চেন্নাই সুপার কিংস

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

পুতিন ও ট্রাম্পের নতুন ইউরোপ

মস্কোর বিশাল সামরিক সমাবেশ স্পষ্টত কেবল ইউক্রেনকে লক্ষ্য করে নয়। পুতিন যদি অর্থপূর্ণ নিরাপত্তার নিশ্চয়তাসহ যুদ্ধবিরতিতে রাজি না হন, তবে যুদ্ধ শেষ হবে না। সে রকম কিছু হলে ইউক্রেনের বাইরেও রাশিয়ার আগ্রাসন বিস্তারের আশঙ্কা রয়েছে।

বাস্তবতা হলো, ইউরোপ এখনও অভূতপূর্ব হুমকির মুখোমুখি এবং জেদ্দার আলোচনায় ইউক্রেনের ব্যাপারে অগ্রগতির লক্ষণ থাকা সত্ত্বেও আমরা একাই এর মুখোমুখি। আরও খারাপ হলো, যখন আমাদের এ পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হচ্ছে, তখন যুক্তরাষ্ট্র আমাদের বিরুদ্ধে কাজ করছে। মনে হচ্ছে, পুতিন ও ট্রাম্প পরস্পর একটি পরিকল্পনা ভাগাভাগি করে নিচ্ছেন। যেমন ইউক্রেনে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন দালাল ভিচি সরকারের মতো কোনো শাসক বসানো এবং ইউরোপ মহাদেশকে একাধিক প্রভাব বলয়ে বিভক্ত করা, যা রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, সম্ভবত চীনকেও এ অঞ্চলে উপনিবেশ স্থাপনে সহায়তা করতে পারে। বেশির ভাগ ইউরোপীয় জনসাধারণ এটি বুঝতে পারছে। ইউরোপীয় নেতাদের গুরুত্বপূর্ণ অংশটিও এটি বুঝতে পারে। তারা পদক্ষেপ নিতেও শুরু করেছে।

তারা এক ইউরোপের ভিত্তি তৈরি করছেন, যা আমাদের কয়েক দশক ধরে চেনা ইউরোপের চেয়ে ভিন্ন। এই ইউরোপ শান্তির সময়ে গড়ে উঠেছিল। প্রধানত ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক এবং আর্থিক আন্তঃনির্ভরতার মাধ্যমে সেই ইউরোপ অভ্যন্তরীণভাবে শান্তি প্রতিষ্ঠা করেছিল। ন্যাটোর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র মূলত বহির্বিশ্ব থেকে তার নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিয়েছিল। ইউরোপীয় দেশগুলো প্রতিরক্ষা জোটের মাধ্যমে অনুগত ট্রান্সআটলান্টিক মিত্র হিসেবে কাজ করেছিল। তারা ওয়াশিংটনকে চুক্তি থেকে উল্লেখযোগ্য লাভ পাওয়ার সুযোগ করে দেয়, যা শুরু হয়েছিল মার্কিন প্রতিরক্ষা শিল্প থেকে। ইউরোপীয়রা ওয়াশিংটনের বোকামিকেও আনুগত্যের সঙ্গে অনুসরণ করেছিল। যেমন ২০০৩ সালে সাদ্দাম হোসেনকে উৎখাত করার জন্য ইরাক আক্রমণ।

তবে একটি নতুন ইউরোপের জন্ম হতে চলেছে। আর এটি কী, তা বলার চেয়ে এটি কী নয়, তা বলা সহজ। এটি ইইউ নয় অথবা আমরা দীর্ঘদিন ধরে যেটিকে অনায়াসে জন্ম নেওয়া বলে ধরে নিয়েছিলাম, তাও নয়। ইইউতে এখন হাঙ্গেরির ভিক্টর অরবান ও স্লোভাকিয়ার প্রধানমন্ত্রী পপুলিস্ট জাতীয়তাবাদী রবার্ট ফিকোর মতো ব্যক্তি রয়েছেন, যারা ট্রোজান হর্স বা তাদের ভেতরে গিয়ে হামলা চালাতে পারে। তারা স্পষ্টতই পুতিনের রাশিয়া এবং ট্রাম্পের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে কাজ করছেন।

এ কারণেই আমরা ইমানুয়েল মাখোঁ, কিয়ার স্টারমারসহ ইউরোপীয় নেতাদের জোরালো কণ্ঠস্বর শুনছি। সংকট মুহূর্তে তাদের নিজ নিজ রাজধানীতে জরুরি শীর্ষ সম্মেলন আহ্বান করতে দেখেছি, যেখানে আমন্ত্রিত তালিকা সাবধানে তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসনের সদস্যরাসহ ইউরোপবিরোধীরা আশা করছেন, এর মাধ্যমে একটি অকার্যকর ইইউকে কোণঠাসা করে অপ্রাসঙ্গিক করে তোলা হয়েছে। 

যে ইউরোপের জন্ম হচ্ছে, তাও ইইউ থেকে সম্পূর্ণ আলাদা নয়। ব্রাসেলসের প্রতিষ্ঠানগুলো বিশেষ করে ইউরোপীয় কমিশন, ব্লকের নির্বাহী সংস্থা নতুন ইউরোপ নির্মাণে গভীরভাবে জড়িত। গত সপ্তাহে ইউরো অঞ্চলের রাজস্ব নিয়মের যুগান্তকারী শিথিলকরণ ‘ইউরোপকে পুনর্নির্মাণ’ করার পথে হাঁটছে। সে জন্য ব্যাপক ব্যয় বৃদ্ধি, ইউরোপের প্রতিরক্ষা সমর্থন করতে নতুন আর্থিক উপকরণ কাঠামো গড়ে তোলা, এককভাবে ইইউ বাজার নিশ্চিত করা এবং মহাদেশটির সম্মুখে কৌশলগত অগ্রাধিকার ইত্যাদি। এসব কিছু এটাই নিশ্চিত করবে–  ব্রাসেলসের প্রতিষ্ঠানগুলো চালকের আসনে রয়েছে। 

নতুন ইউরোপ ন্যাটোও নয়। ইউরোপীয়রা ন্যাটো থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়নি, বরং যুক্তরাষ্ট্র তা করেছে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ১ লাখের বেশি সেনা মোতায়েন রয়েছে ইউরোপে, যার মধ্যে ১০ হাজার শুধু পোল্যান্ডেই এবং মহাদেশজুড়ে ৪০টি সামরিক ঘাঁটি রয়েছে। আমরা সম্ভবত পূর্ব ইউরোপ এবং এর বাইরেও মার্কিন বাহিনীর আংশিক অথবা সম্পূর্ণ প্রত্যাহার দেখতে পাব।

নাথালি টোকি: গার্ডিয়ানের ইউরোপবিষয়ক কলাম লেখক; দ্য গার্ডিয়ান থেকে ভাষান্তর ইফতেখারুল ইসলাম 

সম্পর্কিত নিবন্ধ