প্রকল্প পরিচালকের চাপে অফিসছাড়া ৫ কর্মকর্তা
Published: 13th, March 2025 GMT
বিতর্ক পিছু ছাড়ছে না কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সমন্বিত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্পের। শুরু থেকে অনিয়মের অভিযোগ ওঠা প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পটি এখনও হাঁটছে সে পথেই। ২০২০ সালে শুরু হওয়া পাঁচ বছরের প্রকল্পে এরই মধ্যে অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে তিন পরিচালক বদল করা হলেও শৃঙ্খলা ফেরেনি।
গত ১৫ ফেব্রুয়ারি সমন্বিত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্পে চতুর্থবারের মতো পরিচালক বদল করা হয়। নতুন নিয়োগ পান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের নারায়ণগঞ্জের কৃষি প্রকৌশলী মঞ্জুর-উল-আলম। পরদিন ১৬ ফেব্রুয়ারি তিনি চেয়ারে বসেই তুলকালাম কাণ্ড করে বসেন। কোনো সরকারি আদেশ ছাড়াই প্রকল্পের দুই উপপ্রকল্প পরিচালকসহ পাঁচ কর্মকর্তাকে অফিসছাড়া করেন।
২০২০ সালে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্প পরিচালক ছিলেন বেনজীর আলম। সেই সময় থেকেই নানা অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। তখন তাঁকে উল্টো পদোন্নতি দিয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক করা হয়। এর মাস ছয়েক পর নতুন প্রকল্প পরিচালকের দায়িত্ব পান তারিক মাহমুদুল ইসলাম। পরে তাঁকে সরিয়ে মোহাম্মদ সফিউজ্জামানকে প্রকল্প পরিচালক করা হয়। গত ডিসেম্বরে তারিক মাহমুদুলসহ সংশ্লিষ্ট আট কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে কৃষি মন্ত্রণালয়।
গত ১৫ ফেব্রুয়ারি মোহাম্মদ সফিউজ্জামানের স্থলাভিষিক্ত হন কৃষি প্রকৌশলী মঞ্জুর-উল-আলম। পরদিন তিনি চেয়ারে বসেই উপপ্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম শেখ, উপপ্রকল্প পরিচালক আলতাফুন নাহার, সিনিয়র মনিটরিং অ্যান্ড ইভালুয়েশন অফিসার মুহাম্মদ কুরবান আলী, মনিটরিং অ্যান্ড ইভালুয়েশন অফিসার আফছার আহমেদ রাজিন ও মনিটরিং অ্যান্ড ইভালুয়েশন অফিসার জুলফিকার আলী ভুট্টোর কক্ষের নামফলক খুলে ফেলেন। অভিযোগ রয়েছে, কর্মকর্তাদের কাছ থেকে তাদের কক্ষের চাবি নিয়ে অফিস ত্যাগ করার নির্দেশ দেন প্রকল্প পরিচালক।
এদিকে পাঁচ কর্মকর্তাকে অফিস কক্ষ থেকে বের করে দেওয়ার কয়েক দিন পর দুই উপপ্রকল্প পরিচালকের কক্ষে নতুন দু’জনকে বসানো হয়েছে। অথচ দুই প্রকল্প পরিচালককে এখনও নিয়ম অনুযায়ী বদলি কিংবা অব্যাহতি দেওয়া হয়নি। আর নতুন যে দুই কর্মকর্তা অফিস করছেন, তারাও প্রকল্পে নিয়োগের কোনো নির্দেশনা পাননি।
এ বিষয়ে সমন্বিত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্পের পরিচালক মঞ্জুর-উল-আলম বলেন, ‘আমি কাউকে জোর করে রুম থেকে বের করিনি। কর্মকর্তাদের বলেছি, অফিস শেষে চাবি যেন আমার কাছে রেখে যান। কারণ, হঠাৎ করে কোনো কাগজপত্রের দরকার হতে পারে। এ ছাড়া সব কক্ষেই নতুন নামফলক লাগানো হবে। ফলে পুরোনো নামফলক খুলে নেওয়া হয়েছে।’
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: খ ম রব ড় য ন ত র ক করণ প রকল প কর মকর ত
এছাড়াও পড়ুন:
রাশিয়া সফরে ট্রাম্পের দূত, ইউরোপের উদ্বেগ
ইউক্রেন সংকট ঘিরে বিশ্বজুড়ে কূটনৈতিক ও সামরিক তৎপরতা আরও জোরদার হয়েছে। যুক্তরাজ্য ও জার্মানির উদ্যোগে শুক্রবার ব্রাসেলসে ৫০টি দেশের প্রতিনিধিদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে ইউক্রেন প্রতিরক্ষা যোগাযোগ গ্রুপের গুরুত্বপূর্ণ এক বৈঠক। ব্রিটেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জন হিলি জানিয়েছেন, এ বৈঠকের মূল লক্ষ্য ছিল রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ওপর চাপ আরও বাড়ানো।
বৈঠকে ইউক্রেনকে অতিরিক্ত ৫৮ কোটি ডলারের সামরিক সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়। এই প্যাকেজের আওতায় রাডার সিস্টেম, অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক মাইন এবং বিপুল পরিমাণ ড্রোন সরবরাহ করা হবে। এ ছাড়া ইউক্রেনের যুদ্ধক্ষেত্রে থাকা সামরিক যান ও সরঞ্জাম মেরামতেও ব্যয় করা হবে এ অর্থের একটি অংশ।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ শুক্রবার রাশিয়ায় পৌঁছেছেন। ক্রেমলিন জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হতে পারে। এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হলে তা হবে উইটকফ ও পুতিনের মধ্যে তৃতীয় বৈঠক। এর আগে ফেব্রুয়ারিতে উইটকফ পুতিনের সঙ্গে তিন ঘণ্টারও বেশি সময় বৈঠক করে আমেরিকান শিক্ষক মার্ক ফোগেলকে মুক্ত করিয়েছিলেন। রাশিয়া সফরের আগে তিনি ওয়াশিংটনে রুশ আলোচক কিরিল দিমিত্রিয়েভের সঙ্গে বৈঠক করেন। দু’পক্ষের মধ্যে যুদ্ধবিরতি নিয়ে ‘একটি সমঝোতা’ হয়েছে বলে জানা গেছে।
তবে এই আলোচনার মধ্যেই রাশিয়ার বিরুদ্ধে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছে ইউক্রেন। ইউক্রেনের মানবাধিকার কমিশনার দিমিত্র লুবিনেৎস জানিয়েছেন, রুশ সেনারা ১৩ মার্চ জাপোরিঝিয়া অঞ্চলের পিয়াতিখাতকি গ্রামে চারজন নিরস্ত্র ইউক্রেনীয় যুদ্ধবন্দিকে গুলি করে হত্যা করেছে। ইউক্রেন ও রাশিয়ার ড্রোন ফুটেজ বিশ্লেষণ করে অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস এই ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছে। লুবিনেৎস আন্তর্জাতিক রেড ক্রস ও জাতিসংঘের কাছে বিষয়টি তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘এটি বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়, বরং রাশিয়ার একটি প্রাতিষ্ঠানিক নীতি, যা সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে উৎসাহিত হচ্ছে।’ এ ঘটনায় যুদ্ধাপরাধের তদন্ত শুরু হয়েছে।
এরই মধ্যে রাশিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের আলোচিত একটি বন্দিবিনিময় হয়েছে। বিশ্বাসঘাতকতার মামলায় রাশিয়ায় কারাবন্দি আমেরিকান নাগরিক ক্সেনিয়া কারেলিনাকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। তাঁর বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্র আর্থার পেত্রভ নামে এক রুশ-জার্মান নাগরিককে রাশিয়ার হাতে তুলে দিয়েছে। এই বিনিময় প্রক্রিয়ায় মধ্যস্থতা করেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। কারেলিনার বাগদত্তা ক্রিস ভ্যান হেরডেন এই মুক্তির জন্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। তবে আরও কয়েকজন মার্কিন নাগরিক এখনও রাশিয়ার হেফাজতে আছেন, যাদের মুক্তির জন্য চেষ্টা করছে যুক্তরাষ্ট্র।
যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের অংশ হিসেবে সম্প্রতি তুরস্ক ও ইস্তাম্বুলে বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা হয়েছে। আলোচনায় কূটনৈতিক সম্পত্তি ফেরত দেওয়া, নিষেধাজ্ঞা শিথিলকরণ ও সরাসরি বিমান চলাচল শুরু করার মতো বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত ছিল। বিশ্লেষকদের মতে, যুদ্ধক্ষেত্র ও কূটনৈতিক পরিসরে এই নতুন আলোচনাপ্রবাহ ইউক্রেন সংকটের সমাধানের পথ তৈরি করতে পারে, তবে এখনও বড় ধরনের অগ্রগতি অনিশ্চিত।