ বলে বিভ্রান্তি সৃষ্টির চেষ্টা করেছে; ‘সকল আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ’ করার দাবিটি ছিল অসত্য ও বানোয়াট।

লক্ষণীয় হলো, পুলিশের পক্ষ থেকে দেওয়া ওই পোস্টটি শুক্রবার নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে শেয়ার দিয়েছিলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। এর ফলে মেঘনা আলমকে আটক ও কারাগারে পাঠানোর সিদ্ধান্তে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের সায় বা সম্মতি আছে, এমনটাই প্রতীয়মান হয়েছিল। তবে শফিকুল আলম পরে সেই পোস্টটি সরিয়ে নেন।

৩.

মেঘনা আলমকে যেভাবে আটক করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে, সেই ঘটনাটি জানাজানি হলে দেশে-বিদেশে আলোচনা-সমালোচনা ও প্রতিক্রিয়া শুরু হয়। দেশের মানবাধিকারকর্মীদের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো বিষয়টি নিয়ে তাদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা-নিন্দা জানায়। এতে সরকারের ওপর একরকম দৃশ্যমান চাপ তৈরি হয়।

এ রকম অবস্থায় রোববার (১৩ এপ্রিল) ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) প্রধানের পদ থেকে রেজাউল করিম মল্লিককে সরিয়ে দেওয়ার খবর পাওয়া যায়। এরপর দুপুরের দিকে এক সংবাদ সম্মেলনে আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল জানান, মেঘনা আলমকে বিশেষ ক্ষমতা আইনে যে প্রক্রিয়ায় আটক করা হয়েছে, সেটা সঠিক হয়নি। (প্রথম আলো অনলাইন, ১৩ এপ্রিল ২০২৫)

আইন উপদেষ্টার এ বক্তব্যের পর যে প্রশ্নগুলো সামনে আসে তা হলো, যে প্রক্রিয়ায় আটক করা হয়েছে, সেটা সঠিক না হলে মেঘনা আলমকে আটক রাখা হচ্ছে কেন? এ আটকাদেশ কি বেআইনি বা অবৈধ নয়? তাঁর বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ থাকলে সেই অভিযোগে কেন মামলা করা হয়নি?

মেঘনা আলমকে আটকের প্রক্রিয়া ও আটকাদেশের বৈধতা নিয়ে তাঁর বাবা বদরুল আলম হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করেছিলেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে মেঘনা আলমকে পরোয়ানা ছাড়া গ্রেপ্তার, কারণ উল্লেখ না করে গ্রেপ্তার, ২৪ ঘণ্টার বেশি গোয়েন্দা কার্যালয়ে হেফাজতে রাখা এবং তাঁর মুক্তি প্রশ্নে রুল দেন হাইকোর্ট। বিশেষ ক্ষমতা আইনে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে মেঘনা আলমকে দেওয়া আটকাদেশ কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, তা রুলে জানতে চাওয়া হয়। (মডেল মেঘনা আলমের আটকাদেশ কেন অবৈধ নয়: হাইকোর্ট, প্রথম আলো অনলাইন, ১৩ এপ্রিল ২০২৫)

৪.

মেঘনা আলমের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের অভিযোগ থাকলে সুনির্দিষ্ট সেই অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করা যেত এবং ফৌজদারি কার্যবিধি অনুসরণ করে ব্যবস্থা নেওয়া যেত। কিন্তু তাঁকে বিশেষ ক্ষমতা আইনে আটক করে কারাগারে পাঠানোর ফলে এটি ‘জাতীয় ইস্যু’তে পরিণত হয়েছে। এর কারণ, বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বিতর্কিত ও সমালোচিত আইনগুলোর একটি হলো বিশেষ ক্ষমতা আইন।

একটি বিশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ১৯৭৪ সালে এ আইনটি প্রণয়ন করা হয়েছিল। এ আইনের বড় সমস্যা হলো, এ আইনে আটক ব্যক্তি আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ পান না; আইনের পরিধি এতটাই বিস্তৃত, সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ ছাড়াই যে কাউকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে আটকে রাখা যায়। বিরোধী রাজনৈতিক শক্তিকে দমনের জন্য বিভিন্ন সময়ে এ আইনটি ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়েছে, এ রকম বহু অভিযোগ রয়েছে।

আরও পড়ুনগণতান্ত্রিক প্রতিশ্রুতি প্রশ্নবিদ্ধ১৩ এপ্রিল ২০২৫

অতীতে বিশেষ ক্ষমতা আইন রাজনৈতিক দলের নেতা–কর্মীদের বিরুদ্ধে বেশি ব্যবহৃত হয়েছে; সাধারণ নাগরিকের ক্ষেত্রে এর প্রয়োগ ছিল বিরল। তা ছাড়া নানা রকম সমালোচনার কারণে সাম্প্রতিক সময়ে এ আইন প্রায় ‘অব্যবহৃত’ ছিল। এ রকম অবস্থায় একজন নারীর বিরুদ্ধে এ আইনের প্রয়োগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহার হিসেবেই প্রতীয়মান হচ্ছে।

বিশেষ ক্ষমতা আইন ব্যবহার করে মেঘনা আলমকে আটকের পর কারাগারে পাঠানোর ঘটনায় গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক অফিস নিজেদের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে বলেছে, ‘এ কালো আইন ঐতিহাসিকভাবে দীর্ঘদিন ধরে মানুষকে অভিযোগ ও বিচারিক তত্ত্বাবধান ছাড়াই নির্বিচার আটকের জন্য ব্যবহার করা হয়ে আসছে। এসব কাজের মধ্য দিয়ে প্রক্রিয়াগত সুরক্ষা এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের মান ও প্রয়োগ গুরুতরভাবে লঙ্ঘিত হচ্ছে।’ (প্রথম আলো অনলাইন, ১২ এপ্রিল ২০২৫)

মেঘনা আলমকে যেভাবে বা যে প্রক্রিয়ায় আটক করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে, তা নাগরিক অধিকার হরণে আমাদের আইন প্রয়োগকারী সংস্থার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির চরম অভাবকে স্পষ্ট করেছে। একই সঙ্গে তা আমাদের আইনি কাঠামোর বিশ্বাসযোগ্যতা, মানবিকতা এবং অন্তর্বর্তী সরকারের গণতান্ত্রিক প্রতিশ্রুতিকে ব্যাপকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।

বিশেষ ক্ষমতা আইনে মেঘনা আলমের আটকাদেশকে ফ্যাসিবাদী তৎপরতা ও স্বৈরাচারী আচরণের প্রকাশ বলে অভিহিত করেছে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি। তারা বলেছে, বিশেষ ক্ষমতা আইন একটি ফ্যাসিবাদী আইন। গণ–অভ্যুত্থান পরবর্তী রাষ্ট্রে বিশেষ ক্ষমতা আইনসহ নিপীড়নমূলক কোনো আইন থাকতে পারে না। জুলাইয়ে ছাত্র–জনতার বিপুল রক্তক্ষয়ী অভ্যুত্থানের মাধ্যমে রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রূপান্তর যখন জনগণের আকাঙ্ক্ষা হয়ে উঠেছে, তখন এ রকম আইনের ব্যবহার আবার ফ্যাসিবাদী তৎপরতার প্রকাশ ঘটিয়েছে। (প্রথম আলো অনলাইন, ১২ এপ্রিল ২০২৫)

৫.

বিশেষ ক্ষমতা আইনে মেঘনা আলমকে আটক করা নিয়ে মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী খোদা বখস চৌধুরী বলেন, ‘মেঘনা আলমের সঙ্গে এই আইন প্রথম ব্যবহৃত হচ্ছে, বিষয়টা তা নয়।’ (প্রথম আলো অনলাইন, ১৫ এপ্রিল ২০২৫)। তাঁর এ বক্তব্যের পর প্রশ্ন ওঠে, একটি বিতর্কিত আইন আগে ব্যবহৃত হয়েছে, শুধু এই যুক্তিতেই কি সেটা বৈধ বা গ্রহণযোগ্য হতে পারে? এ রকম হলে বিগত স্বৈরাচারী আমলের অনেক কিছুই এখন বৈধ বা গ্রহণযোগ্য বলে মেনে নিতে হবে!

গণ–অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী শাসনের পতনের মধ্য দিয়ে আট মাসের বেশি সময় আগে দায়িত্ব নিয়েছিল অন্তর্বর্তী সরকার। এ সরকারের কাছে জনগণের প্রত্যাশা হলো, তারা রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রূপান্তর বা সংস্কার করবে। এ রকম অবস্থায় বিশেষ ক্ষমতা আইনের মতো একটি ‘স্বৈরাচারী’ আইনের প্রয়োগ অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। আইন–আদালতসহ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিপীড়নের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করার সংস্কৃতি যে এখনো বহাল রয়েছে, এটা খুবই স্পষ্ট।

লক্ষণীয় হলো, বেশ কয়েকজন মানবাধিকারকর্মী অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁরা দায়িত্বে থাকা অবস্থায় বিশেষ ক্ষমতা আইনের এ রকম প্রয়োগ খুবই হতাশাজনক।

এ আইন গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও আইনের শাসনের প্রতি হুমকিস্বরূপ, এটা তাঁদের অজানা নয়। এই আইন বাতিল না করলে মানবাধিকার নিয়ে তাঁদের অঙ্গীকার প্রশ্নবিদ্ধ হবে এবং জনমনে এমন ধারণাই পোক্ত হবে, ‘যে যায় লঙ্কায়, সেই হয় রাবণ’।

মনজুরুল ইসলাম প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক

সম্পর্কিত নিবন্ধ