এখন বৃষ্টির আশাজাগানিয়া মেঘের আনাগোনা নেই আকাশে। হাওরের জমিতে বোরো চাষে তাই সেচই ভরসা। এখানেই ঘটেছে বিপত্তি।
তীব্র সেচ সংকটের কারণে চলতি মৌসুমে ফসলহানির আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে বোরোর ক্ষেত্রে। কৃষকরা বলছেন, জমি শুকিয়ে চৌচির হয়ে গেছে। মাঠেই ঝলসে যাচ্ছে কচি ধানের সবুজপাতা। এখন পর্যন্ত বৃষ্টি না হওয়ায় শুকিয়ে আছে সেচের পানির জোগান দেওয়া উৎসগুলো। হাওরের বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠে কৃত্রিম সেচ প্রায় অসম্ভব ব্যাপার। বৃষ্টি বিলম্বিত হলে কপাল পুড়বে কৃষকের। খাদ্য সংকটের আশঙ্কাও বেড়ে যাবে।

স্থানীয় কৃষকরা জানান, দেশি জাতের ধান চাষাবাদে সেচের তেমন প্রয়োজন হয় না। তবে হাইব্রিড প্রজাতির উচ্চফলশীল ধান চাষের ক্ষেত্রে উৎপাদনের সাফল্য নির্ভরই করে পর্যাপ্ত সেচ সুবিধার ওপর। হাইব্রিড ধান চাষের ক্ষেত্রে জমিতে প্রচুর পরিমাণে পানির উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হয় বলেই সেচের ব্যাপারে কৃষক সচেতন থাকতে হয় বেশি।

হাওরের জলাশয়গুলোতে প্রাণ ফেরে বৃষ্টির পানিতে। সেই পানিই বিভিন্ন জলাধার থেকে ফসলের জমিতে সেচ কাজে ব্যবহার করেন স্থানীয় চাষিরা।
অনাবৃষ্টির কারণে এরই মধ্যে বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে শনি, মাটিয়ান, মহালিয়া, হালির, আঙ্গারুলি, সমসা, বর্ধিত গুরমা, জিনারিয়া, পানা, বলদা, বনুয়া হাওরসহ উপজেলার ২৩টি ছোটবড় হাওরের প্রায় ১৮ হাজার হেক্টর জমির ধান উৎপাদন।

স্থানীয় এসব হাওরের ফসলি জমি ঘুরে দেখা যায়, অধিকাংশ হাওরে সেচ দেওয়ার কৃত্রিম ব্যবস্থা বা সে ধরনের সুযোগ নেই। একমাত্র প্রাকৃতিক উৎসই কৃষকদের ভরসা। বিভিন্ন হাওরে নদীতীরবর্তী স্থানে যে সমস্ত জমি রয়েছে সেগুলোর ক্ষেত্রে কিছুটা স্বস্তিতে আছেন চাষিরা। নদী কাছে হওয়ায় কম হলেও নিয়মিত জমির মাটি ভেজাতে পারছেন তারা।

এদিকে সেচ মৌসুমের প্রাক্কালে হাওরবেষ্টিত এই অঞ্চলের নদী-নালা, খাল-বিলসহ সব ধরনের জলাধার পানিশূন্য থাকায় উদ্বিগ্ন চাষিরা। তারা বলছেন, আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে তাদের। দু’একদিনের মধ্যে বৃষ্টি না ঝরলে হাজার হাজার হেক্টর জমির ধান পুড়ে শেষ হয়ে যাবে। এরইমধ্যে রোপণ করা ধানের গাছ লালচে হয়ে এসেছে।

অপরদিকে উপজেলার বৃহৎ বোরো ফসল উৎপাদনকারী শনি, মাটিয়ান, মহালিয়া, আঙ্গুরুলি, বর্ধিত গুরমা ও হালির হাওরে কোনো সেচ পাম্প নেই। সেখানকার কৃষকদের ভাষ্য মতে, পানির স্তর অনেক নিচে হওয়ায় সেচ পাম্প স্থাপনে যে টাকা ব্যয় হয় তা বহন করার সামর্থ্য কৃষকদের নেই; যার কারণে বৃষ্টির অপেক্ষায় থাকেন তারা।

গোবিন্দশ্রী গ্রামের সেলিম আখঞ্জি বলেন, এ বছর ১২ একর জমিতে উচ্চ ফলনশীল ধান রোপণ করেছেন। তাঁর জমিতে সেচ দেওয়ার জন্য ২০২২ সালে একটি পাম্প বসিয়েছিলেন। তিন বছর ধরে সেচ পাম্পটি কোনো কাজে আসছে না। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর অনেক নিচে; যার কারণে এই পাম্প ব্যবহার করে সেচ দেওয়া যাচ্ছে না।

এ সমস্যার ব্যাপারে আলাপকালে উপজেলা কৃষি অফিসের উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান বলেন, পানির স্তর অতিরিক্ত নিচে থাকায় পাম্প বসালেও সমস্যা সমাধানের নিশ্চয়তা নেই। সময় মতো বৃষ্টি না হলে হাওর অধ্যুষিত এই অঞ্চলে চলতি মৌসুমে ধান উৎপাদনে ভাটা পড়বে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শরিফুল ইসলাম জানান, সেচ সংকটের কারণে অনেক হাওরেই ধান চাষ ব্যাহত হচ্ছে। দ্রুত বৃষ্টি না হলে বিস্তীর্ণ হাওরের বুকজুড়ে ঝলসানো ধানি জমি দেখতে হবে। ব্যাহত হবে ধান উৎপাদন। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

ভাইয়ের সামনে যুবলীগ নেতাকে পিটিয়ে হত্যা

নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় আবদুল কাদের মিলন (৩৬) নামে যুবলীগের এক নেতাকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। গত শুক্রবার রাতে উপজেলার চরপার্বতী ইউনিয়নে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত মিলন চরহাজারী ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মো. ইসমাঈলের ছেলে। তিনি ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। স্বজন জানান, ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর মিলন বাড়ি থেকে চলে যান। এর পর তিনি সৌদি আরবে ওমরাহ পালন করেন। চার দিন আগে তিনি দেশে ফেরেন।

মিলনের ছোট ভাই আবদুর রহিম বলেন, ‘আমি অটোরিকশাচালক। রাতে অটোরিকশায় বড় ভাইকে ফেনীর দাগনভূঞা থেকে নিয়ে গ্রামে ফিরছিলাম। পথে রাত ৯টার দিকে কোম্পানীগঞ্জের চরপার্বতী ইউনিয়নের চৌধুরীরহাট এলাকায় একটি মোটরসাইকেল আমাদের পিছু নেয়। একই ইউনিয়নের পোলের গোড়া এলাকায় পৌঁছলে মোটরসাইকেল আরোহীরা পথরোধ করে। পরে আমার ভাইকে অটোরিকশা থেকে টেনেহিঁচড়ে নামায় তারা। সেখান থেকে মারতে মারতে পার্শ্ববর্তী এতিমখানার সামনে নিয়ে যায়। সেখানে আরও কয়েকজন মিলে তাঁকে পেটাতে থাকে। প্রত্যেকের হাতে লাঠি ও ধারালো অস্ত্র ছিল। এ সময় ভাইকে উদ্ধার করতে গেলে আমাকেও মারধর করে তারা।’

আবদুর রহিম জানান, পরে সেনাবাহিনী ও পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেওয়ার পথে রাত ৩টার দিকে মিলনের মৃত্যু হয়।
মিলনের স্ত্রী জুলেখা বেগম বলেন, ‘আমার স্বামীর সঙ্গে এলাকার মেম্বার যুবদল নেতা সুমন ও মাঈন উদ্দিনের যোগাযোগ ছিল। তারা এলাকায় ফেরার আশ্বাস দেওয়ায় তিনি বাড়িতে আসেন। তাঁকে জামায়াত-শিবির ও বিএনপির লোক হত্যা করেছে।’

উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির বেলায়েত হোসেনের দাবি, এ ঘটনায় জামায়াত কিংবা ছাত্রশিবিরের কেউ জড়িত নয়। অভিযোগ অস্বীকার করে উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব মাহমুদুর রহমান রিপন বলেন, এলাকার লোক মিলনকে হত্যা করেছে। কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি গাজী মুহাম্মদ ফৌজুল আজিম জানান, এ ঘটনায় মামলা হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, রূপগঞ্জ উপজেলার পূর্বাচল উপশহরের ১ নম্বর সেক্টর থেকে গতকাল দেলোয়ার হোসেন নয়ন নামে একজনের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এদিন উপজেলার খৈসাইর এলাকায় এক নবজাতকের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি জানান, লক্ষ্মীপুর সদরের পূর্ব চৌপল্লী এলাকায় সন্ত্রাসীর গুলিতে রুবেল হোসেন নামের এক যুবক আহত হয়েছেন। শুক্রবার রাতে এ ঘটনা ঘটে। রুবেল সদর উপজেলার আবদুল কুদ্দুসের ছেলে।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ