লিচুর রাজধানীখ্যাত পাবনার ঈশ্বরদীতে এবার অর্ধেকেরও বেশি গাছে আসেনি মুকুল। চাষিরা বলছেন, ফাল্গুন মাসে যখন লিচুর মুকুলের ম-ম গন্ধ ছড়িয়ে পড়ার কথা বাগানগুলোয়, তখন গাছে গাছে দেখা যাচ্ছে কচিপাতা। ফলে এবার লিচুর উৎপাদনে ধস নামার শঙ্কায় তারা। লিচুর মুকুলের এমন করুণ দশা গত পাঁচ দশকে দেখা যায়নি। তবে গাছে মুকুল কম আসার জন্য আবহাওয়াকে দায়ী করছেন কৃষি কর্মকর্তারা।

ঈশ্বরদীর ‘লিচু গ্রাম’ বলে পরিচিত উপজেলার মানিকনগর, মিরকামারী, চরমিরকামারী, কদিমপাড়া ও আওতাপাড়া ঘুরে দেখা গেছে, বহু বাগানের গাছেই মুকুল নেই। কৃষকরা বলেন, এই সময়ে গাছে নতুন পাতা গজালে মুকুল আসে না। লিচুচাষি আমিরুল ইসলাম সরদার জানান, তাঁর বাগানে ১০০টি গাছ থাকলেও মাত্র ১০-২০টিতে মুকুল এসেছে। মুকুলের পরিমাণও অনেক কম। নিকট অতীতে এত কম মুকুল আর দেখা যায়নি। এ বছর কেন এমন হলো বুঝতে পারছি না। আবহাওয়ার কারণে এ বছর মুকুলের বিপর্যয় হতে পারে বলে তারা ধারণা করেছেন।

সাহাপুর গ্রামের লিচুচাষি সহিদুল ইসলাম বলেন, এত কম লিচুর ফলন আগে কখনও দেখিনি। এই এলাকার বেশির ভাগ মানুষ লিচু চাষের ওপর নির্ভরশীল। আমার বাগানের অর্ধেকেরও বেশি গাছে এবার মুকুল আসেনি। লিচু বেচে সারা বছর আমরা সংসারের খরচ চালাই। এবার কীভাবে চলব বুঝতে পারছি না।

লিচুর আবাদ করে জাতীয়ভাবে স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত ঈশ্বরদীর কৃষক আব্দুল জলিল কিতাব। তিনি বলেন, ৪৫ বছর ধরে লিচুর আবাদ করছি– এমন বিপর্যয় আগে কখনো হয়নি। পুরো এলাকাতেই এ অবস্থা। পরিবর্তিত আবহাওয়ার সঙ্গে খাপ খাইয়ে আগামীতে লিচুর ভালো আবাদ আর হবে কিনা সন্দেহ আছে। এ বছর লিচুর ১০ শতাংশও ফলন পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ আছে। লিচু আবাদের সঙ্গে এই অঞ্চলের লক্ষাধিক মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত। এরা সবাই এবার বিপদের সম্মুখীন হবেন। 

উপজেলার সলিমপুর ইউনিয়নের জয়নগর কারিগরপাড়া গ্রামের লিচুচাষি শামসুল আলম বলেন, আমার প্রায় ১২ বিঘা জমিতে লিচুর বাগান আছে। এ বছর এত কম মুকুল এসেছে, যা আগে কখনও দেখিনি।

ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি বিভাগের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা এখলাছুর রহমান বলেন, ‘লিচুগাছে সমানভাবে প্রতিবছর মুকুল আসে না। কখনও বেশি বা কখনও কম হয়। তবে এবার তুলনামূলকভাবে কম সংখ্যক গাছে মুকুল এসেছে। এটি প্রাকৃতিক কারণে হতে পারে। এ বছর যেহেতু কম হয়েছে, তাই ধারণা করা যায় আগামী বছর মুকুলের পরিমাণ সব গাছেই বেশি এবং ভালো ফলন হবে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মিতা সরকার বলেন, ঈশ্বরদীতে এবার ৩১০০ হেক্টর জমিতে লিচুর আবাদ হয়েছে। তবে এ বছর গাছগুলোয় মুকুলের পরিমাণ আগের চেয়ে অনেক কম। বৈরী আবহাওয়ার কারণে এমনটা হয়েছে বলে অনুমান করছি।

ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, ঈশ্বরদী পৌরসভা ও সাতটি ইউনিয়নে বিভিন্ন গ্রামের জমিতে ২ লাখ ৮৩ হাজার ৫০০টি লিচু গাছ রয়েছে। বিঘাপ্রতি ২০ থেকে ১৫টি গাছ অর্থাৎ এক একর জমিতে ৪২টি, এক হেক্টর জমিতে ৯০টি গাছ আছে। ছোট-বড় বাগান মিলিয়ে ১১ হাজার ২৭০টি গাছে লিচুর বাগান রয়েছে। উপজেলায় লিচু আবাদি কৃষকদের সংখ্যা ৯ হাজার ৬২০ জন। বাণিজ্যিক আকারে লিচু বাগান রয়েছে ২৬০০ হেক্টর জমিতে। বিচ্ছিন্নভাবে বসতবাড়িতে আবাদ হয়েছে ৫০০ হেক্টরে। ফলন্ত আবাদি জমির পরিমাণ ২৮৩৫ হেক্টর। প্রতিবছর এ উপজেলায় ৫০০ কোটি টাকার লিচু বিক্রি হয়।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: প বন র পর ম ণ এ বছর উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

কিডনি সুস্থ রাখার উপায়

আপনার কিডনি কি ঠিক আছে?  তাড়াতাড়ি শনাক্ত করুন, কিডনিস্বাস্থ্য রক্ষা করুন। এবার এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে পালিত হচ্ছে বিশ্ব কিডনি দিবস। কিডনি মানবদেহের গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ। দুটি কিডনি অনবরত মানবদেহের ছাঁকন যন্ত্র হিসেবে মূত্রের মাধ্যমে দূষিত পদার্থ নিষ্কাশন করছে। মানবদেহে পানি ও অম্ল-ক্ষারের সমতা রক্ষা করা এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে কিডনির ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
কিডনির অনেক ধরনের অসুখ হতে পারে। তবে কিডনি বিকল হওয়ার সঙ্গে আমরা সবচেয়ে বেশি পরিচিত। কখনও খুব দ্রুতগতিতে কিডনি বিকল হতে পারে, আবার কখনও ধীরগতিতে। ডায়রিয়াজনিত পানিশূন্যতা, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ, অতিরিক্ত শারীরিক কসরৎ, শারীরিক আঘাত, ওষুধের প্রতিক্রিয়ায় অতি দ্রুত কিডনি বিকল হতে পারে। মানবদেহে রেচনতন্ত্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হলো কিডনি। কিডনির প্রধান কাজ হলো রক্তে থাকা দূষিত পদার্থ ছেঁকে বের করা। এ ছাড়াও কিডনি রক্তে লবণ এবং পটাশিয়ামের ভারসাম্য রক্ষা করে, ক্যালসিয়াম শোষণেও সহায়তা করে। দীর্ঘদিন ধরে অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ কিডনির ক্ষতি করে। কিডনি ঠিক মতো কাজ না করলে নানা রকম শারীরিক জটিলতার সৃষ্টি হয়।
ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, কিডনির নিজস্ব রোগ, জন্মগত ত্রুটি, হৃদরোগ, স্ট্রোক, রক্তনালির ব্যাধি, বেদনানাশক ওষুধসহ কিছু ওষুধের যথেচ্ছ সেবন এবং কতিপয় বাত রোগের কারণে ধীরে ধীরে কিডনি বিকল হয়ে যায়। 
কিডনি সুস্থ রাখার জন্য যে বিষয়গুলোর দিকে নজর দিতে হবে সেগুলো হলো–
l নিয়মিত শরীরচর্চার মাধ্যমে শরীরকে সক্রিয় রাখা: পরিমিত পরিমাণ শরীরচর্চা কিডনির সুস্থতার জন্য জরুরি। তবে গরমের মাঝে অতিরিক্ত শরীরচর্চা ক্ষেত্র বিশেষে কিডনির ক্ষতি ডেকে আনতে পারে। 
l রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বাগে রাখা: প্রতি তিনজন ডায়াবেটিক রোগীর একজন কিডনিসংক্রান্ত জটিলতায় আক্রান্ত হন। সারা বিশ্বে কিডনি বিকল হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে ডায়াবেটিস। সেজন্য নিয়মিত রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা তদারকি করা এবং নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি।
l রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা: প্রতি পাঁচজন উচ্চ রক্তচাপের রোগীর মাঝে একজন কিডনি জটিলতায় আক্রান্ত হন। এজন্য যাপিত জীবনে পরিবর্তনের পাশাপাশি ওষুধ গ্রহণের মাধ্যমে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
lওজন নিয়ন্ত্রণ: অতিরিক্ত ওজন কিডনির ওপরও চাপ প্রয়োগ করে। অতিরিক্ত ওজন থেকেই হতে পারে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস এবং উচ্চ কোলেস্টেরল। 
l সুষম খাদ্য গ্রহণ: সুস্থ জীবনের জন্য সুষম খাদ্য গ্রহণের কোনো বিকল্প নেই। 
l পর্যাপ্ত পানি পান: কিডনি সুস্থতার জন্য প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি গ্রহণ করতে হবে। পানি শূন্যতা যাতে না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে বিশেষত ডায়রিয়া, বমি, অতিরিক্ত ঘাম এবং শরীরচর্চার সময় পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে।
l.ধূমপান পরিহার করা: ধূমপান শরীরের প্রতিটি অঙ্গের জন্য ক্ষতিকর।  কিডনি ও এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম নয়।
l বেদনানাশক ওষুধসহ অন্যান্য ওষুধ সেবনে সাবধানতা: বেশ কিছু ওষুধকে বলা হয় নেফ্রো টক্সিক। অর্থাৎ এগুলো কিডনির জন্য ক্ষতিকর। ব্যথা-বেদনানাশক ওষুধের মাঝে অন্যতম। 
lলবণ পরিমাণমতো গ্রহণ: অতিরিক্ত লবণ শরীরের জন্য ক্ষতিকর। সেজন্য মনে রাখতে হবে ভাতের পাতে লবণ নয়। যেসব খাদ্যে লবণ বেশি সেগুলো পরিহার করতে হবে। 
lনিয়মিত কিডনি পরীক্ষার মাধ্যমে জেনে নিতে হবে কিডনি কেমন আছে। v

[মেডিসিন স্পেশালিস্ট ও এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট সিএমএইচ, বরিশাল]
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বারবার নিজেকে ভাঙার চেষ্টা করছি: কর্ণিয়া
  • কিডনি সুস্থ রাখার উপায়
  • মায়ের প্রেমিকের গরম ছুরির ছ্যাঁকায় ঝলসে গেল মানহার শরীর
  • মায়ের প্রেমিকের গরম ছুরির ছ্যাঁকায় ঝলসে গেছে মানহার শরীর
  • শ্যামল-সাবিলাকে এক করল ‘মাকড়শা’
  • অবশেষে কাজটি শেষ হল