নতুন রাজনৈতিক দল ‘ক্রাউডফান্ডিং’ করে টাকা জোগাড় করবে, কী সেটা ও কীভাবে কাজ করে
Published: 12th, March 2025 GMT
নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) দলীয় তহবিল গঠনের জন্য ‘ক্রাউডফান্ডিং’ করবে বলে জানিয়েছে।
৮ মার্চ দলের এক সংবাদ সম্মেলনে বার্তা সংস্থা রয়টার্সে প্রকাশিত সাক্ষাৎকারের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমরা অনলাইন ও অফলাইনে একটা ক্রাউডফান্ডিংয়ের (গণচাঁদা সংগ্রহ) দিকে যাচ্ছি, যে ক্রাউডফান্ডিংয়ের মাধ্যমে আমরা দলের কার্যালয় স্থাপনসহ নির্বাচনী তহবিল সংগ্রহ করব।’
কৌতূহল তৈরি হয়েছে যে এই ক্রাউডফান্ডিং কী, এর মাধ্যমে তহবিল কীভাবে সংগ্রহ করা হয়, উদাহরণ আছে কি না।
রাজনীতিতে গণচাঁদা সংগ্রহ নতুন কিছু নয়। সাধারণত রাজনৈতিক দল ও সংগঠন গণচাঁদা সংগ্রহ করেই চলে। কিন্তু সমস্যা হয় তখন, যখন রাজনীতিবিদেরা স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর কাছ থেকে টাকা নেন এবং তাঁদের স্বার্থে কাজ করেন। এই অঞ্চলে রাজনৈতিক দলগুলো গোপনে বিপুল অর্থ সংগ্রহ করে বলে অভিযোগ রয়েছে।
তবে শক্তিশালী গণতন্ত্রের দেশগুলোতে চাঁদা তোলা হয় প্রকাশ্যে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে চাঁদাদাতার নাম–পরিচয় সবাই জানতে পারে। গণচাঁদায় নতুন যোগ হয়েছে ‘ক্রাউডফান্ডিং’।
আরও পড়ুননতুন দলের পরবর্তী কর্মকাণ্ডের দিকে দৃষ্টি সব দলের০১ মার্চ ২০২৫ক্রাউডফান্ডিং কীবিপুলসংখ্যক মানুষ যখন কোনো ব্যবসা বা উদ্যোগ শুরু করতে তহবিলের জন্য অল্প পরিমাণ করে অর্থ প্রদান করে, সেটাকে ক্রাউডফান্ডিং বা গণতহবিল বলা হয়। সাধারণত এই অর্থ ফেরত দিতে হয় না।
গণতহবিল মূলত স্টার্টআপ বা নতুন কোনো ব্যবসা উদ্যোগের জন্য বিকল্প তহবিলের জোগানের একটি পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে মূলত ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে অর্থ সংগ্রহ করা হয়।
গণতহবিলের কয়েকটি ধরন রয়েছে। কখনো ঋণ–সুদসহ ফেরত পাওয়ার আশায় মানুষ কোনো একটা কোম্পানিকে টাকা ধার দেয়। এটা অনেকটা ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার মতোই। তবে এ ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারী অনেক থাকে।
আবার শেয়ার বিক্রির মাধ্যমেও অর্থ আদায় করা হয়। এটা শেয়ারবাজারের মতো হলেও স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত নয়। আবার কোনো পুরস্কার বা সেবা পাওয়ার আশায়ও অর্থ প্রদান হয়। কোনো কিছুর প্রত্যাশা না করেই অনুদান হিসেবেও অর্থ দেওয়া হয়।
ক্রাউডফান্ডিংয়ের শুরু কীভাবে হলো, তা জানা যায় ফান্ডেবলডটকম নামের একটি ওয়েবসাইট থেকে। সেখানে বলা আছে, ক্রাউডফান্ডিংয়ের প্রথম সফল ঘটনা ঘটে ১৯৯৭ সালে। ব্রিটিশ রক ব্যান্ড ম্যারিলিওন তাদের পুনর্মিলনী সফর আয়োজনের জন্য ভক্তদের কাছ থেকে অনলাইন অনুদান নিয়েছিল। তাদের এই পদ্ধতিতে অনুপ্রাণিত হয়ে, ২০০১ সালে আর্টিস্টশেয়ার নামের প্রথম ক্রাউডফান্ডিং প্ল্যাটফর্ম গড়ে ওঠে, যারা শিল্পীদের অ্যালবাম তৈরি করতে বা সফরে (ট্যুর) যেতে অর্থ সংগ্রহ করে দেয়।
আরও পড়ুনতরুণদের নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫গণতহবিল প্ল্যাটফর্মক্রাউডফান্ডিংয়ের জন্য নানা প্ল্যাটফর্ম রয়েছে। এই প্ল্যাটফর্মগুলো তহবিল সংগ্রহকারী এবং মানুষের মধ্যে সমন্বয় করে।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম সিএনবিসি বিশ্বের শীর্ষ কিছু গণ–অর্থায়ন প্ল্যাটফর্মের কথা জানিয়েছে। সেগুলো হলো কিভা, গোফান্ডমি, ইন্ডিগোগো, কিকস্টার্টার, ক্রেডিবলি ও ফ্লোরা ফাইন্যান্সিয়াল।
কারও গণতহবিলের প্রয়োজন থাকলে এ ধরনের একটি প্ল্যাটফর্ম এবং সেখানে অর্থায়নের ধরন, সময়, টাকার পরিমাণ বেছে নিতে হয় তহবিল সংগ্রহকারীকে। প্ল্যাটফর্ম বেছে নেওয়ার পর প্রয়োজনীয় তথ্য ও কাগজপত্র দিতে হয়। প্ল্যাটফর্ম প্রয়োজনে তহবিল সংগ্রহকারীর বৈধতা যাচাই করতে পারে।
প্ল্যাটফর্ম থেকে তহবিল সংগ্রহকারীর প্রস্তাব গৃহীত হলে উদ্যোগের ধারণাসহ বিস্তারিত তথ্য দিতে হয়। যদি পুরস্কারভিত্তিক অর্থায়ন হয়, তাহলে দাতারা বিনিময়ে কী পাবে, তা উল্লেখ করতে হবে। আবার যদি ইক্যুইটি (মূলধন/মালিকানা)-ভিত্তিক হয়, তাহলে শেয়ারের দাম ও অংশীদারত্ব প্রসঙ্গে জানাতে হয়। আবার ঋণভিত্তিক বা অনুদানভিত্তিক কি না, সেটাও উল্লেখ করতে হয়।
প্ল্যাটফর্মগুলো থেকে তহবিল সংগ্রহকারী অর্থদাতাদের পরিচয় জানতে পারেন।
গণতহবিল সংগ্রহ করে দেওয়া প্ল্যাটফর্মগুলোকে ফি দিতে হয়। কিছু ক্ষেত্রে সংগৃহীত তহবিলের একটি অংশ, লেনদেন ফি এবং কেউ কেউ শেয়ারও নেয়। বাংলাদেশেও কিছু অনলাইনভিত্তিক গণতহবিল প্ল্যাটফর্ম রয়েছে।
ইউএস চেম্বার অব কমার্সের ওয়েবসাইটে কয়েকটি সফল গণতহবিলের স্টার্টআপের কথা বলা হয়েছে।
জনপ্রিয় ভার্চ্যুয়াল রিয়েলিটি হেডসেট ওকুলাসকে ২০১৪ সালে ২০০ কোটি ডলারে কিনে নেয় ফেসবুক। তবে এর আগে কোম্পানিটি রিফ্ট হেডসেট তৈরির জন্য একটি প্ল্যাটফর্মে গণতহবিল কার্যক্রম শুরু করে এবং চার ঘণ্টার মধ্যে তারা কাঙ্ক্ষিত ২৪ লাখ ডলার সংগ্রহ করেছিল।
আরও পড়ুননতুন দলের নিবন্ধন পেতে কী শর্ত পূরণ করতে হবে, রাজনীতিতে চ্যালেঞ্জ কী০৫ মার্চ ২০২৫রাজনৈতিক গণতহবিলবিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাজনীতিকদের গণতহবিল সংগ্রহের উদাহরণ রয়েছে।
দ্য হিন্দুতে গত ১২ জানুয়ারি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানা যায়, ভারতের আম আদমি পার্টির নেত্রী ও দিল্লির সাবেক মুখ্যমন্ত্রী আতিশী মার্লেনা সদ্য সমাপ্ত দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে তাঁর দলের প্রচারণার খরচ মেটাতে একটি গণতহবিলের প্রচারণা চালিয়েছিলেন। তাঁর নির্বাচনী ব্যয়ের জন্য ৪০ লাখ রুপি দরকার ছিল।
বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০১৬ সালের নির্বাচনী প্রচারণার ৬৯ শতাংশ তহবিল ক্ষুদ্র দাতাদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করেছিলেন।
যুক্তরাজ্যের দ্য ইলেকটোলার কমিশন দেশটির নির্বাচনী ব্যবস্থা ও রাজনৈতিক অর্থায়নের বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করা একটি স্বাধীন সংস্থা। তাদের ওয়েবসাইটে গণতহবিলের স্বচ্ছতার প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, গণতহবিলের সংগ্রহের ক্ষেত্রে প্ল্যাটফর্মে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা থাকতে হবে যে অর্থ কাকে দান করা হচ্ছে এবং কী জন্য দান করা হচ্ছে। অর্থাৎ তহবিলটি রাজনৈতিক দলের কাছে যাচ্ছে কি না, নাকি প্রার্থীর নির্বাচনী প্রচারণার ব্যয় মেটাতে নেওয়া হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ম্যারিল্যান্ড বাল্টিমোর কাউন্টির সহযোগী অধ্যাপক সেনোরিটা দে ২০২২ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যাগাজিনে গণতহবিল–সংক্রান্ত একটি লেখা প্রকাশ করেন। সেখানে তিনি বলেছেন, রাজনৈতিক গণতহবিলের ক্ষেত্রে ঐতিহ্যগতভাবে স্বেচ্ছাসেবকেরা ঘরে ঘরে গিয়ে ব্যক্তিদের কাছ থেকে অনুদান চাইতেন। এখন অবশ্য রাজনীতিবিদেরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করেন।
রাজনৈতিক গণতহবিলের প্রাথমিক উদ্দেশ্য হলো, রাজনীতিবিদদের সরাসরি দাতাদের কাছ থেকে তহবিল সংগ্রহে সহায়তা করা। সম্ভাব্য সমর্থকদের মধ্যে রাজনীতিবিদদের রাজনৈতিক এজেন্ডাগুলোর গ্রহণযোগ্যতা মূল্যায়নের জন্যও এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আরও পড়ুনজাতীয় নাগরিক পার্টির অর্থদাতা কারা, শিবিরের টাকার উৎস কী, জানতে চায় ছাত্রদল০৭ মার্চ ২০২৫‘স্বচ্ছতা থাকতে হবে’বাংলাদেশে রাজনীতিতে গণতহবিল প্রসঙ্গে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, আইনত এতে কোনো অসুবিধা নেই। দলগুলো সাধারণত সদস্যদের চাঁদা, অনুদান নিয়ে থাকে। শুভাকাঙ্ক্ষীরাও অর্থ দেয়। তবে দলগুলোর অর্থের উৎসের স্বচ্ছতা থাকতে হবে। গণতহবিলের ক্ষেত্রেও একই নীতি থাকা প্রয়োজন।
বদিউল আলম মজুমদার বলেন, যদি কোনো প্ল্যাটফর্ম বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে লেনদেন হয়, তবে লেনদেনসংক্রান্ত তথ্য সবাইকে জানাতে হবে। পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনেও আর্থিক লেনদেন সম্পর্কিত তথ্যের প্রতিবেদন দেবে। প্রয়োজনে যেন কমিশন নিরীক্ষা করতে পারে। এগুলো তাদের সংস্কার প্রস্তাবে থাকছে।
রাজনৈতিক দলের তহবিল সংগ্রহের ক্ষেত্রের স্বার্থের দ্বন্দ্বের বিষয়গুলো প্রকাশ্য থাকতে হবে বলে মনে করেন বদিউল আলম মজুমদার।
আরও পড়ুনজাতীয় নাগরিক পার্টির নেতাদের কে কোন পদে২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প ল য টফর ম ন র জন ত ক র জন ত ব দ তহব ল র র জন য অন দ ন ল নদ ন ব যবস র একট
এছাড়াও পড়ুন:
নতুন রাজনৈতিক দল ‘ক্রাউডফান্ডিং’ করে টাকা জোগাড় করবে, কী সেটা ও কীভাবে কাজ করে
নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) দলীয় তহবিল গঠনের জন্য ‘ক্রাউডফান্ডিং’ করবে বলে জানিয়েছে।
৮ মার্চ দলের এক সংবাদ সম্মেলনে বার্তা সংস্থা রয়টার্সে প্রকাশিত সাক্ষাৎকারের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমরা অনলাইন ও অফলাইনে একটা ক্রাউডফান্ডিংয়ের (গণচাঁদা সংগ্রহ) দিকে যাচ্ছি, যে ক্রাউডফান্ডিংয়ের মাধ্যমে আমরা দলের কার্যালয় স্থাপনসহ নির্বাচনী তহবিল সংগ্রহ করব।’
কৌতূহল তৈরি হয়েছে যে এই ক্রাউডফান্ডিং কী, এর মাধ্যমে তহবিল কীভাবে সংগ্রহ করা হয়, উদাহরণ আছে কি না।
রাজনীতিতে গণচাঁদা সংগ্রহ নতুন কিছু নয়। সাধারণত রাজনৈতিক দল ও সংগঠন গণচাঁদা সংগ্রহ করেই চলে। কিন্তু সমস্যা হয় তখন, যখন রাজনীতিবিদেরা স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর কাছ থেকে টাকা নেন এবং তাঁদের স্বার্থে কাজ করেন। এই অঞ্চলে রাজনৈতিক দলগুলো গোপনে বিপুল অর্থ সংগ্রহ করে বলে অভিযোগ রয়েছে।
তবে শক্তিশালী গণতন্ত্রের দেশগুলোতে চাঁদা তোলা হয় প্রকাশ্যে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে চাঁদাদাতার নাম–পরিচয় সবাই জানতে পারে। গণচাঁদায় নতুন যোগ হয়েছে ‘ক্রাউডফান্ডিং’।
আরও পড়ুননতুন দলের পরবর্তী কর্মকাণ্ডের দিকে দৃষ্টি সব দলের০১ মার্চ ২০২৫ক্রাউডফান্ডিং কীবিপুলসংখ্যক মানুষ যখন কোনো ব্যবসা বা উদ্যোগ শুরু করতে তহবিলের জন্য অল্প পরিমাণ করে অর্থ প্রদান করে, সেটাকে ক্রাউডফান্ডিং বা গণতহবিল বলা হয়। সাধারণত এই অর্থ ফেরত দিতে হয় না।
গণতহবিল মূলত স্টার্টআপ বা নতুন কোনো ব্যবসা উদ্যোগের জন্য বিকল্প তহবিলের জোগানের একটি পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে মূলত ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে অর্থ সংগ্রহ করা হয়।
গণতহবিলের কয়েকটি ধরন রয়েছে। কখনো ঋণ–সুদসহ ফেরত পাওয়ার আশায় মানুষ কোনো একটা কোম্পানিকে টাকা ধার দেয়। এটা অনেকটা ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার মতোই। তবে এ ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারী অনেক থাকে।
আবার শেয়ার বিক্রির মাধ্যমেও অর্থ আদায় করা হয়। এটা শেয়ারবাজারের মতো হলেও স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত নয়। আবার কোনো পুরস্কার বা সেবা পাওয়ার আশায়ও অর্থ প্রদান হয়। কোনো কিছুর প্রত্যাশা না করেই অনুদান হিসেবেও অর্থ দেওয়া হয়।
ক্রাউডফান্ডিংয়ের শুরু কীভাবে হলো, তা জানা যায় ফান্ডেবলডটকম নামের একটি ওয়েবসাইট থেকে। সেখানে বলা আছে, ক্রাউডফান্ডিংয়ের প্রথম সফল ঘটনা ঘটে ১৯৯৭ সালে। ব্রিটিশ রক ব্যান্ড ম্যারিলিওন তাদের পুনর্মিলনী সফর আয়োজনের জন্য ভক্তদের কাছ থেকে অনলাইন অনুদান নিয়েছিল। তাদের এই পদ্ধতিতে অনুপ্রাণিত হয়ে, ২০০১ সালে আর্টিস্টশেয়ার নামের প্রথম ক্রাউডফান্ডিং প্ল্যাটফর্ম গড়ে ওঠে, যারা শিল্পীদের অ্যালবাম তৈরি করতে বা সফরে (ট্যুর) যেতে অর্থ সংগ্রহ করে দেয়।
আরও পড়ুনতরুণদের নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫গণতহবিল প্ল্যাটফর্মক্রাউডফান্ডিংয়ের জন্য নানা প্ল্যাটফর্ম রয়েছে। এই প্ল্যাটফর্মগুলো তহবিল সংগ্রহকারী এবং মানুষের মধ্যে সমন্বয় করে।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম সিএনবিসি বিশ্বের শীর্ষ কিছু গণ–অর্থায়ন প্ল্যাটফর্মের কথা জানিয়েছে। সেগুলো হলো কিভা, গোফান্ডমি, ইন্ডিগোগো, কিকস্টার্টার, ক্রেডিবলি ও ফ্লোরা ফাইন্যান্সিয়াল।
কারও গণতহবিলের প্রয়োজন থাকলে এ ধরনের একটি প্ল্যাটফর্ম এবং সেখানে অর্থায়নের ধরন, সময়, টাকার পরিমাণ বেছে নিতে হয় তহবিল সংগ্রহকারীকে। প্ল্যাটফর্ম বেছে নেওয়ার পর প্রয়োজনীয় তথ্য ও কাগজপত্র দিতে হয়। প্ল্যাটফর্ম প্রয়োজনে তহবিল সংগ্রহকারীর বৈধতা যাচাই করতে পারে।
প্ল্যাটফর্ম থেকে তহবিল সংগ্রহকারীর প্রস্তাব গৃহীত হলে উদ্যোগের ধারণাসহ বিস্তারিত তথ্য দিতে হয়। যদি পুরস্কারভিত্তিক অর্থায়ন হয়, তাহলে দাতারা বিনিময়ে কী পাবে, তা উল্লেখ করতে হবে। আবার যদি ইক্যুইটি (মূলধন/মালিকানা)-ভিত্তিক হয়, তাহলে শেয়ারের দাম ও অংশীদারত্ব প্রসঙ্গে জানাতে হয়। আবার ঋণভিত্তিক বা অনুদানভিত্তিক কি না, সেটাও উল্লেখ করতে হয়।
প্ল্যাটফর্মগুলো থেকে তহবিল সংগ্রহকারী অর্থদাতাদের পরিচয় জানতে পারেন।
গণতহবিল সংগ্রহ করে দেওয়া প্ল্যাটফর্মগুলোকে ফি দিতে হয়। কিছু ক্ষেত্রে সংগৃহীত তহবিলের একটি অংশ, লেনদেন ফি এবং কেউ কেউ শেয়ারও নেয়। বাংলাদেশেও কিছু অনলাইনভিত্তিক গণতহবিল প্ল্যাটফর্ম রয়েছে।
ইউএস চেম্বার অব কমার্সের ওয়েবসাইটে কয়েকটি সফল গণতহবিলের স্টার্টআপের কথা বলা হয়েছে।
জনপ্রিয় ভার্চ্যুয়াল রিয়েলিটি হেডসেট ওকুলাসকে ২০১৪ সালে ২০০ কোটি ডলারে কিনে নেয় ফেসবুক। তবে এর আগে কোম্পানিটি রিফ্ট হেডসেট তৈরির জন্য একটি প্ল্যাটফর্মে গণতহবিল কার্যক্রম শুরু করে এবং চার ঘণ্টার মধ্যে তারা কাঙ্ক্ষিত ২৪ লাখ ডলার সংগ্রহ করেছিল।
আরও পড়ুননতুন দলের নিবন্ধন পেতে কী শর্ত পূরণ করতে হবে, রাজনীতিতে চ্যালেঞ্জ কী০৫ মার্চ ২০২৫রাজনৈতিক গণতহবিলবিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাজনীতিকদের গণতহবিল সংগ্রহের উদাহরণ রয়েছে।
দ্য হিন্দুতে গত ১২ জানুয়ারি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানা যায়, ভারতের আম আদমি পার্টির নেত্রী ও দিল্লির সাবেক মুখ্যমন্ত্রী আতিশী মার্লেনা সদ্য সমাপ্ত দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে তাঁর দলের প্রচারণার খরচ মেটাতে একটি গণতহবিলের প্রচারণা চালিয়েছিলেন। তাঁর নির্বাচনী ব্যয়ের জন্য ৪০ লাখ রুপি দরকার ছিল।
বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০১৬ সালের নির্বাচনী প্রচারণার ৬৯ শতাংশ তহবিল ক্ষুদ্র দাতাদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করেছিলেন।
যুক্তরাজ্যের দ্য ইলেকটোলার কমিশন দেশটির নির্বাচনী ব্যবস্থা ও রাজনৈতিক অর্থায়নের বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করা একটি স্বাধীন সংস্থা। তাদের ওয়েবসাইটে গণতহবিলের স্বচ্ছতার প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, গণতহবিলের সংগ্রহের ক্ষেত্রে প্ল্যাটফর্মে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা থাকতে হবে যে অর্থ কাকে দান করা হচ্ছে এবং কী জন্য দান করা হচ্ছে। অর্থাৎ তহবিলটি রাজনৈতিক দলের কাছে যাচ্ছে কি না, নাকি প্রার্থীর নির্বাচনী প্রচারণার ব্যয় মেটাতে নেওয়া হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ম্যারিল্যান্ড বাল্টিমোর কাউন্টির সহযোগী অধ্যাপক সেনোরিটা দে ২০২২ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যাগাজিনে গণতহবিল–সংক্রান্ত একটি লেখা প্রকাশ করেন। সেখানে তিনি বলেছেন, রাজনৈতিক গণতহবিলের ক্ষেত্রে ঐতিহ্যগতভাবে স্বেচ্ছাসেবকেরা ঘরে ঘরে গিয়ে ব্যক্তিদের কাছ থেকে অনুদান চাইতেন। এখন অবশ্য রাজনীতিবিদেরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করেন।
রাজনৈতিক গণতহবিলের প্রাথমিক উদ্দেশ্য হলো, রাজনীতিবিদদের সরাসরি দাতাদের কাছ থেকে তহবিল সংগ্রহে সহায়তা করা। সম্ভাব্য সমর্থকদের মধ্যে রাজনীতিবিদদের রাজনৈতিক এজেন্ডাগুলোর গ্রহণযোগ্যতা মূল্যায়নের জন্যও এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আরও পড়ুনজাতীয় নাগরিক পার্টির অর্থদাতা কারা, শিবিরের টাকার উৎস কী, জানতে চায় ছাত্রদল০৭ মার্চ ২০২৫‘স্বচ্ছতা থাকতে হবে’বাংলাদেশে রাজনীতিতে গণতহবিল প্রসঙ্গে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, আইনত এতে কোনো অসুবিধা নেই। দলগুলো সাধারণত সদস্যদের চাঁদা, অনুদান নিয়ে থাকে। শুভাকাঙ্ক্ষীরাও অর্থ দেয়। তবে দলগুলোর অর্থের উৎসের স্বচ্ছতা থাকতে হবে। গণতহবিলের ক্ষেত্রেও একই নীতি থাকা প্রয়োজন।
বদিউল আলম মজুমদার বলেন, যদি কোনো প্ল্যাটফর্ম বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে লেনদেন হয়, তবে লেনদেনসংক্রান্ত তথ্য সবাইকে জানাতে হবে। পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনেও আর্থিক লেনদেন সম্পর্কিত তথ্যের প্রতিবেদন দেবে। প্রয়োজনে যেন কমিশন নিরীক্ষা করতে পারে। এগুলো তাদের সংস্কার প্রস্তাবে থাকছে।
রাজনৈতিক দলের তহবিল সংগ্রহের ক্ষেত্রের স্বার্থের দ্বন্দ্বের বিষয়গুলো প্রকাশ্য থাকতে হবে বলে মনে করেন বদিউল আলম মজুমদার।
আরও পড়ুনজাতীয় নাগরিক পার্টির নেতাদের কে কোন পদে২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫