যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের মাত্র ৫০ দিনে এমন অনেক কাজ করেছেন, যা দেশটির আধুনিক ইতিহাসে আর কোনো প্রেসিডেন্ট করেননি। তাঁর এসব কাজ আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার ভিত্তির খোলনলচে বদলে দিচ্ছে। অথচ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বিজয়ের পর খুব কষ্টে ওয়াশিংটনই এসব ভিত্তি তৈরি করেছিল।

রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র যে অবস্থান গ্রহণ করেছিল, কোনো ধরনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা বা বিকল্প কৌশলগত রূপরেখা ঘোষণা না করেই ট্রাম্প কিয়েভকে ছুড়ে ফেলছেন। রাশিয়ার হামলার নিন্দা জানিয়ে সম্প্রতি জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে রাশিয়াকে আগ্রাসনকারী দেশ উল্লেখ করে একটি প্রস্তাব এনেছিল ইউক্রেন ও তার ইউরোপীয় মিত্ররা। এ প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোটদানের নির্দেশ দিতে দ্বিধা করেননি ট্রাম্প।

শুধু তা–ই নয়, একই দিন সাধারণ পরিষদে ইউক্রেন নিয়ে একটি বিকল্প প্রস্তাব এনেছিল যুক্তরাষ্ট্র, যেখানে রাশিয়ার হামলার নিন্দা জানানো হয়নি। রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়া প্রস্তাবটির পক্ষে ভোট দিয়েছে।

ক্ষমতা গ্রহণের পরপরই পানামা খাল, গ্রিনল্যান্ড, গাজা এমনকি কানাডাকে নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন ট্রাম্প। তাঁর এসব বক্তব্য লুণ্ঠনকারীর হুমকির মতো মনে হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার কানাডা-যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্তকে ‘কৃত্রিম বিভাজক রেখা’ বলে মন্তব্য করেছেন রিপাবলিকান পার্টির এই প্রেসিডেন্ট।

ওয়াশিংটনে ওভাল অফিসে ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়ের পর ইউক্রেনে অস্ত্র ও মার্কিন বাণিজ্যিক উপগ্রহ চিত্র তথা গোয়েন্দা তথ্য সরবরাহ আংশিক বন্ধ করেছিলেন ট্রাম্প। তবে রাশিয়ার সঙ্গে ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতিতে রাজি হওয়ার পর কিয়েভের ওপর থেকে গতকাল এই দুই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

মিত্রদের যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির রক্তচোষা তকমা দিয়ে তাদের ওপর শুল্ক আরোপ করেছেন ট্রাম্প। ন্যাটো মিত্রদের আস্থায় ফাটল ধরিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের ওপর ভরসা করতে না পেরে নিজেদের পারমাণবিক অস্ত্রের ভান্ডার বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে ফ্রান্স। পোল্যান্ড পারমাণবিক অস্ত্র বানানোর চিন্তাভাবনা করছে। দেশ দুটি নিজেদের রক্ষার ক্ষেত্রে শেষ আশ্রয় হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর আর ভরসা রাখতে পারছে না।

বিদ্যমান বিশ্বব্যবস্থাকে বদলে দিতে ট্রাম্প কতটা সফল হবেন, তা কেউ জানেন না। ওয়াশিংটনের নেতৃত্বে এই ব্যবস্থার ভিত্তি রচনা করেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হ্যারি ট্রুম্যান (১৯৪৫-৫৩)। এর পর থেকে পরবর্তী সব প্রেসিডেন্ট এই ভিত্তিকে শক্তিশালী করতে অবদান রেখেছেন। নতুন বিশ্বব্যবস্থার যে ভিত্তি ট্রুম্যান গড়েছিলেন, সেটার মর্মকথা তাঁর পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডিন অ্যাকেস নিজের স্মৃতিকথা ‘প্রেজেন্ট অ্যাট দ্য ক্রিয়েশন’ নামের বইয়ে তুলে ধরেছেন। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসন যা শুরু করেছে, তাতে আজকাল ওয়াশিংটনে থাকাটা অস্বস্তিকর হয়ে পড়েছে।

আরও পড়ুনবিদ্যমান বিশ্বব্যবস্থা ধ্বংস করছে যুক্তরাষ্ট্র০৬ মার্চ ২০২৫

সফট পাওয়ারের প্রকৃতি নিয়ে কাজ করা রাষ্ট্রবিজ্ঞানী জোসেফ এস নাই জুনিয়র ট্রাম্পের সম্পর্কে সম্প্রতি বলেছেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের দাতব্য কর্মকাণ্ডের সমস্যা নিয়ে বেশি মাথা ঘামাচ্ছেন। কিন্তু বেলা শেষে তা যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের পক্ষেই যায়।

পুরোনো ব্যবস্থাকে ভেঙে দিতে চাইলেও নিজে কী গড়তে চাইছেন, তা নিয়ে ট্রাম্প স্পষ্ট করে কিছু বলছেন না। তবে তাঁর কাজ দেখে মনে হচ্ছে, ঊনবিংশ শতাব্দীর বৃহৎ শক্তির রাজনীতির জগৎই তাঁর পছন্দ। তাই তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সঙ্গে নানা বিষয়ে দর-কষাকষি করছেন। অন্যদিকে ছোট শক্তিগুলো থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব যবস থ ইউক র ন কর ছ ল র ওপর

এছাড়াও পড়ুন:

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান হলেন অধ্যাপক নার্গিস বেগম

যশোর জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক অধ্যাপক নার্গিস বেগম দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান মনোনীত হয়েছেন। বুধবার রাতে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। 

নার্গিস বেগম বিএনপির স্থায়ী কমিটির প্রয়াত সদস্য তরিকুল ইসলামের পত্নী ও বিএনপির খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিতের মা। 

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, যশোর জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান পদে মনোনীত করা হয়েছে। ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি দলকে সুসংবদ্ধ ও শক্তিশালী করতে সক্ষম হবে বলে দল আশা রাখে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালের ২০ মে যশোর জেলা বিএনপির মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি ভেঙে ৫৩ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। আহ্বায়ক হন অধ্যাপক নার্গিস বেগম। দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে দলের দুর্দিনে দলকে আন্দোলন সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। সর্বশেষ গত ২২ ফেব্রুয়ারি যশোর জেলা বিএনপির সম্মেলনে সভাপতি প্রার্থী হওয়ার গুঞ্জন থাকলেও একেবারে শেষের দিকে জানিয়ে দেন তিনি প্রার্থী হচ্ছেন না। ফলে নেতাকর্মীরা ভেবে নেন বয়সজনিত কারণে রাজনীতি থেকে বিদায় নিচ্ছেন জেলার বর্ষিয়ান এই রাজনীতিবিদ। 

তবে নতুন চমক দেখিয়ে ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ায় উচ্ছ্বসিত নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, কঠিন সময়ে দলকে ধরে রাখার পুরস্কার হিসেবে দলের ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন অধ্যাপক নার্গিস বেগম।

রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান অধ্যাপক নার্গিস বেগম স্কুলজীবন থেকেই রাজনীতির সহচর্যে ছিলেন। ‘৬০-এর দশকে আইয়ুববিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যোগদানের মধ্য দিয়ে রাজনীতিতে তার আনুষ্ঠানিক প্রবেশ। বিএনপির জন্মলগ্ন থেকে সম্পৃক্ত হন দলটির সঙ্গে। শিক্ষকতাজীবনে আনুষ্ঠানিকভাবে দলের পদপদবী গ্রহণ না করলেও সক্রিয় ছিলেন বিএনপির নেতৃত্বে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ