চট্টগ্রামের বাঁশখালীর মুজিবুল হক চৌধুরী (মুজিব চেয়ারম্যান) ১৮ বছর ছিলেন সৌদি আরবে। সাধারণ কর্মী হিসেবে সৌদি আরবে যাওয়া মুজিবের উপার্জন করা অর্থের বেশির ভাগ সংসারের পেছনেই খরচ হয়ে যায়।

তবে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ৯ বছর ইউপি চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায় তর তর করে বেড়েছে তাঁর সম্পদ। ‘ভুয়া শ্রমিক’ বানিয়ে কাবিখার ৩ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন বলে অভিযোগ উঠেছে। সব ছাপিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাসকে পেটানোর হুমকি দিয়ে আলোচনায় আসা চাম্বল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুজিব ফেঁসে যাচ্ছেন দুদকের মামলায়। মুজিব ও তাঁর স্ত্রীর সম্পদ আদালতের নির্দেশে জব্দ করা হয়েছে।   

শুধু মুজিব নন; তাঁর স্ত্রী সাহেদা বেগম নূরীও হয়ে গেছেন কোটিপতি। নূরীর জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে সংগতিহীন ৮৬ লাখ ৬২ হাজার টাকার সম্পদের তথ্য পেয়েছে দুদক। পেশায় গৃহিণী নূরীর অর্থোপার্জনের কোনো দৃশ্যমান উৎসের খোঁজ মেলেনি। মুজিব অবৈধ উপার্জন বৈধ করতেই স্ত্রীকে বানান ব্যবসায়ী। কাগজপত্রে এ দম্পতির দেড় কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের হদিস মিললেও বাস্তবে আট থেকে ১০ গুণ সম্পদের মালিক তারা। সরকার পতনের পর থেকে তারা দু’জনেই পলাতক। 

দুদকের উপসহকারী পরিচালক মিজানুর রহমান চৌধুরী বলেন, মুজিব চেয়ারম্যানের জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ জব্দ করা হয়েছে। দুদকের পিপি মাহমুদুল হক মাহমুদ বলেন, মুজিব ও নূরীর দেড় কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া গেছে। 

দুদকের তদন্তে উঠে আসে, মুজিবের ২০১৪ থেকে ’২৩ সাল পর্যন্ত পূর্বের সঞ্চয় ছিল ৭৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা। এ ছাড়া ব্যবসার আয় ৬০ লাখ ২৫ হাজার টাকা, কৃষি থেকে আয় ৯৫ হাজার, ইউপি চেয়ারম্যানের সম্মানী ৩ লাখ ৬০ হাজার, মুরগি ও মাছ চাষে ৪ লাখ, অন্যান্য আয় ২৪ লাখ ৫৩ হাজার টাকা আদায় দেখিয়েছেন। তবে পূর্বের সঞ্চয়ের ৭৪ লাখ টাকা আয়ের উৎস সংক্রান্ত কোনো রেকর্ডপত্র দাখিল করতে পারেননি। তাই তাঁর প্রবাসে আয় করা ২৭ লাখ ৯৪ হাজারসহ গ্রহণযোগ্য আয় ১ কোটি ২১ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে স্থাবর ও অস্থাবর ১ কোটি ৩৭ লাখ টাকা সম্পদ অর্জন করেন। এ ছাড়া ৪০ লাখ ৫০ হাজার টাকা পারিবারিক ব্যয় করেন। এই হিসাবে  তিনি অর্জন করেন ১ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। এর থেকে ব্যয় ১ কোটি ২১ লাখ টাকা বাদ যাওয়ার পর ৫৬ লাখ ৭১ হাজার টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ আছে। চট্টগ্রাম শহর ও বাঁশখালীর গ্রামে ২৫টি রেজিস্ট্রিমূলে জমি কিনেছেন। নূরীর নামে ৭টি রেজিস্ট্রি দলিলে জমি কেনা হয়েছে।

অনুসন্ধানে উঠে আসে, চেয়ারম্যান হয়ে মুজিব বাঁশখালীর প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয় থেকে প্রতিবছর দুইবার বরাদ্দ হওয়া অতিদরিদ্রদের কর্মসংস্থান কর্মসূচি (ইজিপিপি) প্রকল্পের চাম্বল এলাকার ২২৬ জন ভুয়া শ্রমিক কাজ করেছেন দেখিয়ে অর্থ লোপাট করেন। দৈনিক ৪০০ টাকা; প্রত্যেক শ্রমিকের মোবাইল ফোনে ৪০ দিনের মজুরি বাবদ ১৬ হাজার টাকা পরিশোধ দেখিয়েছেন। এভাবে তিনি আট বছরে ২২৬ শ্রমিকের ৫ কোটি ৭৮ লাখ টাকার বরাদ্দের মধ্যে ৩ কোটি টাকার বেশি অর্থ লোপাট করেছেন। এর মধ্যে সর্বশেষ ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ২২৬ জন উপকারভোগীর কাজের তালিকায় প্রথম উপকারভোগী শ্রমিক ১ নম্বর ওয়ার্ডের নন্না মিয়ার ছেলে আবু তাহের। তবে তাহের শ্রমিক হিসেবে কখনও কাজ করেননি, মোবাইল ফোনে মজুরি পাননি এবং তালিকায় যে মোবাইল নম্বর দেওয়া হয়েছে সেটিও তাঁর নয় বলে জানিয়েছেন। একইভাবে তালিকায় থাকা ব্যবসায়ী শিমুল কান্তি শীল, মোক্তার আহমদসহ ভুয়া নাম-ঠিকানা দিয়ে প্রকল্পের অর্থ আত্মসাৎ করেন চেয়ারম্যান।

২০২৩ সালে চাম্বল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের হরতাল-অবরোধবিরোধী সমাবেশে দেওয়া বক্তব্যে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাসকে প্রকাশ্যে পেটানোর হুমকি দিয়ে ব্যাপক আলোচিত হয়েছিলেন তিনি।

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

এআইয়ের কারণে র‍্যানসমওয়্যার হামলা আরও বিপজ্জনক হচ্ছে

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) কারণে বর্তমানে সাইবার হামলার ধরন বদলে যাচ্ছে। এর ফলে র‍্যানসামওয়্যার হামলা আগের তুলনায় আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গার্টনারের জ্যেষ্ঠ পরিচালক ওয়েন হ্যানকিন্স। সমস্যা সমাধানে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাইবার নিরাপত্তাকৌশলকে ঢেলে সাজানো পরামর্শও দিয়েছেন তিনি।

ডেটা ব্রিচ ইনভেস্টিগেশনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছর পরিচালিত সাইবার হামলার মধ্যে প্রায় ২৩ শতাংশই র‍্যানসামওয়্যার হামলা। গত কয়েক বছর ধরেই র‍্যানসমওয়্যার হামলা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জন্য ভয়ংকর হুমকি হয়ে উঠেছে। এই ধরনের সাইবার হামলায় আর্থিক ক্ষতি ছাড়াও গ্রাহকের আস্থা নষ্ট হয়।

আরও পড়ুনসাইবার হামলা থেকে স্মার্টফোন নিরাপদ রাখতে মানতে হবে এই ৫ নিয়ম০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

গত দুই বছরে সাইবার আক্রমণে নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে। ফিশিং ও ডিপফেক আক্রমণের জন্য এখন এআই ব্যবহার করা হচ্ছে। এই ধরনের জটিল আক্রমণ থেকে নিজেদের রক্ষা করতে হ্যানকিন্স বলেন, প্রথমত আমাদের ফিশিং ও ডেটা চুরির বিষয়টি দ্রুত শনাক্তের জন্য কাজ করতে হবে। দ্বিতীয়ত, আমরা ধরে নিতে পারি এমন আক্রমণের সংখ্যা আরও বাড়বে। আর তাই প্রতিষ্ঠানগুলোর সাইবার সক্ষমতা বাড়াতে হবে।

আরও পড়ুনআপনার ওয়াই-ফাই অন্য কেউ ব্যবহার করছে কি২৯ নভেম্বর ২০২২

বেশ কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে, র‍্যানসমওয়্যার হামলা চালানো বিভিন্ন দল বর্তমানে ছোট ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোকেও টার্গেট করছে। আর তাই এক হাজারের কম কর্মী আছে এমন ছোট প্রতিষ্ঠানগুলোতেও আগের তুলনায় বেশি র‍্যানসমওয়্যার হামলা হচ্ছে।

সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস

আরও পড়ুনহোয়াটসঅ্যাপে ‘জিরো ক্লিক’ সাইবার হামলা, যেভাবে চুরি হচ্ছে ব্যক্তিগত তথ্য০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ