শরীয়তপুরের গোসাইরহাট উপজেলার কুচাইপট্টি ইউনিয়নের মসুরগাঁও এলাকার মেঘনা নদী থেকে উদ্ধার হওয়া দুটি লাশের পরিচয় পাওয়া গেছে। তাঁরা দুজন মা ও মেয়ে। তাঁদের হত্যা করে নদীতে লাশ ফেলে দেওয়া হয়েছে—এমন অভিযোগে নিহত নারীর স্বামী ও শ্বশুরের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করা হয়েছে।

নিহত দুজন হলেন তানিয়া আক্তার (৩২) ও তাঁর মেয়ে রাবেয়া (৪)। তানিয়া বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার কাদিরাবাদ এলাকার দুলাল হাওলাদারের মেয়ে ও হিজলা উপজেলার আবদুর রহমান মাঝির স্ত্রী। তানিয়া-আবদুর দম্পতির একমাত্র মেয়ে রাবেয়া। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে তাঁদের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে পাঠায় পুলিশ।

গোসাইরহাট থানা ও তানিয়ার পরিবার সূত্র জানায়, বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার কাদিরাবাদ এলাকার দুলাল হাওলাদারের মেয়ে তানিয়া আক্তার (৩২)। ২০২০ সালে পাশের হিজলা উপজেলার চরইন্দুরিয়া এলাকার ইউসুফ মাঝির ছেলে আবদুর রহমান মাঝির সঙ্গে পারিবারিকভাবে তানিয়ার বিয়ে হয়। পারিবারিক কলহের জেরে প্রায়ই স্বামী, শ্বশুর ও শাশুড়ির সঙ্গে তানিয়ার ঝগড়া হতো। গত সোমবার তানিয়ার সঙ্গে তাঁদের আবার ঝগড়া হয়। তাঁরা তানিয়াকে বাড়ি থেকে বের করে দেন।

তানিয়া তখন মেয়েকে নিয়ে ঢাকায় ভাইয়ের বাসায় যাওয়ার জন্য রওনা হন। সন্ধ্যায় মেহেন্দিগঞ্জের গঙ্গাপুর লঞ্চ স্টেশন থেকে সম্রাট-২ লঞ্চের ২১০ নম্বর কেবিনে করে ঢাকার সদরঘাটে রওনা হন। তানিয়াকে খুঁজতে ওই লঞ্চে আসেন তাঁর স্বামী, শ্বশুর ও তাঁদের এক স্বজন। ওই স্টেশন থেকে লঞ্চ ছাড়ার পর রাত ১১টার দিকে তানিয়ার শ্বশুর পুত্রবধূর বড় ভাই আমীর হোসেনকে ফোন করে বিষয়টি জানান। তানিয়াকে বুঝিয়ে বাড়ি ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য আমীর হোসেনকে সদরঘাটে আসার অনুরোধ করেন ইউসুফ। পরের দিন গতকাল সকালে আমীর হোসেন সদরঘাটে গেলেও তানিয়াকে পাননি। তিনি তানিয়ার স্বামী, শ্বশুর ও তাঁদের এক স্বজনকে দেখতে পান। তাঁরা তাঁকে জানান, তানিয়াকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তখন আমীর হোসেন গ্রামে তাঁর বাবাকে ফোন করে মেহেন্দিগঞ্জ থানায় যেতে বলেন। সেখানে গিয়ে মেয়ে ও নাতনির লাশ উদ্ধারের খবর পান তানিয়ার বাবা।

আরও পড়ুনশরীয়তপুরে মেঘনা নদী থেকে নারী ও শিশুর লাশ উদ্ধার১১ মার্চ ২০২৫

আজ বুধবার সকালে তানিয়া ও তাঁর মেয়ের মরদেহ নিতে সদর হাসপাতালে আসেন বাবার বাড়ির স্বজনেরা। সেখানে তানিয়ার ভাই আমীর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার বোন রাত ১২টার দিকে ফোন করে লঞ্চের ২১০ নম্বর কেবিনে থাকার কথা জানায়। সকালে আমি তাকে আনতে সদরঘাট যাব তা–ও তাকে জানাই। তার স্বামী ও শ্বশুর তাকে মেরে ফেলতে পারে—এমন শঙ্কার কথা আমাকে জানায়। তখন আমি তার শ্বশুরের সঙ্গে ফোনে কথা বলে ওকে বিরক্ত না করতে বলি। যা আলোচনা আছে সকালে হবে বলে ওর শ্বশুর আমাকে আশ্বস্ত করেন। লঞ্চ সকালে সদরঘাট পৌঁছালে আমার বোনকে পাইনি। তখন লঞ্চের ২১০ নম্বর কেবিনে গিয়ে বোনের বোরকা, হিজাব, ব্যাগ ও কিছু খাবার দেখতে পাই। তখন তার স্বামী ও শ্বশুর লঞ্চে ছিলেন। যখন আমি পুলিশের কাছে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিই, তখনই তাঁরা সদরঘাট থেকে সটকে পড়েন। তানিয়ার স্বামী ও শ্বশুরই তাকে ও তার মেয়েকে হত্যা করে নদীতে ফেলে দিয়েছেন। আমরা এর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’

গোসারহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাকসুদ আলম বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে মনে হয়েছে এটা হত্যাকাণ্ড। তাই হত্যা মামলা করা হয়েছে। মামলাটি নৌ পুলিশ তদন্ত করবে। তদন্তের পর আরও বিস্তারিত জানা যাবে।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আম র হ স ন উপজ ল র সদরঘ ট র জন য এল ক র

এছাড়াও পড়ুন:

তারুয়া সৈকতে দেখা পাখি

বহুদিনের ইচ্ছা ছিল ভোলার ‘চর কুকরি–মুকরি’ ও আশপাশের চরগুলোর নৈসর্গিক দৃশ্য অবলোকন করা। ওখানকার প্রকৃতি-পাখি-প্রাণী দেখা। তবে নানা কারণে তা হয়ে ওঠেনি। কিন্তু ১২ ফেব্রুয়ারি সেই সুযোগটা এসে গেল। ‘নাইকন ফ্যান ক্লাব’ আয়োজিত ‘চর কুকরি-মুকরি ও ঢালচর প্রকৃতি পর্যবেক্ষণ অভিযান’-এ অতিথি হিসেবে নিমন্ত্রণ পেলাম। সুযোগটা হাতছাড়া করলাম না।

রাত আটটায় লঞ্চ। সদরঘাট থেকে প্রথমে চরফ্যাশনের বেতুয়া ও পরে কচ্ছপিয়া ঘাটে যেতে হবে। কিন্তু প্রচণ্ড যানজটের কারণে সদরঘাট পৌঁছাতে দেরি হয়ে গেল। ফলে আমিসহ আরও তিনজন লঞ্চ ধরতে ব্যর্থ হলাম। তাই রাত দশটার ইলিশার লঞ্চে উঠলাম। ভোরে ইলিশা ঘাটে নেমে অটোরিকশায় ভোলা সদর, লালমোহন ও চরফ্যাশন পেরিয়ে ৭২ কিলোমিটার দূরের বেতুয়ায় পৌঁছলাম দুই ঘণ্টা পর। এরপর বাকিদের সঙ্গে অটোযোগে কচ্ছপিয়া ঘাটে গিয়ে ঢালচরের উদ্দেশে ট্রলারে উঠলাম। ট্রলার ছাড়ল দুপুর বারোটায়।

ট্রলার ছুটে চলল উপকূলীয় খাল-নদী, বাদাবন ও বঙ্গোপসাগরের বুক চিরে। বাদাবনের মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময় মনে হচ্ছিল যেন সুন্দরবনের ভেতর দিয়েই যাচ্ছি। পথে নানা প্রজাতির পরিযায়ী ও আবাসিক পাখির দেখা মিলল। বেলা সোয়া একটায় কুকরি-মুকরির ওয়াচ টাওয়ার পেরিয়ে আবারও বঙ্গোপসাগরে পড়লাম। ঢালচরের তারুয়া সমুদ্রসৈকতে পৌঁছাতে একটা ৫০ বেজে গেল। এখানেই ক্যাম্প করব।

তারুয়া সৈকতে নামার সময় ঘাটের খুঁটিতে একটি সাদাবুক মাছরাঙার দেখা পেলাম। সৈকতজুড়ে যেন লাল কাঁকড়ার মেলা বসেছে! কী সুন্দর সে দৃশ্য! কিন্তু ছবি তোলার জন্য কাছাকাছি যেতেই ওরা গর্তের ভেতর লুকিয়ে পড়ল। ট্যুর অপারেটরসহ কয়েকজন ক্যাম্পের জন্য উপযুক্ত জায়গা খুঁজতে গেলেন। মালপত্রসহ বাকিরা অপেক্ষা করতে লাগলেন একটি বাবলাগাছের নিচে।

ভ্রমণসঙ্গী তরিকুল রনি ও নির্মল সরদারকে নিয়ে ক্যামেরা হাতে আশপাশটায় পাখির খোঁজ করতে লাগলাম। বাবলাগাছের সামনের মাঠে ঝুঁটি ও গোশালিকের দেখা মিলল। মাঠজুড়ে গোটা পঞ্চাশেক কইতরি চ্যাগা (সোনা বাটান) বিচরণ করছিল। হাঁটতে হাঁটতে একটি সরু খালের পাড়ে গিয়ে লাল-পা পিউ, কানিবক, সাধারণ আবাবিল, বাদামি কসাই, মালা চ্যাগা ও লাল লতিকা হট্টিটির দেখা পেলাম। মালা চ্যাগার পিছু পিছু হাঁটতে হাঁটতে ছোট গুলিন্দা, ছোট বগা ও হলুদ খঞ্জনের সঙ্গে দেখা হলো। এরপর সৈকতপানে তাকাতেই বড় বদরকৈতর ও কালোমাথা কাস্তেচরা উড়ে যেতে দেখলাম। ওদের ছবি তুলছি এমন সময় রনির ডাক এল। ক্যাম্পের জন্য উপযুক্ত স্থান পাওয়া গেছে। দ্রুত বাবলাগাছের তলায় গিয়ে মালপত্র নিয়ে ক্যাম্পসাইটে চলে গেলাম।

তারুয়া সৈকতের পাশে সরু খালের ওপর উড়ন্ত ছোট বগা

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নিখোঁজের পরদিন ভেসে উঠল সাম্পান মাঝির মরদেহ
  • তারুয়া সৈকতে দেখা পাখি