ময়মনসিংহের ত্রিশালে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অসদাচরণ ও ছাত্রাবাসের সিট বাতিলের প্রতিবাদে হল প্রভোস্টের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়োজন করা ইফতার বর্জন করে বুধবার ইফতারের পর হল প্রভোস্টের পদত্যাগ দাবিতে বিক্ষোভ করেন বিভিন্ন ব্যাচের শিক্ষার্থীরা। পরে রাত ৯টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো.

জাহাঙ্গীর আলম শিক্ষার্থীদের হল প্রভোস্ট পরিবর্তনসহ চার দফা দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিলে আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেন শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীরা জানান, আজ বুধবার বিদ্রোহী হল আয়োজিত ইফতারের টোকেন দেওয়া শুরু হয় মঙ্গলবার সকাল থেকে। এ সময় হলের ২০১৮-১৯ বর্ষের শিক্ষার্থীদের অনেককে ইফতারের টোকেন না দিলে হলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। মঙ্গলবার রাতেই হল প্রশাসনের ইফতার বর্জনের ডাক দেন ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থীরা। এরপরই সিনিয়রদের সঙ্গে একাত্মতা জানিয়ে বর্জনের ঘোষণা দিতে থাকেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৯-২০, ২০২০-২১, ২০২১-২২, ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা। হল প্রশাসনের ইফতার বর্জন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মাঠে গণ-ইফতার করেন শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্রোহী হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অসদাচরণ এবং অযৌক্তিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৩তম ব্যাচ (২০১৮-১৯) সেশনের শিক্ষার্থীদের হলের সিট বাতিলের প্রতিবাদে হল প্রশাসন আয়োজিত ইফতার বর্জন করেন আবাসিক শিক্ষার্থীরা। ইফতার বর্জন করায় শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিষয়টি সমাধানের জন্য আজ বেলা সাড়ে ১১টা ও সাড়ে ৩টায় দুই দফা বসার চেষ্টা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কিন্তু শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে কোনো আলোচনায় বসেনি। পরে আজ ইফতার শেষে প্রভোস্টের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেন শিক্ষার্থীরা।

এ সময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা চার দফা দাবি জানান। দাবিগুলো হলো শিক্ষার্থীদের প্রতি অসৌজন্যমূলক আচরণ ও অপমানজনক শব্দচয়নের মাধ্যমে হল প্রভোস্ট দায়িত্ব পালনে অযোগ্যতার পরিচয় দিয়েছেন। এ অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ওই প্রভোস্টের স্থলে কোনো উপযুক্ত ও যোগ্য ব্যক্তিকে এই দায়িত্ব অর্পণ করবেন এবং এরূপ আচরণের জন্য প্রভোস্টকে দুঃখ প্রকাশ করে বিবৃতি দিতে হবে। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পরীক্ষার চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশের পর শিক্ষার্থীদের নির্বিঘ্নে উচ্চশিক্ষা ও কর্মজীবনবিষয়ক প্রস্তুতির জন্য রেজাল্ট পরবর্তী তিন মাস সময় হলে থাকতে দিতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় যেকোনো আয়োজন যেমন: বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবস, ইফতার আবাসিক এবং অনাবাসিক সব শিক্ষার্থীকে মানসম্মত খাবার সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। শুধু হলের আবাসিক শিক্ষার্থীদের জন্য আয়োজন বৈষম্যমূলক আচরণ। সব হলের ভাড়া সর্বোচ্চ ৫০ টাকার মধ্যে সীমিত রাখতে হবে এবং হলের যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা যেমন: বিনা মূল্যে ওয়াই-ফাই, ভাত-ডাল, উন্নত মানের খাবার এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

এ বিষয়ে বিদ্রোহী হলের প্রভোস্ট সাইফুল ইসলামের মুঠোফোনে ফোন করা হলেও সংযোগ বন্ধ পাওয়া যায়।

বিশ্ববিদ্যায়ের বন্ধন গেস্টহাউসের সামনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের শান্ত করতে গিয়ে তাঁদের দাবি শোনেন উপাচার্য, প্রক্টর ও রেজিস্ট্রার। এ সময় উপাচার্য মো. জাহাঙ্গীর আলম শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ‘তোমরা না চাইলে প্রভোস্ট থাকবে না। প্রভোস্টের নিয়ে দাবি বাস্তবায়িত হবে। মাস্টার্সের ফলাফল না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা ছাত্রাবাসে থাকতে পারবে।’

কিন্তু শিক্ষার্থীরা দাবি জানান, পরীক্ষার ফলাফল হওয়ার পর তিন মাস পর্যন্ত ছাত্রাবাসে থাকার। তাঁরা বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। ওই অবস্থায় শিক্ষার্থীদের চারটি দাবিই মেনে নেওয়ার আশ্বাস দেন উপাচার্য। আগামী রোববার এ বিষয়ে লিখিতভাবে সিদ্ধান্ত জানাতে সময় নেন উপাচার্য। পরে শিক্ষার্থীর আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা আগামী রোববার সকাল ১০টা পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়ে আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেন।

উল্লেখ্য, গত ২৫ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভোস্ট কাউন্সিলে শিক্ষার্থীদের হলে সিটবিষয়ক একটি সিদ্ধান্ত হয়। জানানো হয়, যেসব শিক্ষার্থী স্নাতকোত্তর চূড়ান্ত পরীক্ষা দিয়েছেন এবং যেসব বিভাগে স্নাতকোত্তর চালু নেই, সেসব বিভাগের শিক্ষার্থীদের স্নাতক চূড়ান্ত পরীক্ষা সম্পন্নের এক মাসের মধ্যে আবাসিক হলের সিট বাতিল করে দেওয়া হবে। প্রভোস্ট কাউন্সিলের ওই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে আসছেন শিক্ষার্থীরা।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: উপ চ র য র জন য পর ক ষ

এছাড়াও পড়ুন:

সন্তানকে ব্যবহার করে ‘ভিউ ব্যবসা’: সেই ‘ক্রিম আপা’ গ্রেপ্তার

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিউ পেতে বা অনলাইনে টাকা আয়ের জন্য নিজের সন্তানকে ক্যামেরার সামনে এনে নানাভাবে নিষ্ঠুর আচরণ করার অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলায় ঢাকার সাভারের সেই ‘ক্রিম আপা’কে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে সাভার উপজেলা পরিষদ চত্বর থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে আশুলিয়া থানার পুলিশ।

এর আগে গতকাল বুধবার রাত পৌনে ১১টার দিকে আশুলিয়া থানায় ‘ক্রিম আপা’ হিসেবে পরিচিতি পাওয়া শারমিন শিলা নামের ওই নারীর বিরুদ্ধে শিশু আইনে মামলা করেন সাভার উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা কাজী ইসরাত জামান।

শারমিন শিলাকে গ্রেপ্তারের তথ্য নিশ্চিত করেছেন আশুলিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. কামাল হোসেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে শারমিন শিলাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সমাজসেবা অধিদপ্তরের লোকজন এসেছেন, তাঁরা ওই নারীর সন্তানদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, সাভার উপজেলার আশুলিয়ায় বসবাসকারী শারমিন শিলা ওরফে ক্রিম আপা পেশায় একজন বিউটিশিয়ান। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি ক্রিম আপা নামে পরিচিত। তিনি মেকআপের জন্য কাজ করাসহ বিভিন্ন ধরনের ক্রিম তৈরি করে বিক্রি করেন। তিনি নিজের ছেলে ও মেয়েকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকসহ অনলাইনে বিভিন্ন ধরনের ভিডিও তৈরি করে পোস্ট দেন। গত ৩০ মার্চ নিজের ফেসবুক আইডিতে বিকেল চারটার দিকে একটি ভিডিও পোস্ট করেন, যা ভাইরাল হয়। ওই ভিডিওতে দেখা যায়, শারমিন শিলা তাঁর মেয়েশিশুকে (আনুমানিক দুই বছর) জোর করে এক হাতে দিয়ে মুখে চাপ দিয়ে হাঁ করিয়ে মেয়ের অসম্মতিতে কেকজাতীয় কিছু খেতে বাধ্য করছেন। তিনি ভাইরাল হওয়ার জন্য এক বছর ধরে দুই শিশুসন্তানের প্রতি মাতৃসুলভ আচরণ না করে শিশুদের আঘাত, উৎপীড়ন, অবহেলাসহ তাদের প্রতি নিষ্ঠুর আচরণ করছেন। এ ধরনের আচরণের কারণে শিশুরা শারীরিক ও মানসিকভাবে বিকারগ্রস্ত হয়ে পড়েছে।

আরও পড়ুনসন্তানকে ব্যবহার করে ‘ভিউ ব্যবসা’, ‘ক্রিম আপা’র ব্যাখ্যা চেয়েছে প্রশাসন০৭ এপ্রিল ২০২৫

গত রোববার ‘একাই একশো’ নামের শিশুদের সুরক্ষায় সামাজিক আন্দোলনের পক্ষে সাদাত রহমানসহ অন্যরা ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ‘ক্রিম আপা’র বিরুদ্ধে স্মারকলিপি জমা দেন। জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে তিন দিনের মধ্যে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়। স্মারকলিপির অনুলিপি মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এবং সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর দেওয়া হয়।

সাভারের বাইপাইল এলাকায় ‘ক্রিম আপা বিউটি পারলার’ নামে শারমিন শিলার একটি বিউটি পারলার আছে। কয়েক দিন ধরে আলোচিত ক্রিম আপা ফেসবুক লাইভে এসে দাবি করেছেন, তিনি তাঁর সন্তানদের কখনোই নির্যাতন করেননি। নির্যাতন করলে তো ক্যামেরার সামনে করতেন না। তিনি ‘গুণী নারী’ তাই অন্যরা হিংসা করে এ ধরনের অভিযোগ দিচ্ছে। তিনি সন্তানদের নিয়ে ভালো আছেন, ছেলেকে দিয়ে বলানো এমন ভিডিও শেয়ার করেছেন। তবে শারমিন শিলা বা কিরিম আপা ভিডিও আপলোড করে আবার তা ডিলিট বা মুছেও ফেলছেন।

‘একাই একশো’ নামের শিশুদের সুরক্ষায় সামাজিক আন্দোলনের পক্ষে সাদাত রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ক্রিম আপা’ পরিবারসহ টিকটকে আত্মহত্যার হুমকি দিচ্ছিলেন। তাঁর শিশু বাচ্চাদের কথা চিন্তা করে স্থানীয় এক ব্যক্তির সহায়তায় তাঁকে বুঝিয়ে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সাভার উপজেলায় সমাজসেবা কার্যালয়ে আনা হয়। পরে সবাই মিলে তাঁকে বিভিন্ন বিষয়ে বোঝানো হয়। সমাজসেবা কর্মকর্তার কাজ শেষে পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে।

আরও পড়ুনসন্তানকে ব্যবহার করে ‘ভিউ ব্যবসা’ : ‘ক্রিম আপা’র বিরুদ্ধে থানায় মামলা১০ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সাংবাদিকের ফোন কেড়ে নিয়ে ছবি-ভিডিও ডিলিটের অভিযোগ পুলিশ সুপারের বিরুদ্ধে
  • সাংবাদিকের ফোন কেড়ে নিয়ে ভিডিও ডিলিটের অভিযোগ পুলিশ সুপারের বিরুদ্ধে
  • ছাত্রদল নেতা মিলনের পরিবারের খোঁজ নিলেন তারেক রহমান
  • সেই ‘ক্রিম আপা’ কারাগারে
  • ব্রাভোকে দেখেই ‘বিশ্বাসঘাতক’ বললেন ধোনি
  • রপ্তানির বিকল্প পথ কমল, বাড়বে চাপ
  • সন্তানকে ব্যবহার করে ‘ভিউ ব্যবসা’: সেই ‘ক্রিম আপা’ গ্রেপ্তার
  • সরকারি ছুটির দিনে শিশু আদালতের কার্যক্রম চলমান রাখতে নির্দেশনা
  • ভাসানচরকে নোয়াখালীর হাতিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন করার ‘ষড়যন্ত্র’ চলছে
  • প্রথমবারের মতো মাইনরিটি দলকে নিবন্ধন দিলো ইসি, নাম বিএমজেপি