প্রায় সাত বছর আগে চাঁদার জন্য দুই শিক্ষার্থীকে নির্যাতনের অভিযোগ এনে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি–সম্পাদকসহ কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে আদালতে দুটি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে একটি মামলায় ছয়জন এবং অপর মামলায় চারজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। দুটি মামলাতেই আসামি করা হয়েছে অজ্ঞাত পরিচয় ১০ থেকে ১৫ জনকে।

গতকাল মঙ্গলবার চট্টগ্রামের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফারজানা ইয়াছমিনের আদালতে মামলা দুটি করেন জামিল আহসান ও মাহমুদুল ইসলাম নামের প্রাক্তন দুই শিক্ষার্থী। জামিল ও মাহমুদুল ইসলাম উভয়ই চুয়েটের কম্পিউটারবিজ্ঞান ও কৌশল বিভাগের ২০১৩–১৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।

মাহমুদুল ইসলামের করা মামলায় তৎকালীন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সৈয়দ ইমাম বাকের, সাধারণ সম্পাদক মো.

শাখাওয়াত হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক অতনু মুখার্জি ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নিলয় দের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। জামিল আহসানের করা মামলায় এ চারজনের পাশাপাশি সাবেক সহসভাপতি মেহেদী হাসান ও ফখরুল ইসলাম ফাহাদের নাম উল্লেখ করা হয়।

মাহমুদুল ইসলাম মামলায় উল্লেখ করেন, ২০১৮ সালের ১৪ মে বাকের ও শাখাওয়াত তাঁকে শিবিরের নেতা আখ্যা দিয়ে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে হলে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দিতে হবে। চাঁদা দিতে অসম্মতি জানানোর কারণে ১৯ মে দিবাগত রাত একটায় ওই দুজন আরও ১০ থেকে ১৫ ব্যক্তিকে নিয়ে আবাসিক হলে তাঁর কক্ষ ভাঙচুর করে সব শিক্ষাসনদ নিয়ে যান। সনদ ফেরত পেতে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সহযোগিতা চাইলে প্রশাসন অভিযুক্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি মিটমাট করতে বলেন। পরে তৎকালীন ছাত্রকল্যাণ অধিদপ্তরের উপপরিচালকের নির্দেশনা অনুযায়ী কথা বলতে গেলে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা তাঁকে মারধর করেন। মারধরের এক পর্যায়ে তাঁর বাবাকে ফোন করেন তাঁরা। ফোনে তাঁর কান্নার শব্দ শুনিয়ে পাঁচ লাখ টাকা দ্রুত পরিশোধ করতে বলা হয়। তখন জীবন বাঁচাতে এক সপ্তাহের মধ্যে চাঁদা পরিশোধ করবেন জানিয়ে ছাড়া পান মাহমুদুল। টাকা দিতে না পারায় মারধরের ভয়ে তিনি আর কখনো বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে পারেননি। স্নাতক শেষ না করেই তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়তে হয়।

অপর মামলায় জামিল আহসান অভিযোগ করেন, তাঁর কাছেও পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন তখনকার চুয়েট ছাত্রলীগের সভাপতি বাকের ও সাধারণ সম্পাদক শাখাওয়াত। তবে এত টাকা জোগাড় করা তাঁর পক্ষে সম্ভব ছিল না। ফলে তাঁকে পালিয়ে বেড়াতে হয়েছে। ২০১৮ সালের ১৯ জুলাই পরীক্ষায় অংশ নিতে ক্যাম্পাসে গিয়েছিলেন। তখন পরীক্ষা শেষ করা মাত্র তাঁকে তুলে নিয়ে ছাত্র সংসদে আটকে রেখে লোহার রড, হকিস্টিক ও স্টাম্প দিয়ে পেটানো হয়। পিটুনির এক পর্যায়ে তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। জ্ঞান ফেরার পর পানি দিয়ে আবারও মারধর করা হয়েছে। পরে তাঁর সামনে ছুরি রেখে ছবি তুলে মিথ্যা মামলা দিয়ে তাঁকে রাউজান থানায় সোপর্দ করেন ছাত্রলীগ নেতারা। ওই মামলায় তিনি তিন মাস কারাভোগ করেছেন।

জামিল আহসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাকে নির্যাতনের বিষয়ে তখন প্রশাসন অবগত থাকলেও কেউ আমার পাশে দাঁড়ায়নি। অভিযুক্ত ব্যক্তিরা ছাত্রলীগের নেতা হওয়ায় এত দিন মামলা করতে পারিনি। আমার সঙ্গে হওয়া জুলুমের ন্যায়বিচার পেতে তাই এখন আদালতের দ্বারস্থ হয়েছি।’ দুটি মামলারই আইনজীবী ইমরানুল হক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, আদালত মামলা দুটি গ্রহণ করেছেন। রাউজান থানাকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: জ ম ল আহস ন ম রধর

এছাড়াও পড়ুন:

যুবলীগ নেতার ১৩ বছরের কারাদণ্ড

তথ্য গোপন এবং জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদকের করা মামলায় বগুড়ার বহিষ্কৃত যুবলীগ নেতা আব্দুল মতিন সরকারকে ১৩ বছর কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।

মঙ্গলবার (১১ মার্চ) দুপুরে এই রায় ঘোষণা করেন বগুড়ার স্পেশাল জজ মো. শহীদুল্লাহ। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দুদকের স্পেশাল পিপি আবুল কালাম আজাদ।

সাজাপ্রাপ্ত আব্দুল মতিন সরকার বগুড়া শহর যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি বগুড়া শহরের চকসূত্রাপুর এলাকার মৃত মজিবর রহমান সরকারের ছেলে। তার বিরুদ্ধে ডজনখানেক হত্যা, অস্ত্র এবং মাদক আইনে একাধিক মামলা রয়েছে। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর নতুন করে একাধিক হত্যা মামলায় আসামি হওয়ায় আত্মগোপনে রয়েছেন তিনি।

আরো পড়ুন:

পাবনায় যুবলীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যা 

রাঙ্গুনিয়া যুবলীগের নেতা ঢাকায় গ্রেপ্তার

এর আগে, অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মতিন সরকারের বিরুদ্ধে ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর মামলা করেন বগুড়ার সমন্বিত দুর্নীতি দমন কার্যালয়ের তৎকালীন সহকারী পরিচালক আমিনুল ইসলাম। চার্জশীট দাখিল করেন ২০২০ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি।

দুদকের আইনজীবী (পিপি) আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‍“আব্দুল ‍মতিন সরকারের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ ওঠে। ২০১৮ সালের মার্চ মাসে সম্পদ বিবরণী দাখিলের নোটিশ পাঠানো হয়। ওই মাসেই আব্দুল মতিন সরকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের হিসাব দাখিল করেন। মতিনের দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণী অনুসন্ধান করে দুদক ২ কোটি ২৮ লাখ ৩১ হাজার ৩১৫ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ পায়। তিনি এই সম্পদের মধ্যে ১ কোটি ৪২ লাখ ১৯ হাজার ৪৯৩ টাকার তথ্য গোপন করেন।” 

তিনি আরো বলেন, “আব্দুল ‍মতিন সরকারের বিরুদ্ধে এই দুই অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তথ্য গোপনের জন্য তাকে ৩ বছর এবং জ্ঞাত আয় বহির্ভূথ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সাথে তার জ্ঞাত আয়বহির্ভূতভাবে অর্জিত সম্পদ রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্তের আদেশ দিয়েছেন বিচারক।”

প্রসঙ্গত, মতিন সরকার বগুড়ার আলোচিত ধর্ষণ এবং মা মেয়েকে মাথা ন্যাড়া করে দেয়া কাণ্ডের নায়ক তুফান সরকারের বড় ভাই। ২০১৭ সালের ১৭ জুলাই কলেজে ভর্তির কথা বলে এক ছাত্রীকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করেন তুফান। পরে তুফানের স্ত্রী ও তার বড় বোন নারী কাউন্সিলর এবং তুফানের লোকেরা ধর্ষণের শিকার ছাত্রী ও তার মায়ের ওপর নির্যাতন চালান। এরপর দুজনেরই মাথা ন্যাড়া করে দেন। এ ঘটনায় ছাত্রীর মা বাদী হয়ে ২৮ জুলাই রাতে মামলা করেন। মতিনের ছত্রছায়াতেই তুফান বেপরোয়া জীবযাপন করতেন। বর্তমানে তুফান হত্যা মামলা গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে রয়েছেন।

ঢাকা/এনাম/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ব্রাহ্মণবাড়িয়া সিভিল সার্জনের কার্যালয়ে চাকরি, পদ ৯১
  • যুবলীগ নেতার ১৩ বছরের কারাদণ্ড
  • গোবিপ্রবির নাম পরিবর্তনে সনদ জটিলতা, বিপাকে  শিক্ষার্থীরা