জেন-জি ও মিলেনিয়ালরা কেন সাময়িক অবসরে যাচ্ছেন
Published: 13th, March 2025 GMT
গত শতাব্দীর আশি ও নব্বইয়ের দশকের বাংলা সিনেমায় দেখা যায়, নায়ক–নায়িকারা ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় দিন-রাত পরিশ্রম করছে। তবে এই শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকে পরিশ্রমের ধরন বদলে গেছে। এখন কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করছেন জেন-জিরা, মিলেনিয়ালরাও বসছেন গুরুত্বপূর্ণ আসনে। আগে কর্মজীবনকে মহিমান্বিত করতে কয়েক দশকের পরিশ্রমের পর অবসরকে দেখা হতো পুরস্কার হিসেবে। এখন জেন-জি ও মিলেনিয়াল কর্মীদের কাছে বাংলা সিনেমার সেই চিত্রনাট্য উল্টে গেছে। এখনকার পেশাজীবীরা ভ্রমণ বা অন্যান্য শখ পূরণে কিংবা ব্যস্ত জীবনে হাঁপ ছেড়ে বাঁচতে শুধু ছুটি নয়, সাময়িক অবসরেই চলে যাচ্ছেন। এই সাময়িক অবসর বিষয়টা কী?
যেভাবে শুরুএকবিংশ শতাব্দীর একদম শুরুর দিকে ইউরোপ-আমেরিকায় যখন প্রযুক্তিনির্ভর প্রতিষ্ঠানের বিস্তার ঘটতে থাকে, তখন থেকেই সামনে আসে সাময়িক অবসরের ধারণাটি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কল্যাণে সেই ধারণা গেল কয়েক বছর বেশ জনপ্রিয়তাও পেয়েছে। তরুণদের এই অবসরকালীন ভ্রমণ বা রোমাঞ্চকর দিনযাপন উঠে আসছে মূলত টিকটক, ইনস্টাগ্রাম ও ফেসবুকের রিলসে।
২০০৭ সালে মার্কিন উদ্যোক্তা ও বিনিয়োগকারী টিমোথি ফেরিস ‘দ্য ফোর-আওয়ার ওয়ার্কউইক’ নামের এক বইয়ের মাধ্যমে এই ধারণা জনপ্রিয় করে তুলতে অবদান রাখেন। আগেই বলেছি, কাজ ও জীবনের মধ্যে ভারসাম্য আনতে সাময়িক অবসরে যাচ্ছেন মূলত জেন-জি ও মিলেনিয়ালরা। কেবল কর্মীরাই নিজ উদ্যোগে এমন অবসরে যাচ্ছেন, তা কিন্তু নয়। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানও কর্মীদের এমন অবসরকে উৎসাহ দিচ্ছে। অনেক প্রতিষ্ঠান আবার কর্মীদের টাকাপয়সা দিয়েও পাশে থাকছে। কেউ কেউ এ জন্য ৩: ১ মডেল অনুসরণ করেন। তিন বছর কাজ করে এক বছর ছুটি নেওয়াই এখন সাময়িক অবসর হিসেবে আলোচিত।
আরও পড়ুনতোমার মতো বয়সে আমি ভাবতাম ছুটি বলে কিছু নেই: বিল গেটস২২ মে ২০২৩কেন সাময়িক অবসরে যাচ্ছেন২০২৩ সালের ব্যবসায় পরামর্শ প্রতিষ্ঠান ডেলয়েটের এক জরিপে দেখা যায়, প্রায় ৪৬ শতাংশ জেন-জি সদস্য কাজের চাপে তুলনামূলক বেশি ক্লান্ত বোধ করেন। প্রচলিত ক্যারিয়ারের পথ তাঁরা অনুসরণ করতে চান না। ৪০ বছরের অবিরাম কাজ এখন আর তরুণ পেশাদারদের কাছে মোটেও আকর্ষণীয় কিছু নয়। সাময়িক অবসর শারীরিকভাবে দুর্বল বা বার্নআউট প্রতিরোধের একটা মোক্ষম উপায় হিসেবেও বিবেচিত।
২০২৪ সালে প্রকাশিত ম্যাকিঞ্জে অ্যান্ড কোম্পানির এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ৫৬ শতাংশ জেন-জি কর্মী বেতনের চেয়ে কাজ ও জীবনের ভারসাম্যকে অগ্রাধিকার দেন। আগের প্রজন্মগুলো কর্মক্ষেত্রে স্থিতিশীলতা ও দীর্ঘস্থায়িত্বকে অপরিহার্য হিসেবে মানতেন। জেন-জি ও মিলেনিয়াল কর্মীরা কাজ ও জীবন—দুটির বেলায় স্বাচ্ছন্দ্য ও পরিপূর্ণতায় বিশ্বাসী। এই প্রবণতার অন্যতম কারণ হচ্ছে ফ্রিল্যান্সিং, ডিজিটাল নোম্যাড বা ডিজিটালি যাযাবর জীবন ও রিমোট জবের প্রসার। জেন-জিরা ভ্রমণ ও অভিজ্ঞতাকে বেশি গুরুত্ব দেন। এক্সপিডিয়ার ২০২২ সালের এক গবেষণায় দেখা যায়, জেন-জিদের ৭৪ শতাংশ বস্তুগত সম্পদের চেয়ে ভ্রমণের অভিজ্ঞতাকে বেশি প্রাধান্য দেন। এ কারণে তাঁরা সাময়িক অবসর বেছে নিচ্ছেন।
আরও পড়ুনঅফিসে আপনি কতটা গুরুত্বপূর্ণ, বুঝুন ১০ লক্ষণ দেখে০২ ডিসেম্বর ২০২৪সাময়িক অবসর কি জনপ্রিয়তা পাচ্ছেপিউ রিসার্চ সেন্টারের একটি সমীক্ষা বলছে, ৬৩ শতাংশ জেন-জি কর্মী বিশ্বাস করেন, কয়েক দশক ধরে একই চাকরিতে থাকার চেয়ে কাজ থেকে বিরতি নেওয়া বেশি উপকারী। পর্তুগাল ও ইন্দোনেশিয়ার বালিতে ‘ফায়ার’ নামে একটা কনসেপ্ট বা ধারণা বেশ জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। ‘ফায়ার’ হলো ‘ফিন্যান্সিয়াল ইনডিপেনডেন্স, রিটায়ার আর্লি’র সংক্ষিপ্ত রূপ। অর্থাৎ ‘আর্থিক স্বাধীনতা, আগেভাগে অবসর’।
ইউরোপের দেশগুলোতে সামাজিক সুরক্ষার বিষয়টি শক্তিশালী। ফলে সেখানে সাময়িক অবসর বেশি জনপ্রিয়তা পাচ্ছে, এটাই স্বাভাবিক। জার্মানি ও ফ্রান্সের মতো দেশে চাকরি থেকে বিরতি নিলে বেতন ঠিকই ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা হয়। ইউরোস্ট্যাট অনুসারে, ৪১ শতাংশ ফরাসি কর্মী ৪০ বছর বয়স হওয়ার আগে কমপক্ষে একবারের জন্য হলেও চাকরি থেকে বিরতি নিয়েছেন। ২০২৩ সালের এক জরিপে দেখা যায়, ৩৯ শতাংশ অস্ট্রেলিয়ান কর্মী চাকরিজীবনের মাঝামাঝিতে এসে একবার হলেও সাময়িক অবসর নিয়েছেন।
উন্নয়নশীল অর্থনীতির দেশগুলোতে সাময়িক অবসর এখনো কষ্টকল্পনা। কারণ, এসব দেশে আর্থিক স্থিতিশীলতাই বড় চিন্তার বিষয়। তবে তারপরও ভারত, ইন্দোনেশিয়াসহ বাংলাদেশের অনেক তরুণ এখন ফ্রিল্যান্সিং ও রিমোট জবে যুক্ত বলে সাময়িক অবসরে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।
সূত্র: ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম, দ্য গার্ডিয়ান ও ফার্স্টআপ
আরও পড়ুনবিখ্যাত মনোবিজ্ঞানীর মতে, অফিসের যে ৪টি নিয়ম বাতিল করার এখনই সময় ০৬ মার্চ ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ভ রমণ
এছাড়াও পড়ুন:
পোল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত হলেন সাবেক আইজিপি ময়নুল ইসলাম
সদ্য সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মো. ময়নুল ইসলামকে পোল্যান্ডে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত করেছে সরকার। ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পুলিশ বাহিনীর ভঙ্গুর অবস্থার মধ্যে তাঁকে আইজিপির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল।
আজ বৃহস্পতিবার তাঁকে পোল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এর আগের দিন গতকাল বুধবার সরকারি চাকরি থেকে তিনি স্বাভাবিক অবসরোত্তর ছুটিতে (এলপিআর) যান। এখন তাঁর অবসরোত্তর ছুটি স্থগিত করে পরবর্তী দুই বছরের জন্য তাঁকে রাষ্ট্রদূত করা হয়েছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, অবসরোত্তর ছুটি ও সংশ্লিষ্ট সুবিধা স্থগিত করে, অন্য সব পেশা, ব্যবসা কিংবা সরকারি, আধা সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের সঙ্গে কর্ম-সম্পর্ক ত্যাগ করার শর্তে ১০ এপ্রিল থেকে দুই বছরের জন্য ময়নুল ইসলামকে পোল্যান্ডে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসাবে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ৭ আগস্ট দ্বাদশ বিসিএস ব্যাচের কর্মকর্তা ময়নুল ইসলামকে আইজিপির দায়িত্ব দেওয়া হয়। ভেঙে পড়া পুলিশি ব্যবস্থার মধ্যে সাড়ে তিন মাস আইজিপির দায়িত্ব পালন করেন তিনি। আইজিপি হওয়ার আগে এই কর্মকর্তা ট্রাফিক অ্যান্ড ড্রাইভিং স্কুলের কমান্ড্যান্ট ছিলেন।
এরপর ২০ নভেম্বর অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা বাহারুল আলমকে ময়নুল ইসলামের স্থলাভিষিক্ত করে আইজিপি হিসেবে নিয়োগ দেয় সরকার। ২৬ নভেম্বর রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব দেওয়ার জন্য ময়নুল ইসলামের চাকরি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করা হয়। তবে সে সময় তাঁকে কোনো দূতাবাসে পাঠানো হয়নি। সরকারি চাকরিবিধি অনুযায়ী ৯ এপ্রিল তিনি অবসরে যান।