আজ খতমে তারাবিহতে পবিত্র কোরআনের সুরা ইসরা ও সুরা কাহাফের ১ থেকে ৭৪ নম্বর আয়াত তিলাওয়াত করা হবে; ১৫তম পারা পড়া হবে। এখানে নবী (সা.)-এর মিরাজ, ফিতনা-বিপর্যয় সৃষ্টির কারণে শাস্তি, সামাজিক জীবনে শিষ্টাচার, মানুষের তাড়াহুড়া, নবীজির প্রতি তাহাজ্জুদের নির্দেশ, আল্লাহ ও বান্দার হক, মা-বাবার প্রতি সদাচার, আসহাবে কাহাফের ঘটনা, কোরআনের বৈশিষ্ট্য, আল্লাহর সুন্দর নাম, বান্দার ডাকে আল্লাহর সাড়া, আল্লাহর সামনে যুক্তিতর্ক নিষেধ, প্রাণ হত্যা, সততার সঙ্গে ব্যবসা, মিতব্যয়িতা, ব্যভিচারের শাস্তি ও নেয়ামতের শুকরিয়া আদায়সহ অনেক বিষয়ের বর্ণনা রয়েছে।
সুরা ইসরায় মিরাজের কাহিনি
১১১ আয়াতবিশিষ্ট সুরা ইসরা মক্কায় অবতীর্ণ। পবিত্র কোরআনের ১৭তম সুরা এটি। ইসরা অর্থ রাতের সফর। বিশেষত বায়তুল্লাহ থেকে বায়তুল মুকাদ্দাস পর্যন্ত সফরকে ইসরা বলা হয়। এ সুরার শুরুতে নবীজি (সা.
ঊর্ধ্বজগতে মহানবী (সা.)–এর ভ্রমণ
আজকের তারাবিহ শুরু হবে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর মিরাজ তথা ঊর্ধ্বজগতে ভ্রমণের আয়াত তিলাওয়াতের মাধ্যমে। নবুয়াতের ১১তম বছরের ২৭ রজব।
বিশ্বনবি (সা.) এর তখন ৫১ বছর বয়স। তিনি মক্কার হাতিমে কাবায়। রাতের বেলা আধো ঘুম আধো জাগরণে শুয়ে আছেন। জিবরাইল ও মিকাইল (আ.) তাঁর কাছে এলেন। জমজমের পানি দিয়ে তাঁর বুক চিরে পবিত্র করা হলো। তিনি মিরাজের পথে চললেন।
আরও পড়ুনতারাবির নামাজে কোন দিন কোন সুরা পড়া হবে২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪মহানবী (সা.) সশরীর সজ্ঞানে জাগ্রত অবস্থায় বোরাকে করে রাতে ভ্রমণ করেন। প্রথমে মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসায় যান। পরে প্রথম আসমান হয়ে ধারাবাহিকভাবে সপ্তম আসমান অতিক্রম করেন।
সিদরাতুল মুনতাহা থেকে একাকী রফরফ বাহনে আরশে আজিম পর্যন্ত ভ্রমণ করে আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ লাভ করেন। জান্নাত-জাহান্নামও দেখেন। উম্মতের জন্য নিয়ে আসেন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ।
১৪ শিষ্টাচারমানুষের মধ্যে সামাজিক সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠায় আল্লাহ ১৪টি বিষয়ের আদেশ করেছেন এ সুরার ২৩ থেকে ৩৯ নম্বর আয়াতে। ১. আল্লাহ ছাড়া কারও ইবাদত না করা। ২. মা–বাবার প্রতি সদ্ব্যবহার। ৩. আত্মীয়স্বজনের অধিকার আদায় করা। ৪. মিসকিন ও মুসাফিরদের অধিকার আদায় করা। ৫. অপচয় না করা। ৬. কৃপণতা না করা। ৭. সন্তানদের হত্যা না করা। ৮. ব্যভিচারের পরিহার। ৯. কাউকে অন্যায়ভাবে হত্যা না করা। ১০. এতিমের সম্পদের অপব্যবহার না করা। ১১. প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা। ১২. পুরোপুরি ওজন দেওয়া। ১৩. জ্ঞান নেই, এমন বিষয়ের পেছনে না পড়া। ১৪. পৃথিবীতে দম্ভভরে না চলা।
কোরআন আত্মিক রোগের ওষুধ
সুরা ইসরার ৮২ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘কোরআনে নাজিলকৃত আয়াতের মধ্যে আমি মুমিনদের জন্য রহমত ও শিফা অবতীর্ণ করেছি।’ কোরআন আত্মিক রোগের মহৌষধ। এ মহাগ্রন্থ সব ধরনের আত্মিক রোগ থেকে মানুষকে পরিত্রাণ দেয়। বাহ্যিক রোগ নিরাময়েরও অমোঘ ব্যবস্থাপত্রও এটি।
ইমাম ইবনুল কাইয়িম (রহ.) বলেন, ‘আল্লাহ এ আয়াতে কোরআনের একটি মৌলিক গুণ তুলে ধরেছেন। এটি মানুষের জন্য রহমত ও পথ্য হিসেবে কাজ করে। আত্মিক ও শারীরিক ব্যাধি থেকে মুক্তি পাওয়ার শক্তিশালী ও কার্যকর মাধ্যম হলো কোরআন।’ (রুহের খোরাক, পৃষ্ঠা: ২২)
আরও পড়ুনধ্বংস থেকে এক জাতির মুক্তির কাহিনি১৮ মার্চ ২০২৪গুহাবাসী সাত তরুণের কাহিনি সুরা কাহাফে
কোরআনের ১৮তম সুরা কাহাফ মক্কায় অবতীর্ণ। ১১০টি আয়াত রয়েছে এ সুরার। কাহাফ অর্থ গুহা। সুরায় গুহাবাসীর গল্প থাকায় নাম রাখা হয়েছে সুরা কাহাফ। এ সুরায় ৪ ঘটনার বিবরণ রয়েছে। ১. গুহাবাসী ৭ তরুণের ঘটনা। ২. বাগানের মালিকের বিশ্বাসের গল্প। ৩. মুসা ও খিজির (আ.)-এর ঘটনা। এবং ৪. বাদশাহ জুলকারনাইনের কাহিনি।
সুরা কাহাফের ফজিলত
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে সুরা কাহাফের প্রথম ১০ আয়াত মুখস্থ করবে, সে দাজ্জালের ফেতনা থেকে নিরাপদ থাকবে।’ (মুসলিম, হাদিস: ৮০৯)
আরেকটি হাদিসে আছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে জুমার দিন সুরা কাহাফ পাঠ করে, তার জন্য দুই জুমার মধ্যবর্তী সময়টুকু আলো হবে।’ (বাইহাকি, হাদিস: ৬২০৯)
গুহার মধ্যে তিন শতাব্দী ঘুমে
তখনকার বাদশাহর নাম ছিল দিকইয়ানুস। সে ছিল অবিশ্বাসী। সে সময়ের কারও মধ্যে একত্ববাদে বিশ্বাস ছিল না। সাতজন যুবক ইমান এনে এক আল্লাহকে বিশ্বাস করেছিলেন। তাঁরা নিজেদের মতো করে ইবাদত করতেন। লোকেরা একবার জেনে গেল। বাদশাহর কানে গেল ব্যাপারটি। বাদশাহ হত্যার হুমকি দেন। তাঁরা ইমান বাঁচাতে দেশ ছাড়েন। আশ্রয় নেন একটি পাহাড়ের গুহায়। একটি কুকুরও ছিল তাঁদের সঙ্গে। কুকুরের নাম ছিল কিতমির। বাদশাহর বাহিনী তাঁদের হন্য হয়ে খুঁজল, কিন্তু পেল না। গুহায় আল্লাহ তাঁদের ঘুম পাড়িয়ে দেন। সেই ঘুম ৩০৯ বছর পর্যন্ত দীর্ঘ হয়।
আরও পড়ুনপ্রাচীন ৬ জাতি ধ্বংসের কাহিনি১৬ মার্চ ২০২৪ঘুম ভাঙার পর তাঁদের একজন খাদ্য সংগ্রহের জন্য শহরে এলেন। দেখলেন, সব পরিবর্তন হয়ে গেছে। তাঁর মুদ্রাও চলল না। তিনি বেশ আশ্চর্য হলেন। জানলেন, বর্তমান বাদশাহ বিশ্বাসী মানুষ। জালেম বাদশাহ মারা গেছেন সেই কবে। তাঁদের ওপর দিয়ে গেছে তিনটি শতক।
লোকেরা হাঁ করে তাঁকে দেখছিলেন তখন। বিস্মিত হয়ে নানা কথা জিজ্ঞেস করছিলেন। তিনি গুহায় সঙ্গীদের কথা বলে দ্রুত কেটে পড়েন। গুহায় ফিরে বিস্তারিত কাহিনি শোনান সাথিদের। বর্তমান বাদশাহ ছুটে এলেন গুহায়। দেখেন, গুহার ভেতর সবাই মারা গেছেন। আসহাবে কাহাফের এ ঘটনা বর্ণিত হয়েছে সুরা কাহাফের ৯ থেকে ২৬ নম্বর আয়াতে।
আল্লাহকে ভুলে যাওয়ার পরিণাম
সুরা কাহাফের ৩২ থেকে ৪২ নম্বর আয়াতে দুই বন্ধুর কাহিনি রয়েছে। একজনের ছিল অত্যন্ত মূল্যবান ফলফলাদির বাগান। এ ছাড়া আরও বিভিন্ন সম্পদ ছিল। একসময় তাকে অহংকার পেয়ে বসে। আল্লাহকে ভুলে গেল। এমনকি কিয়ামতের ব্যাপারেও সন্দিহান হয়ে পড়ল। তার ঈমানদার বন্ধু তাকে সতর্ক করল। আল্লাহর অনুগ্রহ ও কুদরতের কথা বোঝাল। কিন্তু সে পড়ে থাকল তার সম্পদ নিয়ে। বন্ধুর কথায় সাড়া দিল না। একদিন আল্লাহর আজাব তার সমস্ত বাগান জ্বালিয়ে কয়লা বানিয়ে দেয়।
রায়হান রাশেদ: আলেম ও লেখক
আরও পড়ুনহালাল খাবার গ্রহণ ও অসিয়তের গুরুত্ব১৫ মার্চ ২০২৪উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ক রআন র র আয় ত র জন য আল ল হ ব দশ হ মসজ দ র ঘটন
এছাড়াও পড়ুন:
বন্দরে বিভিন্ন ওয়ারেন্টে গ্রেপ্তার ৪
বন্দরে বিভিন্ন মামলার ৪ ওয়ারেন্টভূক্ত পলাতক আসামীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃতদের বুধবার (১২ মার্চ) দুপুরে উল্লেখিত ওয়ারেন্টে আদালতে প্রেরণ করেছে পুলিশ।
এর আগে গত মঙ্গলবার (১১ মার্চ) রাতে বন্দর থানার বিভিন্ন এলাকায় ওয়ারেন্ট তামিল অভিযান চালিয়ে এদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো বন্দর উপজেলার বারপাড়া এলাকার মৃত মতিউর রহমানের ছেলে আমির হোসেন (৪২) একরামপুর এলাকার মৃত বারেক মিয়ার ছেলে বিল্লাল হোসেন (৩৫) বন্দর স্বল্পেরচক এলাকার হেলাল উদ্দিন মিয়ার ছেলে সিআর মামলার ওয়ারেন্টভূক্ত আসামী সাইফুল ইসলাম (৩৮) ও মদনপুর এলাকার মৃত রশিদ মিয়ার ছেলে নারী ও শিশু নির্যাতন মামলার ওয়ারেন্টভূক্ত আসামী সাইফুল ইসলাম (৪০)।