চট্টগ্রাম বন্দরের ইয়ার্ডে কমলাপুর আইসিডিগামী কনটেইনারের জট কমে এসেছে। পণ্যবাহী ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানোর কারণে বন্দরে কনটেইনার জট কমতে শুরু করেছে। এতে ব্যবসায়ীদের মধ্যে স্বস্তি ফিরেছে। অবশ্য এখনো ধারণক্ষমতার চেয়ে আড়াই শতাধিক একক কনটেইনার বন্দর ইয়ার্ডে রয়েছে।

এদিকে পবিত্র রমজানের মাঝামাঝি কনটেইনার পরিবহনে স্বস্তি এলেও ঈদের আগে-পরে এই জট আবার বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। কারণ, ঈদকে কেন্দ্র করে যাত্রীবাহী ট্রেন বাড়ানো হবে। এতে বাড়তি ইঞ্জিনের দরকার হবে। তখন কনটেইনারবাহী ট্রেনের সংখ্যা কমানো হতে পারে বলে জানিয়েছেন রেলওয়ের কর্মকর্তারা।

বন্দর সূত্র জানায়, গত ১৯ ফেব্রুয়ারি বন্দরের ইয়ার্ডে কমলাপুর আইসিডিগামী ১ হাজার ৮১১ একক কনটেইনার ছিল। বন্দরের স্বাভাবিক ধারণক্ষমতা ৮৭৬ একক কনটেইনার। তখন প্রতিদিন গড়ে দুটি ট্রেনও পাওয়া যেত না। ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম ১৫ দিনে মাত্র ২৮টি ট্রেন পেয়েছিল বন্দর। এর আগে জানুয়ারি মাসে পাওয়া যায় ৬৮টি ট্রেন। এতে জাহাজ থেকে নামানোর পর ট্রেনে করে ঢাকার কমলাপুর ডিপোতে কনটেইনার নিতে প্রায় ১৫ দিন অপেক্ষা করতে হতো। তবে গত ১১ মার্চ বন্দরের ইয়ার্ডে কনটেইনারের সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ১০৫টিতে। গত সোমবার ট্রেনে করে কমলাপুর আইসিডিতে পাঠানো হয় ১১১ একক কনটেইনার। এতে অপেক্ষার সময় কিছুটা কমেছে।

ঢাকাগামী কনটেইনারবাহী ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। এতে আগের চেয়ে বাড়তি পণ্য পরিবহন করা সম্ভব হচ্ছে। বন্দরেও চাপ আগের চেয়ে কমেছে। তবে ঈদের আগে-পরে এ ধারা অব্যাহত থাকবে কি না, তা এ মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না।—আনিসুর রহমান, বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা, বাংলাদেশ রেলওয়ে

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বন্দর সচিব মো.

ওমর ফারুক প্রথম আলোকে বলেন, কমলাপুরগামী কনটেইনারের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় কনটেইনারবাহী ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানো হয়। আবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মাধ্যমে কমলাপুরগামী কনটেইনার নৌপথে পানগাঁও নিয়ে খালাসের সুযোগও দেওয়া হয়েছে। এসব উদ্যোগের ফলে বন্দরের ইয়ার্ডে কনটেইনার জট কিছুটা কমেছে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা আনিসুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ঢাকাগামী কনটেইনারবাহী ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। এতে আগের চেয়ে বাড়তি পণ্য পরিবহন করা সম্ভব হচ্ছে। বন্দরেও চাপ আগের চেয়ে কমেছে। তবে ঈদের আগে-পরে এ ধারা অব্যাহত থাকবে কি না, তা এ মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না।

বন্দর সূত্রে জানা যায়, ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে বন্দর ইয়ার্ডে ধারণক্ষমতার প্রায় আড়াই গুণ কনটেইনার জমে গিয়েছিল। এ সময় রেলওয়েও পণ্য পরিবহনের জন্য প্রয়োজনীয় ট্রেন দিতে পারছিল না। উল্টো ইঞ্জিনসংকটের কারণে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে ট্রেনের সংখ্যা কমে যায়। রোজার আগে পণ্য পরিবহনে এমন বেহাল অবস্থার কারণে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলেন ব্যবসায়ীরা। এতে নড়েচড়ে বসে বন্দর কর্তৃপক্ষ ও রেলওয়ে। বন্দরের পক্ষ থেকে ট্রেনের সংখ্যা বাড়াতে রেলওয়েকে তাগাদা দেওয়া হয়। এ নিয়ে দুই সংস্থা গত ১৮ ফেব্রুয়ারি জরুরি বৈঠকে বসে। বৈঠকে কনটেইনারবাহী ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়। এর পর থেকে প্রতিদিন তিন জোড়া ট্রেন চালানো হচ্ছে।

রেলওয়ে সূত্র জানায়, পূর্বাঞ্চলে চলাচলকারী ট্রেনের জন্য অন্তত ১১৬টি ইঞ্জিন প্রয়োজন। তার বিপরীতে নিয়মিত পাওয়া যায় ৮০ থেকে ৮৫টি ইঞ্জিন। এর মধ্যে চারটি ইঞ্জিন এ মুহূর্তে ব্যবহার করা যাচ্ছে না। ইঞ্জিনসংকটের কারণে তাই ট্রেন চলাচলে নানা বিপত্তি তৈরি হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বর্তমানে কনটেইনারবাহী ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানো হলেও ঈদের সময় তা আবার কমতে পারে। কারণ, ঈদকে কেন্দ্র করে যাত্রীবাহী ট্রেনের সংখ্যা বেড়ে যায়। বর্তমানে রেলে ইঞ্জিনসংকট প্রকট। প্রয়োজনের তুলনায় পর্যাপ্ত ইঞ্জিন নেই। এ কারণে যাত্রীবাহী ট্রেন চালাতেও হিমশিম খেতে হচ্ছে। পরিস্থিতি ও গুরুত্ব বিবেচনায় পণ্যবাহী ট্রেন চলাচলের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ঈদের সময় যাত্রীবাহী ট্রেনের চাহিদা বেড়ে গেলে তখন পণ্যবাহী ট্রেনের সংখ্যা কমে যেতে পারে।

রেলওয়ের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ঢাকাসহ সারা দেশে পণ্যবাহী ট্রেন চালাতে প্রতিদিন গড়ে ১৩টি ইঞ্জিন প্রয়োজন। এসব ইঞ্জিন পেলে প্রতিদিন ছয় থেকে আটটি ট্রেন চালানো সম্ভব। কিন্তু চাহিদার তুলনায় ইঞ্জিন পাওয়া যাচ্ছে পাঁচ–ছয়টি। এসব ইঞ্জিন দিয়ে কনটেইনার ও তেলবাহী ট্রেন চালানো হয়। এখন বন্দরে কনটেইনার জমে যাওয়ায় তেলবাহী ট্রেনের সংখ্যাও কমানো হয়েছে। এর পরিবর্তে কনটেইনারবাহী ট্রেনের সংখ্যা বাড়িয়ে তিনটি করা হয়েছে।

রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের যান্ত্রিক প্রকৌশল দপ্তরের এক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, ইঞ্জিনসংকট এত বেশি প্রকট হয়েছে যে পণ্যবাহী ট্রেন চালানোও কষ্টকর হয়ে গেছে। সামনে ঈদ। তখন পণ্যবাহী ট্রেনের চেয়ে যাত্রীবাহী ট্রেনের দিকে বেশি নজর দিতে হবে। তাই এখন কনটেইনার পরিবহনে যে স্বস্তি এসেছে, তাতে কিছুটা হলেও ভাটা পড়ার শঙ্কা রয়েছে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: কর মকর ত কমল প র র লওয় র প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

সীমান্তে গুলি করে ও পিটিয়ে দুই বাংলাদেশিকে হত্যার অভিযোগ বিএসএফের বিরুদ্ধে

সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার এবং ঝিনাইদহের মহেশপুর সীমান্তে দুই বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে। দোয়ারাবাজারে কৃষককে গুলি করে খাসিয়ারা এবং মহেশপুরে যুবককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে বিএসএফের বিরুদ্ধে। স্থানীয় সূত্র উভয় ঘটনা নিশ্চিত করেছে।

দোয়ারাবাজার সীমান্তে নিহতের নাম কুটি মিয়া (৫০)। শনিবার রাতে বাগানবাড়ি-রিংকু সীমান্ত হাট দিয়ে নিহতের লাশ হস্তান্তর করার কথা।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দোয়ারাবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জাহিদুল ইসলাম। কীভাবে মৃত্যু হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি এখনও জানা যায়নি। লাশ হস্তান্তরের পর বলতে পারব।’

জানা যায়, বৃহস্পতিবার দুপুরে দোয়ারাবাজারের পেকপাড়া এবং ভারতের মোকামছড়া দিয়ে সাত বাংলাদেশি ভারতে যান। তারা হলেন– মনিরুল্লার ছেলে কুটি মিয়া (৫০), আইয়ুব আলীর ছেলে হানিফ মিয়া (৩০), এরাবুল্লাহর ছেলে জরিফ উদ্দিন (৪৫) ও আকবর আলী (৩১), অজুদ মিয়ার ছেলে খোকন মিয়া (৩৫), ময়না মিয়ার ছেলে ইসহাক (৫০) ও চাঁন মিয়ার ছেলে সোনা মিয়া (৫৫)। তাদের সবার বাড়ি পেকপাড়ায়।

তারা সীমান্ত থেকে আনুমানিক ৭ কিলোমিটার ভারতের অভ্যন্তরে নথরাইয়ের সুপারি বাগানে যান। সেখানে ভারতীয় খাসিয়াদের সঙ্গে কলহে জড়িয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে খাসিয়ারা ধাওয়া দিলে কুটি মিয়া ছাড়া বাকি ছয়জন ফেরত আসেন। তারা আত্মগোপনে রয়েছেন।

সুনামগঞ্জ-২৮ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল একেএম জাকারিয়া কাদির বলেন, ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে এ ঘটনা ঘটেনি। ভারতের ভেতরে ৭ কিলোমিটার দূরে ঘটেছে। সেখানকার পুলিশ বিষয়টি দেখভাল করছে। বাংলাদেশ পুলিশও তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে পেরেছে নিহতের লাশ শিলং হাসপাতালে আছে।

কুটি মিয়ার স্ত্রী রত্না বেগম জানান, তাঁর স্বামী বৃহস্পতিবার সকালে ঘাস কাটতে বাড়ি থেকে বের হন। এখন শুনতে পাচ্ছেন, খাসিয়ারা গুলি করে হত্যা করেছে। স্বামীর লাশ ফেরত চান তিনি।

এদিকে, মহেশপুর সীমান্তে ইছামতী নদীর ভারতীয় অংশে বাংলাদেশি যুবকের মৃতদেহ পাওয়া গেছে। জায়গাটি পশ্চিমবঙ্গের নদিয়ার ধানতলা থানার হাবাসপুর গ্রামে। তাঁকে বিএসএফ সদস্যরা পিটিয়ে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ করেছে পরিবার। বিকেলে মৃতদেহ ভেসে উঠলেও শুক্রবার রাত ৯টা ৫০ মিনিটে সেটি উদ্ধার করে বিএসএফ নিয়ে যায়।

মহেশপুর উপজেলার নেপা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সামছুল আলম মৃধা জানান, নানাভাবে কথা বলে নিশ্চিত হয়েছি, এটি বাংলাদেশি যুবকের মৃতদেহ। তবে নাম-পরিচয় জানা সম্ভব হয়নি। তাঁর বয়স আনুমানিক ২৪ বছর। মৃতদেহটি বাঘাডাঙ্গা গ্রামের আদিবাসী পাড়ার ওয়াসিম আলীর কিনা, সেটাও নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। এ নিয়ে বিজিবি-বিএসএফের পতাকা বৈঠক হলে বিস্তারিত জানা যাবে।

বাঘাডাঙ্গা গ্রামের আদিবাসী পাড়ার রমজান আলী অভিযোগ করেন, কয়েক দিন আগে ভারতে যাওয়ার সময় তাঁর ছেলে ওয়াসিম বিএসএফের হাতে আটক হয়েছিল। ঘটনাটি তিনি স্থানীয় বিজিবি ক্যাম্পে জানিয়েছেন। নিহত যুবক তাঁর ছেলে বলে তিনি দাবি করেন।

ঝিনাইদহ বিজিবি-৫৮ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল রফিকুল আলম বলেন, মৃতদেহটি নদীর ভারতীয় অংশে ছিল। রাতে বিএসএফ সেটি নিয়ে গেছে। তারা (বিএসএফ) না জানানো পর্যন্ত পরিচয় সম্পর্কে আমরা নিশ্চিত হতে পারছি না।

তিনি আরও জানান, রমজান আলীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তারা বিএসএফের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন।

মহেশপুর থানার ওসি ফয়েজ উদ্দিন মৃধা বলেন, নিখোঁজের বিষয়ে থানায় কেউ অভিযোগ করেননি। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ