হস্তচালিত তাঁতে রেশম সুতায় চকচকে দামি সব কাপড় বুনলেও নিজেরা কখনো দামি কাপড় পরতে পারেন না। জীবনও তাঁদের মসৃণ নয়, বড়ই সাদামাটা। কোনো উৎসব উপলক্ষে ছেলেমেয়েদেরও কিনে দিতে পারেন না নতুন কাপড়। রমজান মাসে ইফতার ও সাহ্‌রিতে জোটে না ভালো খাবার। রমজান বা ঈদ উপলক্ষে বাড়তি কোনো আয়ের ব্যবস্থা না থাকায় তাঁরা তাঁদের জীবনের অনেক ইচ্ছাই পূরণ করতে পারেন না।

এ অবস্থা চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার রেশম তাঁতপল্লির তাঁতশ্রমিকদের। এ পল্লি তাঁতে কাপড় বুনে জীবিকা নির্বাহ করেন ২৫০ থেকে ৩০০ জন শ্রমিক। এখানের তাঁত কারখানাগুলোর মালিকেরা হিন্দু হলেও শ্রমিকদের ৭০ ভাগই মুসলমান।  

খট খট ছন্দ তুলে একমনে হস্তচালিত তাঁতযন্ত্রে রেশমের থান কাপড় বুনছিলেন তাঁতশ্রমিক মো.

সহুবুল (৩৭)। হরিনগর তাঁতিপাড়ার রাস্তা দিয়ে হেঁটে মৌসুমি সিল্ক নামে রেশম কাপড়ের শোরুম যেতে পথের পাশেই তাঁতঘরে কাপড় বুনতে থাকা সহুবুলের দিকে চোখ আটকে যায়। চেহারায় বিষণ্নতার ছাপ।

গত মঙ্গলবার দুপুরে সহুবুলের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঈদ উপলক্ষে তাঁতিদের বাড়তি  আয়ের সুযোগ নেই। বছরের অন্যান্য সময় যা আয় করেন, রমজান মাসেও তেমন। যদিও রমজান মাসে বাড়তি খরচ হয়। আছে রোজা শেষে ঈদের খরচ। ঈদে পরিবারের কারও নতুন পোশাক হোক বা না হোক ঈদের দিনে একটু ভালো খাবার তো জোগাড় করতেই হয়।

সহুবুল তাঁর দুর্দশার কথা জানাতে গিয়ে বলেন, সপ্তাহে দুই হাজার টাকার বেশি আয় হয় না। প্রতি মাসেই কাজ থাকে না দু-চার দিন। কোনো মাসে তারও বেশি। তখন করেন রাজমিস্ত্রির জোগালির কাজ। মা, স্ত্রী, তিন ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে তাঁর পরিবার। পরিবারের অন্নসংস্থান করতেই হিমশিম খেতে হয়। বাড়তি খরচের উপায় নেই। ইফতার করতে হয় ভাত অথবা ছাতু দিয়ে। তিন ছেলেও রোজা রাখে। তারা মুরগির মাংস খাওয়ার বায়না ধরেছে। কিন্তু কয়েকটি রোজা চলে গেলেও মুরগির মাংস কিনতে পারেননি।

সহুবুল বলেন, ‘ঈদ কহ্যা লতুন কাপড় কিন্যা দিতে পারি না কাহুকে। যখুন জুটে তখুনি কিন্যা দি একটা দুটা কইর‍্যা। কিন্তুক ছোট দুটাকে বুঝিয়্যা পারা যায় না। একেকবার দিতে হয়। তবে এবার বুঝিন পারব না। শুধু হামার কহ্যা লয়, এ রকুমই অবস্থা সব তাঁতিদের। ভালো কর‍্যা ভাতই জুটে না তো, লতুন কাপড়। ঈদ-বকরিঈদ কহ্যা আলাদ কুনু দিন নাই হামারঘে।’

৬ মার্চ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে হরিনগর তাঁতিপাড়ায় ইন্দু সিল্ক স্টোরের তাঁতঘরে গিয়ে দেখা যায়, কাপড় বুনতে থাকা পাঁচজনের চারজনই মুসলমান। এই সময় নয়ালাভাঙ্গা গ্রামের সাদিকুল শেখ (৪৩), হরিনগর মুসলিম পাড়ার মো. ঈমান আলী (৪৫), মো. জামিল হোসেন (৪০) ও শরিফ উদ্দীনের (৩৭) সঙ্গে কথা হয়।

শরিফ উদ্দীন বলেন, ‘সিল্কের কাপড় বুনি ম্যালা বছর থ্যাকা। কিন্তু কুনুদিন পরতে পারিনি। মেয়েরা কেউ কিন্যা দিতে পারিনি। ইফতারের ল্যাগা একখানটাই জিলাপি কিনি। কুচরি কইর‍্যা ভাঙ্যা মুড়ির সোথে মিলিয়্যা খাই। হামার তিনটা বেটি। ওরঘে ল্যাগা লতুন জামা কিনতে হোইবে। চিন্তাতে আছি।’

সাদিকুল শেখ বলেন, ‘হামার ঘরে সাতজন খানেআলা। ওষুধের দোকানে বাকি আছে। দু সিজিনে ধান কাটি কহ্যা কুনমতে সংসার চলে। শেষমেশ ঈদে কাহুরি ল্যাগা কিছু করতে পারব কি না কহিতে পারব না। হামারঘে তো আর বাড়তি আয় হয় না।’

দুঘর পার হয়ে গৌড় চন্দ্র দাসের তাঁত কারখানায় কাজ করছিলেন কমলাকান্তপুর গ্রামের এরফান আলী, আবুল কাশেম, রিপন আলী, কবির আলী ও ওয়াসিম আলী। সামনে ঈদ এলেও তাঁদের মনে কোনো আনন্দ নেই। তিনি জানালেন, ভালো খাবার কেনার চেয়ে ঈদে বাড়ির শিশু সদস্য ও বৃদ্ধ মা-বাবার জন্য ঈদে নতুন কাপড় কেনার চিন্তাই তাড়া করছে তাঁদের। অথচ বাড়তি কোনো আয়ের ব্যবস্থা নেই।

এরফান আলী, আবুল কাশেম, রিপন আলীদের তাঁত কারখানার মালিক চন্দন দাস (৪৬) বলেন, ‘করোনার পর এক বছরই মোটামুটি ভালো ব্যবসা হয়েছে। এখানকার সিংহভাগ কাপড় কেনে আড়ং। তাঁরা কাপড় কেনা কমিয়ে দিয়েছে। আমরাও তাঁতের সংখ্যা কমিয়ে দিয়েছি। আগে ছিল ১৬টি। এখন ৮-১০টি চালাই।’

তাঁতের কাজ করে ভালোভাবে সংসার চলে না। অনেকেই পেশা বদল করছেন

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সহ ব ল রমজ ন

এছাড়াও পড়ুন:

পারকিনসনস দিবস উপলক্ষে ব্যতিক্রমী আয়োজন

আজ বিশ্ব পারকিনসনস দিবস। প্রতিবছর ১১ এপ্রিল বিশ্বজুড়ে দিবসটি পালন করা হয়। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘ইউনাইট ফর পারকিনসনস’। এবার দিবসটি উপলক্ষে ভিন্নধর্মী এক আয়োজন করেছিল স্কয়ার হাসপাতাল লিমিটেডের নিউরোসায়েন্স সেন্টার। হাসপাতালের মিলনায়তনে গতকাল বৃহস্পতিবার পারকিনসনস আক্রান্ত ব্যক্তি এবং তাঁদের পরিবারের সদস্যদের জন্য জীবনঘনিষ্ঠ এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

পারকিনসনসকে সাধারণভাবে একধরনের ‘মুভমেন্ট ডিজঅর্ডার’, যা রোগীর স্বাভাবিক চলন শক্তিকে বাধাগ্রস্ত করে। রোগীর পেশি কাঁপতে থাকে, তাঁর স্বাভাবিক গতি ধীরে ধীরে কমে আসতে থাকে। বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় পেশির জড়তায়। একপর্যায়ে ছোট ছোট পদক্ষেপে হাঁটেন তিনি। হাঁটাচলার সময় ভারসাম্য রাখতে অসুবিধা হয়।

অনুষ্ঠানের শুরুতে চিকিৎসকদের জন্য ছিল বৈজ্ঞানিক সভা। হাসপাতালটির বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা ছাড়াও সেখানে বক্তব্য দেন জাতীয় নিউরোসায়েন্সেস ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জালাল উদ্দিন মুহাম্মদ রুমী।

পারকিনসনস রোগের চিকিৎসায় ওষুধ এবং বিশেষ ব্যায়াম ছাড়াও বিশেষায়িত শল্যচিকিৎসার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে আলোচনা করেন অধ্যাপক জালাল উদ্দিন। চিকিৎসাপ্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশেও এ ধরনের শল্যচিকিৎসা করা হচ্ছে, এখন পর্যন্ত যদিও তা স্বল্প পরিসরে।

সভায় যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক থেকে ভার্চ্যুয়ালি যোগ দেন নিউরোলজির অধ্যাপক আলেসান্দ্রো ডি রোকো। তিনি জানান, বিশ্বে সবচেয়ে দ্রুতগতিতে যে স্নায়বিক রোগটি বাড়ছে, তা হলো পারকিনসনস। রোগটি সম্পর্কে তাই সবারই সচেতন হওয়া জরুরি।

পারকিনসনস আক্রান্ত যেসব ব্যক্তি স্কয়ার হাসপাতাল লিমিটেডে চিকিৎসা নিয়েছেন, তাঁদের এবং তাঁদের স্বজনদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল এই বিশেষ আয়োজনে। ফুল দিয়ে তাঁদের বরণ করে নেওয়া হয়। তাঁদের পক্ষ থেকে কয়েকজন নিজেদের অভিজ্ঞতার কথা ভাগ করে নেন বৈজ্ঞানিক সভায়।

হাসপাতালটির নিউরোলজি বিভাগের সিনিয়র কনসালট্যান্ট ও কো-অর্ডিনেটর মফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। জিনগত বিষয়ও জড়িত থাকে কারও কারও ক্ষেত্রে। তিনি বলেন, অনেকের জন্যই বাড়তি ঝুঁকি সৃষ্টি করে পরিবেশে ছড়িয়ে থাকা মারাত্মক দূষণকারী পদার্থ। বায়ুতে মিশে থাকা কণা এবং কৃষিপণ্য উৎপাদনে ব্যবহৃত রাসায়নিক কীটনাশক হলো এ ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ উপাদান। স্বাস্থ্যকর জীবনচর্চা এ রোগের ঝুঁকি কমাতে পারে।

নিউরোলজি বিভাগের কনসালট্যান্ট মুহাম্মদ ওয়াহিদুর রহমান একজন মুভমেন্ট ডিজঅর্ডার বিশেষজ্ঞ। যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেলোশিপ সম্পন্ন করে এখন দেশের মানুষকে বিশেষায়িত সেবা দেওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেন এই চিকিৎসক।

এই চিকিৎসক জানালেন, পারকিনসনসকে সাধারণভাবে মুভমেন্ট ডিজঅর্ডার বলা হলেও এতে দেহের বহুবিধ পরিবর্তন হয়। কিছু সাধারণ উপসর্গ দেখা দেয় রোগীর চলাচল বাধাগ্রস্ত হওয়ারও আগে। চলাচলের সমস্যা দেখা দিলে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া আবশ্যক। স্কয়ার হাসপাতাল লিমিটেডে বিশেষায়িত পারকিনসনস ইউনিট চালু করারও স্বপ্ন দেখেন তিনি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • তাড়াশে ২০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী ভাদাই মেলা
  • বাংলা নববর্ষে আসছে পারিবারিক গল্পের সিরিজ ‘ননসেন্স’ 
  • বৈশাখে স্মৃতির ঝাঁপি খুলবেন বিজরী-দিনার
  • শহুরে পরিবারের দ্বন্দ্ব নিয়ে ‘ননসেন্স’
  • বৈসাবি উপলক্ষে রাঙামাটিতে ঐতিহ্যবাহী বলী খেলা অনুষ্ঠিত
  • ট্রেন্ডিংয়ের শীর্ষে অপূর্ব-নীহা
  • আমিরাতের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাৎ
  • পারকিনসনস দিবস উপলক্ষে ব্যতিক্রমী আয়োজন
  • নববর্ষ উপলক্ষে ব্যস্ততা বেড়েছে মৃৎশিল্পীদের
  • মারমাদের মাহা সাংগ্রাইয়ের ছয় দিনব্যাপী উৎসবের শুরু