সেনা অভিযানে জাফর এক্সপ্রেসের ৩৪৬ যাত্রী উদ্ধার, নিহত ৩৩ সন্ত্রাসী
Published: 13th, March 2025 GMT
পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশে ট্রেন হামলার ঘটনায় দেশটির সেনাবাহিনীর বিশেষ অভিযানে ৩৪৬ জন যাত্রীকে উদ্ধার করা হয়েছে। এ অভিযানে ৩৩ জন সন্ত্রাসী নিহত হয়েছে এবং অন্তত ২৮ জন সেনাসদস্য প্রাণ হারিয়েছেন।
বুধবার পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়, দুদিনের দীর্ঘ অভিযানের পর সব যাত্রীকে নিরাপদে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। অভিযানে সেনাবাহিনী, বিমান বাহিনী, ফ্রন্টিয়ার কর্পস এবং এসএসজি কমান্ডোরা অংশ নেন। সূত্র: এএফপি, ডন।
গত মঙ্গলবার (১১ মার্চ) দুপুরে কোয়েটা থেকে পেশোয়ারের উদ্দেশে যাত্রা করা জাফর এক্সপ্রেস ট্রেনে হামলা চালায় বেলুচিস্তানের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী বেলুচ লিবারেশন আর্মি (BLA)। সন্ত্রাসীরা একটি রেলপথ উড়িয়ে দিয়ে ট্রেনটি থামিয়ে দেয় এবং যাত্রীদের জিম্মি করে।
সেনাবাহিনীর আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী জানান, দুর্গম এলাকা ও মানবঢাল ব্যবহারের কারণে অভিযান চালানো কঠিন ছিল। তবে সেনাবাহিনীর নির্ভুল হামলায় একে একে সন্ত্রাসীদের নির্মূল করা হয়।
তিনি বলেন, "অভিযানের সময় সন্ত্রাসীরা স্যাটেলাইট ফোনের মাধ্যমে আফগানিস্তানে তাদের সমর্থকদের সঙ্গে যোগাযোগ করছিল। সেনাবাহিনীর স্নাইপাররা আত্মঘাতী হামলাকারীদের হত্যা করে একের পর এক বগিতে প্রবেশ করে যাত্রীদের উদ্ধার করেন।"
অভিযানে ২৭ জন সেনাসদস্য ট্রেনে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় নিহত হন এবং অভিযানের সময় আরও একজন সেনা প্রাণ হারান। অপরদিকে, ৩৩ জন সন্ত্রাসী নিহত হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে সেনাবাহিনী।
এই অভিযানের মাধ্যমে পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনী সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে বড় ধরনের সাফল্য অর্জন করেছে বলে দাবি করেছে আইএসপিআর।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
আন্দোলনের সময় জাতিসংঘের কোনো বার্তা পায়নি সেনাবাহিনী: আইএসপিআর
জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভূতপূর্ব অভ্যুত্থানে দমন–পীড়নে অংশ না নিতে সেনাবাহিনীকে ‘সতর্ক’ করেছিলেন বলে কিছুদিন আগে এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক। তবে হাইকমিশনার থেকে এ বিষয়ক কোনো ইঙ্গিত কিংবা বার্তা সম্পর্কে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী অবগত নয়।
সোমবার (১০ মার্চ) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসের সমসাময়িক বিষয় নিয়ে সাক্ষাৎকারভিত্তিক অনুষ্ঠান ‘হার্ডটক’-এ গত বছরের জুলাই-আগস্ট মাসে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ভূমিকা সম্পর্কে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্কের মন্তব্য নিয়ে একটি সংবাদ প্রচার করা হয়।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী মানবাধিকারের তাৎপর্য যথাযথভাবে মূল্যায়ন করে এবং যেকোনো গঠনমূলক সমালোচনা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে, তবে অধিকতর সঠিকতা ও স্বচ্ছতার উদ্দেশ্যে উক্ত মন্তব্যের কিছু বিষয়ে স্পষ্টকরণ প্রয়োজন বলে মনে করে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার থেকে এ বিষয়ক কোনো ইঙ্গিত কিংবা বার্তা সম্পর্কে অবগত নয়। যদি এ সংক্রান্ত কোনো উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়ে থাকে, তবে তা তৎকালীন বাংলাদেশ সরকারকে জানানো হয়ে থাকতে পারে, সেনাবাহিনীকে নয়। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী জাতীয় নিরাপত্তা নির্দেশিকা অনুযায়ী কাজ করে এবং সর্বদা আইনের শাসন ও মানবাধিকার নীতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তবে, মি. ভলকার তুর্কর মন্তব্য কিছু মহলের মাধ্যমে ভুলভাবে উপস্থাপিত হচ্ছে, যা সেনাবাহিনীর ভূমিকা সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণা সৃষ্টি এবং এর পেশাদারিত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে।
নিরপেক্ষতা ও সততার মহান ঐতিহ্য ধারণ করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সর্বদা জনগণের পাশে থাকতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। অতীতের ঘটনাপ্রবাহ, বিশেষত ১৯৯১ সালের গণতান্ত্রিক রূপান্তর প্রমাণ করে যে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কখনো জনগণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কাজ করেনি। ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের আন্দোলনের সময়ও সেনাবাহিনী জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছে এবং কোনো পক্ষপাত বা বাহ্যিক প্রভাব ছাড়াই জননিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে।
বিজ্ঞপ্তির বর্ণনা অনুযায়ী, বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ হিসেবে, পেশাদারিত্ব ও নিষ্ঠার জন্য বাংলাদেশ আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। এখানে উল্লেখ্য যে, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অর্জিত আয়ের একটি ক্ষুদ্র অংশ শান্তিরক্ষীরা পেয়ে থাকেন এবং এর সিংহভাগ জাতীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে, যার পরিমাণ গত ২৩ বছরে প্রায় ২৭ হাজার কোটি টাকা।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক কমিশনের সঙ্গে দীর্ঘদিনের সুসম্পর্ককে গুরুত্বের সঙ্গে মূল্যায়ন করে এবং দেশের জনগণ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি দায়িত্ব পালনে সর্বদা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেনাবাহিনীর ভূমিকা সংক্রান্ত যেকোনো বিষয়ে উদ্বেগ অথবা বিভ্রান্তি সৃষ্টি হলে তা গঠনমূলক আলোচনার মাধ্যমে ফলপ্রসূভাবে সমাধান করা সম্ভব বলে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী মনে করে।
ঢাকা/হাসান/ইভা