চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের ফরিদা বেগমের স্বামী মারা গেছেন আগেই। একমাত্র ছেলে আলাদা সংসার করেছেন, তাঁর খোঁজ রাখেন না। তিনি থাকেন বস্তির খুপরি ঘরে। চার মেয়ের মধ্যে দু’জনের জামাই মারা যাওয়ায় তাদের চার সন্তানসহ থাকেন একসঙ্গে। এক নাতি প্রতিবন্দ্বী। মেয়েরা অন্যের বাড়ি কাজ করেও সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়। ইফতারি কেনা তাঁর কাছে বিলাসিতা। নাতিকে নিয়ে ১ টাকার ইফতারির দোকানে এসেছিলেন তিনি।
ফরিদা বেগমের ভাষ্য, ‘১ টাকায় কি কিছু পাওয়া যায়? কিন্তু তারা ইফতারি দিচ্ছেন। এতেই আমরা খুশি। আমরা গরিবরা যেন রোজার মাসটা একটু খেয়ে ভালো থাকতে পারি।’ জেলা বিএনপি ও স্বেচ্ছাসেবক দলের উদ্যোগে প্রথমবারের মতো ১ টাকার ইফতারির দোকান বসানো হয়েছে। এখানে দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ভিড় লেগেই থাকে। বিকেল ৪টা থেকে খোলার কথা থাকলেও দুপুরেই লম্বা লাইন লেগে যায়।
শহরের সরকারি কলেজগেট এলাকায় বসানো দোকানটি নিম্ন আয়ের মানুষের ইফতারি কেনার ঠিকানা হয়ে উঠেছে। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, মানুষের দীর্ঘ লাইন লেগে রয়েছে। ইফতারসামগ্রী আনতে আনতে ৩টা বেজে যায়। ৪টায় শুরুর কথা থাকলেও চাহিদা বিবেচনায় আগেই বিক্রি শুরু হয়ে যায়। মাত্র ১ টাকার বিনিময়ে কেনা যায় একটি করে পেঁয়াজু, বেগুনি, ছোলা, শসার টুকরো, খেজুর, জিলাপি, মুড়ি ও সবজি বড়া।
শনিবার বিকেলে আয়োজকদের তৈরি সামগ্রী শেষ হওয়ার পরও অপেক্ষায় ছিলেন মানুষ। ফলে আরও কিছু ইফতারসামগ্রী আনা হয় তাদের জন্য। আয়োজকরা জানান, তৃতীয় রোজা থেকে শুরু হওয়া এ উদ্যোগ চলবে রমজানের শেষ পর্যন্ত। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ক্রেতা বলছিলেন, বাজারে চারজনের ইফতারসামগ্রী কিনতে গেলে অন্তত ৮০ টাকা লাগে। এখানে মাত্র ১ টাকায় তারা পাচ্ছেন। মাসে ৮ হাজার টাকা আয় দিয়ে সংসার চালানো দায়। একটু খারাপ লাগলেও এ সুযোগটা তিনি নিচ্ছেন।
মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেন মেহেদী বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি মানুষের আস্থা দিন দিন কমছে। তখন এ ধরনের উদ্যোগ অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। এ ধরনের ইতিবাচক দিক সব দলে থাকলে দেশে খারাপ বলতে কিছু থাকবে না।
ইফতারসামগ্রী বিতরণে নিয়োজিত ছিলেন স্বেচ্ছাসেবী বাবর আলী রুমন। তিনি বলেন, অসহায় মানুষ যেন এটাকে দান মনে না করে। তাদের সম্মানের কথা ভেবেই ১ টাকার বিনিময়ে এসব সামগ্রী দেওয়া হচ্ছে। প্রতিদিন ২০০ জনকে ইফতারি দেওয়ার উদ্যোগ নিলেও চাহিদা বেশি থাকায় তারা বিব্রত হন। অনেক সময় ম্যানেজ করে বিতরণ করা হচ্ছে।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রোগ মুক্তি এবং জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি প্রয়াত আনোয়ার হোসেনের রুহের মাগফেরাত কামনায় এ উদ্যোগ নিয়েছেন বলে জানান জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব মো.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: চ প ইনব বগঞ জ ১ ট ক র ইফত র
এছাড়াও পড়ুন:
ডিজিটাল অভিজ্ঞতা উন্নত করার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি
সমকাল : বাজারে আপনাদের ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের চাহিদা কেমন?
আবেদ-উর-রহমান : মিডল্যান্ড ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের চাহিদা বাড়ছে উল্লেখযোগ্যভাবে। আমরা কার্ডটি এমনভাবে ডিজাইন করেছি, যাতে ডিজিটাল লেনদেনের প্রবণতা আরও বাড়ে এবং গ্রাহকরা দেশব্যাপী সর্বোত্তম সুবিধা পেতে পারেন। মিডল্যান্ড ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডে ‘অ্যাড মানি’ ফ্রি রাখা হয়েছে। ফলে গ্রাহকরা সহজেই মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) ব্যবহার করতে পারছেন। প্রত্যন্ত অঞ্চলে পয়েন্ট অব সেলস মেশিনের ব্যবহার অত্যন্ত কম। কিন্তু এমএফএস ব্যবহারের সহজলভ্যতা রয়েছে। আমরা এমনভাবে মিডল্যান্ড অনলাইন অ্যাপ তৈরি করেছি, যেখানে সর্বাধিক ব্যবহৃত সব এমএফএস প্রতিষ্ঠান সংযুক্ত রয়েছে। আমাদের লক্ষ্য গ্রাহকদের জন্য একটি সহজ, সুবিধাজনক এবং নিরাপদ লেনদেনের অভিজ্ঞতা প্রদান করা।
সমকাল : গ্রাহকদের জন্য আপনাদের কত ধরনের ক্রেডিট কার্ড আছে?
আবেদ-উর-রহমান : আমাদের দুই ধরনের ক্রেডিট কার্ড রয়েছে– গোল্ড ও প্ল্যাটিনাম। কার্ডগুলো গ্রাহকদের আর্থিক প্রয়োজন মেটাতে সহায়তা করে এবং বিভিন্ন সুবিধা দেয়। যেমন– বিনামূল্যে এমএফএসে অর্থ যোগ করার সুযোগ, ইএমআইর পণ্য ক্রয়, ডিসকাউন্ট প্রাপ্তি, তাৎক্ষণিক নগদ প্রয়োজন মেটানো, কিস্তির মাধ্যমে পরিশোধ, প্রতিবার ক্রয়ের বিপরীতে রিওয়ার্ড পয়েন্ট প্রাপ্তি যা খরচ করা এবং আর্থিক সুবিধা প্রাপ্তির নিশ্চয়তা দেয়। আমাদের কার্ডের জনপ্রিয়তা বাড়াতে ডিজিটাল অভিজ্ঞতা
উন্নত করার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি। গ্রাহকরা ঘরে বসেই সহজে কার্ডের জন্য আবেদন করতে পারেন। এ ছাড়া আমরা বিভিন্ন শহরে ক্লাব সদস্যদের কাছে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করেছি, যা আমাদের কার্ডের প্রচারে সহায়ক হবে। বিভিন্ন পেশায় সহজে কার্ড প্রাপ্তির সুবিধা তো রয়েছেই।
সমকাল : সুদহার বেড়ে যাওয়ার কোনো বিরূপ প্রভাব রয়েছে?
আবেদ-উর-রহমান: সুদহার বৃদ্ধির কারণে কিছু গ্রাহক দ্বিধায় পড়তে পারেন। তবে আমরা এই সমস্যা মোকাবিলার চেষ্টা করছি। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে, শাখাগুলোতে নিয়মিত আর্থিক সাক্ষরতা নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে জোর প্রচারণা চালাচ্ছি। ব্যক্তিগত আর্থিক আচরণ পরিচালনার জন্য ৫০-৩০-২০ মডেল অনুসরণ করার ব্যাপারে জোর দেওয়া হচ্ছে, যেখানে মাসিক আয়ের ৫০ শতাংশ খাদ্য, বাসস্থানসহ মৌলিক চাহিদা, ৩০ শতাংশ বিনোদন, ভ্রমণসহ ঐচ্ছিক চাহিদা এবং ২০ শতাংশ সঞ্চয় ও বিনিয়োগের জন্য বরাদ্দ করার ব্যাপারে আলোচনা হচ্ছে। মধ্যবয়সী মানুষের জন্য ২০ শতাংশ সঞ্চয় আদর্শ হলেও প্রাথমিক কর্মজীবনে ১০ শতাংশ সঞ্চয় শুরু করা যেতে পারে। আমাদের মূল উদ্দেশ্য হলো, ক্রেডিট কার্ডের সঠিক ব্যবহার। কেননা, এটি তাৎক্ষণিক প্রয়োজন মেটানোর জন্য সৃষ্টি হয়েছে, বিলাসিতার জন্য নয়।
সমকাল: ডিজিটাল লেনদেন আরও বাড়াতে কী ধরনের উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে?
আবেদ-উর-রহমান : ডিজিটাল পেমেন্টের সুবিধা ও নিরাপত্তা সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো প্রয়োজন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ডিজিটাল পেমেন্টের ওপর প্রশিক্ষণ এবং স্থানীয় পর্যায়ে সেমিনার ও কর্মশালার আয়োজন করা যেতে পারে। এতে মানুষ নগদ লেনদেনের ক্ষতিকর দিক এবং ডিজিটাল পেমেন্টের সুবিধা সম্পর্কে জানতে পারবে। সহজে ব্যবহারযোগ্য ডিজিটাল পেমেন্ট সিস্টেমের মাধ্যমে মানুষকে ক্যাশলেস লেনদেনে উৎসাহিত করা সম্ভব। সরকারি প্রণোদনা এবং সঠিক নিয়ম ও নীতিমালা প্রণয়ন করা ডিজিটাল পেমেন্টের প্রসারে সহায়ক হবে। নগদ লেনদেনের পরিবর্তে ডিজিটাল লেনদেনের জন্য বিশেষ সুবিধা দেওয়া যেতে পারে।
উদাহরণস্বরূপ, সরকার যদি ডিজিটাল লেনদেনের ওপর করছাড় দেয়, তাহলে ব্যবসায়ীরা নগদ লেনদেনের পরিবর্তে ডিজিটাল লেনদেনে উৎসাহিত হবেন। ব্যবসায়ীদের ডিজিটাল পেমেন্ট গ্রহণে উৎসাহিত করা জরুরি। সামাজিক মাধ্যমে ক্যাশলেস লেনদেনের প্রচারণা চালানো এবং স্থানীয় কমিউনিটিতে আলোচনা করা ডিজিটাল পেমেন্টের জনপ্রিয়তা বাড়াতে সাহায্য করবে। সরকারের কাছে আমাদের প্রত্যাশা হলো, ডিজিটাল অবকাঠামো উন্নয়ন এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা, যাতে ডিজিটাল লেনদেনের জন্য একটি নিরাপদ পরিবেশ তৈরি হয়।
সমকাল: পবিত্র রমজান ও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে গ্রাহকদের জন্য কী ধরনের অফার দিচ্ছেন?
আবেদ-উর-রহমান: পবিত্র রমজান ও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে আমরা গ্রাহকদের জন্য বিশেষ অফার ঘোষণা করেছি। একটির সঙ্গে এক বা দুটি ইফতার ফ্রি এবং রাতের খাবারের পাশাপাশি গহনা ও লাইফস্টাইল পণ্যের ওপর ডিসকাউন্ট সুবিধা দিচ্ছি। এই বিশেষ সময়কে সামনে রেখে আমরা গ্রাহকদের জন্য ১০ শতাংশ ক্যাশব্যাক অফার দিচ্ছি, যা তাদের কেনাকাটাকে আরও সুবিধাজনক করে তুলবে। অন্যদিকে, বিভিন্ন গ্রোসারি শপে ৭ গুণ রিওয়ার্ড পয়েন্ট প্রদান করা হচ্ছে, যা পুরো মাসজুড়ে কার্যকর থাকবে। এ ছাড়া, আমরা বিভিন্ন লাইফস্টাইল পণ্যের ওপর ডিসকাউন্ট সুবিধাও দিচ্ছি,যাতে গ্রাহকরা তাদের প্রয়োজনীয় সামগ্রী কিনতে পারেন এবং ঈদের আনন্দকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারেন। এ ছাড়া সব ধরনের রিটেইল কেনাকাটার জন্য রিওয়ার্ড পয়েন্ট তো রয়েছেই।