যশোর জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক অধ্যাপক নার্গিস বেগম দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান মনোনীত হয়েছেন। বুধবার রাতে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। 

নার্গিস বেগম বিএনপির স্থায়ী কমিটির প্রয়াত সদস্য তরিকুল ইসলামের পত্নী ও বিএনপির খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিতের মা। 

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, যশোর জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান পদে মনোনীত করা হয়েছে। ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি দলকে সুসংবদ্ধ ও শক্তিশালী করতে সক্ষম হবে বলে দল আশা রাখে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালের ২০ মে যশোর জেলা বিএনপির মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি ভেঙে ৫৩ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। আহ্বায়ক হন অধ্যাপক নার্গিস বেগম। দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে দলের দুর্দিনে দলকে আন্দোলন সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। সর্বশেষ গত ২২ ফেব্রুয়ারি যশোর জেলা বিএনপির সম্মেলনে সভাপতি প্রার্থী হওয়ার গুঞ্জন থাকলেও একেবারে শেষের দিকে জানিয়ে দেন তিনি প্রার্থী হচ্ছেন না। ফলে নেতাকর্মীরা ভেবে নেন বয়সজনিত কারণে রাজনীতি থেকে বিদায় নিচ্ছেন জেলার বর্ষিয়ান এই রাজনীতিবিদ। 

তবে নতুন চমক দেখিয়ে ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ায় উচ্ছ্বসিত নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, কঠিন সময়ে দলকে ধরে রাখার পুরস্কার হিসেবে দলের ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন অধ্যাপক নার্গিস বেগম।

রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান অধ্যাপক নার্গিস বেগম স্কুলজীবন থেকেই রাজনীতির সহচর্যে ছিলেন। ‘৬০-এর দশকে আইয়ুববিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যোগদানের মধ্য দিয়ে রাজনীতিতে তার আনুষ্ঠানিক প্রবেশ। বিএনপির জন্মলগ্ন থেকে সম্পৃক্ত হন দলটির সঙ্গে। শিক্ষকতাজীবনে আনুষ্ঠানিকভাবে দলের পদপদবী গ্রহণ না করলেও সক্রিয় ছিলেন বিএনপির নেতৃত্বে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: যশ র ব এনপ ব এনপ র স র জন ত

এছাড়াও পড়ুন:

শিক্ষক সংকটে সুদৃষ্টি কাম্য

দেশের মেডিকেল কলেজসমূহে শিক্ষক সংকট অনাকাঙ্ক্ষিত হইলেও অপ্রত্যাশিত নহে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমের (এমআইএস) তথ্য উদ্ধৃত করিয়া মঙ্গলবারের সমকাল জানাইয়াছে, সমগ্র দেশে সরকারি মেডিকেল কলেজ রহিয়াছে ৩৭টি, যেগুলিতে শিক্ষকের পদসংখ্যা ৬ সহস্র ৪৪৬টি।

অথচ বর্তমানে ৩ সহস্র ৭০০ শিক্ষক দিয়া চলিতেছে মেডিকেল শিক্ষা কার্যক্রম। অর্থাৎ সরকারি মেডিকেল কলেজসমূহে প্রায় ৪৩ শতাংশ শিক্ষকের পদ শূন্য। বিষয়টি অনাকাঙ্ক্ষিত। কারণ চাহিদার প্রায় অর্ধেক সংখ্যক শিক্ষকশূন্যতার কারণে একদিকে মেডিকেল শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হইতেছে, অন্যদিকে দেশীয় এমবিবিএস ডিগ্রির বহির্বিশ্বে গ্রহণযোগ্যতা হারাইবার শঙ্কা দেখা দিয়াছে। বিগত সরকার মেডিকেল শিক্ষার প্রসারের নামে জেলায় জেলায় অপরিকল্পিতভাবে মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার কারণে এই সংকট প্রত্যাশিতই ছিল।

মুখ্যত দলীয় নেতাদের অযৌক্তিক আব্দার পূরণকল্পে প্রতিষ্ঠিত এই সকল মেডিকেল কলেজে উপযুক্ত শিক্ষক নিয়োগের বিষয় বিবেচনায় লওয়া হয় নাই। এমনকি অনেক মেডিকেল কলেজে হাসপাতালও নাই; দক্ষ চিকিৎসক সৃষ্টির জন্য যাহা অপরিহার্য। এদিকে শিক্ষকদের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে থাকেন অধ্যাপক। মেডিকেল কলেজসমূহে এই অধ্যাপক সংকট সর্বাপেক্ষা অধিক হইলেও, অভিযোগ, নূতন করিয়া অধ্যাপক নিয়োগ দেওয়া যাইতেছে না। কারণ সহকারী বা সহযোগী অধ্যাপক পদোন্নতি পাইতেছেন না। মন্ত্রণালয়ের আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় দুই মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে বিভাগীয় পদোন্নতি কমিটির কার্যক্রম দীর্ঘদিন ধরিয়া আটক থাকিবার কারণে সংকট বৃদ্ধি পাইয়াছে। যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও এই সকল শিক্ষকের বঞ্চনা গ্রহণযোগ্য নহে। সমকালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, যোগ্য সাড়ে ৭ সহস্র শিক্ষকের পদোন্নতির ত্বরিত ব্যবস্থা গ্রহণ করা অতীব জরুরি।

আমরা মনে করি, শিক্ষক সংকট নিরসনে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উচিত সংশ্লিষ্ট মেডিকেল কলেজসমূহে সুপারনিউমারারি পদে অতিদ্রুত শিক্ষক নিয়োগ এবং নূতন শিক্ষক পদ সৃজন করা। ইহা করিতে গেলেও সরকারের দুই-তিন বৎসর সময় লাগিবে বটে, কিন্তু বিদ্যমান পরিস্থিতির কারণে ইহা জরুরি।

প্রধান উপদেষ্টার স্বাস্থ্যবিষয়ক বিশেষ সহকারী স্বীকার করিয়াছেন, মৌলিক আটটি বিষয়ে শিক্ষক সংকট সর্বাধিক। গাইনি, কার্ডিওলজির ন্যায় ক্লিনিক্যাল সাবজেক্টে শিক্ষক সংকট না থাকিলেও মৌলিক বিষয়ে অনুশীলনের সুযোগ কম থাকায় এই সকল বিষয়ে শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষা গ্রহণের হার কম। আমরা বিশ্বাস করি, সরকার উদ্যোগ গ্রহণ করিলে সকল বিষয়ে শিক্ষক সৃজন অসম্ভব নহে। এই ক্ষেত্রে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা লইতে হইবে, নচেৎ মেডিকেল শিক্ষার মান লইয়া প্রশ্ন উঠিবে।

আমরা জানি, দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা এমনিতেই চতুর্মুখী সমস্যায় জর্জরিত। জনসংখ্যার তুলনায় চিকিৎসক সংখ্যা যে অপ্রতুল, উহাও উল্লেখযোগ্য। এই চিকিৎসকদের মধ্যেই যদি মানের ঘাটতি থাকে, উহা অপেক্ষা দুঃখজনক বিষয় আর কী হইতে পারে?

একটা সময় ছিল যখন বিদেশে বিশেষত মধ্যপ্রাচ্যে আমাদের চিকিৎসকদের বেশ চাহিদা ছিল। বিদ্যমান পরিস্থিতি সেই চাহিদার উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলিতে পারে। দেশে নূতন মেডিকেল কলেজ দরকার বটে। কিন্তু উহা প্রতিষ্ঠা করিবার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ এবং শিক্ষক অবশ্যই নিয়োগ দিতে হইবে।

সমকালের প্রতিবেদনেই স্পষ্ট, অবকাঠামো ও শিক্ষক সংকট লইয়া নূতন করিয়া গঠিত ছয়টি মেডিকেল কলেজের অবস্থা এতটাই নাজুক, সেইগুলি বন্ধের উদ্যোগ লইয়াছিল সরকার। তবে জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় প্রশাসনের বাধায় সেই সিদ্ধান্ত হইতে সরিয়া আসিয়াছে স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিদপ্তর।

আমরা চাহিব, সর্বশেষ গঠিত ছয়টি মেডিকেল কলেজ ও অধিক সংকটে থাকা পুরাতন আট মেডিকেল কলেজের মানোন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হউক। সার্বিকভাবে মেডিকেল শিক্ষার মানোন্নয়ন সরকারের অগ্রাধিকারে থাকিলে শিক্ষক ও অবকাঠামোগত সংকট কাটিয়া উঠা কঠিন হইবে না। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ