নাগরিকদের উপাত্তের সংরক্ষণ ও সুরক্ষা দেওয়া ইসির কাজ নয়: ফয়েজ আহমদ
Published: 12th, March 2025 GMT
ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেছেন, নির্বাচন কমিশনে (ইসি) নাগরিকের যে উপাত্ত আছে, তা মানসম্মত নয়। এমনকি নাগরিকদের উপাত্ত সংরক্ষণ ও সুরক্ষা দেওয়া ইসির কাজ নয়। তবে ইসি এত দিন যে দায়িত্ব পালন করেছে, তাতে তারা প্রশংসার দাবিদার। উপাত্ত কর্তৃপক্ষের অধীনে উপাত্ত সংরক্ষণ হলেও ইসির দায়িত্ব কমবে না।
আজ বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের আইসিটি ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে ফয়েজ আহমদ এ কথা বলেন। তিনি বলেন, বিশ্বের কোথাও ইসি দেশের নাগরিকদের উপাত্ত সংরক্ষণ করে না। তবে বাংলাদেশে এক ঐতিহাসিক পরিস্থিতিতে ইসি যে দায়িত্ব নিয়েছিল, তাতে তারা প্রশংসা প্রাপ্য। তিনি বলেন, উপাত্তের সংখ্যা না বাড়িয়ে মানের দিক থেকে কাজ করতে হবে। পাশাপাশি সমন্বয় বাড়াতে হবে।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী বলেন, বর্তমান ইসি কি এআই (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) থেকে উপাত্তকে সুরক্ষা দেওয়ার মতো যোগ্য? বা তার এই দায়িত্ব হওয়া উচিত? তাদের দায়িত্ব হচ্ছে, ভোটাধিকার সুরক্ষা ও বাস্তবায়ন করা। নাগরিকদের উপাত্ত সংরক্ষণ ও সুরক্ষা দেওয়া ইসির কাজ নয়। উপাত্ত কর্তৃপক্ষ হলে ইসির ক্ষমতা কমবে না, বাড়বে। তারা মানসম্মত ডেটা পাবে। তাদের গুরুত্বও বাড়বে।
বাংলাদেশে এত দিনেও ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষা আইন হয়নি উল্লেখ করে ফয়েজ আহমদ বলেন, সাবেক সরকারের সময়ে আইনের খসড়ায় উপাত্ত কর্তৃপক্ষ আইসিটি মন্ত্রণালয়ের অধীনে রাখা হয়েছিল। কিন্তু সরকারের ৫৮টি মন্ত্রণালয়ের কাজ একটি মন্ত্রণালয়ের অধীনে রেখে দিলে তা একটা ব্লকের মধ্যে পড়ে যায়। তার জাতীয় চরিত্র থাকে না। বাস্তবায়ন কর্তৃপক্ষ ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। কিন্তু সংরক্ষণ, কার সঙ্গে কীভাবে শেয়ার করবে, তার যে নীতি থাকা দরকার ছিল, তা হয়নি। পাশাপাশি সমাজের অংশীদারদের মধ্যে যে বোঝাপড়া দরকার, তা তৈরি হয়নি।
বর্তমান সরকার একটি ডিজিটাল রূপান্তরের পথরেখা তৈরি করবে উল্লেখ করে ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, তাতে বিদ্যমান সিস্টেমগুলোর মধ্যে ইন্টারকানেক্ট (ব্যবস্থাগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক তৈরি) করা হবে। এরপর উপাত্ত সুরক্ষা আইনের অধীনে একটি উপাত্ত কর্তৃপক্ষ তৈরি করা হবে, যারা নিয়ন্ত্রক সংস্থা হবে। তাদের বিধি মেনে সবাই কাজ করবে। এখানে জাতীয় স্বার্থ দেখতে হবে। উপাত্ত কর্তৃপক্ষ হলে একটি শৃঙ্খলা তৈরি হবে।
এ কাজের জন্য বিভিন্ন দেশের উদাহরণগুলো দেখা হচ্ছে উল্লেখ করে ফয়েজ আহমদ বলেন, যে মন্ত্রণালয় নাগরিককে সেবা দেয়, তার অধীনে ডেটাবেজ (তথ্যভান্ডার) থাকবে। তিনি বলেন, ‘আজকে নির্বাচন কমিশনের অধীনে ৩৫ ধরনের ডেটা আছে, ভোটের জন্য কি এটার দরকার আছে? তবে বলছি না, তাদের আইটি সেল বন্ধ করে দেব। তাদের কারিগরি সক্ষমতা নিয়ে নেব। ডেটা অথরিটির মাধ্যমে এটা নিয়ন্ত্রিত হবে। যার কাছে যেটা আছে, সেটা তো তার কাছেই থাকবে। যখন রূপান্তরের দরকার হবে, তখন কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষের অধীনে আসবে।’
ফয়েজ আহমদ বলেন, ইসি ছাড়াও জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন কর্তৃপক্ষের কাছে নাগরিকের ডেটাবেজ আছে। কিন্তু এগুলো বছর পার হলেও এদের মধ্যে কোনো ইন্টার-অপারেবিলিটি (আন্তক্রিয়াশীলতা) নেই। মানুষের তথ্য এখন ডার্কওয়েবে পাওয়া যাচ্ছে। বর্তমান সরকার নাগরিকের উপাত্তের নিরাপত্তা ও মানসম্মত করার দিকে নজর দিচ্ছে।
এক প্রশ্নের জবাবে ফয়েজ আহমদ বলেন, কেউ জন্ম নিলে তার নিবন্ধন হবে সিটি করপোরেশনে। এর বাইরে আর কোনো উপাত্ত সংগ্রহের পদ্ধতি থাকবে না। এরপর ডেটা হালনাগাদ হবে। তিনি আরও বলেন, উপাত্ত নিয়ে যে জঞ্জাল হয়েছে, তা যক্ষের ধনের মতো আঁকড়ে না ধরে সমস্যা স্বীকার করে তা সমাধানে নিজ নিজ অবস্থান থেকে এগিয়ে আসতে হবে।
উল্লেখ্য, জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সেবা ইসির কাছে রাখার দাবিতে আগামীকাল বৃহস্পতিবার সারা দেশে দুই ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছেন ইসি সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ইসি সচিবালয়, জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ, নির্বাচনী প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট ও সারা দেশে ইসির মাঠপর্যায়ের কার্যালয়ে বেলা ১১টা থেকে এ অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হবে।
এখন অন্তর্বর্তী সরকার জন্মনিবন্ধন, এনআইডি ও পাসপোর্ট সেবা নিয়ে স্বতন্ত্র একটি কমিশন করার উদ্যোগ নিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে এনআইডি সেবা নিজেদের হাতে রাখতে কর্মসূচি পালন করছেন ইসির কর্মকর্তারা।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: দ র উপ ত ত উল ল খ সরক র দরক র
এছাড়াও পড়ুন:
সাবেক অর্থমন্ত্রী কামালসহ ৩২ জনের বিরুদ্ধে মামলা
প্রতারণার মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় মানব পাচার করে ১ হাজার ১২৮ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালসহ ৩২ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মঙ্গলবার দুদকের অনুসন্ধান কর্মকর্তা বাদী হয়ে কমিশনের ঢাকা-১ কার্যালয়ে মামলা করেন। আসামিদের মধ্যে ১২ রিক্রুটিং এজেন্সির মালিকরা রয়েছেন।
দুদক মহাপরিচালক ও মুখপাত্র মো. আক্তার হোসেন সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। আসামি তালিকায় মুস্তফা কামালের পরিবারের সদস্যরাও আছেন। আসামিদের মধ্যে আছেন– সাবেক এমপি নিজাম উদ্দিন হাজারী, ওয়ান-ইলেভেনের সময় আলোচিত সামরিক কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী, সাবেক এমপি বেনজীর আহমদ প্রমুখ।
এজাহারে বলা হয়, ১২ রিক্রুটিং এজেন্সির ৩২ মালিক-কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ সরকার নির্ধারিত ৭৮ হাজার ৯৯০ টাকার স্থলে অতিরিক্ত পাঁচ গুণ অর্থ নেওয়া হয়েছে। ৬৭ হাজার ৩৮০ জন প্রবাসীর কাছ থেকে ওই পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করা হয়। এতে বলা হয়, ১২টি রিক্রুটিং এজেন্সির মধ্যে মেসার্স অরবিটাল এন্টারপ্রাইজের মাধ্যমে ৬ হাজার ২৯ প্রবাসীর কাছ থেকে অতিরিক্ত ১০০ কোটি ৯৮ লাখ টাকা আত্মসাৎ করা হয়। প্রতিষ্ঠানটির মালিক মুস্তফা কামালের স্ত্রী কাশমিরি কামাল। তাঁকে এ মামলায় আসামি করা হয়েছে।
মেসার্স অরবিটাল ইন্টারন্যাশনালের মাধ্যমে ২ হাজার ৯৯৫ জনের কাছ থেকে অতিরিক্ত ৫০ কোটি ১৬ লাখ টাকা নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির আরেক মালিক মুস্তফা কামালের মেয়ে নাফিসা কামাল। তাঁকেও মামলায় আসামি করা হয়েছে। স্নিগ্ধা ওভারসিজ লিমিটেডের মাধ্যমে ৬ হাজার ৬৫৭ জন প্রবাসীর কাছ থেকে অতিরিক্ত ১১১ কোটি ৫০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির মালিক সাবেক সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী, তাঁর স্ত্রী নুরজাহান বেগমও আসামি।
বিনিময় ইন্টারন্যাশনালের মাধ্যমে ৫ হাজার ৪৫৮ জনের কাছ থেকে অতিরিক্ত ৯১ কোটি ৪২ লাখ টাকা আত্মসাৎ করা হয়। প্রতিষ্ঠানটির মালিক কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুস সোবহান ভূঁইয়া ও তাঁর স্ত্রী তাসলিমা আক্তার। তাদের আসামি করা হয়। ফাইভএম ইন্টারন্যাশনালের মাধ্যমে ৭ হাজার ১২৪ জন প্রবাসী থেকে অতিরিক্ত ১১৯ কোটি ৩২ লাখ টাকা নেওয়া হয়। প্রতিষ্ঠানটির মালিক লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী, নূর মোহাম্মদ আবদুল মুকিত, মেহবুবা আফতাব সাথী এবং মাসুদ উদ্দিনের মেয়ে তাসনিয়া মাসুদ আসামি। মেসার্স ইউনিক ইস্টার্ন প্রাইভেট লিমিটেডের মাধ্যমে ৩ হাজার ৭৮৮ জন থেকে ৬৩ কোটি ৪৪ লাখ টাকা গ্রহণের অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটির মালিক মোহা. নুর আলী, তাঁর স্ত্রী সেলিনা আলী, মেয়ে নাবিলা আলী, নাছির উদ্দিন আহমেদ এবং সাবেক সচিব খোন্দকার শওকত হোসেনকে আসামি করা হয়েছে।
ক্যাথারসিস ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের মাধ্যমে ৭ হাজার ৭৮৭ জনের কাছ থেকে অতিরিক্ত ১৩০ কোটি ৪৩ লাখ টাকা আত্মসাৎ করা হয়। প্রতিষ্ঠানটির মালিক মোহাম্মদ রুহুল আমিন ও তাঁর স্ত্রী লুৎফুর নেছা শেলীকে আসামি করা হয়েছে। মেসার্স আহমদ ইন্টারন্যাশনালের মাধ্যমে ৮ হাজার ৫৯২ প্রবাসীর কাছ থেকে ১৪৩ কোটি ৯১ লাখ টাকা আত্মসাৎ করা হয়। প্রতিষ্ঠানটির মালিক ঢাকা-২০ আসনের সাবেক এমপি বেনজীর আহমদকে আসামি করা হয়। বি এম ট্রাভেলস লিমিটেডের মাধ্যমে ৮ হাজার ৯৩ জন প্রবাসীর কাছ থেকে অতিরিক্ত ১৩৫ কোটি ৫৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ করা হয়। প্রতিষ্ঠানটির মালিক ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর মো. শফিকুল ইসলাম এবং তাঁর স্ত্রী মৌসুমি আক্তার আসামি।
বিএনএস ওভারসিজ লিমিটেডের মাধ্যমে ৪ হাজার ২১৫ প্রবাসীর কাছ থেকে অতিরিক্ত ৭০ কোটি ৬০ লাখ টাকা নেওয়া হয়। প্রতিষ্ঠানটির মালিক যুবলীগ নেতা ইশতিয়াক আহমেদ সৈকত ও তাঁর স্ত্রী নসরুন নেছাকে আসামি করা হয়েছে। রুবেল বাংলাদেশ লিমিটেডের মাধ্যমে ২ হাজার ৮৪৫ জনের কাছ থেকে অতিরিক্ত ৪৭ কোটি ৬৫ লাখ টাকা নেওয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির মালিক মুহাম্মদ মজিবুল হক রুবেল ও তাঁর স্ত্রী কামরুন নাহার হীরামনি আসামি। দ্য ইফতী ওভারসিজের মাধ্যমে ৩ হাজার ৭৯৭ প্রবাসীর কাছ থেকে অতিরিক্ত ৬৩ কোটি ৫৯ লাখ টাকা আত্মসাৎ করা হয়। মালিক মো. রুবেল ও বোরহান উদ্দিন পান্নাকে আসামি করা হয়েছে।