ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ডাকাতিতে সক্রিয় ৩টি গ্রুপ। এসব গ্রুপে ৩০-৩৫ জনের মতো রয়েছে। তারা রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর থেকে আসা প্রবাসীদের গাড়ি টার্গেট করে ডাকাতি করে এই তিনটি গ্রুপ। ২৭ ফেব্রুয়ারি ও ১ মার্চ এ মহাসড়কে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে প্রবাসীদের দুটি গাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় চৌদ্দগ্রাম থানা ও জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) পুলিশ আন্তঃজেলা ডাকাত দলের সক্রিয় চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে। এ সময় লুণ্ঠিত মালামালের কিছু অংশ উদ্ধার করা হয়েছে। 

আজ বুধবার কুমিল্লা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নাজির আহমেদ খান।

তিনি আরও বলেন, মোবাইলের মাধ্যমে বিভিন্ন জেলার ডাকাতরা সংঘবদ্ধ হয়। বিশেষ করে ঢাকার বিমান বন্দরসহ মহাসড়কের পাশে বড় বড় হোটেল রেস্টুরেন্টগুলোকে ঘিরে ডাকাত দলের সোর্স রয়েছে। ঢাকা বিমান বন্দর থেকে তারা প্রবাসীদের বহন করা গাড়িগুলোকে টার্গেট করে মহাসড়কে ডাকাতি সংঘটিত হয়। সম্প্রতি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে চৌদ্দগ্রামের ফাল্গুনকরা এলাকায় কুয়েতপ্রবাসী চট্টগ্রামের জোরারগঞ্জের নাইমুল ইসলাম এবং মালয়েশিয়াপ্রবাসী ফেনীর দাগনভূঁয়ার বেলাল হোসেনের গাড়িতে একই কায়দায় পিকআপ ভ্যান দিয়ে ব্যারিকেড সৃষ্টি করে ডাকাতি করা হয়। তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় চৌদ্দগ্রাম থানার ওসি মো.

হিলাল উদ্দিন ও জেলা ডিবির ওসি মো. আবদুল্লাহর নেতৃত্বে পুলিশ মঙ্গলবার রাতভর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ৪ ডাকাতকে গ্রেপ্তার করে।

গ্রেপ্তাররা হচ্ছে- চাঁদপুর জেলার কচুয়া থানার মনপুরা গ্রামের আবদুল মান্নানের ছেলে আবদুল হান্নান (৩৫), লক্ষ্মীপুরের রায়পুর থানার চরমোহনা গ্রামের মৃত সিরাজ মোল্লার ছেলে শরীফ হোসেন (৪৫), কুমিল্লার চান্দিনা থানার নুরপুর গ্রামের তাজুল ইসলামের ছেলে আলাউদ্দিন (৩৫) ও একই থানার জোরপুকুরিয়া গ্রামের মৃত রমিজ উদ্দিনের ছেলে নজরুল ইসলাম (৬০)। 

পুলিশ সুপার বলেন, সড়ক-মহাসড়ক নিরাপদ রাখতে কুমিল্লা অংশে হাইওয়ে পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় করে জেলা পুলিশের ১০টি বিশেষ টিম কাজ করছে। ঢাকা বিমান বন্দর থেকে ছেড়ে আসা প্রবাসীদের গাড়িগুলোকে মেঘনা টোলপ্লাজা এলাকায় একত্রিত করা হয়। তাদের মধ্যে যারা পুলিশি সহায়তা নিতে চায় তাদেরকে ওখানকার হাইওয়ে পুলিশ কুমিল্লা অংশে এনে আমাদের কাছে পৌঁছে দিলে পর্যাপ্ত পুলিশ পাহারার মাধ্যমে কুমিল্লা জেলা পুলিশ তাদেরকে গন্তব্যে পৌঁছে দেয়। গত দুই-তিন দিন ধরে প্রবাসীদের প্রায় শতাধিক গাড়িকে এভাবে নিরাপদে তাদের গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। 

এ সময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আরাফাতুল ইসলাম ও রাশেদুল হক চৌধুরী, জেলা ডিবির ওসি মো. আবদুল্লাহ, চৌদ্দগ্রাম থানার ওসি মো. হিলাল উদ্দিনসহ জেলা পুলিশের পদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: প রব স দ র ব ম ন বন ল ইসল ম আবদ ল

এছাড়াও পড়ুন:

ধর্ষণ মামলার বিচার ৯০ দিনের মধ্যে করতে অধ্যাদেশের খসড়া তৈরি, জানালেন আইন উপদেষ্টা

ধর্ষণ মামলার তদন্ত ও বিচারের সময় কমিয়ে অর্ধেক করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) অধ্যাদেশের খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে বলে আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল জানিয়েছেন। আজ বুধবার বিকেলে সচিবালয়ে ‘ধর্ষণবিরোধী মঞ্চের’ প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকের পর আইন উপদেষ্টা সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান উপদেষ্টা। এ সময় ‘ধর্ষণবিরোধী মঞ্চের’ পক্ষ থেকে পাঁচ দফা দাবি জানানো হয়।

গত রোববার আইন উপদেষ্টা সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, ধর্ষণের মামলায় তদন্তের সময় ৩০ থেকে কমিয়ে ১৫ দিন করা হচ্ছে। আর বিচার শেষ করতে হবে ৯০ দিনের মধ্যে। এ ছাড়া উপযুক্ত ক্ষেত্রে বিচারক যদি মনে করেন তবে ডিএনএ প্রতিবেদন ছাড়াই চিকিৎসা সনদের ভিত্তিতে এবং পারিপার্শ্বিক সাক্ষীর ভিত্তিতে মামলার বিচারকাজ চালাতে পারবেন। এমন বিধান রেখে আইন সংশোধন করা হচ্ছে। আজ উপদেষ্টা জানান, অধ্যাদেশের খসড়াও তৈরি করা হয়েছে।

আইন উপদেষ্টা বলেন, গত পরশু ও গতকাল (মঙ্গলবার) সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে পরামর্শ সভা করা হয়েছে। একটি খসড়া আইন (অধ্যাদেশ) করা হয়েছে। সেটি আজ কিছু কিছু অংশীজনের কাছে পাঠানো হয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব এই আইন কঠোর করার চেষ্টা করা হবে, যাতে ধর্ষণ মামলার বিচার শুধু দ্রুতই নয়, বিচারও যাতে নিশ্চিত ও যথাযথ হয়, এগুলো তাদের (ধর্ষণবিরোধী মঞ্চ) বলা হয়েছে।

অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, গণ-অভ্যুত্থানে বিজয়ের পরবর্তী সময়ে দেশে মেয়েদের আক্রমণ করা হচ্ছে। বিভিন্ন গোষ্ঠী থেকে এবং বিভিন্ন ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়েও তাঁদের ওপর আক্রমণ করা হচ্ছে। এর বিরুদ্ধে সরকার ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করেছে।

ধর্ষণবিরোধী মঞ্চের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে আইন উপদেষ্টা আরও বলেন, তিনিও মনে করেন তাঁদের প্রতিটি দাবি যৌক্তিক। তাঁরা বলেন, মাগুরায় যে জঘন্য ঘটনা ঘটেছে, সর্বোচ্চ দ্রুততার সঙ্গে যেন বিচার নিশ্চিত করা হয়। তাদের আশ্বস্ত করা হয়েছে, মাগুরার ঘটনায় আসামি যারা আছে পুলিশ এরই মধ্যে তাদের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করেছে। এই বিচারকাজ কোনোরকম কালবিলম্ব না করে দ্রুত ও ন্যায়বিচার যাতে করা হয়, সে জন্য বিশেষ নজরদারি থাকবে। এটি তাদের বলা হয়েছে।

‘ধর্ষণবিরোধী মঞ্চের’ অন্যান্য দাবির বিষয়েও যথাসাধ্য চেষ্টা করা হবে বলে জানান আইন উপদেষ্টা।

‘ধর্ষণবিরোধী মঞ্চের’ পাঁচ দফা দাবি

এ সময় ‘ধর্ষণবিরোধী মঞ্চের’ পক্ষ থেকে পাঁচ দফা দাবি সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন মঞ্চের একজন প্রতিনিধি। তিনি বলেন, মাগুরায় শিশু ধর্ষণের অভিযোগে করা মামলাটি সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গে দেখতে হবে এবং এক মাসের মধ্যে যেন বিচারিক কাজটি শেষ হয় ও তাদের আশা দায়ীদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত করা হবে। দ্বিতীয়ত, বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা, যেখানে ধর্ষণের মামলার বিচার হবে। তৃতীয়ত, সারা দেশে নারীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন, সে বিষয়ে ব্যর্থতার দায় স্বীকার করে রাষ্ট্রকে জবাবদিহি করতে হবে, বিশেষ করে আইন, স্বরাষ্ট্র এবং নারী ও শিশু বিষয়ক উপদেষ্টার কথা বলেছেন তাঁরা। চতুর্থত, সারা দেশে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্রে ‘নারী ও শিশু নিপীড়নবিরোধী সেল’ কার্যকর করতে হবে। পঞ্চম দাবি হলো, ধর্ষণের ক্ষেত্রে যে আইনগুলো আছে অনেক ক্ষেত্রে সেগুলোর আইনি পরিভাষায় অস্পষ্টতা আছে, যার ফাঁকফোকর ধরে ধর্ষকেরা বেরিয়ে যায়। এগুলো যেন স্পষ্ট করা হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ