এপেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা শিল্পপতি সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। 

বুধবার (১২ মার্চ) সকালে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। তার বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর। 

এপেক্স গ্রুপের মানবসম্পদ বিভাগের এক কর্মকর্তা সৈয়দ মঞ্জুর এলাহীর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, সিঙ্গাপুরের স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ৯টার দিকে (বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ৭টা) সেখানকার একটি হাসপাতালে সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী ইন্তেকাল করেছেন। তার মৃত্যুতে এপেক্স পরিবার গভীর শোকাহত।

আরো পড়ুন:

লক্ষ্মীপুরে বিএনপির সাবেক এমপি নাজিম উদ্দিন আর নেই

বিএনপি নেতা আবদুল্লাহ আল নোমান মারা গেছেন

সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী বেশ কিছুদিন ধরে বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তার পাশে ছিলেন ছেলে সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর ও মেয়ে মুনিজে মঞ্জুর। তারা আজই মরদেহ দেশে নিয়ে আসার চেষ্টা করছেন। 

দেশের অন্যতম শীর্ষ ব্যবসায়ী মঞ্জুর এলাহীর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তার মৃত্যুতে দেশের ব্যবসায়ী মহলে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। 

এর আগে ২০২০ সালের ২৬ মে সৈয়দ মঞ্জুর এলাহীর স্ত্রী ও সানবিমস স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ নিলুফার মঞ্জুর চৌধুরী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। ১৯৬৬ সালে তারা সংসার জীবন শুরু করেছিলেন। 

এপেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক এবং গ্রে অ্যাডভারটাইজিং বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ছিলেন।

১৯৭২ সালে মঞ্জুর ইন্ডাস্ট্রিজ নামে কোম্পানি করে কমিশনের ভিত্তিতে চামড়া বিক্রির মাধ্যমে ব্যবসায় আসেন সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী। চার বছর পর ১৯৭৬ সালে ১২ লাখ ২২ হাজার টাকায় রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ওরিয়েন্ট ট্যানারি কিনে নিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন এপেক্স ট্যানারি। তারও ১৪ বছর পর যাত্রা শুরু করা এপেক্স ফুটওয়্যার এখন দেশের শীর্ষস্থানীয় জুতা রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান।

সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী ১৯৯৬ সালে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ছিলেন। তখন তিনি যোগাযোগ, নৌপরিবহন, বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন, ডাক ও টেলিযোগাযোগ এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন। 

২০০১ সালেও তিনি সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করেন। তখন তিনি কৃষি, নৌপরিবহন, মৎস্য ও পশুসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

এসবের বাইরে সংগঠক হিসেবেও অনেক কাজ করেছেন সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী। তিনি মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই) ঢাকার সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০০৪ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ছিলেন। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যও তিনি।

১৯৪২ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর কলকাতার এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্ম নেন সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী। তার বাবা স্যার সৈয়দ নাসিম আলী (১৮৮৭-১৯৪৬) কলকাতা হাইকোর্টের বিচারক হিসেবে নিয়োগ পান ১৯৩৩ সালে। তার এক যুগ পর তিনি প্রধান বিচারপতি হয়েছিলেন।

সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী কলকাতাতেই স্কুল ও কলেজের পাট শেষ করেন। ১৯৬২ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক ডিগ্রি নেন। তারপর স্নাতকোত্তর করতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৯৬৪ সালে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। তিনি সলিমুল্লাহ মুসলিম (এস এম) হলে থাকতেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতি করতেন।

ঢাকা/হাসান/রাসেল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র উপদ ষ ট কর ছ ন ন কর ন কলক ত সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

জাদুঘরে রূপান্তর হবে চবির ‘ভূতুড়ে’ ভবন

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) এক সময়ের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের প্রাণকেন্দ্র ছিল শহীদ মোজাম্মেল কেন্দ্রীয় মিলনায়তন। তবে নান্দনিক স্থাপনায় সমৃদ্ধ এই মিলনায়তনটি কালের পরিক্রমায় এখন পরিত্যক্ত এক ভবনে রূপ নিয়েছে।

অনেকের কাছে ‘ভূতুড়ে অডিটোরিয়াম’ নামেই পরিচিত। তবে এবার ভবনটিকে সংস্কার করে একে ‘চবি জাদুঘর’ এর অংশ হিসেবে অন্তর্ভুক্তির সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

জানা গেছে, ১৯৭৮ সালে সাংস্কৃতিক চর্চার লক্ষ্যে নির্মিত হওয়া চবির কেন্দ্রীয় মিলনায়তনের নকশাকার স্থপতি মাজহারুল ইসলাম। পরবর্তীতে, ১৯৮৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী এটি নতুনভাবে উদ্বোধন করেন এবং নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে নিহত শিক্ষার্থী মোজাম্মেলের নামে ‘শহীদ মোজাম্মেল অডিটোরিয়াম’ নামকরণ করেন । ওই সময় প্রায় ১ হাজার আসনবিশিষ্ট এ মিলনায়তনটি ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের প্রাণকেন্দ্র।

আরো পড়ুন:

ভর্তির ৭ মাসেও পরিচয়পত্র পাননি চবি শিক্ষার্থীরা

ছাত্রশিবির অতিমাত্রায় পলিটিক্স পছন্দ করে না: নুরুল ইসলাম

তবে ১৯৯১ সালের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ে মিলনায়তনটি ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং তারপর থেকে এটি বন্ধ হয়ে রয়েছে। দীর্ঘদিন বন্ধ হওয়ার ফলে এটি এখন পরিত্যক্ত ভবন! চারপাশে ঝোপঝাড়, ভেতরে স্যাঁতসেঁতে মেঝে আর পোকামাকড়ের বিচরণ এবং কিছু জায়গায় ভেঙ্গে পড়েছে দেওয়াল। দীর্ঘ ৩৪ বছরেও সংস্কারের কোন উদ্যোগ না নেওয়ায় এক সময়ের জমজমাট মিলনায়তনটি পরিণত হয়েছে ভূতুড়ে স্থাপনায়।

প্রশাসনের কাছে শিক্ষার্থীদের দাবি, এভাবে অবহেলায় ফেলে না রেখে মিলনায়তনটি সংস্কার করা অথবা প্রয়োজনে নতুনভাবে বিনির্মাণ করে এটি দ্রুত চালু করা হোক। যাতে কেন্দ্রীয়ভাবে সাংস্কৃতিক বিকাশের জন্য একটি উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি হয়।

ভবনটি সংস্কারের দাবি জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আবু মোহাম্মদ মিরাজ বলেন, “দীর্ঘদিন প্রশাসনের সুদৃষ্টি না থাকায় ভবনটি বন্ধ রয়েছে। কেন্দ্রীয় মিলনায়তন হওয়ায় এটি একসময় সব অনুষদের শিক্ষার্থীরা ব্যবহার করতে পারত। জমজমাট থাকত বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে। এখন আমাদের সব অনুষ্ঠান অনুষদের মিলনায়তনে করতে হয়। একটি উন্মুক্ত মিলনায়তন থাকলে আমাদের জন্য সুবিধা হয়।”

মিলনায়তনটির ভবিষ্যত পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, “শহীদ মোজাম্মেল অডিটোরিয়ামটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম প্রাচীন স্থাপনা। এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্যের সঙ্গে সুনিবিড়ভাবে জড়িত। সেদিন আমরা ভবনটি পরিদর্শন করে দেখেছি- এটি সংস্কার করে কাজে লাগানো সম্ভব। এর স্থাপত্যশৈলী খুবই নান্দনিক।”

তিনি বলেন, “আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, অডিটোরিয়ামটিকে সংস্কার করে একে চবি জাদুঘরের একটি অংশ হিসেবে অন্তর্ভুক্তি করা।”

ভবনটির সংস্কারের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী সৈয়দ জাহাঙ্গীর ফজল জানান, “ভবনটি সংস্কার করা যাবে। তবে এজন্য বেশ কয়েকজন অভিজ্ঞ কনসালটেন্ট নিয়োগের প্রয়োজন হতে পারে। তার ভিত্তিতে প্রশাসনিক নির্দেশনা পেলে সংস্কারের কাজ শুরু করতে পারব।”

ঢাকা/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ