সারাদিন রোজা রাখা রাখার পর ইফতারে একটু স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খাওয়া ভালো। সে ক্ষেত্রে দই বড়ার তুলনা নেই। কেউ একটু টক স্বাদের দই বড়া পছন্দ করেন, কেউ বা মিষ্টি । সুস্বাদু এই খাবারটি সারাবছরই বিভিন্ন রেস্তোরাঁয়  পাওয়া যায়। তবে রমজান মাসে এই খাবারটির চাহিদা অনেক গুণ বেড়ে যায়। খেতে সুস্বাদু এবং স্বাস্থ্যকর এই খাবারটি চাইলে বাড়িতেও বানাতে পারেন। 

উপকরণ : মাসকলাই ডাল আধা কাপ,টালা জিরা গুঁড়া ১ টেবিল চামচ,টালা মরিচের গুঁড়া আধা চা চামচ, ধনে গুঁড়া ১ টেবিল চামচ,আদা বাটা ১ টেবিল চামচ, রসুন বাটা সামান্য,টক বা মিষ্টি দই  ১ কাপ, কাঁচা মরিচ বাটা আধা চা মচামচ, বিট লবণ আধা চা চামচ, ধনে পাতা বাটা আধা চা চামচ, ২ টেবিল চামচ চিনি, তেঁতুল চাটনি ২ টেবিল চামচ, ধনে পাতা ১ টেবিল চামচ, পুদিনা পাতা ১ টেবিল চামচ, লবণ স্বাদমতো 

প্রস্তুত প্রণালী : ডাল সারারাত ভিজিয়ে রাখুন। ডালের সঙ্গে কাঁচা মরিচ বাটা, আদা, রসুন এবং লবণ দিয়ে ব্লেন্ড করে ফেলুন। এখন মিশ্রণটি একটি বাটিতে ঢেলে রাখুন। 

একটা ফ্রাইপেনে তেল দিন। তেলটা এই পরিমাণ দিন যাতে ডুবো তেলে ভাজা যায়। এখন অল্প ডাল নিয়ে বড়া আকারে ভাজুন। ভাজা হলে তেল থেকে তুলে লবণ মেশানো পানিতে ছাড়ুন। এভাবে সব ডালের বড়া ভাজুন। দইটা ফেটতে থাকুন। ঘন হলে সামান্য পানি দিয়ে ফেটুন। স্বাদমতো লবণ,চিনি ও টালা জিরা আর মরিচের গুঁড়া ছাড়া সব মসলাগুলো মেশান। মিষ্টি দই হলে চিনির পরিবর্তে তেঁতুলের চাটনি দিন।

এবার বড়াগুলো একটা একটা করে পানি থেকে তুলে পানি ঝরিয়ে দইয়ের মধ্যে দিন। ওপরেজিরা আর মরিচের টালা গুঁড়া মসলা ছিটিয়ে দিন। পুদিনাপাতা বা ধনেপাতার কুচি দিন। বড়া ৩-৪ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখুন। ফ্রিজে রাখলে ভালো ভালো হয়। এরপর তেঁতুলের চাটনি দিয়ে পরিবেশন করুন। 

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

৯০ দিনের সুযোগকে কাজে লাগানোর পরামর্শ ব্যবসায়ীদের

বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পণ্যের ওপর আরোপিত পাল্টা শুল্ক ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ৯০ দিনের এই সুযোগকে যথাযথভাবে কাজে লাগানোর পরার্মশ দিয়েছেন দেশের ব্যবসায়ী, অর্থনীতিবিদ ও নীতিনির্ধারকেরা।

আজ শনিবার রাজধানীর গুলশান ক্লাবে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ) আয়োজিত ‘বাংলাদেশের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক: পাল্টা কৌশল ও ভবিষ্যৎ করণীয়’ শীর্ষক এক গোলটেবিল আলোচনায় এ পরামর্শ দেন ব্যবসায়ীরা। অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, ‘বাংলাদেশের পণ্য আমদানিতে যুক্তরাষ্ট্রের ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপের বিষয়টি ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। এতে সমস্যা চলে যায়নি। এই শুল্ক নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাব কী, আমরা তাদের কতটা ছাড় দিতে পারব, দেশটি থেকে কোন কোন পণ্যের আমদানি বাড়ানো যাবে—এসব নিয়ে খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনা ও সমন্বয় করে দ্রুত কর্মকৌশল নির্ধারণ করতে হবে।’

গোলটেবিল আলোচনা বৈঠকে বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন (এফবিসিসিআই), তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ, নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ, এলএফএমইএবি, বিসিআই, বিপিজিএমইএসহ দেশের ব্যবসা ও শিল্প খাতের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

২ এপ্রিল বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের পণ্যের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। এতে বাংলাদেশ থেকে আমদানি করা সব পণ্যে দেশটি অতিরিক্ত ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে। যদিও ৯ এপ্রিল আরেক ঘোষণায় পাল্টা শুল্ক তিন মাসের জন্য স্থগিত করেছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে এতে শুল্ক পুরোপুরি উঠে যায়নি। এ সময় সবার জন্য সাধারণভাবে ১০ শতাংশ হারে পাল্টা শুল্ক থাকবে।

ব্যবসায়ীরা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্কের সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের রপ্তানি খাতে, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে।

গোলটেবিল আলোচনায় মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মাসরুর রিয়াজ। তিনি বলেন, ‘আমাদের এখন চারটি ক্ষেত্র মাথায় রেখে কাজ করা প্রয়োজন। প্রথমত, যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত শুল্কের কারণে খাতভিত্তিক প্রভাব বোঝার চেষ্টা করা। অর্থাৎ বাড়তি শুল্কের কারণে কোন খাতের রপ্তানি ও কর্মসংস্থানে কী ধরনের প্রভাব পড়বে, সেটি বোঝা। দ্বিতীয়ত, পাল্টা শুল্কের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কতভাবে দর–কষাকষি করা যায়, সেটি দেখা। এটি কূটনৈতিক যোগাযোগের মাধ্যমে, শুল্ক কমিয়ে, আমদানি বাড়িয়ে কিংবা বাজারভিত্তিক কোনো সমাধানের মাধ্যমে হতে পারে।’

মাসরুর রিয়াজ বলেন, তৃতীয়ত, দেশের সরকারি ও বেসরকারি খাতের সংশ্লিষ্টদের নিয়ে একটি সাধারণ অবস্থান ঠিক করতে হবে, যাতে সবাই যেকোনো সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে ঐক্যমত হয়। চতুর্থত, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য দর–কষাকষির ক্ষেত্রে সরকার কোনো পণ্যভিত্তিক প্রণোদনার সুবিধা দিতে পারে কি না, সেটি দেখা। যেমন যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলা আমদানির ক্ষেত্রে চট্টগ্রাম বন্দরে কেন্দ্রীয়ভাবে ‘ফ্রি জোন’ বা ‘ওয়্যারহাউস’ করা যায়।

বাংলাদেশ চেম্বার অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (বিসিআই) সভাপতি আনোয়ার–উল–আলম চৌধুরী বলেন, ‘যে সিদ্ধান্তই নেওয়া হোক, যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাব বুঝে তাদের স্বার্থের আলোকে সেটি নিতে হবে। এ ছাড়া সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে স্বল্পোন্নত (এলডিসি) দেশ থেকে উত্তরণ–পরবর্তী চ্যালেঞ্জের কথাও মাথায় রাখতে হবে। আর টেকসই কোনো সমাধানে যেতে হলে অবশ্যই আমাদের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়াতে হবে।’

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ভাইস চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) প্রশাসক মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক আরোপ আমাদের সামনে চ্যালেঞ্জের পাশাপাশি নতুন সুযোগও এনে দিয়েছে। গত ১৫ থেকে ২০ বছরে এনবিআরসহ বিভিন্ন সংস্থার কাছে অনেকগুলো সংস্কার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। এ বিষয়গুলো এখন বাস্তবায়ন করা যেতে পারে। সরকার এ বিষয়ে বেশ ইতিবাচক।’ এ ছাড়া ৯০ দিন শুল্ক স্থগিতের সুযোগটিকে যথাযথভাবে কাজে লাগানোর পরামর্শ দেন তিনি।

এফবিসিসিআইয়ের প্রশাসক হাফিজুর রহমান বলেন, ইতিপূর্বে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে একাধিকবার মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির (এফটিএ) প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র এতে রাজি হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রের বক্তব্য ছিল, বাংলাদেশ তাদের সঙ্গে এফটিএ বাস্তবায়ন করতে পারবে না। কারণ, বাংলাদেশে শ্রম সমস্যা ও মেধাস্বত্ব আইনসহ বিভিন্ন বিষয়ে দুর্বলতা রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপের পরে বিভিন্ন আঞ্চলিক ও দ্বিপক্ষীয় এফটিএ নিয়ে কাজ করছে অনেক দেশ। বাংলাদেশও এমন সুযোগ নিতে পারে।

এসিআই হেলথকেয়ার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এম মুহিবুজ্জামান বলেন, সাধারণত ওষুধ পণ্য রপ্তানির ওপর যুক্তরাষ্ট্রে শুল্ক থাকে না। তবে নতুন পাল্টা শুল্কনীতি ওষুধের ক্ষেত্রেও কার্যকর হবে কি না, সেটি এখনো স্পষ্ট নয়। তবে শুল্ক আরোপ হলে সেটি এ খাতের জন্য বড় ধাক্কা হবে। যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাব বুঝে দর–কষাকষি করতে পারলে সবার জন্য লাভজনক (উইন–উইন) একটা অবস্থানে পৌঁছা যাবে বলে মনে করেন তিনি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ