পাকিস্তান সৃষ্টিলগ্ন থেকেই তারা বিরোধিতাই করে গেল, দেশপ্রেমের লেশমাত্র তাদের নাই: মির্জা আব্বাস
Published: 12th, March 2025 GMT
‘সংস্কার ছাড়া নির্বাচন করা যাবে না’ বলে জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতারা যে কথা বলে আসছেন, তার কড়া সমালোচনা করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। তিনি বলেন, ‘কিছু লোভী রাজনীতিবিদ আছেন, কিছু লোভী রাজনৈতিক দল আছে, যারা শুধু বিরোধিতার জন্য বিরোধিতা করে। এই দলগুলো পাকিস্তান সৃষ্টির লগ্ন থেকে, ভারত বিভক্তি থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত শুধু বিরোধিতাই করে গেল, দেশপ্রেমের লেশমাত্র তাদের ভেতরে নাই।’
আজ বুধবার বিকেলে শাহজাহানপুর রেলওয়ে অফিসার্স ক্লাব মাঠে থানা বিএনপি আয়োজিত ‘রাষ্ট্র সংস্কারে ৩১ দফা’ শীর্ষক প্রশিক্ষণ কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা আব্বাস এসব কথা বলেন।
ওই দলের প্রতি ইঙ্গিত করে মির্জা আব্বাস বলেন, তারা দেশকে ভালোবাসে না, দেশের মানুষকে ভালোবাসে না। তারা ভালোবাসে যেভাবেই হোক ক্ষমতায় থাকতে হবে, যেভাবেই হোক ক্ষমতায় যেতে হবে।
মির্জা আব্বাস বলেন, ‘আমাদের তো আপত্তির কিছু নাই, দেশের লোক যদি ভোট দিয়ে আপনাদের ক্ষমতায় নেয়। আপত্তির কী আছে, ভোটে আসেন। ভোটকে ভয় পান কেন, নির্বাচনকে ভয় পান কেন আপনারা। এইটা না হলে নির্বাচন করা যাবে না, ওইটা না হলে নির্বাচন করা যাবে না। আরে ভাই, ১৭ বছরে বহু নেতার ফাঁসি হয়েছে, ১৭ বছরে বহু নেতা-কর্মী গুম হয়েছে, বহু নেতা-কর্মী খুন হয়েছে। এই ১৭ বছরে এই মঞ্চে যাঁরা আছেন মা-বোনসহ কমবেশি বহু লোক জেল খেটেছেন। এইটা কি খামোখা করেছি আমরা?’
বিএনপির নেতা মির্জা আব্বাস বলেন, ‘আমরা বুকের তাজা রক্ত রাজপথে ঢেলে দিয়েছি গণতন্ত্রের জন্য, কথা বলার জন্য, ভোটের অধিকারের জন্য। আজকে ভোটের সময় যখন এল, তখন বলেন এইটা না করলে ভোট হবে না, ওইটা না করলে ভোট হবে না—কেনরে ভাই!’ তিনি বলেন, ‘আজকে যারাই লম্বা লম্বা কথা বলেন, বুকে হাত দিয়ে বলেন, জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে আপনাদের কয়জন নেতা-কর্মী শাহাদাত বরণ করেছেন। বিএনপির ৪২২ জন নেতা-কর্মী শহীদ হয়েছেন এক মাসে। আপনাদের কয়জন হয়েছে।’
কোনো দলের নাম উল্লেখ না করে বিএনপির এই নেতা হিসাব করে কথা বলার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ তো দেশটাকে বাপের তালুক ভাবছিল। যে কারণে তারা যা খুশি তাই বলেছিল, অপানরাও কী তাই ভাবেন? এই বাংলাদেশ কারও তালুকদারি নয়। সুতরাং কথাবার্তা বলার সময় হিসাব করে বলবেন, যাতে আমাদেরও বেহিসাবি কথা বলতে না হয়।’
গতকাল মঙ্গলবার দলীয় এক অনুষ্ঠানে দেওয়া একটি বক্তব্যে উল্লেখ করে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘আমি কালকে একটা বক্তব্যে বলেছি, আমাদের সাংবাদিক ভাইয়েরা আজকাল অনেক দলের খারাপ কথা লেখেন না। ভালো কথাগুলো হয়তো লেখে দু-একটা। বিএনপির ভালো কথাগুলো লেখে না, খারাপ কথাগুলো লিখে দেয়। .
বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্ষদ জাতীয় স্থায়ী কমিটির এই নেতা আরও বলেন, ‘আমার একটা এলাকায় ১০০ কর্মী আছে। দুইটা কর্মী খারাপ, বদমায়েশি করে, অপকর্ম করে। এটা যদি হয়, আমরা ৯৮ জন কর্মী তো আর খারাপ না। সুতরাং দুজন লোকের জন্য আমার সব কর্মী কালিমালিপ্ত হবে, এটা হতে দেওয়া যাবে না। যদি কোনো চাঁদাবাজ ঢুকে পড়ে বা (দলে) আসে। অনেক চান্দাবাজ আওয়ামী লীগের কিন্তু এখন দলের (বিএনপি) মধ্যে আছে। সব দলেই আছে, বিএনপিতে আছে, জামায়াতে আছে...সব দলেই কমবেশি আশ্রয় নিয়ে নিয়েছে। এগুলোকে চিহ্নিত করেন, দল থেকে বের করে দেন, নইলে পুলিশের হাতে সোপর্দ করেন।’
নির্বাচন যদি দিতেই হয়, এখনই কেন নয়
বিএনপির দেওয়া ৩১ দফা রাষ্ট্রকাঠামো সংস্কার প্রস্তাবের উল্লেখ করে মির্জা আব্বাস বলেন, সরকারের সংস্কার কমিশনগুলো প্রস্তাবে নতুন এমন কিছু নেই, যা ২০২৩ সালের ১৩ জুলাই বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেওয়া ৩১ দফায় নেই।
মির্জা আব্বাস বলেন, ‘এখন দেশে অনেক রাজনৈতিক নেতারা তৈরি হয়েছেন, কিংবা কেউ কেউ তৈরি করছেন। তাঁরা বিভিন্ন রকম কথা বলছেন। যেসব কথার অর্থ, আমাদের এই ৩১ দফায় আছে এবং সেগুলো জাতির সামনে আমরা প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছি বলে আমি বিশ্বাস করি।’ এ প্রসঙ্গে তিনি সরকারের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা কত দিনে সংস্কার বাস্তবায়ন করবেন আমি বুঝি না। আমি এটা বুঝি, সংস্কারের পাশাপাশি নির্বাচনটা যদি দিয়ে দেন, যতটুকু পারেন সংস্কার করেন, বাকিটা নির্বাচনের পরে নির্বাচিত সরকার করবে।’
অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কারকাজের উল্লেখ করে আব্বাস বলেন, ‘আমি কিন্তু ওনাদের সংস্কারে নতুন এমন কিছু পাই নাই, যেটা আমাদের ৩১ দফায় নেই। সুতরাং সংস্কার সংস্কার করতে করতে নির্বাচন দেরি হয়ে যাবে, এটা অমূলক নয়, এ ধারণা জাতি করছে। কিংবা এর অসিলা ধরে নির্বাচন পেছানো, এ ধারণাও অমূলক নয়। আমি আশা করব, সরকার ৩১ দফাকে কিছুটা এদিক-ওদিক করে হলেও সংস্কার দ্রুত শেষ করে নিতে পারে এবং দ্রুত জুন-জুলাইয়ের মধ্যে নির্বাচনের ঘোষণা ওনারা দিতে পারে।’
এ প্রসঙ্গে আব্বাস বলেন, যদিও ওনারা বলেছেন, ডিসেম্বরে মধ্যে নির্বাচন দেবেন। কিন্তু কেন অযথা বিলম্ব হবে নির্বাচনের। নির্বাচন যদি দিতেই হয়, এখনই কেন নয়।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক রফিকুল আলম মজনু আজকের কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন। সঞ্চালনা করেন সদস্যসচিব তানভীর আহমেদ। কর্মশালায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা হাবিবুর রশিদ হাবিব, মির্জা খোকন, মহানগর দক্ষিণ বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক লিটন মাহমুদ, কে সিকান্দার কাদির, সাইদুর রহমান, ফরহাদ হোসেন, মুক্তিযোদ্ধা গোলাম হোসেন, ইউনুস মৃধা, শাহজাহানপুর থানা বিএনপির আহ্বায়ক ফজলে রুবাইয়াত, যুবদল দক্ষিণের আহ্বায়ক খন্দকার এনামুল হক, কৃষক দল দক্ষিণের সভাপতি কামাল হোসেন, মহিলা দল দক্ষিণের সভাপতি রুমা আকতার প্রমুখ।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব এনপ র ক র কর র জন য আম দ র উল ল খ সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
মাগুরার শিশুটির জীবন সংকটাপন্ন, এক দিনে চারবার ‘কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট’
মাগুরায় যৌন নির্যাতনের শিকার আট বছর বয়সী শিশুটির জীবন সংকটাপন্ন। বুধবার চিকিৎসাধীন অবস্থায় চারবার ‘কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট’ (আকস্মিকভাবে হৃৎস্পন্দন বন্ধ হয়ে যাওয়া) হয়েছে। পাশাপাশি অন্যান্য শারীরিক জটিলতাও রয়েছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এক ফেসবুক পোস্টে এ তথ্য জানিয়েছে। শিশুটির সুস্থতার জন্য সেনাবাহিনী দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছে।
সেনাবাহিনী জানিয়েছে, ঢাকায় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) শিশু বিভাগের শিশুরোগের চিকিৎসাসংক্রান্ত নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (পিআইসিইউ) শিশুটির চিকিৎসা চলছে। প্রতিদিন স্ট্যান্ডার্ড আইসিইউ প্রটোকল অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা এবং সে অনুযায়ী তাকে সর্বোচ্চ চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে।
সেনাবাহিনীর ফেসবুক পোস্টে বলা হয়েছে, শিশুটি আজ (বুধবার) চারবার কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের শিকার হয়েছে। সিপিআর (কার্ডিও পালমোনারি রিসাসিটেশন) দিয়ে তার শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল করা হয়েছে। তার রক্তে লবণের ভারসাম্যহীনতার কারণে ডায়ালাইসিস করা হচ্ছে। অন্যান্য জটিলতার পাশাপাশি শিশুটির রক্তচাপ ৬০/৪০ মিমি পারদ কিংবা তার চেয়ে নিম্নমুখী।
সিএমএইচের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সমন্বয়ে গঠিত উচ্চপর্যায়ের চিকিৎসা পর্ষদ সর্বাধুনিক চিকিৎসাপদ্ধতির মাধ্যমে শিশুটির জীবন রক্ষার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছে সেনাবাহিনী।
বোনের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়া আট বছরের এই শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করেছেন শিশুটির মা। শিশুটির ভগ্নিপতি, বোনের শ্বশুর, শাশুড়ি ও ভাশুরকে গ্রেপ্তারের পর রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। শিশুর বোনের শ্বশুরকে সাত দিন, স্বামী, শাশুড়ি ও ভাশুর প্রত্যেকের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন মাগুরার আদালত।
গত বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে অচেতন অবস্থায় শিশুটিকে মাগুরা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে নিয়ে আসেন তার বোনের শাশুড়ি। পরে শিশুটির মা হাসপাতালে যান। ওই দিন দুপুরেই উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখান থেকে বৃহস্পতিবার রাতেই পাঠানো হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এরপর শুক্রবার রাতে তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। সংকটাপন্ন শিশুটিকে শনিবার সন্ধ্যায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পিআইসিইউ থেকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।