ট্রাম্পের নজরে পড়া গ্রিনল্যান্ডের নির্বাচনে স্বাধীনতাপন্থীদের বড় জয়
Published: 12th, March 2025 GMT
ডেনমার্কের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল গ্রিনল্যান্ডের সাধারণ নির্বাচনে মধ্য–ডানপন্থী বিরোধীরা আশ্চর্যজনক জয় পেতে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আকাঙ্ক্ষিত অঞ্চলটিতে স্বাধীনতার পক্ষে থাকা জাতীয়তাবাদী নালেরাক পার্টির সমর্থন বেশ বেড়েছে।
গ্রিনল্যান্ডের সরকারি সম্প্রচারমাধ্যম কেএনআর এ তথ্য জানিয়েছে। আজ বুধবার সকাল পর্যন্ত ভোট গণনা পুরোপুরি শেষ হয়নি। তবে নিজেদের ‘সোশ্যাল লিবারেল’ হিসেবে পরিচয় দেওয়া ডেমোক্রেটিক পার্টি অপ্রতিরোধ্যভাবে এগিয়ে রয়েছে। দলটি গ্রিনল্যান্ডের স্বাধীনতাকে সমর্থন করে। তবে পর্যাপ্ত সময় নেওয়ার পক্ষে।
স্বাধীনতাপন্থী দলগুলোর মধ্যে জাতীয়তাবাদী হিসেবে পরিচিত নালেরাক পার্টি এরই মধ্যে একটি ‘অত্যাশ্চর্য’ নির্বাচনী সফলতার দিকে এগিয়ে চলেছে বলেও জানিয়েছে কেএনআর।
আরও পড়ুনট্রাম্পের নজরে পড়া গ্রিনল্যান্ডে ভোট আজ১১ মার্চ ২০২৫মোট ৭২টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ৭১টির গণনা শেষে দেখা গেছে, নালেরাক পার্টি ২৪ দশমিক ৫ শতাংশ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। দলটির ভোট দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে। আর ২৯ দশমিক ৯ শতাংশ ভোট পেয়ে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে ডেমোক্রেটিক পার্টি। বিবিসি বলছে, ২১ শতাংশ ভোট পেয়ে ক্ষমতাসীন আইএ পার্টি তৃতীয় অবস্থানে নেমে গেছে।
অতীতে গ্রিনল্যান্ডের সাধারণ নির্বাচনের ভোট বাইরের বিশ্বের খুব কমই দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পেরেছে। কিন্তু এবার ভিন্ন আবহ রয়েছে। ট্রাম্পের গ্রিনল্যান্ড নিয়ন্ত্রণের আগ্রহের কারণে এবারের ভোট বাইরের বিশ্বের নজর কেড়েছে।
গ্রিনল্যান্ডের বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী ও বাম–গ্রিন আইএ পার্টির নেতা মুট এগেদে বলেছেন, ‘আমরা নির্বাচনের ফলাফলের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।’ ক্ষমতাসীনদের জোটসঙ্গী সিউমুত পার্টির নেতাও নির্বাচনে পরাজয় স্বীকার করে নিয়েছেন।
গ্রিনল্যান্ড দ্বীপের জনসংখ্যা ৬০ হাজারের কিছুটা কম। এর মধ্যে ভোটার প্রায় ৪৪ হাজার। স্বায়ত্তশাসিত দ্বীপটির ৩১ আসনের পার্লামেন্টে চার বছর অন্তর নির্বাচন হয়। পার্লামেন্টে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে ১৬ আসন পেতে হয়।
আরও পড়ুনগ্রিনল্যান্ড কেন ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ০৯ জানুয়ারি ২০২৫এবারের নির্বাচনে কোনো দলই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাচ্ছে না। তাই আগামী দিনগুলোয় জোট সরকার গঠনের জন্য এগিয়ে থাকা দলের মধ্যে আলোচনা শুরু হতে পারে। পরবর্তী সরকার গ্রিনল্যান্ডের স্বাধীনতার জন্য সময়সীমা নির্ধারণ করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
‘ডেমোক্র্যাটরা সব দলের সঙ্গে আলোচনার পথ উন্মুক্ত রেখেছে এবং ঐক্য চাইছে। বিশেষ করে, বিশ্বে এখন যা ঘটছে তা নিয়ে’, বলেন দলটির ৩৩ বছর বয়সী নেতা জেনস-ফ্রেডেরিক নিয়েলসেন। তিনি গ্রিনল্যান্ডের সাবেক ব্যাডমিন্টন চ্যাম্পিয়ন।
তবে দলের নির্বাচনী ফলাফলে ‘বেশ অবাক’ হয়েছেন বলেও জানান এই ডেমোক্রেটিক নেতা। তিনি বলেন, ‘আমরা এই ফলাফল আশা করিনি। আমরা বেশ খুশি।’
দ্বীপের বাসিন্দারা, যাঁদের প্রায় ৯০ শতাংশই ইনুইট—বলেছেন, তাঁরা তাঁদের সাবেক ঔপনিবেশিক শক্তি ডেনমার্কের দ্বারা দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকের মতো আচরণ পেতে পেতে ক্লান্ত। তাঁদের অভিযোগ, ঐতিহাসিকভাবে তাঁদের সংস্কৃতিকে দমন করা হয়েছে। জোরপূর্বক বন্ধ্যাকরণ কার্যক্রম চালানো হয়েছে। এমনকি পরিবারগুলো থেকে তাঁদের শিশুদের বিতাড়িত করাও হয়েছে।
এসব কারণে গ্রিনল্যান্ডের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সবাই স্বাধীনতার পক্ষে অবস্থান। তবে স্বাধীনতার সময়সীমা নিয়ে তাদের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে।
আরও পড়ুনট্রাম্প প্রথম নন, ৭৯ বছর আগেও গ্রিনল্যান্ড কিনতে চেয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র২৭ জানুয়ারি ২০২৫কৌশলগত অবস্থানের পাশাপাশি অব্যবহৃত খনিজ সম্পদের কারণে দ্বীপটির ওপর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নজর পড়েছে। তিনি তাঁর ক্ষমতার প্রথম মেয়াদে ২০১৯ সালে গ্রিনল্যান্ড কেনার ধারণাটি প্রথম সামনে এনেছিলেন।
গত জানুয়ারিতে ট্রাম্প দ্বিতীয় দফায় মার্কিন প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা নেন। ক্ষমতায় বসার পর থেকে তিনি দ্বীপটির নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার বিষয়ে তাঁর ইচ্ছার কথা বারবার বলে আসছেন। তবে ট্রাম্পের এই আগ্রহের বিষয়টি গ্রিনল্যান্ড ও ডেনমার্কের নেতারা বারবার নাকচ করেছেন।
গত সপ্তাহে মার্কিন কংগ্রেসে ভাষণ দেন ট্রাম্প। ওই ভাষণে তিনি বলেন, ‘জাতীয় নিরাপত্তার জন্য গ্রিনল্যান্ড আমাদের দরকার। যেকোনো উপায়ে আমরা এটি অর্জন করব।’ ট্রাম্পের এমন মন্তব্য গ্রিনল্যান্ডের রাজনীতিবিদদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে।
আরও পড়ুনগ্রিনল্যান্ড নিজের থাবায় নিতে ট্রাম্পের তৎপরতাকে কী চোখে দেখছেন সেখানকার বাসিন্দারা১২ জানুয়ারি ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: অবস থ ন র জন য র নজর ক ষমত
এছাড়াও পড়ুন:
পদযাত্রায় বাধার ঘটনায় প্রকাশিত ছবিতে সত্য আড়াল করা হয়েছে: পুলিশ সদর দপ্তর
বিভিন্ন সংবাদপত্রে ধর্ষণবিরোধী পদযাত্রায় পুলিশের বাধাসংক্রান্ত প্রকাশিত ছবিতে সত্য আড়াল করা হয়েছে বলে দাবি করেছে পুলিশ সদর দপ্তর। তাদের ভাষ্য, ঘটনার ভিডিও চিত্র দেখলে পরিষ্কার হয় যে উত্তেজিত মিছিলকারীরা পুলিশের ওপর আক্রমণ করার পর পুলিশ তাঁদের প্রতিহত করে। কিন্তু প্রকাশিত ছবিতে এ সত্যটি আড়াল করা হয়েছে।
আজ বুধবার পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথাগুলো বলা হয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে পুলিশ সদর দপ্তরের বক্তব্যে বলা হয়েছে, গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে ‘ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ’ নামের প্ল্যাটফর্মের প্রায় ৬০/৭০ জনের একটি দল প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা অভিমুখে পদযাত্রার চেষ্টা করে। পুলিশ রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নিরাপত্তাজনিত কারণে পদযাত্রায় অংশগ্রহণকারীদের হোটেল ইন্টারকনটিনেন্টাল মোড়ে বাধা দেয়। এ সময় বিক্ষোভকারীরা পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে সামনে এগোনোর চেষ্টা করে। পুলিশ পবিত্র রমজানে ঘরমুখো মানুষের যাতায়াত নির্বিঘ্ন ও যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রাখতে বিক্ষোভকারীদের সরে যেতে বারবার অনুরোধ জানায়। কিন্তু তাঁরা পুলিশের আহ্বানে সাড়া না দিয়ে কর্তব্যরত পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে ও লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা চালায়। তাঁদের অতর্কিত হামলায় ডিএমপির রমনা বিভাগের সহকারী কমিশনার গুরুতর আহত হন। এ ছাড়া হামলাকারীদের আঘাতে রমনা বিভাগের উপকমিশনারসহ পাঁচজন পুলিশ সদস্যও আহত হয়েছেন।
পুলিশ সদর দপ্তরের বক্তব্যে আরও বলা হয়, প্রকৃত ঘটনাকে আড়াল করে এরূপ খণ্ডিত সংবাদ ও ছবি প্রকাশ কোনোভাবেই প্রত্যাশিত নয়। পুলিশ সদর দপ্তর গণমাধ্যমের দায়িত্বশীল আচরণ প্রত্যাশা করে।