বাংলাদেশিদের জন্য ওমরাহ্ ভিসা কমিয়ে দিয়েছে সৌদি আরব। চলতি মাস থেকে ভিসাপ্রত্যাশীদের জন্য কোটা পদ্ধতি চালু করেছে দেশটি। শতকরা ১০ ভাগ বাংলাদেশিকে বর্তমানে ওমরাহ্ ভিসা দিচ্ছে ঢাকার সৌদি আরব দূতাবাস।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) নির্বাহী কমিটির সাবেক সদস্য ও আল নাফি ট্রাভেলসের মালিক মো.
এদিকে আগামী বছর হজে যেতে ইচ্ছুকদের জন্য নতুন নির্দেশনা দিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। এতে ১৫ বছরের কম বয়সীরা হজে যেতে পারবে না বলে উল্লেখ করা হয়েছে। সৌদি সরকারের হজ ও ধর্ম মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুসারে এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়।
বুধবার মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মামুন আল ফারুকের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সৌদি আরবের হজ ও ওমরাহ্ মন্ত্রণালয় শিশুদের সুস্থতা ও নিরাপত্তার বিষয় বিবেচনা করে ২০২৫ সালে হজ পালনে আগ্রহীদের সর্বনিম্ন বয়সসীমা ১৫ বছর নির্ধারণ করেছে। সরকারি ও বেসরকারি উভয় মাধ্যমে নিবন্ধিত যাত্রী, এজেন্সি, ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্টদের এ নির্দেশনা মানতে হবে।
উপসচিব মামুন আল ফারুক সমকালকে বলেন, সৌদি সরকারের নির্দেশনা আমাদের মানতে হয়।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ওমর হ স দ আরব ওমর হ সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
মহার্ঘ ভাতা বিতর্ক: বৈষম্যের শিকড় কোথায়?
সাম্প্রতিক সময়ে সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে অর্থনীতিবিদ, রাজনীতিবিদ ও নীতিনির্ধারকদের মধ্যে প্রবল বিতর্ক দেখা গেছে। এই বিতর্কে যারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তাদের অনেকের বক্তব্য বাস্তবতাবিবর্জিত ও সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন। তারা যে যুক্তি উপস্থাপন করেছেন, তা আর্থসামাজিক বাস্তবতার সঙ্গে কতটা সামঞ্জস্যপূর্ণ– এটি বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন।
বিশ্বব্যাংকের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেনের বক্তব্য অনুযায়ী, যেহেতু উপসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা গাড়ির লোন পান, মাসিক ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত মেইনটেন্যান্স ভাতা ভোগ করেন এবং তুলনামূলক ভালো বেতন পান, তাই মহার্ঘ ভাতা প্রয়োজন নেই। তাঁর বক্তব্যের এই অংশ যথার্থ হতে পারে, কিন্তু তিনি পুরো সরকারি চাকরিজীবী শ্রেণিকে এক কাতারে ফেলে দিয়েছেন।
বর্তমানে বাংলাদেশে ৪৩০টি সুপারনিউমারারি পদসহ উপসচিবের অনুমোদিত পদ ১ হাজার ৪২৮টি, কর্মরত প্রায় ১ হাজার ৭০২ জন। উপসচিব ও তদূর্ধ্ব কর্মকর্তার সংখ্যা ৩ হাজারও নয়। অথচ সরকারি চাকরিজীবীর সংখ্যা ১৫.৫ লাখের ওপরে। তাদের মধ্যে ৯০ শতাংশের বেতন ১৩ থেকে ২৫ হাজার টাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ। এই শ্রেণির জন্য ৪-৫ হাজার টাকার অতিরিক্ত ভাতা নিছক ‘সুবিধা’ নয়, বরং ন্যূনতম প্রয়োজন মেটানোর মাধ্যম। তাহলে প্রশ্ন ওঠে, কয়েক হাজার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার অপ্রয়োজনীয়তার অজুহাতে কীভাবে ১৫ লাখ মানুষের প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করা যায়?
থমাস পিকেটির বৈষম্য তত্ত্ব অনুসারে, যখন একটি রাষ্ট্রের আয় ও সম্পদের বণ্টন অসম হয়, তখন সাধারণ জনগণের অর্থনৈতিক উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয়। বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনৈতিক কাঠামোতে দেখা যাচ্ছে, নীতিনির্ধারকদের নীতি উচ্চবিত্ত শ্রেণির স্বার্থ রক্ষার জন্য তৈরি হচ্ছে, নিম্ন ও মধ্যম আয়ের জনগণের জন্য নয়।
একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশে শিক্ষকদের বেতন সর্বনিম্ন। অথচ রাষ্ট্র তাদের কাছ থেকে ফিনল্যান্ডের মানের শিক্ষা চায়! বাংলাদেশে একজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ১৭ হাজার টাকা বেতন পান, অন্যদিকে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে একজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ৪০ হাজার রুপি পান, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৫৬ হাজার ৩২৮ টাকা। জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা প্রদত্ত মানদণ্ড অনুযায়ী, একটি দেশের জিডিপির সর্বনিম্ন ৪ শতাংশ এবং আদর্শগতভাবে ৬ শতাংশ এবং বাজেটের ১৫-২০ শতাংশ শিক্ষায় ব্যয় করা উচিত। সেখানে বাংলাদেশে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে শিক্ষায় জিডিপির ১.৭৬ শতাংশ ব্যয় করা হয়। অন্যদিকে ফিনল্যান্ডে জিডিপির ৭ শতাংশ বরাদ্দ দেওয়া হয়, যা বিশ্বের সর্বোচ্চ।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন মনে করেন, মহার্ঘ ভাতা সরকারের বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাইরের খরচ বাড়াবে এবং মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখবে। কিন্তু এখানে একটি মৌলিক সমস্যা রয়েছে– যখন মূল্যস্ফীতি বাড়ে এবং সরকার নতুন বেতন কাঠামো দিতে ব্যর্থ হয়, তখন মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হয় মূল্যস্ফীতির ভারসাম্য রক্ষার জন্যই।
গবেষণা প্রতিবেদন অনুসারে, গত ১০ বছরে মূল্যস্ফীতি ৩০০-৪০০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। অথচ সরকার ২০১৫ সালের পর নতুন কোনো পে-স্কেল দেয়নি। নিয়ম অনুযায়ী, ২০২০ সালে একটি নতুন পে-স্কেল এবং ২০২৫ সালে আরেকটি পে-স্কেল দেওয়া উচিত ছিল। কিন্তু বাস্তবে দুটি পে-স্কেলের পরিবর্তে একটি মহার্ঘ ভাতা দিয়েই সমস্যার সমাধান করতে চাওয়া হচ্ছিল। আবার সেই মহার্ঘ ভাতা নিয়েও নাটকের অন্ত নেই।
এই পরিস্থিতি শ্রেণিভিত্তিক বৈষম্যের আরেকটি বহিঃপ্রকাশ। কার্ল মার্ক্স শ্রেণিভিত্তিক শোষণের যে ধারণা দিয়েছেন, তা এখানেও প্রাসঙ্গিক। কার্ল মার্ক্সের তত্ত্ব অনুসারে, সমাজ দুই শ্রেণিতে বিভক্ত– বুর্জোয়া (শাসক শ্রেণি) এবং প্রলেতারিয়েত (শ্রমজীবী শ্রেণি)। বাংলাদেশেও একই অবস্থা। উচ্চপদস্থ আমলা ও নীতিনির্ধারকরা যখন নিজেদের স্বার্থের কথা বলেন, তখন সাধারণ কর্মচারীদের শোষিত হতে হয়।
মহার্ঘ ভাতা বিতর্ক শুধু অর্থনৈতিক নয়, এটি একটি নীতিগত ও নৈতিক প্রশ্ন। উচ্চপদস্থ কয়েক হাজার কর্মকর্তার সুবিধার অজুহাতে লক্ষাধিক সাধারণ চাকরিজীবীর অধিকার কেড়ে নেওয়া কোনোভাবেই ন্যায্য হতে পারে না। রাষ্ট্র যদি সত্যিই জনগণের জন্য কাজ করতে চায়, তবে বৈষম্য দূর করার জন্য কার্যকর নীতি গ্রহণ করা উচিত।
মাহমুদুর রহমান সাঈদী: শিক্ষক, লোকপ্রশাসন বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
mahmud.saadi@cu.ac.bd