জেগলার বরফের মতো সাদা নন, ‘স্লো হোয়াইট’ নিয়ে বিতর্ক
Published: 12th, March 2025 GMT
গ্রিম ভাইদের রূপকথা ‘স্লো হোয়াইট’-এর প্রধান চরিত্র সম্পর্কে লেখা ছিল, ‘বরফের মতো সাদা।’ পর্দায় চরিত্রটি দেখতেও তাই তেমনই হবে, এমনটাই আশা করেন ভক্তরা। তাই বছর চারেক আগে ‘স্লো হোয়াইট’ সিনেমায় প্রধান চরিত্রে যখন রেচেল জেগলারের নাম ঘোষণা করা হয়, প্রবল বিতর্ক হয়েছিল। সিনেমা মুক্তির আগে আরও ছড়িয়েছে সে বিতর্ক। সেটা এতটাই যে সিনেমাটির প্রিমিয়ার সীমিত করতে বাধ্য হয়েছে ডিজনি।
১৯০২ সালে ‘স্লো হোয়াইট’ থেকে প্রথম যে সিনেমা হয়, সেটি ছিল নির্বাক। এরপর নির্বাক, সবাক, অ্যানিমেশন—নানাভাবে পর্দায় এসেছে ‘স্লো হোয়াইট’। নতুন করে বড় পর্দায় আবার রূপকথাটি নিয়ে আসছে ডিজনি। ২১ মার্চ প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাবে মার্ক ওয়েবের ‘স্লো হোয়াইট’। এর আগে ১৫ মার্চ হলিউডের এল ক্যাপিটান থিয়েটারে হওয়ার কথা প্রিমিয়ার। ডিজনি সাধারণত অনেক বড় আয়োজনে সিনেমার প্রিমিয়ার করে। তবে ভ্যারাইটি জানিয়েছে, বিতর্কের জেরে এবারের প্রিমিয়ার হবে নামকাওয়াস্তে, সাংবাদিক, আলোকচিত্রী ও অতিথিদের সংখ্যা থাকবে সীমিত। যদিও এ বিষয়ে ডিজনির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া দেওয়া হয়নি।
কলম্বীয় বংশোদ্ভূত রেচেল জেগলার উজ্জ্বল শ্যামবর্ণ, তিনি ‘স্লো হোয়াইট’-এর প্রধান অভিনেত্রী হওয়ার উপযুক্ত নন—এ–ই হলো বিতর্কের মূল সুর।
আরও পড়ুন‘সেক্স এডুকেশন’ অভিনেত্রীর মুখোমুখি কারিনা, ঘনিষ্ঠ দৃশ্য নিয়ে বললেন...৮ ঘণ্টা আগে
তাঁকে নিয়ে যে এত সমালোচনা হচ্ছে, সে বিষয়ে ওয়াকিবহাল জেগলার। দুই বছর আগে ভ্যারাইটিকে বলেছিলেন, ‘রূপকথার রাজকুমারী আমাকে বাঁচাতে আসবে না, আমাকেই নিজের পারফরম্যান্স দিয়ে এটা (বিতর্ক) কাটিয়ে উঠতে হবে।’
তবে জেগলারকে নিয়ে বিতর্ক তীব্র হওয়ার পেছনে অনেকে রাজনীতি দেখছেন। অভিনেত্রী অনেক দিন ধরেই ফিলিস্তিনিদের পক্ষে সরব।
‘স্লো হোয়াইট’–এর দৃশ্য। আইএমডিবিউৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: হ য় ইট
এছাড়াও পড়ুন:
তরুণরাই মোড় পরিবর্তনের দিশারি
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর ইতিহাসের নতুন সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ। জনগণের সামনে আবারও এসেছে গণতান্ত্রিক, স্বাধীন ও বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলার সুযোগ। দেড় হাজার শহীদের রক্ত এবং অসংখ্য ছাত্র-জনতার অঙ্গহানির বিনিময়ে যে নতুন বাংলাদেশের সম্ভাবনা চব্বিশে রচিত হলো, তা ৫ আগস্টের কয়েক দিন আগেও ছিল প্রায় অসম্ভব কল্পনা।
সিন্দাবাদের ভূতের মতো আমাদের ঘাড়ে চেপে বসা ফ্যাসিস্ট শাসন অপরাজেয় ও দুর্লঙ্ঘ একথা ভেবে বসেছিলেন অনেকেই। বিশেষ করে ৭ জানুয়ারির ডামি নির্বাচনের পর ধীরে ধীরে আশাহত হয়ে পড়ছিলেন অনেকেই। ভেবেছিলেন, এই ফ্যাসিবাদ বাংলাদেশের ভবিতব্য। কিন্তু ইতিহাসের ললাটে গোপনে লিখিত হয়ে গিয়েছিল আরেক গন্তব্য। বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার আন্দোলন জেগে উঠেছিল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে।
অবশ্য বাংলাদেশের ইতিহাসে ছাত্র জাগরণ, ছাত্রদের নেতৃত্বে গণঅভ্যুত্থান নতুন কিছু নয়। বরং এটাই যেন নিয়ম। যখনই দেশ কোনো গভীর সংকটে নিপতিত হয়, সব আশা নিঃশেষিত হয়ে যায়, তখন ছাত্ররা সামনে চলে আসে। তাদের ডাকে আপামর জনতা পথে নামে।
এটা হয়তো আমাদের কৃষি অধ্যুষিত সমাজের এক বিশেষ বৈশিষ্ট্য। একটা বিশেষ মনোগঠন। যে মনোগঠনের কেন্দ্রে আছে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম সম্পর্কে এক আশাপ্রদ রূপকল্প। কৃষক সমাজে বহু বছর ধরে এই রূপকল্প প্রচলিত যে ভবিষ্যতে তাদের কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া সন্তানটি পরিবারের দায়িত্বভার গ্রহণ করবে। পরিবারটিকে নতুন এক ভবিষ্যতের দিকে পরিচালনা করবে। এই রূপকল্প আজও জাগরূক। শুধু গ্রামীণ সমাজে নয়, গ্রাম থেকে আসা শহুরে মধ্যবিত্ত সমাজেও পরিবারগুলো বিশ্বাস করে, ছেলেমেয়েরা বিশ্ববিদ্যালয় পাস করে পরিবারের দায়িত্ব নেবে এবং ভাগ্য ফেরাবে।
পরিবারগুলোর এই খণ্ড খণ্ড স্বপ্ন হয়তো ইতিহাসের বিশেষ দিনক্ষণে যৌথ স্বপ্নে পরিণত হয়। জনগণের একটি বড় অংশ সমস্বরে জাতির ভবিষ্যৎ নির্মাণের দায়িত্ব ছাত্রদের হাতে তুলে দেয় অথবা ছাত্ররা সেই দায়িত্ব তুলে নিলে জনসাধারণের পক্ষ থেকে এক বাক্যে তাতে সমর্থন জানিয়ে দেওয়া হয়।
আমরা ১৯৫২ সালে, ১৯৬৯ সালে, ১৯৯০ সালে এমন ঘটনা ঘটতে দেখেছি। যখনই জাতি কোনো গভীর সংকটে নিমজ্জিত হয়েছে এবং সেই সংকট থেকে উত্তরণের পথ দেখিয়েছে ছাত্ররা, তখনই সাধারণ জনগণ জেগে উঠেছে। প্রশ্নহীনভাবে পথে নেমে সংকট থেকে জাতিকে উদ্ধার করেছে।
তবে চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান আগের গণঅভ্যুত্থান ও আন্দোলনগুলোর চেয়ে অনেক বিস্তৃত ও গভীর ছিল। হতাহতের সংখ্যা ছিল অনেক বেশি। ছাত্ররা প্রাণ দিয়ে প্রমাণ করেছিল যে তারা সত্যিই পরিবর্তন চায়। সেই প্রাণের বিনিময়ে মানুষ তাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছিল। জাতীয় ঐকমত্য তৈরি হয়েছিল। জাতি ঐক্যবদ্ধভাবে ফ্যাসিস্টদের তাড়িয়ে নতুন সম্ভাবনা তৈরি করেছিল।
আমরা এখন সেই সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার প্রক্রিয়ার মধ্যে ঢুকে গেছি। তরুণরা তাদের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে পরিবর্তন ও পুনর্গঠনের যে রূপরেখা হাজির করেছিল, তা নিয়ে চারদিকে ব্যাপক আলোচনা চলছে। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার অভূতপূর্ব দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কাজ করে চলেছে। সংস্কারের জন্য চলছে ব্যাপক কর্মযজ্ঞ। দ্বিমত অবশ্যই থাকবে। সমাজে নানা মত থাকলে নানা পথও থাকবে। কিন্তু তরুণরা এমন এক বাস্তবতা তৈরি করেছে, মানুষের মনে এমন এক স্বপ্ন জাগিয়ে দিয়েছে– যা থেকে ফিরে আসা খুব কঠিন।
পুনর্গঠিত নতুন এক বাংলাদেশ তৈরি না হলে এবার বিপুলভাবে আশাহত হয়ে পড়বে জাতি। ফলে এই কর্মযজ্ঞকে সফল করে তুলতে হবে। আন্দোলনের মধ্য দিয়ে, গণজাগরণের মধ্য দিয়ে তরুণরা যে স্বপ্ন বপন করেছে, তাকে জাগরূক রাখতে হবে। স্মরণে, উদযাপনে তারুণ্যের শক্তি যেন বাংলাদেশকে নতুন অভিযাত্রায় নিয়ে যেতে পারে সেজন্য যে কোনো মূল্যে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
হার না মানা যে শহীদেরা অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন, তাদের কথা মনে রেখে সহযোদ্ধাদের সামনে এগিয়ে যেতে হবে। নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নকে তারুণ্যের উৎসবে পরিণত করতে হবে।
মাহবুব মোর্শেদ: লেখক ও সাংবাদিক