ধর্ষণ মামলার বিচার দ্রুত হবে, কঠোর হচ্ছে আইন: আসিফ নজরুল
Published: 12th, March 2025 GMT
আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, ধর্ষণ মামলার বিচার যাতে শুধু দ্রুতই নয়, বিচারটা যাতে নিশ্চিত হয় এবং যথাযথ হয় সে লক্ষ্যে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন কঠোর করা হচ্ছে।
সচিবালয়ে ধর্ষণবিরোধী মঞ্চের নেত্রীদের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের বুধবার এ তথ্য জানান আইন উপদেষ্টা। খবর বাসসের
ধর্ষণ মামলার তদন্ত ও বিচারের সময় কমিয়ে অর্ধেক করতে সংশোধিত নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে বলে জানান ড.
আইন উপদেষ্টা বলেন, আমরা গত পরশু (সোমবার) এবং গতকাল (মঙ্গলবার) সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে পরামর্শ সভা করেছি। আমরা একটা খসড়া (সংশোধিত নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন) আইন করেছি। সেটি আজ আমরা সার্কুলেট করছি কিছু কিছু স্টেক হোল্ডারের কাছে। যত দ্রুত সম্ভব আমরা আইনটি কঠোর করার চেষ্টা করবো। ধর্ষণের মামলার বিচার শুধু দ্রুত নয়, বিচারটা যাতে নিশ্চিত হয় এবং যথাযথ হয় আমি এগুলো তাদের বলেছি। বিচারক যদি মনে করেন তবে ডিএনএ রিপোর্ট ছাড়াই মেডিকেল সার্টিফিকেটের ভিত্তিতে মামলার বিচারকাজ ও তদন্তকাজ চালাতে পারবেন এমন বিধান রাখা হচ্ছে বলে জানান আইন উপদেষ্টা।
আসিফ নজরুল বলেন, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে মেয়েদের অবিস্মরণীয় ভূমিকা ছিল। ফ্যাসিষ্ট হাসিনার বিরুদ্ধে বহু আন্দোলন হয়েছিল। তখন মেয়েরা নামেনি। এবার মেয়েরা নেমেছে। মেয়েরা নামলে তাদের পরিবারও নামে। ফ্যাসিবাদ পতনের চূড়ান্ত বিজয়ে মেয়েদের অবদান অবিস্মরণীয়।
তিনি বলেন, বিজয় পরবর্তী সময়ে আমাদের দেশে মেয়েদের আক্রমণ করা হচ্ছে। বিভিন্ন গোষ্ঠী থেকে ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়েও তাদের ওপর আক্রমণ করা হচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছি।
মঞ্চের নেত্রীরা কর্মক্ষেত্র-শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যৌন হয়রানি রোধে আলাদা সেল করার কথা বলেছেন জানিয়ে ড. আসিফ নজরুল বলেন, এ বিষয়ে হাইকোর্টের একটি রায় রয়েছে। সেই রায়ের আলোকে শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আর কাজের জায়গায় নয়, রাস্তাঘাটে যাতে আমাদের মেয়েরা উত্ত্যক্ত ও হয়রানির শিকার না হন- সেরকম একটি কম্প্রিহেনসিভ আইন করার কথা দিয়েছি, বলেছি সিরিয়াসলি চিন্তা করব। হাইকোর্টের রায়ের আলোকে সেই আইনটা একটু জোরালোভাবে করার চেষ্টা করব।
এর আগে ধর্ষণবিরোধী মঞ্চের পক্ষ থেকে দেওয়া এ সংক্রান্ত স্মারকলিপিতে বলা হয়, আইন মোতাবেক ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড লিখিত থাকলেও তা কার্যকর করা হয় না। পূর্ববর্তী আলোচিত অনেক ধর্ষণের বিচার হয়নি। কারণ, ধর্ষণগুলো সংগঠিত হয়েছে সমাজের ক্ষমতাশালী ব্যক্তিদের দ্বারা। মোসারাত জাহান মুনিয়ার ধর্ষণ এবং হত্যার বিচার হয়নি, সোহাগী জাহান তনু ধর্ষণ এবং হত্যার বিচার হয়নি। র্যাব কর্মকর্তা আলেপ উদ্দিন কর্তৃক গুম হওয়া ব্যক্তির স্ত্রীকে রোজা ভাঙিয়ে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে, যার বিচার হয়নি।
ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে ৫ দফা দাবি পেশ করা হয়। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- শিশুর মামলার ক্ষেত্রে ধর্ষণ ও নিপীড়নবিরোধী বিশেষ ট্রাইবুনাল গঠনের মাধ্যমে ৭ দিনের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট জমা এবং ১ মাসের মধ্যে মাগুরার শিশুটির ধর্ষকের বিচারিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন সাপেক্ষে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের আদেশ নিশ্চিত করতে হবে। বিচার প্রক্রিয়া চলাকালীন তার পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। প্রত্যেক ধর্ষণ মামলার বিচারে ধর্ষণ ও নিপীড়নবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে দ্রুত মামলার বিচারকার্য সম্পন্ন করে সব ধর্ষণের বিচার নিশ্চিত করতে হবে। তিন কার্যদিবসের মধ্যে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে দ্রুত বিচারপ্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্রে ‘নারী ও শিশু নিপীড়নবিরোধী সেল’ গঠন ও সেলের কার্যকরিতা নিশ্চিত করতে হবে। ধর্ষণ, যৌন নিপীড়ন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাইবার বুলিং সংক্রান্ত আইনের সংশোধন করে অপরাধের স্পষ্ট ও যথাযথ সংজ্ঞায়ন করতে হবে।
ধর্ষণবিরোধী মঞ্চের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে আইন উপদেষ্টা বলেন, আজ তারা আমাকে যেসব কথা বলেছেন, এগুলো আমার নিজেরও মনের কথা। সরকারের কাছে যে প্রত্যাশা, সেটা তারা তুলে ধরেছেন। আমি মনে করি, তাদের প্রতিটি দাবি যৌক্তিক।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আইন উপদ ষ ট আইন উপদ ষ ট ন শ চ ত করত র ব চ র হয়ন ন আইন তদন ত
এছাড়াও পড়ুন:
অবিশ্বাস্য নাটকীয়তার পর আতলেতিকোকে হারিয়ে শেষ আটে রিয়াল
আতলেতিকো মাদ্রিদ ১ : ০ রিয়াল মাদ্রিদ
(দুই লেগ মিলিয়ে ২-২ ব্যবধানে সমতা থাকার পর টাইব্রেকারে রিয়ালের জয় ৪-২ গোলে)
অবিশ্বাস্য! অবিশ্বাস্য এক ম্যাচই বটে। প্রথম মিনিটে গোল, ভিনিসিয়ুস জুনিয়রের পেনাল্টি মিস এরপর টাইব্রেকারের মহানাটকে গোল করেও পেলেন না হুলিয়ান আলভারেজ। ফলাফল চ্যাম্পিয়নস লিগের ধ্রুপদি এক লড়াইয়ে আতলেতিকোকে ৪-২ গোলে হারিয়ে শেষ আটে গেছে রিয়াল। এর আগে নির্ধারিত সময়ের খেলায় রিয়ালকে আতলেতিকো ১-০ গোলে হারালেও দুই লেগ মিলিয়ে ম্যাচ সমতায় ছিল ২-২ গোলে।
টাইব্রেকারে কিলিয়ান এমবাপ্পে, জুড বেলিংহাম, ফেদেরিকো ভালভের্দে এবং আন্তোনিও রুদিগার লক্ষ্যভেদ করলেও মিস করেছেন লুকাস ভাসকেজ। অন্য দিকে আতলেতিকোর হয়ে আলেক্সান্দার সোরলথ, আনহেল কোরয়ো গোল করলেও মিস করেছেন আলভারজে ও মার্কোস লরেন্তে। এর মধ্যে আলভারেজের গোল বাতির হয়েছে অদ্ভু কারণে। ডান পায়ে শট নেওয়ার আগ মুহূর্তে খানিকটা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে আর্জেন্টাইন তারকার বাঁ পাটাও বলে লেগে যায়। ফলে বল জালে জড়ালেও বাতিল হয় সেই গোল। আর এটিই শেষ পর্যন্ত ম্যাচের পার্থক্য গড়ে দিয়েছে।
আর রিয়ালের এই জয় ভিনিসিয়ুসকে বাঁচিয়ে দিয়েছে ট্র্যাজিক হিরো হওয়া থেকে। চ্যাম্পিয়নস লিগে ভিনিসিয়ুস জুনিয়র বরাবরই বড় ম্যাচের তারকা। সেমিফাইনাল-ফাইনালে বরবারই এগিয়ে এসে দলের দায়িত্ব নিতে দেখা গেছে তাঁকে। আজকের ম্যাচটা শেষ ষোলোর হলেও গুরুত্ব এর চেয়ে কম ছিল না। তবে এবারের চিত্রনাট্যটা লেখা হয়েছে ভিন্নভাবে। যেখানে লেখা ছিল না ভিনির নায়ক হওয়ার কথা। এমনকি পেনাল্টি মিস করার কারণে হতে পারতেন ভিলেনও। কিন্তু সতীর্থরা তাঁকে এবার বাঁচিয়ে দিয়েছেন।
আতলেতিকোর মাঠে প্রথম লেগের লিড হারাতে এক মিনিটও লাগেনি রিয়ালের। ম্যাচ শুরু হতে না হতেই দারুণ এক আক্রমণ থেকে গোল করেন কনর গ্যালাগার। চ্যাম্পিয়নস লিগে এটি আতলেতিকোর সবচেয়ে দ্রুততম গোল। আর রিয়ালের জন্য এটি ২০১০ সালের পর চ্যাম্পিয়নস লিগে তাদের হজম করা দ্রুততম গোল। এই গোলের পর রিয়াল রীতিমতো ঝাঁপিয়ে পড়ে আতলেতিকোর ওপর। আতলেতিকোও অবশ্য ছেড়ে কথা বলেনি।
দারুণ প্রেসিংয়ে পাল্টা জবাব দেয় তারাও। দুই দলের এমন আক্রমণাত্মক মনোভাবের কারণেই রোমাঞ্চকর হয়ে ওঠে দ্বৈরথ।
তবে রিয়ালের আক্রমণগুলো আতলেতিকোর বক্সে এসে বারবার খেই হারাচ্ছিল। অন্য দিকে পাল্টা আক্রমণে আতলেতিকোও চেষ্টা করছিল সুযোগ তৈরির। ২৫ মিনিটে দুর্দান্ত গোলকিপিংয়ে রিয়ালকে বাঁচান থিবো কোর্তোয়া। ৩৫ মিনিটে আরও একবার গোলের কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিল আতলেতিকো। তবে এবারও অল্পের জন্য হতাশ হতে হয় স্বাগতিকদের। একটু পর ফের আলভারেজকে হতাশ করেন কোর্তোয়া।
বিরতির পরও রিয়ালকে চেপে ধরে আতলেতিকো। শুরুর দিকেই একাধিক সুযোগ তৈরি করে তারা। যদিও গোল পাওয়া হয়নি। সুযোগ পেয়েছে রিয়ালও। কিন্তু ব্যর্থ হয়েছে তারাও। তবে … মিনিটে ম্যাচের দৃশ্যপট বদলে দেন কিলিয়ান এমবাপ্পে। প্রতি-আক্রমণ থেকে আতলেতিকোর দুই ডিফেন্ডারকে নাকাল করে ঢুকে পড়েন আতলেতিকো বক্সে। উপায় না দেখে ফাউল করেই তাঁকে থামাতে হয় লেংলেকে। তবে নাটক তখনো আরও বাকি। পেনাল্টিটা মিস করে বসেন ভিনি। শট নিয়ে বল পাঠান অনেক বাইরে দিয়ে।
রিয়াল সুযোগ মিস করায় সমতাতেই এগিয়ে চলে ম্যাচ। দুই দলই এ সময় সুযোগ পেয়েছিল এগিয়ে যাওয়ার। কিন্তু এরপর নির্ধারিত সময় এবং অতিরিক্ত সময়েও কোনো দল আর গোল পায়নি। যে কারণে ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে, যেখানে বাজিমাত করে রিয়াল।
লিল ১ : ২ ডর্টমুন্ড
(দুই লেগ মিলিয়ে ডর্টমুন্ড ৩-২ গোলে জয়ী)
প্রথম লেগে নিজেদের মাঠে ১-১ গোলে ড্র করে এমনিতেই চাপে ছিল বরুসিয়া ডর্টমুন্ড। লিলের মাঠে সেই চাপ আরও বাড়ে ৫ মিনিটে জোনাথন ডেভিডের গোলে পিছিয়ে যাওয়ার পর। এই গোলের পর দুই লেগ মিলিয়ে ২-১ গোলে পিছিয়ে পড়ে ডর্টমুন্ড। প্রথমার্ধে চেষ্টা করেও সমতা ফেরাতে পারেনি সিগন্যাল ইদুনা পার্কের ক্লাবটি। পিছিয়ে থেকেই যেতে হয় বিরতিতে।
বিরতির পর অবশ্য অন্য রূপেই দেখা যায় ডর্টমুন্ডকে। ৫৪ মিনিটে এমরে চানের পেনাল্টি গোলে ম্যাচে ও দুই লেগ মিলিয়ে সমতায় ফেরে ডর্টমুন্ড। এরপর ম্যাচের ৬৫ মিনিটে ম্যাক্সিমিলিয়ান বেইয়েরের গোলে ২-১ গোলে এগিয়ে যায় ডর্টমুন্ড। এরপর আর কোনো গোল না হলেও দুই লেগ মিলিয়ে ৩-২ গোলে জিতে পরের শেষ আটে চলে গেছে ডর্টমুন্ড। যেখানে তাদের প্রতিপক্ষ বার্সেলোনা।
আর্সেনাল ২ : ২ পিএসভি
(দুই লেগ মিলিয়ে আর্সেনাল ৯-৩ গোলে জয়ী)
এই ম্যাচটা অবশ্য প্রথম লেগেই শেষ হয়ে গিয়েছিল। পিএসভির মাঠে আর্সেনাল ৭-১ গোলে জেতার পর কার্যত কোনো আশাই ছিল না ডাচ ক্লাবটির। আজ আর্সেনালের মাঠে শুধু আনুষ্ঠানিকতাটুকুই সম্পন্ন হলো। আর দুই লেগ মিলিয়ে পিএসভির হারল ৯-৩ ব্যবধানে। আজকের ম্যাচটি ড্র হয়েছে ২-২ গোলে।
অ্যাস্টন ভিলা ৩ : ০ ক্লাব ব্রুগা
(দুই লেগ মিলিয়ে অ্যাস্টন ভিলা ৬-১ গোলে জয়ী)
প্রথম লেগে ঘরের মাঠে ৩-১ গোলে হারের পরই কোয়ার্টার ফাইনালের আশা শেষ হয়ে গিয়েছিল ক্লাব ব্রুগার। অ্যাস্টন ভিলার বিপক্ষে দ্বিতীয় লেগেও অবশ্য কোনো প্রতিরোধ গড়তে পারেনি তারা। এবার হেরেছে ৩-০ গোলে। দুই লেগ মিলিয়ে ব্রুগার হার ৬-১ গোলে। আজ শেষ আটে যাওয়ার পথে ভিলার হয়ে জোড়া গোল করেছেন মার্কো অ্যাসেনসিও। আর অন্য গোলটি ইয়ান মাতসেনের।