নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলায় ১১ বছরের এক মেয়েশিশুকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে প্রতিবেশী তরুণসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আজ বুধবার সকালে মেয়েটির বাবা বাদী হয়ে কেন্দুয়া থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলাটি করেন।

পুলিশ ও মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত শনিবার পঞ্চম শ্রেণিপড়ুয়া মেয়েটি ইফতার শেষে সন্ধ্যায় ঘরের পাশে টয়লেটে যাচ্ছিল। এ সময় প্রতিবেশী তরুণ হবি মিয়া (১৯) মেয়েটির মুখ চেপে ধরে জোর করে পাশের জঙ্গলে নিয়ে ধর্ষণের চেষ্টা করেন। মেয়েটির চিৎকার শুনে তাঁর মা এগিয়ে যান। পরে মা-মেয়ের চিৎকারে আশপাশের লোকজন ছুটে এলে হবি মিয়া পালিয়ে যান। পরে হবির পক্ষ থেকে গ্রামের কয়েকজন বিষয়টি মীমাংসা করার চেষ্টা করেন এবং বিষয়টি কাউকে না জানাতে ভয় দেখান। তবে ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পর গত সোমবার সন্ধ্যায় গ্রামের লোকজন হবির বাড়িতে গিয়ে ঘরে তালা লাগিয়ে দেন।

এ নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার ‘তরুণের বিরুদ্ধে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ, বাড়িতে তালা লাগিয়ে দিলেন গ্রামবাসী’ শিরোনামে প্রথম আলোর অনলাইনে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। আজ সকালে মেয়েটির বাবা বাদী হয়ে মামলাটি করেন। মামলায় অভিযুক্ত তরুণ হবি মিয়া, তাঁর ভাই, বাবা ও দুই চাচাকে আসামি করা হয়েছে।

মেয়েটির বাবা বলেন, তিনি দরিদ্র মানুষ। ঘটনার পর হবির বাড়িতে গিয়ে তাঁর পরিবারের কাছে এ ঘটনার বিচার চান। তখন তাঁকে ভয়ভীতি দেখানো হয় এবং বিষয়টি কাউকে জানাতে নিষেধ করা হয়। লোকলজ্জার ভয়ে তিনি বিষয়টি গোপন রেখেছিলেন। কিন্তু জানাজানি হওয়ায় সোমবার সন্ধ্যায় গ্রামের লোকজন মিছিল নিয়ে হবির বাড়িতে গিয়ে ঘরে তালা ঝুলিয়ে দেন। পরে অবশ্য তালা খুলে দেওয়া হয়। আজ তিনি মামলা করেছেন। মেয়ের ওপর নির্যাতনের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান তিনি।

কেন্দুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, মেয়েটিকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে মামলা হয়েছে। মামলার অভিযুক্ত আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

আরও পড়ুনতরুণের বিরুদ্ধে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ, বাড়িতে তালা লাগিয়ে দিলেন গ্রামবাসী১১ মার্চ ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

মারমাদের মৈত্রী পানিবর্ষণ উৎসব যে কারণে হয়, যেভাবে এল

মারমা জনগোষ্ঠীর সাংগ্রাইং উৎসবের এক গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হয়ে আছে ‘মৈতা রিলং পোয়ে’ বা মৈত্রী পানিবর্ষণ উৎসব। এই উৎসবে পরস্পরের দিকে পানি ছিটিয়ে মৈত্রীর বন্ধনে আবদ্ধ হন মারমারা। ‘সাংগ্রাইংমা ঞি ঞি ঞা ঞা রিকোজাই পামে’(এসো হে সাংগ্রাইংয়ে সবাই মৈত্রী পানিবর্ষণে) গানটিও দীর্ঘদিন ধরে হয়ে আছে এই উৎসবের ‘থিম সং’।

গবেষক ও মারমা জনগোষ্ঠীর প্রবীণ ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাংলাদেশে মৈত্রী পানিবর্ষণ উৎসবের শুরু গত শতকের সত্তরের দশকে। কিছু তরুণ মিয়ানমারে সাংগ্রাইং উৎসবে এ ধরনের আয়োজন দেখে দেশেও এর প্রচলন করেন। আর ‘সাংগ্রাইংমা ঞি ঞি ঞা ঞা রিকোজাই পামে’ উৎসবের থিম সং হয়েছে ১৯৮৪ সালে।

মৈত্রী পানিবর্ষণ উৎসবকে অনেকেই ‘জলকেলি’ ও ‘পানি খেলা’ বলে থাকেন। তবে এসব নাম আপত্তিকর বলে মনে করেন মারমা সমাজের অনেকেই। তাঁদের দাবি, এর মধ্য দিয়ে ধর্মের যোগ থাকা অনুষ্ঠানটি ভুলভাবে উপস্থাপন হয়।

এবারের সাংগ্রাইং উপলক্ষে আজ বুধবার থেকে বান্দরবান জেলা শহরে মৈত্রী পানিবর্ষণ উৎসব শুরু হয়েছে। তবে জেলার অন্যান্য জায়গায় গতকাল মঙ্গলবার এই উৎসব শুরু হয়। খাগড়াছড়িতে কোথাও কোথাও সোমবার শুরু হয়েছে মৈত্রী পানিবর্ষণ উৎসব।

মারমা জনগোষ্ঠীর প্রবীণদের একজন শিক্ষাবিদ থোয়াইংচ প্রু। তিনি প্রথম আলকে বলেন, সাংগ্রাইং আখ্যেয়া বা মূল সাংগ্রাই দিনে বুদ্ধমূর্তি স্নানের আগে মৈত্রী পানিবর্ষণ উৎসব হয় না। এটা প্রথাসিদ্ধ রীতি। তাই মৈত্রী পানিবর্ষণের সঙ্গে ধর্মের যোগ বেশ স্পষ্ট। তিনি বলেন, পানিকে মারমারা পবিত্র মনে করে। তাই সাংগ্রাইং উৎসবে বন্ধুত্বের বন্ধন এবং পরস্পরের প্রতি মৈত্রী ভাবনা নবায়ন ও সুদৃঢ় করার জন্য একে-অপরের দিকে পানি ছোড়েন। পানি ছিটানোর পর কেউ বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখালে বোঝা যাবে, বন্ধুত্বের সম্পর্কে ও বন্ধনে টানাপোড়েন আছে। এটিই মৈত্রী পানিবর্ষণের মূল্যবোধ। এ কারণে অনেক সময় অযাচিত কাউকে পানিবর্ষণ করলে আগে সালিসের মুখোমুখিও হতে হতো।

মৈত্রী পানিবর্ষণ উৎসবে মেতেছেন মারমা সম্প্রদায়ের তরুণ-তরুণীরা। গতকাল বান্দরবানের ডলুপাড়ায়

সম্পর্কিত নিবন্ধ