সাহ্রি করার জন্য চুলায় ভাত বসিয়ে অন্যান্য কাজ করছিলেন শিল্পী আক্তার। ওই সময় হঠাৎ বিস্ফোরণের শব্দের পর বিদ্যুৎ চলে যায়। একটু পর আগুন আগুন চিৎকার শুনে ঘরের বাইরে এসে দেখেন বস্তির দক্ষিণ পাশে বৈদ্যুতিক খুঁটির নিচে ভাঙাড়ি দোকানটি জ্বলছে।
এর পর ঘুমন্ত স্বামী ও সন্তানকে কোনো রকমে টেনেহিঁচড়ে ঘর থেকে বের করেন। শিল্পী বলেন, রান্না করা ভাত (সাহ্রি) ফেলে চলে এসেছি, মুখেও তুলতে পারিনি। চোখের সামনেই দেখলাম শেষ সম্বলটুকু পুড়ে ছাই হয়ে গেল।
রাজধানীর সাততলা বস্তিতে অগ্নিকাণ্ডের এমন ভয়াবহ চিত্রই উঠে আসে শিল্পীর বর্ণনায়। গত মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৩টার দিকে ওই বস্তিতে আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের আটটি ইউনিট দেড় ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা (মিডিয়া) আনোয়ারুল ইসলাম দোলন বলেন, ভোর ৩টা ৪০ মিনিটে আগুন লাগার খবর পায় ফায়ার সার্ভিস। ১০ মিনিটের মধ্যে তেজগাঁও ফায়ার স্টেশন থেকে প্রথম ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে। একে একে আরও সাত ইউনিট গিয়ে ভোর ৫টা ২০ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে। এখনও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সম্পর্কে জানা যায়নি।
শিল্পী জানান, ওই ভাঙাড়ি দোকান থেকে এর আগেও বস্তিতে আগুন লেগেছিল। তখন বাসিন্দাদের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। কিন্তু বুধবার ভোররাতের আগুন নিয়ন্ত্রণের সুযোগ পাননি তারা। রোজার সময় হওয়ায় অনেকে সাহ্রি করতে ওঠায় প্রাণে বেঁচে গেছেন। না হলে ঘরের মধ্যেই অনেকে পুড়ে মারা যেত।
গতকাল বুধবার দুপুরে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, পুড়ে যাওয়া ঘরের সামনে বসে হাহুতাশ করছেন অনেকে। এর মধ্যে আলতাফ হোসেন নামে এক রিকশাচালক বলেন, দুই মাস আগে শরীয়তপুর থেকে পরিবার নিয়ে ঢাকায় এসে এই বস্তিতে উঠেছি। ভোররাতের দিকে আগুন লাগায় ঘর থেকে কিছুই বের করতে পারিনি। স্ত্রীসহ সন্তানদের নিয়ে এক কাপড়ে বের হয়ে গেছি। আজকে রোজাও থাকতে পারিনি। জানি না, সন্তানদের নিয়ে কোথায় থাকব।
বস্তির বাসিন্দা এমদাদুল হক বলেন, আগুন লাগা বাড়িকে সবাই গুলজার সাদ্দামের বাড়ি বলেই চেনে। ওই বাড়ির ৪৫টি ঘর, নারায়ণের মামার বাড়ির ১৪টি ঘরসহ প্রায় ৩০০ থেকে ৩৫০ ঘর পুড়ে গেছে। বেলা ১১টায় বস্তিতে এসে ত্রাণ দিয়ে গেছে স্থানীয় প্রশাসন।
পুড়ে যাওয়া টিনসহ ঘরের আসবাব বের করছিলেন রিকশাচালক হাবিব ও সবুজ হাওলাদার। তারা জানান, ঘরের কিছুই পুড়তে বাকি নেই। খাটের নিচে কৌটার মধ্যে কিছু টাকা ছিল, সেটা আর পাননি।
ফায়ার সার্ভিসের তেজগাঁও স্টেশনের সিনিয়র স্টেশন কর্মকর্তা নাজিম উদ্দিন সরকার বলেন, বৈদ্যুতিক গোলাযোগ থেকেই বস্তিতে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
অধ্যাপক আহমদ শামসুল ইসলামের স্মরণসভা অনুষ্ঠিত
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও একুশে পদকপ্রাপ্ত উদ্ভিদবিজ্ঞানী অধ্যাপক আহমদ শামসুল ইসলামের স্মরণে স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার সকালে রাজধানীর ঢাকা ক্লাবে এই স্মরণসভার আয়োজন করা হয়।
অধ্যাপক শামসুল ইসলামের পরিবার এই স্মরণ সভার আয়োজনে করে। এতে তাঁর দীর্ঘ কর্মময় জীবন, গবেষণা, শিক্ষাক্ষেত্রে অসামান্য অবদান এবং ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণ করেন শিক্ষক, শিক্ষার্থী, সহকর্মী, গুণগ্রাহী ও পরিবারের সদস্যরা।
অনুষ্ঠানের শুরুতে অধ্যাপক ইসলামের মেয়ে অধ্যাপক জেবা ইসলাম সেরাজ সবাইকে স্বাগত জানান। তিনি প্রয়াত পিতার জন্য ক্ষমা ও দোয়া চান। এরপর তিনি সঞ্চালক হাসিব ইরফানুল্লাহকে পরিচয় করিয়ে দেন। কোরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের কর্মসূচি শুরু হয়।
অনুষ্ঠানে হাসিব ইরফানুল্লাহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হাসিনা খান এবং জাপানের ইওয়াতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদে উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আবিদুর রহমানের শোক বার্তা পাঠ করেন।
অনুষ্ঠানে বক্তারা অধ্যাপক শামসুল ইসলামের দীর্ঘ ও বর্ণাঢ্য কর্মজীবন এবং দেশের বিজ্ঞান ও শিক্ষা ক্ষেত্রে তাঁর অসামান্য অবদানের কথা গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন। বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক শমসের আলী তাঁর বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কথা স্মরণ করেন।
স্মরণ সভায় বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আজাদ চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান মিহির লাল সাহা, বিসিএসআইআর-এর সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা সেলিম খান, ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ (আইইউবি) পরিসংখ্যান বিভাগের সাবেক অধ্যাপক নাশিদ কামাল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক মনজুরুল করীম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ও বায়োটেকনোলজি (জিইবি) বিভাগের শিক্ষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োকেমিস্ট্রি ও মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক অধ্যাপক রফিকুল রহমান, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কাজী সাখাওয়াত হোসেন, বিএপিটিসিবির প্রতিনিধি অধ্যাপক নুরুল ইসলাম এবং আইইউবির সাবরিনা এম ইলিয়াস প্রয়াত অধ্যাপক শামসুল ইসলামের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
অধ্যাপক শামসুল ইসলামের স্মরণ সভায় বোটানিক্যাল সোসাইটি ও অবসরপ্রাপ্ত উদ্ভিদবিজ্ঞান শিক্ষকেরাও অংশ নেন।
বাংলাদেশ বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণ সমিতির সভাপতি মুনির হাসান এবং এএসআই স্কুল অব লাইফের সমন্বয়ক মোর্শেদা আক্তার অধ্যাপক শামসুল ইসলামকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন।
সভায় অধ্যাপক শামসুল ইসলামের পরিবারের সদস্যদের পক্ষ থেকে তাঁর বড় ছেলে সাউথ-ইস্ট ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ইউসুফ ইসলাম এবং মেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের অধ্যাপক জেবা ইসলাম পিতার স্মৃতিচারণ করেন।
অধ্যাপক শামসুল ইসলামের ছোট ছেলে ও যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালিতে কর্মরত সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার খালিদ ইসলাম তাঁর বাবার জন্য দোয়া চান। সবশেষে অধ্যাপক ইউসুফ ইসলাম দোয়া পরিচালনা করেন।