পাকিস্তানে ট্রেন ছিনতাইয়ের পেছনে রাষ্ট্রীয় শক্তির জড়িত থাকা নিয়ে সন্দেহ
Published: 12th, March 2025 GMT
আধুনিককালের ইতিহাসে ট্রেন ছিনতাইয়ের ঘটনা খুবই বিরল। বিশ্বে এখন পর্যন্ত সফল ট্রেন ছিনতাইয়ের যে ঘটনাটি জানা যায়, সেটি ঘটেছিল ১৯৭৭ সালে মলুক্কান বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মাধ্যমে।
পাকিস্তানে ট্রেন ছিনতাইয়ে যুক্ত দ্য বেলুচিস্তান লিবারেশন আর্মির (বিএলএ) কৌশলগত লড়াই মূলত গেরিলা যুদ্ধকে ঘিরে আবর্তিত। এ লড়াইয়ের অবিচ্ছেদ্য অনুষঙ্গ হলো ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি), গেরিলা হামলা ও বিক্ষিপ্ত নাশকতা।
চলন্ত ট্রেন ছিনতাই তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়—নিখুঁত সময়, রেল নেটওয়ার্ক সম্পর্কে বিস্তারিত গোয়েন্দা তথ্য ও ত্রুটিহীন লজিস্টিক সিঙ্ক্রোনাইজেশনের ওপর নির্ভরশীল।
প্রত্যন্ত টানেলে ট্রেন, তা-ও এমন একটি ট্রেন যা চলন্ত অবস্থায় রয়েছে ও জনপদ থেকে বহুদূরে, সেটি ছিনতাই করার সঙ্গে জড়িত অনেক কিছু। এর সঙ্গে যুক্ত রয়েছে পরিবহনকর্মী, অস্ত্রশস্ত্রের জোগান, কর্তৃপক্ষের নজরদারি এড়িয়ে বিস্ফোরক সরবরাহ করা ইত্যাদি। আরও যুক্ত আছে উল্লেখযোগ্য পূর্বপ্রস্তুতি, সরবরাহ শৃঙ্খল, সামরিক স্তরের যানবাহন ও লজিস্টিকস সমর্থন। অথচ এর সবই বিএলএর সক্ষমতার বাইরে।বিএলএ তার ২৫ বছরের বিচ্ছিন্নতাবাদী লড়াইয়ে এত উন্নত কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সক্ষমতা বা এই মাত্রার গতিশীল অভিযানের জন্য প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিগত দক্ষতা প্রদর্শন করেনি।
ট্রেন ছিনতাই এমন এক অসংগতিপূর্ণ ঘটনা, যেখানে অসমযুদ্ধের রীতি উপেক্ষা করা হয়ে থাকে। এ অসংগতি বাইরের সহায়তার দিকে ইঙ্গিত করে। এ সহায়তা সম্ভবত এমন কোনো রাষ্ট্রীয় পক্ষ থেকে এসেছে; যাদের মিশন পরিচালনার উন্নত পরিকল্পনা, তথ্যানুসন্ধান ও মিশন কার্যকর করার সুযোগ রয়েছে।
একটি চলন্ত ট্রেনের প্রকৃত অবস্থান নির্ণয় এবং এর গতি ও ঝুঁকি নির্ধারণে তাৎক্ষণিক গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করা প্রয়োজন। তবে বিএলএ এমন সক্ষমতা থেকে অনেক দূরে বলেই মনে করা হচ্ছে। স্যাটেলাইটে ধারণ করা দৃশ্যের সহায়তা ছাড়াই কি তাহলে জাফর এক্সপ্রেস ট্রেনটি ছিনতাইয়ের কবলে পড়েছে।
বিএলএর মতো বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো নির্ভর করে স্থানীয় ও মাঠপর্যায়ের তথ্যের ওপর। আর রাষ্ট্রীয় শক্তির হাতে থাকে সিগন্যাল ইন্টেলিজেন্স (এসআইজিআইএনটি) এবং হিউম্যান ইন্টেলিজেন্স (এইচইউএমআইএনটি) নেটওয়ার্কের অত্যাধুনিক ভান্ডার। জাফর এক্সপ্রেসে হামলার স্থানগত নির্ভুলতা এ ঘটনায় রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতার অধীন কোনো না কোনো স্তরের নজরদারি থাকার ইঙ্গিত দেয়।
বিএলএর একা এ ঘটনা ঘটানোর সক্ষমতা থাকার বিষয়টি সন্দেহজনক। কোনো না কোনো রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষক অবশ্যই গোয়েন্দা তথ্য, প্রশিক্ষণ ও উপকরণ সরবরাহ করেছিল। এরপর বিএলএ যখন কৃতিত্ব নিল, তখন তারা পিছিয়ে গেল।প্রত্যন্ত টানেলে ট্রেন, তা–ও এমন একটি ট্রেন যা চলন্ত অবস্থায় রয়েছে ও জনপদ থেকে বহুদূরে, সেটি ছিনতাই করার সঙ্গে জড়িত অনেক কিছু। যেমন এর সঙ্গে যুক্ত রয়েছে পরিবহনকর্মী, অস্ত্রশস্ত্রের জোগান, কর্তৃপক্ষের নজরদারি এড়িয়ে বিস্ফোরক সরবরাহ করা ইত্যাদি। আরও যুক্ত আছে উল্লেখযোগ্য পূর্বপ্রস্তুতি, সরবরাহ শৃঙ্খল, সামরিক স্তরের যানবাহন ও লজিস্টিকস সমর্থন। অথচ এর সবই বিএলএর সক্ষমতার বাইরে।
বিশেষায়িত প্রশিক্ষণ ও সুড়ঙ্গে অভিযান চালানোর কৌশল রপ্ত করা না থাকলে জাফর এক্সপ্রেসে এমন হামলা চালানো সম্ভব হতো না।
২৫ বছর ধরে বিএলএ স্থানীয় নিরাপত্তা বাহিনীকে নিশানা বানিয়ে আসছে। পাকিস্তানি নিয়ন্ত্রণের প্রতিবাদ হিসেবে তারা হামলা করে আসছে বিভিন্ন অবকাঠামোতে। জনপদ থেকে ২৫ মাইল দূরে সুড়ঙ্গের ভেতর ট্রেনকে লক্ষ্যবস্তু বানানোর ফলে সেখানে নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযান চালানো বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এসব বিষয় বিএলএর স্বাভাবিক লক্ষ্যের সঙ্গে কম ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের কৌশলগত লক্ষ্যের সঙ্গে বেশি সংগতিপূর্ণ। বিএলএ একটি সুবিধাজনক ফ্রন্ট হতে পারে। কিন্তু যেভাবে ট্রেন ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটানো হয়েছে, তা একটি বৃহত্তর অ্যাজেন্ডার দিকে ইঙ্গিত করে; যার জন্য প্রয়োজন রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের লক্ষ্য ও দূরদর্শিতা।
পাকিস্তানে জিম্মি করা ট্রেনের এক যাত্রীকে সহায়তা করছেন একজন সেনা। ১১ মার্চ, বেলুচিস্তানের মাচ রেলওয়ে স্টেশনে.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
স্থানীয় সরকার বিভাগ ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দুই প্রকল্পে পরামর্শক নিয়োগে অনুমোদন
পার্বত্য চট্টগ্রামে স্থানীয় সরকার বিভাগের একটি ও গোপালগঞ্জে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের একটি ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি। এতে মোট ব্যয় হবে ৯০ কোটি ৪০ লাখ ৫ হাজার ৯৭১ টাকা।
মঙ্গলবার (১১ মার্চ) সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কমিটির সভায় প্রস্তাব দুটিতে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সভায় কমিটির সদস্য ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সভা সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় সরকার বিভাগের জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম সমন্বিত ও টেকসই পৌর পানি সরবরাহ স্যানিটেশন’ প্রকল্পের আওতায় পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগের প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। এ প্রকল্পের আওতায় ‘ডিটেইল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিজাইন ফর ওয়াটার সাপ্লাই অ্যান্ড স্যানিটেশন ঈশ্বরদী ক্লাসটার টাউন অ্যান্ড খাগড়াছড়ি টাউন’-এ পরামর্শক সেবা ক্রয়ের জন্য সংক্ষিপ্ত তালিকাভুক্ত পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের কাছে রিকোয়েস্ট ফর প্রপোজাল ইস্যু করা হলে চারটি প্রতিষ্ঠান প্রস্তাব দাখিল করে। তার মধ্যে তিনটি প্রস্তাব কারিগরিভাবে যোগ্য বিবেচিত হয়।
প্রস্তাবের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসির সুপারিশ অনুযায়ী সর্বোচ্চ স্কোর অর্জনকারী দরদাতা প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে (১) দোহা, (২) দেবকন এবং (৩) আডব্লিউএম-কে নিয়োগের প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। এতে ব্যয় হবে ৪৪ কোটি ৪১ লাখ ৮৮ হাজার ৪৩ টাকা।
পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের কাজ হবে খাগড়াছড়ি পৌর পানি সরবরাহ, কুমিল্লা ও ঈশ্বরদী ক্লাস্টারে আটটি পৌরসভায় এবং দেশের উপকূলীয় ২২টি পৌরসভার স্যানিটেশন ব্যবস্থার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে নতুন প্রকল্প প্রণয়নের প্রস্তুতি।
সভায় ‘গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া-কোটালীপাড়া উপজেলার জলাবদ্ধতা নিরসনে সমন্বিত পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা বাস্তবায়ন’ প্রকল্পের আওতায় পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ-সংক্রান্ত পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের একটি ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে।
প্রকল্পের আওতায় ইনস্টিটিউশনাল স্ট্রেনদেনিং অ্যান্ড প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট পরামর্শক সেবা ক্রয়ের জন্য সংক্ষিপ্ত তালিকাভুক্ত ছয়টি প্রতিষ্ঠানের কাছে রিকোয়েস্ট ফর প্রপোজাল ইস্যু করা হলে পাঁচটি প্রতিষ্ঠান প্রস্তাব দাখিল করে। তার মধ্যে চারটি প্রস্তাব কারিগরি ও আর্থিকভাবে যোগ্য বিবেচিত হয়।
প্রস্তাবের সব প্রক্রিয়া শেষে পিইসির সুপারিশ করা সর্বোচ্চ স্কোর অর্জনকারী দরদাতা প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে (১) হাস্কওনিং ডিএইচভি নেদারল্যান্ড বিভি (নেদারল্যান্ডস) এবং (২) দেব কনসালট্যান্ট লিমিটেড বাংলাদেশকে নিয়োগের প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে ব্যয় হবে ৪৫ কোটি ৯৮ লাখ ১৭ হাজার ৯২৮ টাকা।
ঢাকা/হাসনাত/রফিক