সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে শুধু নয়, দেশের নাগরিক সমাজের মহিরুহ ছিলেন। তিনি বটগাছের মতো আমাদের আশ্রয় ও প্রশ্রয় দিয়েছেন। তাঁর যাপিত জীবন থেকে বাংলাদেশের সৎ ব্যবসা তথা মানবিক মূল্যবোধ সম্পর্কে অনুপ্রেরণা পাওয়া যায়। এই দিনে তাঁর সহধর্মিণী বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী নিলুফার মঞ্জুরের কথাও বিশেষভাবে মনে পড়ছে।

সৈয়দ মঞ্জুর এলাহীর অবস্থানের ওপর নাগরিক সমাজের প্রগাঢ় আস্থা ছিল। খুবই ব্যতিক্রমীভাবে তিনি দুবার (১৯৯৬ ও ২০০১) বাংলাদেশের সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করেন। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) উদ্যোগে গঠিত নাগরিক কমিটি ২০০৬, যা ‘রূপকল্প ২০৩০’ প্রণয়ন করে, তার অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি।

অন্যদিকে আমরা যে দেশের অর্থনীতির বৈচিত্র্যকরণের কথা বলি, সেখানেও তিনি অনুকরণীয় উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন। তৈরি পোশাকের বাইরে চামড়া ও চামড়াজাতীয় পণ্য খাতের ব্যাপক বিকাশ ঘটিয়ে একটি রপ্তানিমুখী শিল্প সৃষ্টি করেছেন।

দেশের বিকাশমান উদ্যোক্তা শ্রেণি সৈয়দ মঞ্জুর এলাহীর কর্ম থেকে শিক্ষা নিতে পারে। তাদের কাছে তিনি বাতিঘর হয়ে থাকবেন।

সৈয়দ মঞ্জুর এলাহীকে নিয়ে সিপিডি প্রাতিষ্ঠানিকভাবে গর্বিত। সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী আমৃত্যু সিপিডি ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য এবং কোষাধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেছেন।

তাঁর চলে যাওয়াকে আমি মহাপ্রস্থান বলব। তাঁর মহাপ্রস্থান শুধু ওনার পরিবারের জন্য নয়; নাগরিক সমাজ তথা দেশের জন্য বড় শূন্যতা সৃষ্টি করবে। আমরা একজন নির্ভর করার মতো অভিভাবককে হারালাম।

জাতির উত্তরণের এই সময়ে আমরা ওনার পরামর্শ থেকে বঞ্চিত হব।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য
সম্মাননীয় ফেলো, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

রোজার নিয়তের বিধান কী

 ‘নিয়ত’ অর্থ ইচ্ছা বা সংকল্প করা। নিয়ত করা রোজার একটি অন্যতম রোকন। সুতরাং নিয়ত করা জরুরি। প্রতিটি ফরজ ইবাদতের মতো রোজার জন্যও নিয়ত করা ফরজ এবং রোজা বিশুদ্ধ হওয়ার শর্ত। নিয়ত সম্পর্কে রোজা রাসুল (সা) বলেন, ‘নিশ্চয় সমস্ত আমল নিয়তের ওপরই নির্ভরশীল। ব্যক্তি যা নিয়ত করে তা-ই সে পায়।’ (বুখারি, হাদিস: ১)

 নিয়তের পদ্ধতি

রোজা আদায়ে ইচ্ছুক ব্যক্তি রোজা শুরু করার সময় যেই রোজা পালনের ইচ্ছা করছে, তা তার অন্তরে উপস্থাপন করবে। যেমন: অন্তরে নির্ধারণ করবে যে, আমি রমজানের রোজা রাখছি অথবা কাজা রোজা আদায় করছি কিংবা মান্নত বা কাফ্ফারার রোজ পালন করছি। অথবা ‘আমি আগামীকাল রোজা রাখব’ কিংবা নফল রোজা হলে দিনের বেলা ‘আজ রোজা রাখব’—এভাবে নিয়ত করলেও যথেষ্ট হবে।

 রাসুল (স.) ও সাহাবিদের কারও থেকে ‘নাওয়াইতু আন আসুমা’ বা ‘নাওয়াইতু আন উসল্লি’—এ-জাতীয় নিয়ত করার বর্ণনা পাওয়া যায় নি। তবে একদল আলেম মুখে নিয়ত করাকে উত্তম বলেছেন। (ফাতাওয়ায়ে শামি, ৩/৩৪৫)

রোজার নিয়তে সাহরি খাওয়া যথেষ্ট, এতে নিয়তের কাজ হয়ে যাবে। কেননা, রোজাদার রাতের খাবার রোজা রাখার ইচ্ছায় খায়। তবে সাহরি খাওয়ার সময় রোজা রাখার ইচ্ছা না থাকলে তা নিয়ত বলে গণ্য হবে না। (কিতাবুল ফিকহ, ১/৮৮১)

নিয়ত কখন করতে হবে

 ফরজ রোজার নিয়ত রাত থেকেই করতে হবে। আয়েশা রা. হতে বর্ণিত, ‘যে ব্যক্তি সুবহে সাদেক উদয় হওয়ার পূর্বে রাতেই রোজার রাখা স্থির করে না, তার রোজা বিশুদ্ধ হয় না।’ (দারাকুতনি. ২/১৭২; বাইহাকি, ৪/২০২)

 তবে নিয়ত করার বিষয়টি মনে না থাকলে দিনে যখন মনে হবে, তখনই নিয়ত করে নিলেও হয়ে যাবে। শর্ত হলো নিয়ত অর্ধদিবসের পূর্বে হওয়া এবং ততক্ষণ রোজার পরিপন্থী কোনো কাজ সংঘটিত না হওয়া। (ফাতাওয়া দারুল উলুম, ৬/৩৪৬, ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া, ১/১৯৬; আল-বাদায়েউস সানায়ে, ২/২২৯)

 রমজানে প্রতিদিনই রোজার নিয়ত করতে হবে। এক দিন নিয়ত করলে পুরো রমজানের জন্য তা যথেষ্ট হবে না। (ইলমুল ফিকহ, ৩/১৮)

আরও পড়ুনরোজার তাৎপর্য, ইতিহাস ও উদ্দেশ্য০২ মার্চ ২০২৫

নফল রোজার নিয়ত দিনের বেলায় করাও বৈধ। আয়েশা রা. বলেন, একদিন রাসুল (স.) এসে আমাকে বললেন, তোমার কাছে খাওয়ার কি কিছু আছে? আমরা বললাম, না। তখন তিনি বললেন, তাহলে আমি রোজা রাখলাম। (মুসলিম: ১১৫২ )

 রাসুলের (সা.) খাবার চাওয়া থেকে অনুমিত হয় তিনি পূর্ব থেকে রোজা রাখার নিয়ত করেননি। এই হাদিস নফল রোজার জন্য প্রযোজ্য হবে। কেননা, নফলের ক্ষেত্রে সুযোগ-সুবিধা ফরজের তুলনায় বেশি। এক্ষত্রেও শর্ত হলো নিয়ত অর্ধদিবসের পূর্বে হওয়া এবং নিয়তের সময় পর্যন্ত রোজার পরিপন্থী কোনও কাজ সংঘটিত না হওয়া। কিন্তু যদি এমন হয় যে, সারা দিন পানাহার করে নি আবার রোজা রাখার ইচ্ছাও তার ছিল না, তাহলে রোজা হবে না। (ফাতাওয়া দারুল উলুম, ৬/৩৪৬)

আরও পড়ুনযে কারণে রোজা ভেঙে যায়০৪ মার্চ ২০২৫

দুটি কথা মনে রাখতে হবে

 ১. রোজা যেহেতু সুবহে সাদিক হতে শুরু হয়, তাই ফজর উদয় না হওয়া পর্যন্ত পানাহার বা যৌনকর্মে আপত্তি নেই। রাতের বেলায় মনে মনে রোজা রাখার ইচ্ছা নিয়ে শুয়ে পড়লে তার জন্য ফের নিয়ত করার প্রয়োজন নেই। অনেকে রাতের শুরুতে বা মাঝামাঝি সময়ে সাহরি খেয়ে শুয়ে পড়েন এবং মনে করেন, রোজার নিয়ত করার পর বা সাহরি খাওয়া পর আর পানাহার করা যাবে না—এমন ধারণা সঠিক নয়। সুবহে সাদিক উদয় না হওয়া পর্যন্ত পানাহার করতে কোনও দোষ নেই, অপবিত্র হলেও অসুবিধা নেই। তাতে নিয়তের কোনও ক্ষতি হবে না এবং রোজারও নয়। (বুখারি, হাদিস: ১,৮২৯ ও ১,৯২৬; মুসলিম, হাদিস: ১,১০৯; হাশিয়ায়ে ফাতাওয়া দারুল উলুম, ৬/৪৪৬; ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া, ১/১৯৬)

একই বিধান হায়েজ ও নেফাসগ্রস্ত নারীদের বেলায়ও। ফজর হওয়ার পূর্বেই যদি তারা পবিত্র হয়ে যায়, তবে গোসল না করেই নিয়ত করে নেবে। (হাকাযা কানান নাবিয়্যু সা. ফি রমাদান, ৪৩)

 দুই. দিনের দ্বিপ্রহরের আগে রোজার নিয়ত করা না হয়ে থাকলে সেই রোজা সহিহ হবে না বটে, কিন্তু রোজাহীন অবস্থায় দিনের বাকি সময়ে পানাহার করা রমজানের মর্যাদা বিরোধী এবং তা বৈধ নয়। (ইমদাদুল ফাতাওয়া, ১/১৭৩)

আরও পড়ুনইফতারের দোয়া আরবি ও বাংলা উচ্চারণ, অর্থসহ০৩ মার্চ ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ