চট্টগ্রামে ওমরাফেরত মোয়াল্লেমের কাছে ৪০০ গ্রাম স্বর্ণ
Published: 13th, March 2025 GMT
চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ওমরাফেরত এক মোয়াল্লেমের কাছ থেকে ৪০০ গ্রাম স্বর্ণ উদ্ধার করা হয়েছে। সৌদি আরবের জেদ্দা থেকে আসা বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট গতকাল বুধবার অবতরণের পর সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটে তাঁকে আটক করা হয়। আটক শাহিন আল মামুন রাঙামাটি পার্বত্য জেলার বাসিন্দা।
বিষয়টি নিশ্চিত করে বিমানবন্দরের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রকৌশলী ইব্রাহিম খলিল জানান, জেদ্দা থেকে বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিজি-১৩৬ নম্বর ফ্লাইট সকাল ৮টা ৩৬ মিনিটে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। পরে এনএসআই সদস্যরা তাঁর লাগেজ তল্লাশি করেন। এ সময় তাঁর কাছ থেকে ২২ ক্যারেটের ৪০০ গ্রাম স্বর্ণালংকার উদ্ধার করা হয়। এর আনুমানিক মূল্য ৫০ লাখ ৬৯ হাজার টাকা। আটকের পর তাঁর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
চিরন্তন সাংগ্রাই
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাংশে ছোট-বড় পাহাড়বেষ্টিত প্রায় সাড়ে তেরো হাজার বর্গকিলোমিটার আয়তন নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল। বিঝু, সাংগ্রাই, বৈসু, বিষু, বিহু, চাংক্রান, সাংক্রাই, সাংলান, পাতা– পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত বিভিন্ন আদিবাসী জনগোষ্ঠীর প্রধানতম সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উৎসব। এ উৎসবকে চাকমারা বিঝু, মারমারা সাংগ্রাই, ত্রিপুরারা বৈসু বা বৈসুক, তঞ্চঙ্গ্যা ও গুর্খারা বিষু, অহমিয়ারা বিহু, ম্রোরা চাংক্রান, খুমীরা সাংক্রাই, খেয়াংরা সাংলান ও সাঁওতালরা পাতা নামে অভিহিত করেন। মারমাদের কাছে সাংগ্রাই উৎসবটি সামাজিক ও ধর্মীয়ভাবে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। এ উৎসব তিন দিন ধরে চলে। প্রথম দিনটি ‘পাইংছোয়ায়’, দ্বিতীয় দিনটি ‘আক্যা’ ও শেষ দিনটি আপ্যাইং নামে পরিচিত। পাইংছোয়ায় অর্থ ফুল সংগ্রহ। পাইংছোয়ায় দিনে মূলত পানি দিয়ে বৌদ্ধবিহার, বিহারের আঙিনা, বাড়ি, বাড়ির উঠোন, রাস্তা ইত্যাদি পরিষ্কার করা হয় এবং নানান ধরনের ফুল তুলে সে ফুল দিয়ে সেসব স্থাপনা সাজানো হয়। আক্যা অর্থ অবতরণ। আক্যা বা দ্বিতীয় দিনে অনেকে বিশেষ করে বয়োজ্যেষ্ঠরা বিহারে গিয়ে অষ্টশীল (আটটি বিশেষ নিয়ম) গ্রহণ ও পালন করেন। সাধারণ গৃহীরা ‘নাইংসারে’ (এক প্রকার সুগন্ধিযুক্ত জল) দিয়ে বুদ্ধমূর্তি স্নান করান। তারপর পুণ্যার্জনের জন্য বৌদ্ধ ভিক্ষু ও বয়োজ্যেষ্ঠদের স্নান করানো হয়। তাছাড়া এ দিনে বিভিন্ন বস্তু দান করা হয়। আপ্যাইং অর্থ উড্ডয়ন বা প্রস্থান। আপ্যাইং দিন মূলত নববর্ষ। এ দিনে ‘ম্রাইমা সইকু’ (মারমা নববর্ষ) বরণ করা হয়।
ম্রাইমা সাংগ্রাই-এর অন্যতম আকর্ষণীয় পর্ব হচ্ছে ‘রিলং পোয়ে’ বা জলকেলি উৎসব। রিলং পোয়ে এর জন্ম অনেকটা পৌরাণিক এবং বলা হয়ে থাকে এটি সনাতন পৌরাণিক গল্পের বৌদ্ধ সংস্করণ। এ গল্প অনুযায়ী, ‘ব্রাইহ্মা মাং’ (ব্রহ্মা) ও ‘সাগ্রামাং’ (ইন্দ্র) এর মধ্যে একবার বুদ্ধিবৃত্তিক যুদ্ধ হয়। এতে ব্রাইহ্মা মাং হেরে যান এবং যুদ্ধের শর্ত অনুযায়ী তিনি নিজের মস্তক কর্তন করেন। পরে এক হাতির মস্তক দিয়ে প্রতিস্থাপন করা হয়, যাকে আমরা হিন্দু পুরাণে গণেশ নামে চিনি। ব্রাইহ্মা মাং-এর কর্তিত মাথা এত অলৌকিক ক্ষমতাসম্পন্ন ও গরম ছিল যে এই মস্তক ভূখণ্ডে নিক্ষেপিত হলে পুরো পৃথিবী পুড়ে ধ্বংস হয়ে যাবে। সাগরে নিক্ষেপ করা হলে সাগর শুকিয়ে যাবে এবং আকাশে নিক্ষেপ করা হলে আকাশ ফেটে যাবে। এ সমস্যা সমাধানের জন্য ব্রাইহ্মা মাং-এর সাত কন্যা, যারা সপ্তাহের সাত দিনের নাম ধারণ করে, তাদের হেফাজতে রাখার দায়িত্বভার দেওয়া হয়। তারা ছিন্ন মস্তকটি একটি স্বর্গীয় গুহায় রাখেন। প্রতি বছর একজনের কাছ থেকে আরেকজন দায়িত্ব নেওয়ার সময় গুহা থেকে বের করে মস্তকটি ধৌত করা হয়। তখন থেকেই অশুচিতা ও দুর্ভাগ্যকে ধৌত করে শুচি, সৌভাগ্যপূর্ণ ও মঙ্গলময় জীবনের কামনায় রিলং পোয়ে উদযাপন করা হয় প্রতি বছর। সাংগ্রাই-এর আক্যা দিনে সাগ্রামাং তাঁর স্বর্গীয় আবাস থেকে মনুষ্যলোকে অবতরণ করেন এবং একটি প্রদত্ত সংকেতের মাধ্যমে তিনি জল নিক্ষেপ করেন। সে সময় মনুষ্যজাতি বিভিন্ন পাত্র নিয়ে প্রার্থনা সহকারে মাটিতে জল ঢেলে দেয়। প্রতীকীরূপে এ দিনে প্রথমে বুদ্ধমূর্তিকে নাইংসারের মাধ্যমে স্নান করানোর পরে পর্যায়ক্রমে বৌদ্ধ ভিক্ষু, বয়োজ্যেষ্ঠকে স্নান করানো হয় আশীর্বাদপ্রাপ্ত হয়ে পুণ্য লাভের জন্য। সবশেষে সাধারণ মানুষ নিজেদের মধ্যে জল ছিটিয়ে আনন্দে মেতে ওঠে। v
লেখক: সিনিয়র সহকারী সচিব, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়