Samakal:
2025-04-17@16:48:25 GMT

পুতিন ও ট্রাম্পের নতুন ইউরোপ

Published: 13th, March 2025 GMT

পুতিন ও ট্রাম্পের নতুন ইউরোপ

মস্কোর বিশাল সামরিক সমাবেশ স্পষ্টত কেবল ইউক্রেনকে লক্ষ্য করে নয়। পুতিন যদি অর্থপূর্ণ নিরাপত্তার নিশ্চয়তাসহ যুদ্ধবিরতিতে রাজি না হন, তবে যুদ্ধ শেষ হবে না। সে রকম কিছু হলে ইউক্রেনের বাইরেও রাশিয়ার আগ্রাসন বিস্তারের আশঙ্কা রয়েছে।

বাস্তবতা হলো, ইউরোপ এখনও অভূতপূর্ব হুমকির মুখোমুখি এবং জেদ্দার আলোচনায় ইউক্রেনের ব্যাপারে অগ্রগতির লক্ষণ থাকা সত্ত্বেও আমরা একাই এর মুখোমুখি। আরও খারাপ হলো, যখন আমাদের এ পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হচ্ছে, তখন যুক্তরাষ্ট্র আমাদের বিরুদ্ধে কাজ করছে। মনে হচ্ছে, পুতিন ও ট্রাম্প পরস্পর একটি পরিকল্পনা ভাগাভাগি করে নিচ্ছেন। যেমন ইউক্রেনে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন দালাল ভিচি সরকারের মতো কোনো শাসক বসানো এবং ইউরোপ মহাদেশকে একাধিক প্রভাব বলয়ে বিভক্ত করা, যা রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, সম্ভবত চীনকেও এ অঞ্চলে উপনিবেশ স্থাপনে সহায়তা করতে পারে। বেশির ভাগ ইউরোপীয় জনসাধারণ এটি বুঝতে পারছে। ইউরোপীয় নেতাদের গুরুত্বপূর্ণ অংশটিও এটি বুঝতে পারে। তারা পদক্ষেপ নিতেও শুরু করেছে।

তারা এক ইউরোপের ভিত্তি তৈরি করছেন, যা আমাদের কয়েক দশক ধরে চেনা ইউরোপের চেয়ে ভিন্ন। এই ইউরোপ শান্তির সময়ে গড়ে উঠেছিল। প্রধানত ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক এবং আর্থিক আন্তঃনির্ভরতার মাধ্যমে সেই ইউরোপ অভ্যন্তরীণভাবে শান্তি প্রতিষ্ঠা করেছিল। ন্যাটোর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র মূলত বহির্বিশ্ব থেকে তার নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিয়েছিল। ইউরোপীয় দেশগুলো প্রতিরক্ষা জোটের মাধ্যমে অনুগত ট্রান্সআটলান্টিক মিত্র হিসেবে কাজ করেছিল। তারা ওয়াশিংটনকে চুক্তি থেকে উল্লেখযোগ্য লাভ পাওয়ার সুযোগ করে দেয়, যা শুরু হয়েছিল মার্কিন প্রতিরক্ষা শিল্প থেকে। ইউরোপীয়রা ওয়াশিংটনের বোকামিকেও আনুগত্যের সঙ্গে অনুসরণ করেছিল। যেমন ২০০৩ সালে সাদ্দাম হোসেনকে উৎখাত করার জন্য ইরাক আক্রমণ।

তবে একটি নতুন ইউরোপের জন্ম হতে চলেছে। আর এটি কী, তা বলার চেয়ে এটি কী নয়, তা বলা সহজ। এটি ইইউ নয় অথবা আমরা দীর্ঘদিন ধরে যেটিকে অনায়াসে জন্ম নেওয়া বলে ধরে নিয়েছিলাম, তাও নয়। ইইউতে এখন হাঙ্গেরির ভিক্টর অরবান ও স্লোভাকিয়ার প্রধানমন্ত্রী পপুলিস্ট জাতীয়তাবাদী রবার্ট ফিকোর মতো ব্যক্তি রয়েছেন, যারা ট্রোজান হর্স বা তাদের ভেতরে গিয়ে হামলা চালাতে পারে। তারা স্পষ্টতই পুতিনের রাশিয়া এবং ট্রাম্পের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে কাজ করছেন।

এ কারণেই আমরা ইমানুয়েল মাখোঁ, কিয়ার স্টারমারসহ ইউরোপীয় নেতাদের জোরালো কণ্ঠস্বর শুনছি। সংকট মুহূর্তে তাদের নিজ নিজ রাজধানীতে জরুরি শীর্ষ সম্মেলন আহ্বান করতে দেখেছি, যেখানে আমন্ত্রিত তালিকা সাবধানে তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসনের সদস্যরাসহ ইউরোপবিরোধীরা আশা করছেন, এর মাধ্যমে একটি অকার্যকর ইইউকে কোণঠাসা করে অপ্রাসঙ্গিক করে তোলা হয়েছে। 

যে ইউরোপের জন্ম হচ্ছে, তাও ইইউ থেকে সম্পূর্ণ আলাদা নয়। ব্রাসেলসের প্রতিষ্ঠানগুলো বিশেষ করে ইউরোপীয় কমিশন, ব্লকের নির্বাহী সংস্থা নতুন ইউরোপ নির্মাণে গভীরভাবে জড়িত। গত সপ্তাহে ইউরো অঞ্চলের রাজস্ব নিয়মের যুগান্তকারী শিথিলকরণ ‘ইউরোপকে পুনর্নির্মাণ’ করার পথে হাঁটছে। সে জন্য ব্যাপক ব্যয় বৃদ্ধি, ইউরোপের প্রতিরক্ষা সমর্থন করতে নতুন আর্থিক উপকরণ কাঠামো গড়ে তোলা, এককভাবে ইইউ বাজার নিশ্চিত করা এবং মহাদেশটির সম্মুখে কৌশলগত অগ্রাধিকার ইত্যাদি। এসব কিছু এটাই নিশ্চিত করবে–  ব্রাসেলসের প্রতিষ্ঠানগুলো চালকের আসনে রয়েছে। 

নতুন ইউরোপ ন্যাটোও নয়। ইউরোপীয়রা ন্যাটো থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়নি, বরং যুক্তরাষ্ট্র তা করেছে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ১ লাখের বেশি সেনা মোতায়েন রয়েছে ইউরোপে, যার মধ্যে ১০ হাজার শুধু পোল্যান্ডেই এবং মহাদেশজুড়ে ৪০টি সামরিক ঘাঁটি রয়েছে। আমরা সম্ভবত পূর্ব ইউরোপ এবং এর বাইরেও মার্কিন বাহিনীর আংশিক অথবা সম্পূর্ণ প্রত্যাহার দেখতে পাব।

নাথালি টোকি: গার্ডিয়ানের ইউরোপবিষয়ক কলাম লেখক; দ্য গার্ডিয়ান থেকে ভাষান্তর ইফতেখারুল ইসলাম 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইউর প য ইউর প র ইউক র ন

এছাড়াও পড়ুন:

কুয়েটে ক্লাস শুরু নিয়ে নতুন অনিশ্চয়তা

শিক্ষার্থী ও কুয়েট প্রশাসনের অনড় অবস্থানের কারণে সহসা কাটছে না খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) অচলাবস্থা। সংকট নিরসনে সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকেও নেওয়া হয়নি কোনো পদক্ষেপ। প্রতিদিন পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি পালন করছে শিক্ষার্থী এবং শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এছাড়া শিক্ষক সমিতির নতুন আল্টিমেটামে আগামী ৪ মে থেকে ক্লাস শুরু হওয়া নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।

কুয়েট সূত্রে জানা গেছে, ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবি নিয়ে দ্বন্দ্বের জের ধরে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীর সংঘর্ষে দেড় শতাধিক জন আহত হন। ওই দিন কিছু উশৃঙ্খল ছাত্র উপাচার্যকে মারধর, গালাগাল ও গায়ে থুথু দেয় বলে উপাচার্যের অভিযোগ। এ ঘটনার পর ২৫ ফেব্রুয়ারি কুয়েটের সিন্ডিকেট সভায় অনির্দিষ্টকালের জন্য হল ও একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়।

গত ১৩ এপ্রিল দুই শতাধিক শিক্ষার্থী বন্ধ থাকা কুয়েটে প্রবেশ করে প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান শুরু করে। ১৪ এপ্রিল রাতে সিন্ডিকেট সভায় ১৮ ও ১৯ ফেব্রুয়ারি সংঘর্ষে জড়িত ৩৭ জন শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার, আগামী ২ মে হল খোলা ও ৪ মে থেকে ক্লাস শুরুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু শিক্ষার্থীরা এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে ১৫ এপ্রিল তালা ভেঙে ছয়টি হলে প্রবেশ করে।

এছাড়া ওই দিন তারা ৬ দফা দাবির পরিবর্তে উপাচার্যের অপসারণের ১ দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন। ১৬ এপ্রিল উপাচার্যের অপসারণের দাবিতে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও পোস্টার লাগায়। উপাচার্যকে বহাল রাখা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা শিক্ষার্থীদের শাস্তির দাবিতে পাল্টা মিছিল ও মানববন্ধন করেন কুয়েটের সব শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী।

সর্বশেষ ১৭ এপ্রিল সকালে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা শিক্ষার্থীদের শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করেন কর্মচারীরা। আর উপাচার্যকে অপসারণের দাবিতে রাতে ক্যাম্পাসে মশাল মিছিল করেন শিক্ষার্থীরা। গত দুইদিন ধরে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে ক্যাম্পাসে উত্তেজনা বিরাজ করছে। ক্যাম্পাসের গেটে পুলিশ মোতায়েন থাকলেও তারা কোনো পক্ষকে বাধা দেয়নি।

শিক্ষার্থীরা বলেন, ছাত্রদলের নেতাকর্মী ও বহিরাগতরা তাদেরকে মারধর করার ঘটনায় থানায় মামলা হলেও পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করেনি। উল্টো বহিরাগত একজন ২২ জন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছে। এ ব্যাপারে উপাচার্য শিক্ষার্থীদের পক্ষে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।

তারা বলেন, ২ মাস ধরে একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ থাকায় তাদের লেখাপড়া বিঘ্নিত হচ্ছে। হল বন্ধ ছিল, অনেকে হলে থেকে আশপাশের এলাকায় টিউশনি করে। তাদের টিউশনি বন্ধের উপক্রম হয়েছিল। সে কারণে তারা তালা ভেঙে হলে উঠতে বাধ্য হয়েছেন। কিন্তু হলে খাবার, পানি ও ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়া হচ্ছে না। এর ফলে তাদেরকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। তারপরও উপাচার্যের অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।

শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, বর্তমান উপাচার্যকে অপসারণ করে নতুন উপাচার্য নিয়োগ দিতে হবে। সাময়িক বহিষ্কার করা ৩৭ জনের মধ্যে যে কয়জন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী রয়েছে তাদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করতে হবে।

অন্যদিকে কুয়েটের সিনিয়র শিক্ষক অধ্যাপক ড. এম এম এ হাশেম বলেন, ছাত্ররা ভুল পথে আছে। তারা তালা ভেঙে হলে ঢুকে আইন লঙ্ঘন করেছে। তালা ভাঙা তাদের উচিত হয়নি। কারণ তালা দেওয়া হয়েছিল সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী। তাদের উচিৎ আপাতত হল থেকে নেমে গিয়ে আগামী ২ মে হলে আসা।

ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. সালাউদ্দিন ইউসুফ বলেন, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি সংঘর্ষের দিন উপাচার্যের গায়ে ছাত্রদের হাত তোলা ঠিক হয়নি।

কুয়েট শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. শাহিদুল ইসলাম বলেন, উপাচার্যের পদত্যাগের এক দফা দাবি আমরা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছি। আমাদের এক দফা দাবি হচ্ছে- যেসব ছাত্র দোষী সাব্যস্ত হবে, তারা শাস্তি না পাওয়া পর্যন্ত আমরা কেউ ক্লাসে ফিরে যাবো না।

এদিকে শিক্ষক সমিতির এ ঘোষণা নিয়ে নতুন জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। আগামী ৪ মে থেকে ক্লাস শুরু হওয়া নিয়ে কিছুটা অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। কুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাছুদ সাংবাদিকদের বলেন, আমি কেন পদত্যাগ করবো? বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুইজন সিনিয়র শিক্ষক বলেন, শিক্ষার্থী ও কুয়েট প্রশাসন নিজেদের অবস্থানে অনড় রয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। কিন্তু তেমন কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। 

এদিকে কুয়েটে আগে থেকেই প্রায় দেড় বছরের সেশনজট রয়েছে। এর উপর গত ২ মাস কোনো ক্লাস-পরীক্ষা হয়নি। এ অবস্থা চলমান থাকায় বাড়ছে সেশনজট।

কুয়েটের শিক্ষার্থী ওবায়দুল্লাহ বলেন, ২০২০ সালের ২৩ জানুয়ারি ভর্তি হই। ইতোমধ্যে ৫ বছর পার হয়ে গেছে। আমরা ১ বছর ৩-৪ মাস সেশনজটের মধ্যে আছি। কবে নাগাদ ক্লাস শুরু হবে, পরীক্ষা হবে তা অনিশ্চিত। ফলে সেশনজট আরও বাড়ছে।

২০১৯ ব্যাচের একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের দেড় বছর সেশনজট ছিল। আরও ২ মাস পিছিয়ে গিয়েছি। গত ৪ মার্চের মধ্যে পরীক্ষা শেষ হওয়ার কথা ছিল। এরপর আমাদের চাকরিতে ঢোকার কথা ছিল। কিন্তু এখনও পরীক্ষা বাকি রয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ