দিনাজপুরে রামসাগর, সুখসাগর, শালবনের মতো প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আরেকটি স্থান কড়াই বিল। অতিথি পাখিদের কলকালিতে মুখরিত থাকত বিল এলাকা। ৫৬ একর আয়তনের বিলটি স্থানীয় মানুষের ধান ও মাছের বড় উৎস। স্বাধীনতা–পরবর্তী সময়ে বিলের মাঝবরাবর প্রায় ২৮ একর (পাড়সহ) আয়তনের পুকুর খনন করা হয়। পাড়ে লাগানো হয় কয়েক হাজার ফলদ, বনজ, ঔষধি ও ফুলের গাছ। বিল ও পুকুরের সৌন্দর্য উপভোগ এবং অতিথি পাখিদের দেখতে ভিড় করতেন দর্শনার্থীরা। এখন বিলে পানি নেই, কাটা হয়েছে পাড়ের গাছগুলো। দর্শনার্থীরাও মুখ ফিরিয়েছে।

দিনাজপুর শহর থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে বিরল উপজেলার কড়াই বিল। সবশেষ গত সোমবার পুকুরপাড়ের ৬ শতাধিক ফলজ ও বনজ গাছ কাটা পড়েছে। বিরল থানা মুক্তিযোদ্ধা হাঁস-মুরগি ও পশু পালন খামার সমবায় সমিতির নেতারা নিয়মবহির্ভূতভাবে এসব গাছ কেটেছেন বল অভিযোগ পাওয়া গেছে। পরে কেটে ফেলা গাছগুলো জব্দ করেছে স্থানীয় প্রশাসন। তবে সমিতির নেতাদের দাবি, এখানে কোনো অনিয়ম হয়নি।

গাছ কাটার ঘটনায় ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা বাদী হয়ে গাছ চুরির অভিযোগে একটি মামলাও করেছেন। মামলায় দুজনের নাম দিয়ে ও অজ্ঞাতনামা ১০-১২ জনকে আসামি করা হয়েছে। এজাহারভুক্ত আসামিরা হলেন বিরল উপজেলার উসমান গণির ছেলে আইবুর রহমান (৬৮) এবং সদর উপজেলার পশ্চিম রামনগর গোবরাপাড়া এলাকার কাঠ ব্যবসায়ী ও জেলা মৎস্যজীবী দলের সভাপতি জোবাইদুর রহমান (৫৫)।

বিরল থানা মুক্তিযোদ্ধা হাঁস-মুরগি ও পশু পালন খামার সমবায় সমিতি সূত্রে জানা যায়, ১৯৭৪ সালে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা মিস্টার জর্জের নেতৃত্বে সমবায় সমিতি গঠন করে বিলটি সরকারের কাছে ইজারা নেন তাঁরা। পরবর্তী সময়ে ১৯৭৭ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান দিনাজপুরে আসলে ওই সমিতিতে অনুদান দেন এবং খালকাটা কর্মসূচির আওতায় এই পুকুর খনন করা হয়। পাড়ে লাগানো হয় ফলদ-বনজ ও ফুলের গাছ। সমিতির সদস্যরা পুকুরে মাছ চাষ শুরু করেন। পরে মুক্তিযোদ্ধারা ভূমি মন্ত্রণালয় কর্তৃক স্থায়ীভাবে পুকুরের মালিকানা পায়। তবে কয়েক বছর পরে প্রশাসন ইজারা বা মালিকানা বাতিল করলে মুক্তিযোদ্ধারা আদালতে মামলা করেন। সেই মামলা এখনো চলমান। পুকুর ও গাছের ফল বিক্রি করে বিলের উন্নয়ন করাসহ ঈদে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারগুলোকে অনুদান দেওয়া হয়ে থাকে।

স্বাধীনতা–পরবর্তী সময়ে বিলের মাঝবরাবর খনন করা পুকুরটির আয়ত প্রায় ২৮ একর। বুধবার সকালে দিনাজপুরের বিরল উপজেলায় কড়াই বিলে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

শোভন কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে নিম্নতম মজুরি বাস্তবায়ন জরুরি

মানসম্পন্ন শিক্ষা ও শোভন কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা না গেলে অর্থনৈতিক উন্নতির পরবর্তী ধাপে পৌঁছানো কঠিন হবে। আর শোভন কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে নিম্নতম মজুরি বাস্তবায়ন জরুরি। যুব সম্প্রদায়ের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও শোভন কর্মসংস্থান খাতে প্রয়োজনীয় বিনিয়োগও দরকার। 
গতকাল সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশ আয়োজিত ‘জাতীয় এসডিজি রিপোর্ট (ভিএনআর) ২০২৫: যুবসমাজের ভাবনা’ শীর্ষক আলোচনায় বক্তারা এসব কথা বলেন। এ আয়োজনে সহযোগিতা করে ইউনাইটেড নেশনস ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম (ইউএনডিপি) বাংলাদেশ এবং ইউনাইটেড নেশনস পোভার্টি-এনভারমেন্ট অ্যাকশন।

এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক এবং গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের সঞ্চালনায় সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির গবেষণা সহযোগী সওরোজা তালুকদার। অনুষ্ঠানে তরুণরা সরাসরি তাদের মতামত তুলে ধরেন। তৃতীয় ভিএনআর প্রতিবেদনে এসব মতামত অন্তর্ভুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দেন সংশ্লিষ্টরা। তরুণরা শিক্ষা, কর্মসংস্থান, বাকস্বাধীনতা এবং জলবায়ু– এই চারটি বিষয়ে তাদের মতামত দেন। সরকার ব্যবস্থাপনা আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক করা এবং সব খাতের প্রতিনিধিত্ব চান তারা।
অনুষ্ঠানে ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, মানসম্পন্ন শিক্ষা ও শোভন কর্মসংস্থান নিশ্চিত না হলে পরবর্তী ধাপে যাওয়া কঠিন হবে। তিনি আরও বলেন, বিগত সময়ে শিক্ষা, কর্মসংস্থান, বাকস্বাধীনতা এবং জলবায়ু খাতে বেশ উন্নতি হয়েছে। তবে এর সুফল সমগ্রিকভাবে নায্যতার ভিত্তিতে প্রতিটি নাগরিকের কাছে পৌঁছায়নি। আগামীতে এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। একই সঙ্গে তিনি রাষ্ট্র ব্যবস্থাপনায় ক্ষমতার ভারসাম্য নিশ্চিতের ওপর জোর দেন। 
সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেছেন, শোভন কর্মসংস্থান করতে গেলে নিম্নতম মজুরি বাস্তবায়ন করা জরুরি। একই সঙ্গে তিনি বিভিন্নমুখী শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে সমন্বয় আনার ওপর জোর দেন। 

তিনি আরও বলেন, অগ্রাধিকার সমস্যার প্রতিটির ভেতরে আরও অগ্রাধিকার ইস্যু আছে। এর মধ্যেও অনেক টানাপোড়েন আছে। আমরা কীভাবে দেশকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাব, সেটাই বড় কথা। সেটা যদি ভালোভাবে করা যায় তাহলে প্রতিবেদন (ভিএনআর) ভালোভাবে হবে। প্রতিবেদন ভালো হলো কিন্তু কাজের কাজ হলো না– যা অতীতে হয়েছে। তাহলে কিন্তু অগ্রগতি হবে না। 
ইউএনডিপি বাংলাদেশের সহকারী আবাসিক প্রতিনিধি আনোয়ারুল হক বলেন, স্বপ্রণীত জাতীয় পর্যালোচনার ভিত্তিতে ভিএনআর প্রতিবেদন প্রস্তুত হওয়ার কথা। কিন্তু এ প্রতিবেদন চূড়ান্তকরণে হস্তক্ষেপ ছিল বেশি। তাই প্রতিবেদনে জনগণের মতামতের প্রতিফলন ঘটেনি। নাগরিকের মতামতের ভিত্তিতেই পরবর্তী প্রতিবেদন চূড়ান্ত করা হবে। এ ক্ষেত্রে শুধু সাফল্য নয়, ব্যর্থতার বিষয়েও উল্লেখ থাকবে।  
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের মহাপরিচালক (এসডিজি-বিষয়ক) শিহাব কাদের বলেন, প্রতিবেদন চূড়ান্ত করতে যুবসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষের মতামত নেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে বিভিন্ন বিভাগে যুব সেন্টার চালুর উদ্যোগ নেওয়া হবে বলেও জানান। 
অনুষ্ঠানে উপস্থাপিত যুব ঘোষণাপত্রে বলা হয়, বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে যুব সমাজের ভূমিকা যে কত গুরুত্বপূর্ণ, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে, যেসব উন্নয়নশীল দেশ যুব সম্প্রদায়ের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও শোভন কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ করেছে, সেসব দেশ দ্রুত আর্থসামাজিক উন্নয়ন অর্জনে সক্ষম হয়েছে। দারিদ্র্যের মাত্রাও সেসব দেশ দ্রুত হারে হ্রাস করতে পেরেছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  •  সোনারগাঁয়ে চাঁদাবাজির প্রতিবাদ করায় বিএনপি নেতাকে মারধর
  • ‘সন্তান হত্যা’ কি কেবলই একটি ফৌজদারি অপরাধ?
  • উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের ফেসবুক স্ট্যাটাসের প্রতিবাদ শিবিরের
  • সোনারগাঁয়ে প্রতিবন্ধী তরুণী ধর্ষণের মামলার আসামি গ্রেপ্তার
  • শিক্ষকদের জ্যেষ্ঠতার দ্বন্দ্বে বন ও পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান হলেন সহ–উপাচার্য
  • কালিয়াকৈরে বন্ধ কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ
  • শোভন কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে নিম্নতম মজুরি বাস্তবায়ন জরুরি
  • যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ক্ষতিপূরণ দাবি জাতীয় বিপ্লবী পরিষদ