আফগানিস্তানের বিপক্ষে নির্ধারিত সিরিজ আকস্মিকভাবে বাতিল করেছে আয়ারল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডাব্লিউ)-এর সাম্প্রতিক চিঠির পরই এই সিদ্ধান্ত আসে।

আইসিসির ভবিষ্যৎ সূচি (এফটিপি) অনুযায়ী, জুলাই মাসে আফগানিস্তানের বিপক্ষে আয়ারল্যান্ডের একটি টেস্ট, তিনটি ওয়ানডে ও তিনটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলার কথা ছিল। তবে হঠাৎ করেই আয়ারল্যান্ড এই সিরিজ আয়োজন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেয়।

ক্রিকেট আয়ারল্যান্ডের প্রধান নির্বাহী ওয়ারেন ডয়ুট্রোম বলেছেন, আর্থিক সীমাবদ্ধতার কারণেই সিরিজটি বাতিল করা হয়েছে। তার ভাষায়, ‘‘আমাদের বাজেট ব্যবস্থাপনার কৌশলের অংশ হিসেবে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যাতে বোর্ডের দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্যগুলোর সঙ্গে ভারসাম্য রক্ষা করা যায়।’’

আরো পড়ুন:

ফেব্রুয়ারির সেরা ক্রিকেটার গিল

৭৫ শতাংশ কমানো হলো পাকিস্তানের ক্রিকেটারদের ম্যাচ ফি

তবে বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক রয়ে গেছে। বিশেষ করে আফগানিস্তানে নারীদের ক্রিকেট কার্যত নিষিদ্ধ থাকায়, দেশটির ক্রিকেট বোর্ড ও সরকারের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে সমালোচনা চলছিল। মানবাধিকার সংগঠনগুলো আইসিসির কাছে আফগানিস্তানকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়ে আসছিল।

২০২১ সালে তালেবান সরকার ক্ষমতায় আসার পর আফগান নারীদের ক্রিকেট খেলার অধিকার প্রায় পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। এ কারণে এর আগে অস্ট্রেলিয়াও আফগানিস্তানের বিপক্ষে নির্ধারিত সিরিজ বাতিল করেছিল। এবার হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ৭ মার্চ আইসিসিকে চিঠি দিয়ে আফগানিস্তানকে ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ করার আহ্বান জানায়।

এর পাশাপাশি, সম্প্রতি ১৬০ জন ব্রিটিশ রাজনীতিবিদও ইংল্যান্ড ও ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ডকে (ইসিবি) আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ বয়কটের আহ্বান জানিয়েছিলেন। ফলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আফগানিস্তানের অবস্থান আরও কঠিন হয়ে উঠছে।

আয়ারল্যান্ডের ক্রিকেট সূচি পুরোপুরি বাতিল হয়নি। সেপ্টেম্বর মাসে তারা ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো ঘরের মাঠে একটি টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলবে। এছাড়া, মে ও জুনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওডিআই ও টি-টোয়েন্টি সিরিজও অনুষ্ঠিত হবে। তবে আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ বাতিল হওয়ায় এটি দেশটির ক্রিকেটের জন্য একটি বড় ধাক্কা।

এখন দেখার বিষয়, আইসিসি এই পরিস্থিতিতে কী সিদ্ধান্ত নেয়। আফগানিস্তান কি আদৌ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে টিকে থাকতে পারবে, নাকি মানবাধিকার সংস্থাগুলোর চাপের মুখে নিষেধাজ্ঞার পথে হাঁটবে আইসিসি?

ঢাকা/আমিনুল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আফগ ন স ত ন ব ত ল কর আইস স

এছাড়াও পড়ুন:

রোজার নিয়তের বিধান কী

 ‘নিয়ত’ অর্থ ইচ্ছা বা সংকল্প করা। নিয়ত করা রোজার একটি অন্যতম রোকন। সুতরাং নিয়ত করা জরুরি। প্রতিটি ফরজ ইবাদতের মতো রোজার জন্যও নিয়ত করা ফরজ এবং রোজা বিশুদ্ধ হওয়ার শর্ত। নিয়ত সম্পর্কে রোজা রাসুল (সা) বলেন, ‘নিশ্চয় সমস্ত আমল নিয়তের ওপরই নির্ভরশীল। ব্যক্তি যা নিয়ত করে তা-ই সে পায়।’ (বুখারি, হাদিস: ১)

 নিয়তের পদ্ধতি

রোজা আদায়ে ইচ্ছুক ব্যক্তি রোজা শুরু করার সময় যেই রোজা পালনের ইচ্ছা করছে, তা তার অন্তরে উপস্থাপন করবে। যেমন: অন্তরে নির্ধারণ করবে যে, আমি রমজানের রোজা রাখছি অথবা কাজা রোজা আদায় করছি কিংবা মান্নত বা কাফ্ফারার রোজ পালন করছি। অথবা ‘আমি আগামীকাল রোজা রাখব’ কিংবা নফল রোজা হলে দিনের বেলা ‘আজ রোজা রাখব’—এভাবে নিয়ত করলেও যথেষ্ট হবে।

 রাসুল (স.) ও সাহাবিদের কারও থেকে ‘নাওয়াইতু আন আসুমা’ বা ‘নাওয়াইতু আন উসল্লি’—এ-জাতীয় নিয়ত করার বর্ণনা পাওয়া যায় নি। তবে একদল আলেম মুখে নিয়ত করাকে উত্তম বলেছেন। (ফাতাওয়ায়ে শামি, ৩/৩৪৫)

রোজার নিয়তে সাহরি খাওয়া যথেষ্ট, এতে নিয়তের কাজ হয়ে যাবে। কেননা, রোজাদার রাতের খাবার রোজা রাখার ইচ্ছায় খায়। তবে সাহরি খাওয়ার সময় রোজা রাখার ইচ্ছা না থাকলে তা নিয়ত বলে গণ্য হবে না। (কিতাবুল ফিকহ, ১/৮৮১)

নিয়ত কখন করতে হবে

 ফরজ রোজার নিয়ত রাত থেকেই করতে হবে। আয়েশা রা. হতে বর্ণিত, ‘যে ব্যক্তি সুবহে সাদেক উদয় হওয়ার পূর্বে রাতেই রোজার রাখা স্থির করে না, তার রোজা বিশুদ্ধ হয় না।’ (দারাকুতনি. ২/১৭২; বাইহাকি, ৪/২০২)

 তবে নিয়ত করার বিষয়টি মনে না থাকলে দিনে যখন মনে হবে, তখনই নিয়ত করে নিলেও হয়ে যাবে। শর্ত হলো নিয়ত অর্ধদিবসের পূর্বে হওয়া এবং ততক্ষণ রোজার পরিপন্থী কোনো কাজ সংঘটিত না হওয়া। (ফাতাওয়া দারুল উলুম, ৬/৩৪৬, ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া, ১/১৯৬; আল-বাদায়েউস সানায়ে, ২/২২৯)

 রমজানে প্রতিদিনই রোজার নিয়ত করতে হবে। এক দিন নিয়ত করলে পুরো রমজানের জন্য তা যথেষ্ট হবে না। (ইলমুল ফিকহ, ৩/১৮)

আরও পড়ুনরোজার তাৎপর্য, ইতিহাস ও উদ্দেশ্য০২ মার্চ ২০২৫

নফল রোজার নিয়ত দিনের বেলায় করাও বৈধ। আয়েশা রা. বলেন, একদিন রাসুল (স.) এসে আমাকে বললেন, তোমার কাছে খাওয়ার কি কিছু আছে? আমরা বললাম, না। তখন তিনি বললেন, তাহলে আমি রোজা রাখলাম। (মুসলিম: ১১৫২ )

 রাসুলের (সা.) খাবার চাওয়া থেকে অনুমিত হয় তিনি পূর্ব থেকে রোজা রাখার নিয়ত করেননি। এই হাদিস নফল রোজার জন্য প্রযোজ্য হবে। কেননা, নফলের ক্ষেত্রে সুযোগ-সুবিধা ফরজের তুলনায় বেশি। এক্ষত্রেও শর্ত হলো নিয়ত অর্ধদিবসের পূর্বে হওয়া এবং নিয়তের সময় পর্যন্ত রোজার পরিপন্থী কোনও কাজ সংঘটিত না হওয়া। কিন্তু যদি এমন হয় যে, সারা দিন পানাহার করে নি আবার রোজা রাখার ইচ্ছাও তার ছিল না, তাহলে রোজা হবে না। (ফাতাওয়া দারুল উলুম, ৬/৩৪৬)

আরও পড়ুনযে কারণে রোজা ভেঙে যায়০৪ মার্চ ২০২৫

দুটি কথা মনে রাখতে হবে

 ১. রোজা যেহেতু সুবহে সাদিক হতে শুরু হয়, তাই ফজর উদয় না হওয়া পর্যন্ত পানাহার বা যৌনকর্মে আপত্তি নেই। রাতের বেলায় মনে মনে রোজা রাখার ইচ্ছা নিয়ে শুয়ে পড়লে তার জন্য ফের নিয়ত করার প্রয়োজন নেই। অনেকে রাতের শুরুতে বা মাঝামাঝি সময়ে সাহরি খেয়ে শুয়ে পড়েন এবং মনে করেন, রোজার নিয়ত করার পর বা সাহরি খাওয়া পর আর পানাহার করা যাবে না—এমন ধারণা সঠিক নয়। সুবহে সাদিক উদয় না হওয়া পর্যন্ত পানাহার করতে কোনও দোষ নেই, অপবিত্র হলেও অসুবিধা নেই। তাতে নিয়তের কোনও ক্ষতি হবে না এবং রোজারও নয়। (বুখারি, হাদিস: ১,৮২৯ ও ১,৯২৬; মুসলিম, হাদিস: ১,১০৯; হাশিয়ায়ে ফাতাওয়া দারুল উলুম, ৬/৪৪৬; ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া, ১/১৯৬)

একই বিধান হায়েজ ও নেফাসগ্রস্ত নারীদের বেলায়ও। ফজর হওয়ার পূর্বেই যদি তারা পবিত্র হয়ে যায়, তবে গোসল না করেই নিয়ত করে নেবে। (হাকাযা কানান নাবিয়্যু সা. ফি রমাদান, ৪৩)

 দুই. দিনের দ্বিপ্রহরের আগে রোজার নিয়ত করা না হয়ে থাকলে সেই রোজা সহিহ হবে না বটে, কিন্তু রোজাহীন অবস্থায় দিনের বাকি সময়ে পানাহার করা রমজানের মর্যাদা বিরোধী এবং তা বৈধ নয়। (ইমদাদুল ফাতাওয়া, ১/১৭৩)

আরও পড়ুনইফতারের দোয়া আরবি ও বাংলা উচ্চারণ, অর্থসহ০৩ মার্চ ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ