শুষ্ক জমি ফেটে চৌচির, ঝলসে যাচ্ছে ফসল
Published: 13th, March 2025 GMT
এখন বৃষ্টির আশাজাগানিয়া মেঘের আনাগোনা নেই আকাশে। হাওরের জমিতে বোরো চাষে তাই সেচই ভরসা। এখানেই ঘটেছে বিপত্তি।
তীব্র সেচ সংকটের কারণে চলতি মৌসুমে ফসলহানির আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে বোরোর ক্ষেত্রে। কৃষকরা বলছেন, জমি শুকিয়ে চৌচির হয়ে গেছে। মাঠেই ঝলসে যাচ্ছে কচি ধানের সবুজপাতা। এখন পর্যন্ত বৃষ্টি না হওয়ায় শুকিয়ে আছে সেচের পানির জোগান দেওয়া উৎসগুলো। হাওরের বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠে কৃত্রিম সেচ প্রায় অসম্ভব ব্যাপার। বৃষ্টি বিলম্বিত হলে কপাল পুড়বে কৃষকের। খাদ্য সংকটের আশঙ্কাও বেড়ে যাবে।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, দেশি জাতের ধান চাষাবাদে সেচের তেমন প্রয়োজন হয় না। তবে হাইব্রিড প্রজাতির উচ্চফলশীল ধান চাষের ক্ষেত্রে উৎপাদনের সাফল্য নির্ভরই করে পর্যাপ্ত সেচ সুবিধার ওপর। হাইব্রিড ধান চাষের ক্ষেত্রে জমিতে প্রচুর পরিমাণে পানির উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হয় বলেই সেচের ব্যাপারে কৃষক সচেতন থাকতে হয় বেশি।
হাওরের জলাশয়গুলোতে প্রাণ ফেরে বৃষ্টির পানিতে। সেই পানিই বিভিন্ন জলাধার থেকে ফসলের জমিতে সেচ কাজে ব্যবহার করেন স্থানীয় চাষিরা।
অনাবৃষ্টির কারণে এরই মধ্যে বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে শনি, মাটিয়ান, মহালিয়া, হালির, আঙ্গারুলি, সমসা, বর্ধিত গুরমা, জিনারিয়া, পানা, বলদা, বনুয়া হাওরসহ উপজেলার ২৩টি ছোটবড় হাওরের প্রায় ১৮ হাজার হেক্টর জমির ধান উৎপাদন।
স্থানীয় এসব হাওরের ফসলি জমি ঘুরে দেখা যায়, অধিকাংশ হাওরে সেচ দেওয়ার কৃত্রিম ব্যবস্থা বা সে ধরনের সুযোগ নেই। একমাত্র প্রাকৃতিক উৎসই কৃষকদের ভরসা। বিভিন্ন হাওরে নদীতীরবর্তী স্থানে যে সমস্ত জমি রয়েছে সেগুলোর ক্ষেত্রে কিছুটা স্বস্তিতে আছেন চাষিরা। নদী কাছে হওয়ায় কম হলেও নিয়মিত জমির মাটি ভেজাতে পারছেন তারা।
এদিকে সেচ মৌসুমের প্রাক্কালে হাওরবেষ্টিত এই অঞ্চলের নদী-নালা, খাল-বিলসহ সব ধরনের জলাধার পানিশূন্য থাকায় উদ্বিগ্ন চাষিরা। তারা বলছেন, আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে তাদের। দু’একদিনের মধ্যে বৃষ্টি না ঝরলে হাজার হাজার হেক্টর জমির ধান পুড়ে শেষ হয়ে যাবে। এরইমধ্যে রোপণ করা ধানের গাছ লালচে হয়ে এসেছে।
অপরদিকে উপজেলার বৃহৎ বোরো ফসল উৎপাদনকারী শনি, মাটিয়ান, মহালিয়া, আঙ্গুরুলি, বর্ধিত গুরমা ও হালির হাওরে কোনো সেচ পাম্প নেই। সেখানকার কৃষকদের ভাষ্য মতে, পানির স্তর অনেক নিচে হওয়ায় সেচ পাম্প স্থাপনে যে টাকা ব্যয় হয় তা বহন করার সামর্থ্য কৃষকদের নেই; যার কারণে বৃষ্টির অপেক্ষায় থাকেন তারা।
গোবিন্দশ্রী গ্রামের সেলিম আখঞ্জি বলেন, এ বছর ১২ একর জমিতে উচ্চ ফলনশীল ধান রোপণ করেছেন। তাঁর জমিতে সেচ দেওয়ার জন্য ২০২২ সালে একটি পাম্প বসিয়েছিলেন। তিন বছর ধরে সেচ পাম্পটি কোনো কাজে আসছে না। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর অনেক নিচে; যার কারণে এই পাম্প ব্যবহার করে সেচ দেওয়া যাচ্ছে না।
এ সমস্যার ব্যাপারে আলাপকালে উপজেলা কৃষি অফিসের উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান বলেন, পানির স্তর অতিরিক্ত নিচে থাকায় পাম্প বসালেও সমস্যা সমাধানের নিশ্চয়তা নেই। সময় মতো বৃষ্টি না হলে হাওর অধ্যুষিত এই অঞ্চলে চলতি মৌসুমে ধান উৎপাদনে ভাটা পড়বে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শরিফুল ইসলাম জানান, সেচ সংকটের কারণে অনেক হাওরেই ধান চাষ ব্যাহত হচ্ছে। দ্রুত বৃষ্টি না হলে বিস্তীর্ণ হাওরের বুকজুড়ে ঝলসানো ধানি জমি দেখতে হবে। ব্যাহত হবে ধান উৎপাদন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
বিশেষ বিসিএসে ২০০০ চিকিৎসক নিয়োগ, বাড়ছে বয়স
চিকিৎসকদের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য বিশেষ বিসিএসের মাধ্যমে দুই হাজার চিকিৎসক নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়) অধ্যাপক সায়েদুর রহমান। আজ বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন সায়েদুর রহমান। তিনি বলেন, বর্তমানে চিকিৎসকদের বিসিএস পরীক্ষা দেওয়ার বয়স ৩২ বছর। এটাকে দুই বছর বাড়িয়ে চিকিৎসকদের বিসিএস পরীক্ষার বয়স ৩৪ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুনপরিসংখ্যান ব্যুরোতে বড় নিয়োগ, পদ ২৬৬৩ ঘণ্টা আগেঅধ্যাপক সায়েদুর রহমান বলেন, বিগত সরকারের সময় বঞ্চিত হয়ে দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত ক্ষোভের কারণে চিকিৎসকেরা গত বুধবার তাঁদের বেতন-ভাতা নিয়ে ধর্মঘট করেছিলেন। তাঁদের দাবিদাওয়া নিয়ে বর্তমান সরকার আন্তরিক। অন্তর্বর্তী সরকার শিগগিরই কিছু সিদ্ধান্তের মাধ্যমে তাঁদের এসব দাবি পূরণ করার চেষ্টা করবে।
আরও পড়ুনআইইএলটিএস প্রস্তুতি, ইংরেজির স্পষ্ট উচ্চারণের জন্য প্রতিদিন করণীয়৪ ঘণ্টা আগেসরকারের আশ্বাসের ভিত্তিতে চিকিৎসকেরা গতকাল বুধবার আন্দোলন থেকে সরে এসেছে জানিয়ে বিশেষ সহকারী অধ্যাপক সায়েদুর রহমান বলেন, ‘তবে এখনো কিছু ইন্টার্ন চিকিৎসক শিক্ষার্থীরা ক্লাশে অনুপস্থিত রয়েছেন। আমরা সরকারের পক্ষ থেকে অনুরোধ করছি, সবাই যেন নিজেদের দায়িত্ব পালন করেন।’ চিকিৎসক এবং রোগীদের সুরক্ষার জন্য আগামী দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইনটি উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে উঠবে। এক সপ্তাহের মধ্যে আইনি প্রক্রিয়ার কাজটি শেষ হবে বলেও জানান অধ্যাপক সায়েদুর রহমান।