ছোটবেলায় সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী স্বপ্ন দেখতেন, চাকরি নয়; ব্যবসা করে নিজের পায়ে দাঁড়াবেন। কথাটি শুনে বড় ভাইয়েরা হাসাহাসি করে বলতেন, ‘তুই ব্যবসার কী বুঝিস। আমাদের চৌদ্দ পুরুষ কেউ ব্যবসা করেনি।’ তখন ব্যবসায়ীদের নিয়ে সমাজে একধরনের নেতিবাচক ধারণা ছিল। তবে নিজের পরিশ্রম আর প্রজ্ঞা দিয়ে চামড়া খাতের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে অ্যাপেক্সকে গড়ে তুলেছেন সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী।

শুধু তা–ই নয়, নীতিনৈতিকতা আর সততা নিয়ে ব্যবসা করেও যে সফল হওয়া যায়, সেই নজিরও স্থাপন করে গেছেন এই শিল্পোদ্যোক্তা। তিনি ছিলেন উদ্যোক্তাদের বাতিঘর।

সৈয়দ মঞ্জুর এলাহীর হাত ধরেই বাংলাদেশে উৎপাদিত চামড়ার জুতার বিদেশযাত্রা (রপ্তানি) শুরু হয়। রপ্তানির পাশাপাশি দেশের জুতার বাজারেও অন্যতম শীর্ষস্থানে রয়েছে তাঁর প্রতিষ্ঠিত অ্যাপেক্স। অবশ্য নিজেকে শুধু ব্যবসায়িক গণ্ডির মধ্যে আটকে রাখেননি সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী। সমাজ ও জাতি গঠনে ইংরেজি মাধ্যম স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। মানবাধিকার, গবেষণার মতো বিভিন্ন উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। রাজনৈতিকসহ সব মহলে গ্রহণযোগ্য হওয়ায় ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করেন সফল এই উদ্যোক্তা।

বর্ণাঢ্য জীবনের অবসান

বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী শিল্প উদ্যোক্তা সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী আর নেই। সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল বুধবার স্থানীয় সময় সকাল ৯টা ৩১ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় সকাল ৭টা ৩১ মিনিট) তিনি মারা যান (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর। বেশ কিছুদিন ধরে তিনি বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন। এক মাসের বেশি সময় ধরে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন।

সৈয়দ মঞ্জুর এলাহীর সন্তান অ্যাপেক্স ফুটওয়্যারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর প্রথম আলোকে জানান, সিঙ্গাপুর থেকে গতকাল রাতেই সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনসে বাবার মরদেহ নিয়ে ঢাকায় পৌঁছাবেন। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসে মরহুমের প্রথম জানাজা হবে। এরপর বাদ জোহর গুলশান আজাদ মসজিদে দ্বিতীয় জানাজা শেষে তাঁকে বনানী কবরস্থানে দাফন করা হবে।

বিশিষ্ট শিল্পপতি সৈয়দ মঞ্জুর এলাহীর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। এক বিবৃতিতে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী বাংলাদেশের উদ্যোক্তা জগতে এক অনন্য ব্যক্তিত্ব। তিনি একজন দেশপ্রেমিক ব্যবসায়ী ছিলেন। দেশের চামড়াশিল্পকে এগিয়ে নিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন তিনি।

আরও শোক প্রকাশ করে বিবৃতি দেন অর্থ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড.

সালেহউদ্দিন আহমেদ, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ঢাকা চেম্বারের সভাপতি তাসকিন আহমেদ, বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিআই) সভাপতি আনোয়ার–উল–আলম চৌধুরী প্রমুখ।

কলকাতার এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে ১৯৪২ সালে জন্ম নেন সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী। তাঁর বাবা স্যার সৈয়দ নাসিম আলী ১৯৪৬ সালে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি হয়েছিলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ব্রিটিশ সরকার তাঁকে নাইট উপাধি দেয়। বড় ভাই এস এ মাসুদ যুক্তরাজ্যের কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি নেন। পরে তিনিও কলকাতা হাইকোর্টের বিচারক ছিলেন। বাবার মতো তিনিও ১৯৭৭ সালে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। আর মেজ ভাই এস এ মওদুদ বিলেত থেকে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়াশোনা শেষ করে যোগ দেন সিভিল সার্ভিসে। আর সেজ ভাই এস এ মনসুর ছিলেন ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য।

পাঁচ বছর বয়সে বাবাকে হারান পরিবারের কনিষ্ঠ সন্তান সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী। কলকাতাতেই স্কুল ও কলেজের পাট শেষ করেন। ১৯৬২ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক ডিগ্রি নেন। তারপর স্নাতকোত্তর করতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৯৬৪ সালে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। থাকতেন সলিমুল্লাহ মুসলিম (এস এম) হলে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতি করতেন।

প্রথমে চাকরি, পরে ব্যবসা

ব্যবসায়ী সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী প্রথম জীবনে বহুজাতিক কোম্পানিতে চাকরি করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স পরীক্ষা দিয়েই বহুজাতিক কোম্পানি পাকিস্তান টোব্যাকোতে (বর্তমানে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো) চাকরি পান। করাচিতে শুরু করেন কর্মজীবন। ১৯৭০ সালে রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে বদলি হন ঢাকায়। মাঝে কয়েক মাসের জন্য কর্মস্থল ছিল বিলেত। উচ্চ পদে। মাইনেও বেশ। অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাও অনেক। তারপরও অভিজাত নিশ্চিত জীবন ছেড়ে বেছে নিলেন দুর্গন্ধময় হাজারীবাগ। দামি গাড়ি ছেড়ে উঠলেন রিকশায়। চামড়ার ভাঁজে খুঁজে নিলেন নতুন এক অধ্যায়।

১৯৭২ সালে মঞ্জুর ইন্ডাস্ট্রিজ নামে কোম্পানি করে কমিশনের ভিত্তিতে চামড়া বিক্রির ব্যবসায় নামেন সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী। চার বছর পর ১৯৭৬ সালে ১২ লাখ ২২ হাজার টাকায় রাষ্ট্রমালিকানাধীন ওরিয়েন্ট ট্যানারি কিনে নিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন অ্যাপেক্স ট্যানারি। ট্যানারিতে চামড়া প্রক্রিয়াজাত করে রপ্তানি করা শুরু করলেন সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী। জাপানি ক্রেতাপ্রতিষ্ঠান মিজুজে ছিল চামড়ার প্রথম ক্রেতা। ধীরে ধীরে ক্রেতা বাড়তে থাকল।

১৪ বছর এভাবেই ব্যবসা চলল। সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী ভাবলেন, যেহেতু চামড়ার সর্বশেষ গন্তব্য হচ্ছে জুতার কারখানা; তাহলে কেন জুতার কারখানা হবে না। যেই ভাবা সেই কাজ। গাজীপুরের সফিপুরে ৫০ বিঘা জমিতে জুতার কারখানা স্থাপনে হাত দিলেন। ১৯৯০ সালে যখন কারখানার মাটি কাটা শুরু হলো, তখন একমাত্র ছেলে সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর দেশে ফিরে প্রকল্পটির সঙ্গে যুক্ত হলেন। ১৯৯১ সালে প্রথম ধাপে ১৫০ জন শ্রমিক দিয়ে দৈনিক এক হাজার জোড়া জুতা উৎপাদনের সক্ষমতার এই শতভাগ রপ্তানিমুখী কারখানাটি চালু হয়।

প্রথমে জার্মানিতে জুতা রপ্তানি করে অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার। তবে অনভিজ্ঞতা, নিম্নমান ও সঠিক সময়ে সরবরাহ করতে না পারায় দ্বিতীয় মৌসুমে হোঁচট খেল প্রতিষ্ঠানটি। ক্রয়াদেশ কমতে থাকল। তখন অ্যাপেক্স ট্যানারির চামড়ার জাপানি ক্রেতা ওশান ট্রেডিং ও মিজুজের সূত্র ধরে দেশটির বৃহত্তম জুতা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান মারুটোমির মালিকের সঙ্গে সৈয়দ মঞ্জুর এলাহীর পরিচয় হয়। অনেক অনুরোধের পর প্রতিষ্ঠানটি চাকরিজীবী পুরুষদের একটি নির্দিষ্ট নকশার জুতা বানানোর ক্রয়াদেশ দিল। তবে প্রথম ক্রয়াদেশের ৯৭ শতাংশ জুতাই মান উতরে যেতে পারল না। সমস্যা সমাধানে যুক্তরাষ্ট্র থেকে গ্রিনসবার্গ নামের একজন পরামর্শককে আনা হলো। ধীরে ধীরে পরিস্থিতির উন্নতি হলো।

১৯৯৪ সালে জাপানে অর্থনৈতিক মন্দা শুরু হলে আবার বিপদে পড়ে অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার। তাদের ক্রেতাপ্রতিষ্ঠান দেউলিয়া হয়ে যায়। সমস্যা সমাধানে সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী ছেলেকে নিয়ে ইতালিতে গেলেন। অ্যাপেক্স ট্যানারির চামড়ার ক্রেতাপ্রতিষ্ঠান অ্যাডেলকির মালিক মি. অ্যাডেলকির সঙ্গে দেখা করলেন। ইতালিতে তাঁদের বিশাল জুতার কারখানাও ছিল। তবে তারা চীনের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পারছিল না। অ্যাডেলকিকে বুঝিয়ে বাংলাদেশে নিয়ে আসেন মঞ্জুর এলাহী। তারপর অ্যাডেলকি থেকে লোকজন এল। ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াল অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার।

পরবর্তী সময়ে তাইওয়ানের গ্রিনল্যান্ড ইন্টারন্যাশনালের সঙ্গে যৌথ বিনিয়োগে ব্লু ওশান ফুটওয়্যার নামে রপ্তানিমুখী আরেকটি জুতার কারখানার সঙ্গে যুক্ত হন সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী ও তাঁর ছেলে। সফিপুরের এই কারখানা থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারের নারীদের জুতা রপ্তানি হচ্ছে।

চামড়া খাতের ব্যবসার পাশাপাশি অন্য ব্যবসায় যুক্ত হয়েছেন সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী। তিনি মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান। এ ছাড়া অ্যাপেক্স ফার্মা, অ্যাপেক্স এন্টারপ্রাইজ, অ্যাপেক্স ইনভেস্টমেন্ট প্রতিষ্ঠা করেছে সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী। খ্যাতনামা বিজ্ঞাপনী সংস্থা গ্রে এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠান কোয়ান্টাম কনজ্যুমার সলিউশনের মালিকানায় অংশীদারত্ব রয়েছে তাঁর।

উদ্যোক্তার বাইরে অন্য জীবন

১৯৬৬ সালে সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী জয়পুরহাটের সংসদ সদস্য মফিজ চৌধুরীর মেয়ে নিলুফার মঞ্জুরকে বিয়ে করেন। স্বাধীনতার দুই বছর পর নিজেদের বাসায় ইংরেজি মাধ্যমের সানবিমস স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন নিলুফার মঞ্জুর। ১৫ জন শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু করা বিদ্যালয়টি একসময় দেশের শীর্ষস্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। করোনাকালে অর্থাৎ ২০২০ সালে মৃত্যুর আগপর্যন্ত স্কুলটির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন নিলুফার মঞ্জুর।

শুধু স্ত্রীর সঙ্গে স্কুল প্রতিষ্ঠা নয়, ১৯৯৬ সালে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠার সময় থেকেই ট্রাস্টি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী। এ ছাড়া মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে তিনি দেশে দারিদ্র্য ও বৈষম্য দূর করা এবং মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা চালিয়ে গেছেন।

সংগঠক হিসেবেও অনেক কাজ করছেন সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী। মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই) ঢাকার সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০০৪ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ছিলেন। তিনি আমৃত্যু বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সিপিডির ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য ও কোষাধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ ফ্রিডম ফাউন্ডেশনের (বিএফএফ) প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টিও ছিলেন সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী।

জীবন নিয়ে আফসোস ছিল না তাঁর

২০২১ সালের ৯ নভেম্বর এই প্রতিবেদককে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী বলেছিলেন, ‘জীবন নিয়ে আমার কোনো আফসোস নেই। একজন মানুষের কত আর প্রয়োজন। কোথাও না কোথাও তো দাঁড়ি টানতে হয়...।’

সৈয়দ মঞ্জুর এলাহীর শ্বেষনিশ্বাস ত্যাগের সময় তাঁর শয্যাপাশে দুই সন্তান মুনিজে মঞ্জুর ও সৈয়দ নাসিম মঞ্জুরসহ ছয় নাতি-নাতনি উপস্থিত ছিলেন। মৃত্যুর কয়েক মিনিট আগেও তিনি কথা বলেছেন দুই সন্তানের সঙ্গে। বলেছেন তাঁর ইচ্ছার কথা, জীবনের ভালো লাগার কথা। জীবনদর্শন, দেশ ও মানুষকে নিয়ে তাঁর ভাবনার কথা।

তাঁর একমাত্র ছেলে সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর প্রথম আলোকে বলেন, ‘মৃত্যুর আগে আমাদের (ভাইবোন) প্রতি আব্বুর উপদেশ ছিল, জীবনে যা কিছুই করো, সব সময় মনে রাখবে আগে দেশ, তারপর ধর্ম।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: অ য প ক স ফ টওয় য র র প রথম উপদ ষ ট ব যবস য় কর ছ ন কলক ত সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

বড় ভাইয়ের হাতুড়ির আঘাতে ছোট ভাইয়ের মৃত্যু

পাবনার ঈশ্বরদীতে বড় ভাই মনিরুল ইসলাম সরদারের হাতুড়ির আঘাতে ছোট ভাই জিপু সরদারের নিহতের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

বৃহস্পতিবার উপজেলার লক্ষীকুন্ডা ইউনিয়নের লক্ষীকুন্ডা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার একদিন পরও এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়নি।

নিহত জিপু সরদার (৩০) ও আহত মনিরুল ইসলাম সরদার (৩৮) ওই গ্রামের রিকাত আলী সরদারের দুই ছেলে।

ঈশ্বরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহিদুল ইসলাম শহিদ এ ঘটনা নিশ্চিত করেছেন।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, পারিবারিক বিভিন্ন বিরোধ, বাড়ির সীমানা ও জমিজমা নিয়ে প্রায়ই দুই ভাইয়ের মধ্যে ঝগড়া বিবাদ লাগতো। আগের ঝগড়ার জের ধরে বৃহস্পতিবার তাদের মধ্যে আবার ঝগড়া বাধে। ঝগড়া থেকে মারামারির এক পর্যায়ে বড় ভাই মনিরুলকে আঘাত করে জিপু, পরে জিপুর মাথায় হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করে মনিরুল। এতে দুজনই গুরুতর আহত হয়। মুমূর্ষু অবস্থায় দুই ভাইকে একই অ্যাম্বুলেন্সে করে রাজশাহীতে নেওয়ার পথে জিপু মারা যায়।

আহত বড় ভাই মনিরুলকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

নিহত ও আহত দুই ভাইয়ের বাবা রিকাত আলী সরদার বলেন, দুজনই আমার সন্তান। দুজনের মধ্যে আগে থেকেই বনিবনা ছিল না। কিন্তু এভাবে একজন আরেক জনকে হত্যা করবে তা আমি মেনে নিতে পারছি না। আমি কী করবো তাও ভেবে পাচ্ছি না। এদিকে আহত বড় ভাই মনিরুল ইসলাম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় থাকাকালে তার ছোট ভাইয়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে হাসপাতাল থেকে পালিয়ে গেছেন বলে পুলিশ জানিয়েছে।

ঈশ্বরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহিদুল ইসলাম শহিদ এ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে তাকে সেখানে পাওয়া যায়নি। ঘটনার পরপরই ঘটনাস্থলে গিয়ে নিহত জিপুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। পোস্টমর্টেম করার পর মরদেহ দাফন করার অনুমতি দেওয়া হয়।

এ ঘটনায় এখনো কেউ অভিযোগ দেয়নি বলে নিশ্চিত করে ওসি বলেন, লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পর পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।  

সম্পর্কিত নিবন্ধ