মোহামেদ সালাহ লিভারপুলের হয়ে লিগ জিতেছেন। চ্যাম্পিয়ন্স লিগও হাতে উঠেছে তার। তবে এবারের মৌসুম তার জন্য বিশেষ। যার ব্যাখ্যায় সালাহ জানান, রেডসদের জার্সিতে এটা তার শেষ মৌসুম (সম্ভাব্য) হতে চলেছে। যে কারণে এটা অন্য মৌসুমের চেয়ে বিশেষ। খুব করে লিগ জিততে চাওয়ার কথাও জানান।

শেষ ওই মৌসুমে দুর্দান্ত ছন্দে আছেন মিশরীয় তারকা। তার দল লিভারপুল প্রিমিয়ার লিগের পয়েন্ট টেবিলে শীর্ষে আছে। চলতি মৌসুমের সম্ভাব্য লিগ জয়ী তারাই। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে গ্রুপ পর্বে শীর্ষে থেকে শেষ করেছিল আর্নে স্লটের দল। অতীত ঐতিহ্য, দলের শক্তি ও ফর্ম বিবেচনায় রেডসদের চ্যাম্পিয়ন্স লিগের অন্যতম দাবিদার মনে করা হচ্ছিল।

তবে ঘরের মাঠে পিএসজির বিপক্ষে টাইব্রেকারে হেরে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শেষ ষোলো থেকে বিদায় নিয়েছে লিভারপুল। হারের পরে সালাহ দর্শকদের অভিবাদন জানালেও পরিষ্কার বোঝা যায় যে, তার চোখ ভিজে গেছে। ইউরোপ সেরার লড়াই থেকে এত দ্রুত দলের বিদায় মানতে পারেননি তিনি।

তার কান্নার আরও একটি কারণ আছে। দুর্দান্ত ছন্দে থাকায় সালাহ ব্যালন ডি’অর পাওয়ার র‌্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষে ছিলেন। প্রিমিয়ার লিগের সঙ্গে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে দলের জয়ের ধারা ধরে রাখতে পারলে এবং নিজের গোলের সংখ্যা বাড়িয়ে নিতে পারলে তার হাতেই ব্যালন ডি’অর ওঠার সম্ভাবনা বেশি ছিল।

কিন্তু চলতি মৌসুমে সবার চেয়ে বেশি ৩২ গোল ও ২২ গোলে সহায়তা দেওয়া সালাহর দল চ্যাম্পিয়ন্স লিগ থেকে বিদায় নেওয়ায় তার ব্যালন ডি’অরের সম্ভাবনা অনেকটাই কমে গেল। চলতি মৌসুমে ফিফা ও উয়েফার কোন  টুর্নামেন্ট না থাকায় চ্যাম্পিয়ন্স লিগ হতে পারে ব্যালন ডি’অরের নির্ধারক।

ব্যালন ডি’অরের পাওয়ার র‌্যাঙ্কিংয়ে তিনে ছিলেন রাফিনিয়া। তিনি মৌসুমে ৩০ গোল ও ১৯ গোলে সহায়তা দিয়েছেন। বার্সা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে যাওয়ায় এবং লিগ টেবিলে শীর্ষে থাকায় রাফিনিয়া এখন বড় প্রার্থী। ২৯ গোল করে ও পাঁচ গোলে সহায়তা দিয়ে দুইয়ে ছিলেন কিলিয়ান এমবাপ্পে। রিয়ালের চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ও লিগ শিরোপা যাত্রার ওপর নির্ভর করবে এমবাপ্পের ব্যালন ডি’অর পাওয়া না পাওয়া।

রাফিনিয়া-এমবাপ্পে পা পিছলালে হ্যারি কেন, জামাল মুসিয়ালা, হুলিয়ান আলভারেজ, উসমান ডেম্বেলে, লওতারো মার্টিনেজদের সুযোগ তৈরি হবে। সেজন্য অবশ্য গোল দেওয়ার সঙ্গে শিরোপা জিততে হবে।    

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

‘হামরা গরিব মাইনসের শখ আল্লাদও কাড়ি নেয় ওমরা’

‘মাছ-গোশত কিনবার তো বুদ্দি নাই। পয়লা বৈশাকে হামার সজনা (শজিনা), করলা আর পাটশাকই ভরসা। কিন্তুক বৈশাকের আগোতে শাকসবজির দাম বাড়াইচে ব্যবসায়ীরা। হামরা গরিব মাইনসের শখ-আল্লাদও কাড়ি নেয় ওমরা।’ রংপুর সিটি বাজারে গতকাল শুক্রবার বাজার করতে এসেছিলেন নিউ জুম্মাপাড়া এলাকার রিকশাচালক সাইদুল ইসলাম। এ সময় নিত্যপণ্য ও সবজির চড়া দাম দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করে কথাগুলো বলেন তিনি।
রংপুর অঞ্চলের মানুষ পুরোনো দিনের রীতি অনুসরণ করে চৈত্রসংক্রান্তি ও বাংলা নববর্ষ বরণ করেন। তারা খাবারের তালিকায় তিতা জাতীয় সবজি করলা, পাট শাক কিংবা শজিনা রাখেন। 
কিন্তু পহেলা বৈশাখ ঘিরে বাজারে এসব শাকসবজির দাম বেড়ে গেছে। দু’দিন আগে ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও শুক্রবার করলার দাম ওঠে ৬০ টাকা। ৮০ টাকার শজিনা বিক্রি হয়েছে ১০০ থেকে ১২০ টাকায়। ১০ টাকার প্রতি আঁটি পাট শাক নেওয়া হচ্ছে ২০ টাকা।
নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামে রমজান মাসে কিছুটা স্বস্তি মিললেও পহেলা বৈশাখ সামনে রেখে বাজারে উত্তাপ ছড়াচ্ছে। প্রতিটি সবজির দাম কেজিতে বেড়েছে ২০ টাকা কিংবা 
তারও বেশি। বাজারে ৬০ টাকার নিচে তেমন কোনো সবজি মিলছে না। এতে ক্ষুব্ধ অনেকে বিক্রেতাদের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডায় জড়াচ্ছেন। হঠাৎ শাকসবজির দাম বাড়াতে নিম্ন আয়ের মানুষ বিপদে পড়েছেন। তাদের বাংলা নববর্ষ উদযাপনের আনন্দে ভাটা পড়েছে।
সিও বাজারে ব্যাগ হাতে ঘুরছিলেন উত্তম এলাকার আলী হোসেন নামে এক ক্রেতা। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দু’দিনের ব্যবধানে প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে সবজির দাম। মৌসুমের শুরুতে চার সদস্যের পরিবারের জন্য ২০ টাকায় কেনা যেত দুই আঁটি পাট শাক। পহেলা বৈশাখ ঘিরে এখন তার দাম ৪০ টাকা। রমজানে বাজার তদারকির কারণে ন্যায্য দামে বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন বিক্রেতা। এখন সবকিছুই ফের লাগামহীন হয়ে গেছে।
সিটি, সিও, কামাল কাছনাসহ নগরীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমন চিত্র পাওয়া গেছে। কয়েকদিনের ব্যবধানে ৬০ টাকার পটোল ৮০, ৬০ টাকার কাঁকরোল ৭০-৮০, ৬০ টাকার ঝিঙে ৮০, ৫০ টাকার চিচিঙ্গা ৬০-৭০ টাকা, ৫০ টাকার কচুর লতি ৭০, ৪০ টাকার বরবটি ৬০ ও ৪০ টাকার বেগুন ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। দু’দিন আগে রসুন ৮০ টাকা কেজি বিক্রি হলেও এখন ১০০ থেকে ১২০ এবং ১২০ টাকার আদা বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়। ৪০ টাকার কাঁচামরিচ ৬০, ৩০ টাকার পেঁয়াজ ৪০ থেকে ৫০ এবং ৪০ টাকার পেঁপে ও গাজর বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি।
সিটি বাজারে জলকর থেকে আসা স্নিগ্ধা নামে এক গৃহবধূ বলছিলেন, ‘একেক সময় একেক অজুহাতে নিত্যপণ্য ও সবজির দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন বিক্রেতা। এতে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে সবকিছু। রমজানে কিছুটা স্বস্তি মিললেও ফের আগের নিয়মে ফিরছে সবজির বাজার।’
বাজারে সবজি কিনতে এসেছেন বেসরকারি চাকরিজীবী আবুল কালাম। তিনি বলেন, পহেলা বৈশাখ ঘিরে সব ধরনের সবজির দাম বেড়েছে। বাজারে ৬০ টাকার নিচে ভালো কোনো সবজি না মেলায় নিম্ন আয়ের মানুষের বাংলা নববর্ষ উৎসবের আয়োজনে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
দু’দিন ধরে পহেলা বৈশাখের প্রভাব পড়েছে বলে দাবি করেন সিটি বাজারের সবজি বিক্রেতা লোকমান গণি। তিনি বলেন, চাহিদা বাড়লেও সরবরাহ কম। যে কারণে দাম বেশি। শুক্রবার ছুটির দিনে পাইকাররা বাড়তি দাম রাখেন। আরেক বিক্রেতা আব্দুল হাকিমের ভাষ্য, রংপুর অঞ্চলে দীর্ঘদিন বৃষ্টি না হওয়ায় মৌসুমি শাকসবজির ফলন কমেছে। এতে গ্রীষ্মকালীন শাকসবজির সরবরাহ কম। সরবরাহ বাড়লে দাম কমবে।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর রংপুরের সহকারী পরিচালক বোরহান উদ্দিন বলেন, সরবরাহ থাকলেও দু’দিনের ব্যবধানে সবজির দাম বেড়েছে। নববর্ষের অজুহাতে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সবজিসহ নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়েছেন। এ ব্যাপারে মাঠ পর্যায়ে তদারক করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ