সাকিব আল হাসান নিজ থেকে কী আর ঘোষণাটা দেবেন? আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে এক প্রকার ‘নির্বাসিত’ সাকিব। লাল সবুজের জার্সিতে আরেকবার তাকে দেখতে পাওয়ার সম্ভাবনা শূন্যের কোটায়। নামের পাশে তাই অবসর লিখে দিলেও ভুল হবে না কিছুতেও।

মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ বুধবার রাতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন। মাশরাফি বিন মুর্তজা অনেক আগের থেকেই ক্রিকেটে নেই। তামিম ইকবাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ছেড়েছেন নিকট অতীতে। মুশফিকুর রহিম সাদা বলের ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়েছেন। মাহমুদউল্লাহ বাকি ছিলেন। দাঁড়ি টেনেছেন তিনিও। সাকিবের ঘোষণার এখন খুব একটার প্রয়োজন হচ্ছে না। তাতে যা দাঁড়ায়, বাংলাদেশের ক্রিকেটের বহু প্রচলিত পঞ্চপাণ্ডব অধ্যায়ের সমাপ্তি হয়েই গেল।

মাশরাফি বিন মুর্তজা, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, তামিম ইকবাল ও মাহমুদউল্লাহ- বাংলাদেশ ক্রিকেটের পঞ্চপাণ্ডব। ১৮ সেপ্টেম্বর ২০০৭, বাংলাদেশের ক্রিকেট এখন যে অবস্থানে এসে পৌঁছেছে, তার শুরুটা তো ওই দিনেই হয়েছিল। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জোহানসবার্গে বাংলাদেশের ম্যাচ। ৬৪ রানে ম্যাচ হারলেও বাংলাদেশ একইসঙ্গে পেয়েছিল ‘পঞ্চপাণ্ডব’কে। মাশরাফি, সাকিব, মুশফিক, মাহমুদউল্লাহ ও তামিম একইসঙ্গে দেশের হয়ে খেলতে নেমেছিলেন প্রথমবারের মতো।

এরপর পদ্মা-মেঘনায় গড়িয়েছে অনেক জল, তার কোনো সীমা নেই। সময়ও অনেক চলে গেছে। সাফল্য দুহাত ভরে এসেছে, আবার রয়েছে ব্যর্থতার মিছিল। সবকিছুতেই জড়িয়ে আছেন এ পঞ্চপাণ্ডব। সময়ের ধারাবাহিকতায় তারা এখন খুলে রেখেছেন রঙিন জার্সি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ‘পাঁচক’-র কীর্তি খুব বেশি নেই। এর আগে ৬৪ ‘পাঁচক’ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। বাংলাদেশে এবারই প্রথম।

কোনো সন্দেহ ছাড়াই পঞ্চপাণ্ডবের সেরা ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান। বিশ্বের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার বাংলাদেশ ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন। নিজেকে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। তামিম ইকবাল ব্যাটিংয়ে সবচেয়ে বেশি রেকর্ড বহন করেছেন। ওয়ানডে, টেস্টে বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি রানের মালিক। তিন ফরম্যাট মিলিয়ে ১৫ হাজারেরও বেশি রান করেছেন। মুশফিকুর রহিমও তাই। দেশের অন্যতম সফল ব্যাটসম্যান। টেকনিক্যালি দেশের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান।

মাহমুদউল্লাহ সব সময়ই ছিলেন বিশেষ ভূমিকায়। সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটে ডেথ ওভারে বিগ হিটারের ভূমিকা পালন করছেন বছরের পর বছর। এ পাঁচের মধ্যে সবচেয়ে বড় মাশরাফি ২০১৫ সাল থেকে বাংলাদেশ ক্রিকেটের চিত্রই পাল্টে দিয়েছেন। ঘরের মাঠে এবং দেশের বাইরে সাফল্যর রূপকার তো মাশরাফিই। মাঠ ও মাঠের বাইরে দারুণভাবে দলকে সামলেছেন মাশরাফি। অধিনায়ক থেকে হয়ে উঠেছেন নেতা।

পঞ্চপাণ্ডবের অনেক সুখস্মৃতি থাকলেও রয়েছে একাধিক আক্ষেপ। ২০১২ ও ২০১৬ এশিয়া কাপ ফাইনাল, ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে নাটকীয় হার, ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনাল, নিদাহাস ট্রফির ফাইনাল (মাশরাফি ছাড়া) এবং ২০১৮ সালের এশিয়া কাপ ফাইনাল (সাকিব ও তামিম ছাড়া) আক্ষেপ হয়ে আছে তাদের কাছে। ২০১৯ সালের সাকিব, মুশফিক বাদে বাকিদের বিবর্ণ পারফম্যান্স কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে।

২০০৭ থেকে শুরু করে ২০১৯ পর্যন্ত ১১১ ওয়ানডে তারা একসঙ্গে খেলেছেন। তাদের অধীনে দল জয় পেয়েছে ৫৪ ম্যাচে। হেরেছে ৫৩ ম্যাচ। ফল আসেনি ৪ ম্যাচে। পারফম্যান্সের বিচারে তারা সাফল্য-ব্যর্থতার অনুপাত ফিফটি-ফিফটি।

ঢাকা/ইয়াসিন

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ফ ইন ল সবচ য়

এছাড়াও পড়ুন:

রাজনৈতিক দল মধ্যস্বত্বভোগী হবে কেন

দেশে তখন খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে চারদলীয় জোট সরকার। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১৪ দলের জোট সরকার পতনের আন্দোলন করছে। সঙ্গে জুটেছে জাতীয় পার্টিসহ আরও কয়েকটি দল। তৈরি হয়েছে ‘মহাজোট’। তাদের লাগাতার বর্জনে জাতীয় সংসদ অকার্যকর হয়ে পড়েছে। এই এক নাটক।

এক দল সরকারে গেলে অন্য দল তার পতন চায়, সংসদে যায় না। একটানা ৯০ কার্যদিবস সংসদ অধিবেশনে অনুপস্থিত থাকলে সদস্যপদ আপনা–আপনি বাতিল হয়ে যায়। তাঁদের তো অনেক বুদ্ধি! ৯০ দিন পার হওয়ার এক-দুই দিন আগে সংসদে এসে চাঁদমুখখানি দেখিয়ে আবার ওয়াকআউট। এতে শ্যাম-কুল দুই–ই থাকে। সদস্যপদ টিকে যায়, পকেটে-আঁচলে বেতন-ভাতাও আসে। দিনের পর দিন চলেছে এই মিউজিক্যাল চেয়ার।

ওই সময় আমরা কিছু নাগরিক উদ্যোগ লক্ষ করি। ফ্ল্যাশব্যাকে দেখা যাক, কে কী বলেছিলেন। আমরা বিস্মৃতপ্রবণ জাতি। তাই মাঝেমধ্যে মনে করিয়ে দিতে হয়।

২০০৬ সালের ২০ মার্চ। ঢাকায় সিপিডির উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হলো ‘নাগরিক সংলাপ’। সভাপতি অধ্যাপক রেহমান সোবহান। বক্তাদের একজন গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি ‘যোগ্য প্রার্থী আন্দোলন’ শিরোনামে লিখিত বক্তব্যে বলেন, ‘সংসদে যদি দুর্নীতিবাজ এবং অগ্রহণযোগ্য প্রার্থীরা ঢুকে পড়ে, তবে আগামী মেয়াদে দুর্নীতির পরিমাণ এমন প্রচণ্ড মাত্রায় বেড়ে যাবে যে দেশে অস্থিরতা ও সহিংসতা তীব্র আকার ধারণ করবে। দুর্নীতিবাজ ও অযোগ্য প্রার্থীদের সংসদে প্রবেশ ঠেকাতে হলে এখনই আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে। সময় আমাদের হাতে খুব অল্প।

যোগ্য প্রার্থী আমরা কীভাবে পাব? রাজনীতিবিদেরা আমাদের কথামতো দলীয় মনোনয়ন দেবেন না। অতীতে যেভাবে টাকার জোরে, পেশির জোরে নির্বাচন হয়েছে, এবারও সে রকম হবে। তার থেকে বাঁচার উপায় কী?

নির্বাচন অর্থপূর্ণ হবে না যদি-না আমরা যোগ্য প্রার্থী দাঁড় করাতে পারি। দুর্নীতিবাজেরা প্রার্থী হবেন আর আমরা দলীয় আনুগত্যের কারণে তাঁদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করব, সেটা কোনো রকমেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।’

২০০৭ সালের ৪ জানুয়ারি একটি গোলটেবিল সংলাপের আয়োজন করে প্রথম আলো। অংশগ্রহণকারীদের একজন ছিলেন অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। আলোচনা করতে গিয়ে একপর্যায়ে তিনি বলেন, ‘দুই প্রতিপক্ষ জোটকে ঘিরে ইদানীং যে ধরনের মেরুকরণ হচ্ছে, তাতে এটাকে কি আসলেই আদর্শের চূড়ান্ত সমাধানের লড়াই বলা যায়? নাকি আমাদের রাজনীতির যে দুর্বৃত্তায়ন হয়েছে, বাণিজ্যিকায়ন হয়েছে এবং এর ফলে গোষ্ঠীস্বার্থের যে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে, তারই বহিঃপ্রকাশ হলো বর্তমান রাজনৈতিক বিরোধ-সংঘাত। অবৈধ উপার্জনের ভাগ-বাঁটোয়ারাই যদি ক্ষমতার রাজনীতির মূল চালিকা শক্তি হয়, রাজনীতি যদি বিপুলসংখ্যক দলীয় কর্মী বাহিনীর জীবিকার উৎস হিসেবে বিবেচিত হয়, তাহলে ক্ষমতায় যাওয়া বা ক্ষমতা হাতছাড়া না করার জন্য প্রতিদ্বন্দ্বী পক্ষগুলো মরণপণ যুদ্ধে নামবে, এটাই তো স্বাভাবিক।’

২০০৭ সালের ২০ জানুয়ারি প্রথম আলো আরেকটি গোলটেবিল আলোচনার আয়োজন করে। এটি এক-এগারোর অভ্যুত্থানের ৯ দিন পরের কথা। আলোচকদের একজন ছিলেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাখাওয়াত হোসেন। তিনি বলেছিলেন, ‘আমি মনে করি, এই মুহূর্তে যেসব কাজ রাজনৈতিক দলগুলো করতে পারেনি বা করার সদিচ্ছা রাখেনি, সেগুলো করে নির্বাচনটা দেওয়া উচিত। যদি আমাদের সময় লাগে ছয় মাস, এক বছর বা এক বছরের বেশি, এমনই করতে হবে। কারণ, এর পরে রাজনীতিবিদেরা সদিচ্ছা থাকলেও করতে পারবেন না। যেগুলো গণতন্ত্রকে একটা ভিতের ওপর দাঁড় করাতে প্রয়োজন, সেগুলোর সংস্কারের আগে নির্বাচন করা হবে জনগণের সঙ্গে হঠকারিতা।’

ওই সংলাপ বা আলোচনাগুলোতে আরও অনেকেই অনেক গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছিলেন। আমি বেছে বেছে এই তিনজনকে উদ্ধৃত করলাম। কারণ, তাঁরা এখন অন্তর্বর্তী সরকারে আছেন এবং তাঁরা তাঁদের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন। আশা করি, তাঁরা তখন কী বলেছিলেন, সেটি ভুলে যাননি।

এবার দেখা যাক বড় দলের রাজনীতিবিদেরা কে কী ভেবেছিলেন। এক-এগারোর ঝাপটায় দলগুলো এলোমেলো হয়ে গিয়েছিল। ২০০৭ সালের ৩০ জুন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাক তাঁর ধানমন্ডির বাসায় এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্কার প্রস্তাব পাঠ করেন। প্রস্তাবে বলা হয়, একই ব্যক্তি পরপর দুবারের বেশি দলের সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক বা উভয় পদে থাকতে পারবেন না; গোপন ব্যালটের মাধ্যমে দলের সব স্তরে কমিটি গঠন; তৃণমূল থেকে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় প্রার্থী বাছাইয়ের বিধান বাধ্যতামূলক করা; বঙ্গবন্ধুর আদর্শ অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার পরিপন্থী খেলাফত মজলিসের সঙ্গে পাঁচ দফা চুক্তি বাতিল; দলের তহবিল কোষাধ্যক্ষের মাধ্যমে ব্যাংকে জমা রাখা ইত্যাদি।

পরে আলাদা সংবাদ সম্মেলনে রাজ্জাকের প্রস্তাবের অনুরূপ প্রস্তাব দেন আওয়ামী লীগের অপর তিন জ্যেষ্ঠ নেতা তোফায়েল আহমেদ, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ও আমির হোসেন আমু। সুরঞ্জিত বলেছিলেন, ‘কর্তৃত্ববাদী, আধিপত্যবাদী একক নেতৃত্ব গণতন্ত্রে অচল; প্রেসিডেনশিয়াল আদলের প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় ভেঙে দিতে হবে; সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত মন্ত্রিসভায় নিতে হবে।’

২০০৭ সালের ১২ জুলাই গুলশানের ন্যাম ভবনের গাড়িবারান্দায় এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মহাসচিব আবদুল মান্নান ভূঁইয়া ১৪ দফা ‘পূর্ণাঙ্গ সংস্কার কর্মসূচি’ উত্থাপন করেছিলেন। সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান, মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমদ, এম কে আনোয়ার, আশরাফ হোসেন, জেড এ খান, বিচারপতি মোজাম্মেল হক, ইনাম আহমেদ চৌধুরী, মোফাজ্জল করিম, রেজাউর রহমান ডিনা, রেজাউল করিম, নাজিমউদ্দিন আলম, মনির হোসেন প্রমুখ। প্রস্তাবের মধ্যে ছিল রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য, হরতাল-অবরোধ বন্ধ, বিরোধী দল সংসদ বর্জন করতে পারবে না, দুজন ডেপুটি স্পিকারের একজন হবেন বিরোধী দল থেকে, ৩০ দিনের বেশি সংসদে না গেলে সদস্যপদ বাতিল, সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের সংশোধন ইত্যাদি।

আওয়ামী লীগ ও বিএনপি বড় দল। বিশাল তাদের জনভিত্তি। কিন্তু দল চলে পারিবারিক মালিকানায়, এক ব্যক্তির কথায়। দলের অনেক নেতা এই জগদ্দল পাথর ভাঙতে চেয়েছিলেন। এক-এগারোর পরিবেশে তাঁরা মুখ খুলতে পেরেছিলেন, তবে সেটা ছিল সাময়িক।

২০০৮ সালের নির্বাচনের পর পুরোনো ব্যবস্থাই ফিরে আসে। দলের মালিকেরা সংস্কারের ধারেকাছেও যাননি। উল্টো ‘সংস্কারবাদীদের’ দল থেকে বহিষ্কার ও পদের অবনমন ঘটান। সংস্কারবাদীদের নামে রটানো হয়, তাঁরা মিলিটারির দালাল, ষড়যন্ত্রকারী। সেই থেকে দল দুটো এখনো এক-এগারোর ভূত দেখে। সুযোগ পেলেই এক-এগারো নিয়ে বিষোদ্‌গার করে। তাঁদের একটা কমন ডায়ালগ আছে—অনির্বাচিতরা কেন দেশ চালাবে?

২০০৭ সালে আওয়ামী লীগ আর বিএনপির ভেতরেই দল, রাজনীতি ও সংসদীয় সরকারব্যবস্থার সংস্কারের যে দাবি উঠেছিল, ঘুরেফিরে সেগুলোই এখন উচ্চারিত হচ্ছে। কিন্তু মালিকানাস্বত্ব ঝুঁকিতে পড়বে বা বরবাদ হয়ে যাবে, এই আশঙ্কায় শীর্ষ নেতারা সংস্কারের নাম শুনলেই আঁতকে ওঠেন।

২০০৭ সালে ছিল ‘সেনাসমর্থিত’ তত্ত্বাবধায়ক সরকার। সেটি এসেছিল একটি সামরিক অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে। চালকের আসনে ছিল সামরিক বাহিনী। এখন দেশে একটি অন্তর্বর্তী সরকার। এটি এসেছে একটি গণবিদ্রোহের মধ্য দিয়ে। এটিও ‘সেনাসমর্থিত’। তবে চালকের আসনে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। দুবারই আমরা দেখেছি, রাজনীতিবিদেরা নিজেরাই অভ্যুত্থানের শর্ত তৈরি করে দিয়েছিলেন তাঁদের দুর্নীতি, অযোগ্যতা, ঈর্ষাপরায়ণতা আর কুৎসিত গোষ্ঠী শাসন দিয়ে।

দেশে এ পর্যন্ত ১২টি সংসদ নির্বাচন হয়েছে। আমরা নানা কিসিমের ‘নির্বাচিত’ সরকার দেখেছি। রাজনীতিবিদেরাই নির্বাচিত সরকারের মাধ্যমে দেশ চালিয়েছেন। আমরা এ-ও দেখেছি, রাজনৈতিক দলের লোকেরা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বদলান না। বাইরে থেকে ঝাঁকুনি দিলে তাঁরা একটু নড়েচড়ে বসেন। ঝাঁকুনি সরে গেলে আবারও আগের মতোই। বাংলাদেশের ৫৪ বছরের রাজনীতি হলো ওয়াদাভঙ্গের ইতিহাস। পাবলিক পারসেপশনে যিনি চোর, তাঁকেই দুর্নীতির বিরুদ্ধে উঁচু স্বরে কথা বলতে দেখি। জনগণের অধিকারের চিন্তায় রাতে যাঁর ঘুম হয় না, তাঁকেই দেখি কালো আইন বানিয়ে মানুষের টুঁটি চিপে ধরতে। তবে এটাও সত্য, নিজেরা না বদলালে বাইরে থেকে কেউ বদলে দিতে পারবে না। নাগরিকেরা শুধু চাপ দিয়ে যেতে পারেন। পরিস্থিতি এমনই।

একটা কথা প্রায়ই শুনি, রাজনৈতিক দলগুলো নাকি সমাজের প্রধান স্টেকহোল্ডার। এটা তাঁরা বলেন নিজেদের গোষ্ঠীশাসনের মনোপলি বজায় রাখতে। সমাজের মূল স্টেকহোল্ডার হচ্ছেন নাগরিকেরা। রাজনৈতিক দল মেধা আর ভিশন দিয়ে নাগরিকদের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী রাষ্ট্র পরিচালনা করবে, এটাই নাগরিকদের চাওয়া। তারা মধ্যস্বত্বভোগী হবে কেন?

মহিউদ্দিন আহমদ লেখক ও গবেষক

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দুদকের মামলায় খালাস পেলেন মোসাদ্দেক আলী ফালু
  • দুর্নীতির মামলা থেকে খালাস পেলেন মোসাদ্দেক আলী ফালু
  • মৃৎশিল্পীদের ব্যস্ততা
  • মেঘনা আলমের মুক্তিসহ বিশেষ ক্ষমতা আইন বিলোপের দাবি
  • জীবাশ্ম জ্বালানিতে অর্থায়ন বন্ধে বিশ্বনেতাদের প্রতি তরুণদের আহ্বান
  • বিদেশি বিনিয়োগেও দাঁড়াতে পারল না আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক
  • বিএমডিএর ৩ প্রকৌশলীকে অবসর-বরখাস্তের আদেশ স্থগিত
  • রাজনৈতিক দল মধ্যস্বত্বভোগী হবে কেন