চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে পুলিশের এক উপপরিদর্শককে হুমকি দিয়ে সংগঠন থেকে বহিষ্কার হয়েছেন ইউনিয়ন ছাত্রদল সভাপতি শাওন কাবী রিজা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হুমকির ওই ভিডিও ভাইরাল হয়। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এ হুমকির ঘটনায় পুলিশ শাওনকে আটক করে থানায় নিয়ে গেছে।

গতকাল বুধবার তাঁকে বহিষ্কারের তথ্য নিশ্চিত করেন চাঁদপুর জেলা ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল পাটওয়ারী। তিনি জানান, ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে ফরিদগঞ্জের রূপসা দক্ষিণ ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি শাওনকে সদস্য পদসহ সাংগঠনিক পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। ছাত্রদল সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির বুধবার এ সিদ্ধান্ত অনুমোদন করেন। ছাত্রদলের সব পর্যায়ের নেতাকর্মী বহিষ্কৃতদের সঙ্গে কোনো সাংগঠনিক সম্পর্ক না রাখার নির্দেশনা রয়েছে। ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম এ তথ্য জানিছেন।

ফেসবুকে ভাইরাল ভিডিওতে দেখা যায়, শাওনকে পুলিশের এক এসআই একটি অভিযোগ প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় যেতে বলেন। এ সময় কাবী দাম্ভিকতার সঙ্গে এসআইকে বলেন, ‘আমি যাব না; আপনার ওসি স্যাররে বলেন এখানে আসতে। আমি মনজিল ভাইয়ের শ্যালক, আমি ইউনিয়ন ছাত্রদলের প্রেসিডেন্ট।’ শাওন যার কথা ‍উল্লেখ করেছেন, সেই মনজিল ফরিদগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র ও উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক।

থানায় অভিযোগ দেওয়া নুরে আলম বলেন, ‘আমরা প্রাইভেটকারে লক্ষ্মীপুরের রায়পুর থেকে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ফরিদগঞ্জে বেড়াতে যাচ্ছিলাম। বর্ডার নামক স্থানে আমাদের গাড়ির সামনে থাকা লরিকে ওভারটেকের চেষ্টা করলে ডানপাশে সামনে থেকে আরেকটি গাড়ি আসতে দেখি। এ জন্য আমাদের গাড়ি এগোতে পারছিল না। এতে পেছনে থাকা মোটরসাইকেল পড়ে যায়। এ বিষয়ে আমরা অবগত ছিলাম না। পরে গৃদকালিন্দিয়ার জোড়কবর নামক স্থানে বাইক আরোহীরা আমাদের গাড়ির গতিরোধ করেন।’ তিনি বলেন, ‘এক পর্যায়ে তৃতীয় পক্ষ হিসেবে শাওন ঘটনাস্থলে এসে বাগ্‌বিতণ্ডায় জড়ান। তিনি আমাদের হেনস্তা করেন। বাধ্য হয়ে আমরা বিষয়টি পুলিশকে জানাই। এর প্রেক্ষিতে পুলিশ ঘটনাস্থলে এলে শাওন দাম্ভিকতার সঙ্গে কথা বলেন।’

হেনস্তার শিকার চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ থানার এসআই খোকন চন্দ্র দাশ বলেন, ‘বর্ডার নামক স্থানে প্রাইভেটকারের পেছনে মোটরসাইকেল থেকে পড়ে দুজন আহত হন। পরে কয়েক যুবক তাদের জিম্মি করলে তারা পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন। এর ভিত্তিতেই আমরা ঘটনাস্থলে গেলে অভিযুক্ত শাওন আমাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। তাকে থানায় আসতে বললে তিনি ওসিকে আসতে বলেন। পরে আমরা তাকে আটক করে থানায় নিয়ে আসি।’ 

চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ থানার ওসি মো.

শাহ আলম বলেন, ‘রাতেই শাওন নামের ওই ছাত্রদল নেতাকে আটক করেছি। তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।’

ছাত্রদল নেতা তন্ময় দত্ত গ্রেপ্তার

চাঁদপুর সরকারি কলেজ ছাত্রদল নেতা তন্ময় দত্তকে (২৭) গ্রেপ্তার করেছে জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। তাঁকে পুরানবাজার লোহারপুল এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে চারটি মামলা রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আটক ছ ত রদল র আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

ক্ষমা চাইলেন প্রকাশ্যে কান ধরে উঠবস করানো সেই ব্যবসায়ী নেতা

রমজান মাসে দিনের বেলা হোটেলে খাবার খাওয়ায় কান ধরে উঠবস করানোর ঘটনায় ক্ষমা চেয়েছেন লক্ষ্মীপুর পৌর শহরের চকবাজার এলাকার বণিক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবদুল আজিজ। ভুক্তভোগী দু’জনকে সঙ্গে নিয়ে সদর থানা এলাকায় এক ভিডিও বার্তায় ক্ষমা চান তিনি। 

ভিডিও বার্তায় আব্দুল আজিজ বলেন, ‘কয়েকজন হোটেলে খাবারের জন্য ঢুকেছেন। রমজানের পবিত্রতা রক্ষায় তাৎক্ষণিক আমি গিয়ে উনাদের বলেছি, আপনারা কেন খাচ্ছেন। আপনারা তো মুসলমান। সেক্ষেত্রে তারা বলেছেন, রোজা রাখেননি। আমি বলেছি, আপনারা রোজা রাখবেন। আমি আসলে যে কাজটি করেছি, এটি অন্যায়, অপরাধ। এটা ধর্মীয় অনুভূতি, সেজন্য এটা আমার করা ঠিক হয়নি। এজন্য আমি উনাদের কাছে ক্ষমা চাই। উনারা যেন আমাকে ক্ষমা করে দেন। আমি এ ধরনের পুনরাবৃত্তি আর কখনও করব না। এ ধরনের কাজের সঙ্গে জড়িত হব না।’

সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল মোন্নাফ বলেন, ‘আবদুল আজিজকে থানায় ডেকে আনা হয়। তবে ভুক্তভোগী কেউ তার বিরুদ্ধে থানায় কোন অভিযোগ দেননি। এছাড়া আব্দুল আজিজ এ ঘটনায় নিজেও ক্ষমা চেয়েছেন। কোন অভিযোগ না থাকায় তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।’

পুলিশ জানিয়েছে, কান ধরে উঠবস করানোর ঘটনায় বুধবার রাতে সদর থানায় তাকে বেশ কিছুক্ষণ আটক রাখা হয়। আবদুল আজিজ জানিয়েছেন, তিনি তার ভুল বুঝতে পেরেছেন। পরে কয়েকজন ব্যবসায়ীর অনুরোধে রাত ১২টার দিকে মুচলেকা নিয়ে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়। মুচলেকায় লেখা আছে- পুলিশ যেকোনো সময় তাকে থানায় হাজির হতে বললে তিনি হাজির হবেন। এছাড়া দেশের আইন মেনে চলবেন। এমন শর্তে তার জামিন হয় বলে ব্যবসায়ীদের কয়েকজন জানান।

বুধবার দুপুরে লক্ষ্মীপুর শহরের থানা রোড এলাকায় হিন্দুদের কয়েকটি পর্দা লাগানো খাবার হোটেলে লাঠি হাতে বণিক সমিতি নেতা আজিজকে অভিযান চালাতে দেখা যায়। ওই সময় তিনি কয়েকজন যুবকসহ এক বৃদ্ধকে হোটেল থেকে বের করে রাস্তায় এনে প্রকাশ্যে কানে ধরে উঠবস করতে বাধ্য করেন। সেই সঙ্গে দিনের বেলায় মুসলিম কেউ দোকানে খেলে সে দোকান পুরো রমজান মাস বন্ধ করে দেওয়া হবে বলেও হুমকি দেওয়া হয়। ঘটনাটির কিছু ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনায় অনেক গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এ নিয়ে শুরু হয় নানা সমালোচনা। 

নাম প্রকাশ না করা শর্তে এক ব্যক্তিরা বলেন, ‘আমরা প্রকাশ্যে খাবার খাইনি। পর্দার আড়ালে খাবার খেয়েছি। দোষের কি? এ জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইব। তাই বলে প্রকাশ্যে কান ধরে এভাবে সাজা দিল ভাবতে পারিনি। ওনি প্রশাসনের লোক ছিলেন না।’ 

এ ঘটনা স্থানীয় ব্যবসায়ীরা ইতিবাচক হিসেবে নেয়নি বলে অভিযোগ করেছেন অনেকে। তারা বলেন, এমনিতে বেচাকেনা কম, তার উপর ক্রেতাদের সঙ্গে এমন আচরণ। এতে বেচাকেনা কমে গেছে।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ